বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দাপুটে মেয়র

তানভীর আহমেদ

দাপুটে মেয়র

রুডি জুলিয়ানির হাতে গড়া আজকের নিউইয়র্ক সিটি

রুডি জুলিয়ানি নিউইয়র্কের মেয়র পদে ছিলেন ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। আজকের যে আধুনিক নিউইয়র্ক দেখতে পাই, এর অনেকটাই তার হাতে গড়া। ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে নিউইয়র্কের পরিচয়টা তিনি বিশ্বের সঙ্গে করিয়ে দিয়েছিলেন। দায়িত্ব হাতে পেয়েই নিউইয়র্ক শহরের নতুন পুলিশ কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই শহরের রূপ পাল্টে যেতে থাকে। অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে নিউইয়র্ককে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কাছে স্বস্তির শহর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। জুলিয়ানি নিউইয়র্কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে শহর সম্প্রসারণ করে দারুণ সফল ছিলেন। নিউইয়র্কের জাঁকজমক, চাকচিক্যের পেছনে তার জেদি মনোভাব নিয়ে একসময় সমালোচনা হলেও তিনি শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিলেন। ধারাবাহিক উন্নতির পথে বাধা ছিল ছোট-বড় সন্ত্রাসী কার্যক্রম। একসময় এসব অপরাধের খবর নিউইয়র্কের সংবাদপত্রের পাতায় শিরোনাম হলে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। এই কঠিন সিদ্ধান্ত এসেছিল জুলিয়ানির মাথা থেকে। নিউইয়র্কের আকাশছোঁয়া দালান, মানুষের ভিড় পৃথিবীবাসীর কাছে বিস্ময়। নিউইয়র্ক কখনই ঘুমায় না। জুলিয়ানি সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল পুলিশ, প্রশাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্ল্যান করে কাজ শুরু করেছিলেন। মাত্র ৬ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়ে তিনি পৃথিবীর সেরা মেয়রদের একজন হয়ে ওঠেন। ২০০১ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের পার্সন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।

 

সমুদ্রতীরে মডেল শহর গড়েন ভেলেরিয়া

২০১৩ সাল থেকে ইতালির ঐতিহ্যবাহী শহর অ্যানকোনার মেয়র ভেলেরিয়া ম্যানসিনেলি। সমুদ্রতীরের এই শহরটির চেহারাই বদলে দিয়েছেন তিনি। শুধু আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তিনি এই সুনাম কুড়াননি, শহরকে করেছেন নারীবান্ধব। ভোটাররা নারী মেয়র নির্বাচিত করে যে ইতিহাস রচনা করেছিলেন, সেটি মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে। ছোট-বড় অর্গানাইজেশনকে প্রাধান্য দিয়ে নারীদের একটি কমিউনিটি তৈরি করেছেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতিকে তিনি বেশ শক্তিশালী করেছেন। ভেলেরিয়া ২০১৮ সালে বিশ্বের সেরা মেয়র নির্বাচিত হন। তখন তাকে বলা হয়েছিল, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মেয়র। হবেনইবা না কেন? স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার গুণ তাকে অনন্য করেছে। যে কোনো শহরকেন্দ্রিক সমস্যায় তিনি ছুটে আসেন। শহরের প্রশাসনিক কাঠামো দারুণভাবে কার্যকর করেছেন। রোম থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরের শহর অ্যানকোনার সমুদ্র ঘুরে আসতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক আসেন। তাদের দেখভালের দায়িত্ব সফলভাবেই পালন করছেন তিনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছেন। উৎসবের শহর বলে খ্যাতি পেয়েছে অ্যানকোনা। মেয়র ভেলেরিয়া সারা বছরই ঝলমলে আলোতে সাজিয়ে রাখেন শহরটি। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন। ফুলের বাগান বানিয়েছেন মোড়ে মোড়ে।

 

