বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত বইমেলা

সাইফ ইমন

বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত বইমেলা

আমাদের দেশে ১৯৬৫ সালে প্রথম বইমেলার আয়োজন করা হয়। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির নিচতলায় সেই মেলার আয়োজন করেন। সে জায়গাটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি। প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্র“য়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শিল্পমনস্ক মানুষের মিলনমেলায় রূপ নেওয়া এই আসর বসে বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের মেলা। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে প্রতি বছরই বিখ্যাত সব বইমেলার আয়োজন হয়ে থাকে...

 

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

বাংলাদেশ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। প্রতি বছর বাংলা একাডেমি এই মেলার আয়োজন করে আসছে। ভাষার মাস ফেব্র“য়ারিজুড়েই চলে এই বইমেলা। বর্তমানে বাংলা একাডেমি চত্বরের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত মেলার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে  শহীদদের স্মরণে এই মেলা আয়োজন করা হয়। ভাষা শহীদদের উদ্দেশ করে বইমেলার আয়োজন বিশ্ব  ইতিহাসে বিরল। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর কয়েক হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয় মেলায়। এই মেলা শুধু বইমেলা নয় বরং জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই মেলার একটি বিশেষ দিক হলো, এখানে মেলাকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি দৈনিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ হয়। এই মেলায় শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। মেলা চলাকালীন প্রতি শনিবার ‘শিশু প্রহর’ ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের প্রকাশনাগুলো নিয়ে আলাদা চত্বর থাকে।

 

কলকাতা এশিয়ার সেরা

ভারত

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইমেলার স্থানটি দখল করে আছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। কারণ এখানে সবচেয়ে বেশি পাঠক সমাবেশ ঘটে। এশিয়ার প্রধান বইমেলাও বলা হয় একে। আবার অনেকে এই বইমেলাকে অবাণিজ্যিক বইমেলা হিসেবেও সম্বোধন করে থাকেন। বাংলা ভাষাভাষীর পাঠকদের জন্য কলকাতা বইমেলার গুরুত্ব অন্যতম। বর্তমানে সায়েন্স সিটির পাশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বইমেলা। কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়োজনে ১৯৯২-এর আগ পর্যন্ত দুটি পৃথক বইমেলা হতো। এখন সে দুটি মেলা একীভূত করা হয়েছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা নামেই সারা বিশ্বে এখন পরিচিত এটি। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের জন্যও একটি আলাদা প্যাভিলিয়ন থাকে।

প্রতি বছর কোনো একটি দেশকে ‘মূল থিম’-এর মর্যাদা দিয়ে কলকাতা বইমেলা সাজানো হয়। ২০১৬ সাল ছিল চে গুয়েভারার বলিভিয়ায় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ৫০ বছরপূর্তি। তাই এই বইমেলার মূল থিমের দেশ ছিল বলিভিয়া। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১৭-এর থিম দেশ ছিল কোস্টারিকা। গত ২৫ জানুয়ারি এই বইমেলা শুরু হয়ে ১০ দিন স্থায়ী হয়। প্রথা অনুযায়ী কাঠের হাতুড়ি ঠুকে মেলার সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

মহাশ্বেতা দেবী, সৈয়দ শামসুল হক, ফাদার দঁতিয়েন এবং উমবের্তো একো- এই চার প্রয়াত সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নীল ও’ ব্রায়েনের স্মরণে এবারের কলকাতা বইমেলায় পাঁচটি হলের নামকরণ করা হয়েছিল। এছাড়াও তিনটি হল ছিল ভগিনী নিবেদিতা, কবি-প্রাবন্ধিক সমর সেন এবং সাহিত্যিক-সম্পাদক দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে। ২৭ জানুয়ারি দিনটি কলকাতা বইমেলায় পালিত হয় ‘কোস্টারিকা দিবস’ হিসেবে আর ৫ ফেব্র“য়ারির দিনটি পালিত হয় ‘বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে। বাংলাদেশের অনেক প্রকাশক, লেখক এই মেলায় প্রতি বছর অংশগ্রহণ করে থাকেন।

 

লন্ডন বুক ফেয়ার

ইংল্যান্ড

লন্ডন বুক ফেয়ার ইংল্যান্ডের লন্ডনে আয়োজিত সবচেয়ে বড় বইমেলা। সাধারণত এই মেলা বসে প্রতি বছর এপ্রিল মাসে। একশটিরও বেশি দেশের প্রায় ২৩ হাজার প্রকাশক, গ্রন্থবিক্রেতা, লিটারারি এজেন্ট, গ্রন্থাগারিক, গণমাধ্যম ও শিল্প সরবরাহকারী এই মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। বই প্রকাশকরা লন্ডনে এসে তাদের প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচার চালান এবং অন্যান্য প্রকাশনী থেকে বইয়ের পরিবেশনা ও অনুবাদ স্বত্ব¡ কেনেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে একটি হোটেলের বেজমেন্টে লিওনেল লেভেনথাল নামক একজন প্রকাশকের উদ্যোগে এই বইমেলার গোড়াপত্তন হয়। ২০০৬ সালের আগে এই মেলাটি আয়োজিত হতো লন্ডনের অলিম্পিয়া প্রদর্শনী কেন্দ্রে। কিন্তু সে বছর থেকে এটি লন্ডন ডকল্যান্ডের এক্সেল প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৫ সালে আবার এই মেলা ফিরিয়ে আনা হয় অলিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে। ইউরোপের বইপ্রেমীদের অন্যতম বৃহৎ মিলনমেলা ঘটে লন্ডন বইমেলায়।

 

১২ লাখ বইপ্রেমীর মেলা

আর্জেন্টিনা

বিশ্বের অন্যতম প্রধান বইমেলার একটি হলো বুয়েন্স আয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার। এই মেলা ১৯৭৫ সাল থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর বুয়েন্স আয়ার্স বইমেলা বসে এপ্রিল মাসে। এই মেলার আয়োজন হয় আর্জেন্টাইন রুরাল সোসাইটির ৪৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে। প্রচুর দেশি-বিদেশি লেখকের মিলনমেলা ঘটে এখানে। সাড়ে সাত হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো বুয়েন্স আয়ার্স আন্তর্জাতিক বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সময়টা ১৯৭৫ সালের মার্চে। সেই মেলায় ৫০ জন লেখক এবং আর্জেন্টিনার বাইরের আরও ৭টি দেশ অংশ নিয়েছিল এবং দর্শনার্থী হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ। এখন অন্তত ৫০টি দেশের অংশগ্রহণে এই মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখে। প্রতি বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়া এই মেলা চলে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত। আর্জেন্টাইন সোসাইটি অব রাইটার্সের প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা ‘ফান্দাসিঁও এল লিব্রো’ বুয়েন্স আয়ার্স বইমেলার আয়োজন করে থাকে।

 

শিশুদের জন্য যে বইমেলা

ইতালি

শিশুসাহিত্যের জন্য ‘বলগ্না চিলড্রেনস বুক ফেয়ার’ একটি প্রধান বইমেলা। ১৯৬৩ সাল থেকে প্রতি বছর মার্চ এবং এপ্রিলের চার দিন এই মেলা ইতালির বলগ্নায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রকাশক মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। শিশুসাহিত্য, শিশু চলচ্চিত্র এবং এনিমেশন নিয়ে যারা বিশ্বজুড়ে কাজ করেন তাদের জন্য এই মেলা যেন তীর্থস্থানীয়। বিশ্বজুড়ে সবার কাছেই বইমেলা অসম্ভব জনপ্রিয়। তারাই মূলত এখানে শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আসেন। শুধু জ্ঞান আহরণের জন্য নয়, বরং আনন্দ উপভোগের জন্যও বই পড়া যায়। অনেক পাঠকই আছেন যাদের কাছে বই পড়ার আনন্দ সত্যিই অতুলনীয়। আর শিশুদের বেশি বেশি বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মেলার প্রধান উদ্দেশ্য। বইমেলার বিভিন্ন স্টলে প্রায়ই বড় করে লেখা থাকে- ‘রিডিং ফর প্লেজার’ যার একটাই অর্থ, ‘পড়ুন আনন্দের জন্য।’ অর্থাৎ শিশুদের একাডেমিক বই পড়ার পাশাপাশি বই পড়ার আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দিতে হবে। শুধু শিশুদের কথা মাথায় রেখে শিশুদের উদ্দেশ করে এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশ্বসাহিত্যের একটা বড় ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাজুড়ে আছে শিশুসাহিত্য। তাই শিশুসাহিত্যে যারা কাজ করে আসছেন তাদের অনুপ্রাণিত করতে এই বইমেলায় শিশুসাহিত্য, চলচ্চিত্র ও এনিমেশন ইত্যাদিতে কৃতিত্ব রাখার জন্য মোট চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। একে বলা হয়ে থাকে বলগ্না রাগাজ্জি অ্যাওয়ার্ড। বিশ্বজুড়ে যারা শিশুদের জন্য কাজ করেন তাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। চারটি ক্যাটাগরি হচ্ছে কল্পকাহিনি, নন-ফিকশন, নিউ হরিজনস (যা পাশ্চাত্যের বাইরে হতে হবে) এবং ওপেরা প্রিমা (যা কিছু প্রথম)। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা এই মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। এই মেলা চলাকালীন আরও কিছু প্রধান অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। যেগুলোর মধ্যে বিয়ানুয়াল হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন অ্যাওয়ার্ডস এবং দ্য লিন্ড গ্রিন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।