স্মার্ট সিটি ইয়োকোহামার কারিগর

২০০৯ সালে জাপানের ইয়োকোহামা শহরের মেয়র পদে লড়াই শুরু হয়। ফুমিকো হায়াসি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে সিটি ভোট নির্বাচনে ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে ইয়োকোহামার প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন। ইতিহাস গড়ে বিশ্বের শীর্ষ মেয়রদের ডাকেন একটি সম্মেলনে। সেখানে জাপানের অন্য শহরের মেয়ররাও ছিলেন। তাদের কাছে শহর গড়ে তোলার পরামর্শ চান তিনি। ঘোষণা দেন ইয়োকোহামাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলবেন। এখানে একটু জানিয়ে রাখা ভালো, হায়াসি মেয়র হওয়ার আগে রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে। ২০০৬ সালে ফোর্বস তাকে বিশ্বের ৩৯তম প্রভাবশালী নারী বলে তালিকা প্রকাশ করে। ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রভাবশালী শীর্ষ ৫০ নারী ব্যবসায়ীর একজন তিনি। জাপানের চেইন সুপার মার্কেট দাইয়ে-এর দায়িত্ব কাঁধে তুলে তিনি অন্য উচ্চতায় চলে যান। তার কাঁধেই ইয়োকোহামাকে সাজানোর দায়িত্ব তুলে দেয় জনগণ। স্মার্ট সিটি গড়ার ঘোষণা দেওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুরো শহরের রং-রূপ বদলে ফেলেন হায়াসি। রাস্তাগুলো প্রশস্ত করেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা করেন আধুনিক। জননিরাপত্তা আর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর পর্যায়ে নিয়ে যান। ২০১২ সালে প্রায় ১৯ লাখ পর্যটক আসেন তার এই নতুন শহর দেখতে। নানান দেশের পর্যটকরা তো বটেই, জাপানের বিভিন্ন শহর থেকে জাপানিরা এসেও রীতিমতো চমকে যান। এত গোছানো, নাগরিকবান্ধব শহর তাদেরও মুগ্ধ করে। এ কারণে হায়াসিকে মডেল মেয়র হিসেবেও আখ্যায়িত করেন অনেকে।

 

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর গড়েছেন যে মেয়র

দানিউব নদীর তীরে অপূর্ব এক শহর। নাম ভিয়েনা। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় মানুষের সংখ্যা ১৮ লাখ। পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর এটি। রূপকথার গল্পেই কেবল এত সুন্দর, সাজানো ও শান্তিপ্রিয় শহরের বর্ণনা থাকে। ইউরোপের এই শহরটি মাত্র ১০ বছরে এত দারুণ রূপে সেজেছে। নাগরিক নিরাপত্তার মডেল শহর মানা হয় ভিয়েনাকে। বছর দুয়েক হলো ভিয়েনাকে স্মার্ট শহর বলে গর্ব করে ইউরোপ। কীভাবে সাজল এই শহর? পেছনে ছিলেন একজন কারিগর। তার নাম মাইকেল হাউপল। ভিয়েনার মেয়র ছিলেন টানা ২০ বছর। এই ২০ বছরে ছবির মতো করে সাজিয়েছেন পুরো শহরটিকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তা উন্নয়ন থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুল, পুলিশ সার্ভিস, পার্কÑ সব কিছুকেই সাজিয়েছেন পরিকল্পনামাফিক। একচুল নড়চড় হয়নি। যে কারণে দিনে দিনে ভিয়েনা হয়ে উঠতে থাকে ছবির মতো সুন্দর। রূপকথার রাজ্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শর্ত দিয়েই মেয়র পদে বসেছিলেন হাউপল। তিনি তার কথা রেখেছেন। এ বছর ২৪ মে তিনি মেয়র পদ থেকে অবসর নেন। শহরের মানুষ তার উন্নয়ন কর্মকান্ডে মুগ্ধ। ২০ বছর ধরে কীভাবে সাদামাটা একটা শহরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর করে গড়ে তুলেছেন, সে গল্প সবার জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

 

অপরাধের শহরকে বানালেন পর্যটকবান্ধব স্বর্গ

আলবেনিয়ার ৪৭তম প্রধানমন্ত্রী এডি রামা। অনেকেই হয়তো জানেন না, আলবেনিয়ার তিরানা শহরের মেয়র ছিলেন তিনি। ১১ বছর একটানা মেয়র থাকা এডি রামা তিরানাকে গড়ে তুলেছিলেন মডেল শহর। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত হয় যে, পুলিশের কাছে অভিযোগ আসা বন্ধ হয়ে যায় এক পর্যায়ে। ২০০০ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েই তিনি অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি লানা নদীর তীরের সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেন। পুরো শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ নেন তিনি। সোভিয়েত সময়ে গড়ে তোলা নকশা বেছে নিয়ে পুরো তিরানা শহর সাজাতে শুরু করেন তিনি।

রাস্তার দুই পাশে নতুন দালান নির্মাণ, পার্ক ও বসার জায়গা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টি কাড়েন। পর্যটকরা তার জাদুর ছোঁয়ায় বদলে দেওয়া এক শহরে সারা বছরই ভিড় করতে থাকে। ‘তিরানা সিটি মাস্টারপ্ল্যান’ ধীরে ধীরে পূরণ করেন তিনি। ২০০৪ সালে তিনি বিশ্বের সেরা মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। সেই জনপ্রিয়তার ছোঁয়াতেই পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

 

তিন বছরে ম্যাজিক দেখান হেলেন

২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেপটাউনের মেয়র ছিলেন হেলেন জিলে। মাত্র তিন বছরে একটি শহরের চেহারা পাল্টে দেওয়া যায়Ñ তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল শহর। এই শহরে বসবাসকারী ২৯ লাখ মানুষ পানি সংকটে ভুগছেন। পৃথিবীর প্রথম পানিশূন্য হওয়া থেকে কেপটাউনকে বাঁচিয়ে রাখতে হেলেন দুর্দান্ত সব আইডিয়া কাজে লাগান। পুরো প্রশাসন ঢেলে সাজিয়ে তিনি শুরুর দিকে সমালোচিত হলেও পরে প্রমাণ করেন, তিনি সঠিক ছিলেন। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি নির্দেশনা এড়িয়ে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে সজাগ করে তোলেন। এতে লাখ লাখ মানুষের কাছে তিনি রাতারাতি ম্যাজিশিয়ান হিসেবে পরিচিতি পান। যদিও শরণার্থী ইস্যুতে তিনি ছিলেন প্রবলভাবে সমালোচিত। শহরের অপরাধ কমাতে তিনি ছিলেন তৎপর। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেওয়ার ইশারার পর তিনি সংঘবদ্ধ অপরাধীদের কাছে ভিলেন হয়ে উঠলেও নগরবাসী তাকে নিয়ে ছিলেন উচ্ছ্বসিত। শহরের ছিনতাই ও ডাকাতি কমিয়ে আনায় কেপটাউনকে নতুন করে চিনতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্বজুড়ে ৮২০টি শহরের মেয়রের সঙ্গে লড়াই করে তিনি ২০০৮ সালে বিশ্বের সেরা মেয়র নির্বাচিত হন।

 

শহর উন্নয়নের মডেল তিনি

৪৬ বছর বয়সী মেয়র নাহিদ ন্যানসি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বড় শহরের মুসলিম মেয়র হিসেবে তিনি ইতিহাস গড়েন। কানাডার ক্যালগেরি শহরের ৩৬তম মেয়র তিনি। ২০১৪ সালে তিনি বিশ্বের সেরা মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ক্যালগেরি শহরের উন্নয়নে তার পরিকল্পনা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় দেখিয়েছেন। গ্রাম ও নগরের মেলবন্ধন গড়েছেন তিনি।

মূল শহরের পূর্ব দিকে থাকা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে সেখান থেকে শহর যোগ করেন তিনি। শহরের সব সুবিধা সেখানে পৌঁছে দেওয়ায় মূল শহরের সঙ্গে বেড়ে ওঠে গ্রামটি। এ ছাড়া স্কুল ছড়িয়ে দেন গোটা শহরে। মহল্লায় মহল্লায় ছোট ছোট কমিউনিটি বানিয়ে তাদের সঞ্চয় ও এলাকার উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে দেন। এতে প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন ঘটে। তার গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা দারুণ কার্যকরী হয়ে ওঠে। এ ছাড়া তিনি শহরের বাড়তি ব্যয় সংকোচন করে নগর উন্নয়নে একের পর এক প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেন।

 