 

ওয়েস্ট হলিউডে নিজস্ব প্রকাশনা

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডে এই মেলা বসে। আয়োজনের দিক দিয়ে এই বইমেলা একযুগ অতিক্রম করেছে। শিল্প-সাহিত্যের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা রচিত হয় এই বইমেলায়। এই মেলাকে ‘উইহ রিডস’ও বলা হয়ে থাকে। এখানে বিশ্বখ্যাত লেখকদের বই প্রকাশ পায়। গত বছর এই মেলায় টিসি বয়েলের একটি নতুন গল্পসমগ্র বের হয়েছে। এই মেলায় রয়েছে লেখকদের নিজস্ব প্রকাশনার সুযোগ।

 

বাল্টিমোরে লেখক ওয়ার্কশপ

ম্যারিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর বাল্টিমোরে সেপ্টেম্বর মাসে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের লেখকদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। এছাড়াও মেলার পুরো সময় চলে লেখালেখি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ। বই প্রদর্শনের পাশাপাশি এখানে নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। শিশুদের জন্য মেধা ও মনন বিকাশের লক্ষ্যে সৃষ্টিশীল বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও চলে।

 

মিয়ামিতে পান্ডুলিপি প্রদর্শন

প্রতি বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হয় মিয়ামি আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই বইমেলা একযুগ ধরে নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। এখানে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৩৫০ জনের ওপরে লেখক অংশগ্রহণ করেন। তাই অনেকে লেখকদের মিলনমেলা বলেও সম্বোধন করে থাকেন। প্রায় ২৫০-এর বেশি প্রকাশনা কেন্দ্র মেলায় অংশগ্রহণ করে। এই মেলার একটি বিশেষত্ব হলো এখানে প্রকাশিত বইয়ের লেখক প্রদত্ত পা-ুলিপি প্রদর্শন করা হয়।

 

আরব বিশ্বে সেরা কায়রো

মিসর

মিসরের কায়রোতে বড় পরিসরে ‘কায়রো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার’ নামে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মেলা বিশ্বের শীর্ষ বইমেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। এটি আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলাও বটে। কারণ আরবি ভাষায় রচিত বইগুলোর প্রতি পাঁচটি বইয়ের মধ্যে তিনটিই প্রকাশ করে কায়রোভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো। ফলে আরব বিশ্বে বইয়ের জন্য সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এই মেলা। ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পর দ্বিতীয় প্রধান বইমেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল কায়রো বইমেলা। মিসরের সরকারি প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সংস্থা জেনারেল ইজিপশিয়ান বুক অর্গানাইজেশন এই মেলার আয়োজন করে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই বইমেলা। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই মেলা বসে এবং তিন সপ্তাহ ধরে চলে। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই কায়রো ইন্টারন্যাশনাল গ্রাউন্ডে এই মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে।

 

মস্কোতে ‘লেটস রিডস’

রাশিয়া

পৃথিবীর অন্যতম বইমেলা বসে মস্কোতে। নাম মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে মস্কো এক্সিভিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার বা মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা। মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে নানা ধরনের ওয়ার্কশপ, গোলটেবিল বৈঠক, লেখকদের নিজস্ব আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। সেই সঙ্গে আগত অতিথিদের অটোগ্রাফ সংগ্রহের আলাদা ব্যবস্থা থাকে এবং লেখকদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতার একটি ভালো সুযোগ মেলে। ১৯৭৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর মস্কোতে এই বইমেলা প্রথম শুরু হয়েছিল। এখানে রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো অংশ নেয় এবং পাঠকরা বিশেষ মূল্যে বই কিনতে পারে। এই মেলায় শিশুদের জন্য ‘লেটস রিডস’ নামে একটি কর্নার নির্ধারিত আছে। যেখানে শিশুসাহিত্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