সবচেয়ে সফল এথেন্সের মেয়র

২০০৫ সালে বিশ্বের সেরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ডোরা বাকোয়েনিস। সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো শহর গ্রিসের এথেন্সের মেয়র ছিলেন তিনি। এথেন্সের ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি অভূতপূর্ব কাজ করে দেখান। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি এথেন্সের মেয়র থাকাকালীন অলিম্পিক গেমস আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। এথেন্স অলিম্পিক গেমস সফলভাবে শেষ করার পেছনে তার জাদুকরী ভূমিকা উল্লেখ করা হয়। তার সময়েই এথেন্স মেট্রো সার্ভিস বিশ্বের সেরা হয়ে ওঠে। রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে তিনি যে ম্যাজিক দেখিয়েছেন তা বিশ্বে বিরল। প্রায় নয় লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করেন তিনি। তার আগে কেউ কখনো এত অল্প সময়ে এত মানুষকে শহরে থাকার ব্যবস্থা করে দেখাতে পারেননি। এথেন্সের মেয়র পদে থাকাকালীনই তিনি গ্রিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। কাজ দিয়েই তিনি প্রমাণ করেন, তিনি সেরা মেয়র।

 

 

মেশেলেনের নায়ক সোমার্স

বেলজিয়ামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বার্ট সোমার্সকে সবাই চেনেন মেশেলেনের সেরা মেয়র হিসেবে। ২০০১ সালে মেশেলেনের মেয়র পদে দায়িত্ব নেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি ‘বিশ্বের সেরা মেয়র-২০১৬’ হিসেবে নির্বাচিত হন। ৮৬ হাজার মানুষের ছোট শহর মেশেলেনের কথা বিশ্ববাসী জানতই না। কয়েক বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তিনি নতুন শহর গড়ার ঘোষণা দেন। চার বছরের ব্যবধানে মেশেলেনকে বেলজিয়ামের সবচেয়ে সুন্দর, নিরাপদ ও পর্যটকবান্ধব শহর করে তোলেন তিনি। শরণার্থীর চাপ থাকায় মেশেলেনে প্রায় ১২৮টি দেশের মানুষ রয়েছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মেশেলেনের সবাই শহর উন্নয়ন কাজে যোগ দেয়। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ শহরকে সামলানোর কঠিন চ্যালেঞ্জেও তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন উচ্চতায়। শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে তিনি পুলিশ বাহিনীকে এত সিসিটিভি ক্যামেরা দেন যে, এখন বেলজিয়ামের সবচেয়ে নিরাপদ শহর এটি।

 

 

 

সবচেয়ে বড় দুই শহরের মেয়র তারা

 

নিউইয়র্কে সব আধুনিক আয়োজন

সভ্যতার কেন্দ্রে থাকা শহর নিউইয়র্ক। যুক্তরাষ্ট্রের এই শহরে ৮৬ লাখ মানুষের বসবাস। বিশ্বের সবচেয়ে জমকালো শহরগুলোর একটি এটি। বলা হয়, প্রতিদিন উন্নয়নের পথে এক পা করে আগানো শহর এটি। নিউইয়র্ক, পর্যটক ও শহরবাসীর পদচারণায় ২৪ ঘণ্টাই মুখর থাকে। না ঘুমানো এই শহরে সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা- নিরাপত্তা, সড়ক, ট্রাফিক, ড্রেনেজ, আবর্জনা সরানো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ এক মিনিটও থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিউইয়র্কের এসব চ্যালেঞ্জ কাঁধে নিয়েছেন মেয়র বিল ব্লাসিও। চার বছর ধরে নিউইয়র্কের উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন তিনি। সবার চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকার কথা দিয়ে নগরবাসীর মেয়র হয়েছিলেন তিনি।

 

বড় শহর দেখভালের মডেল তিনি

চীনের সাংহাই বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর একটি। ২৪ মিলিয়ন মানুষের শহর সাংহাই। ইয়াং শিয়ং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাংহাইয়ের মেয়র ছিলেন। মানুষের চাপে ধুঁকতে থাকা এই শহরে বাসা ভাড়া খুব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রচন্ড  ট্রাফিক জ্যামে নাকাল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণেও সংকটে পড়তে হয় সাংহাইকে। ব্যবসায়িক কেন্দ্র হওয়ায় সাংহাই শহরের বিশ্রামের সুযোগ নেই। ইয়াং শিয়ং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় মেয়র পদে বসে তিনি আরও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। মেয়র পদে বসেই তিনি নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন। ২০১৭ সালে তিনি পদত্যাগ করলে সাংহাইয়ের নতুন মেয়র হন ইং ইয়ং। এ সময় বড় শহর সামলানোর উদাহরণ হতে পারেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর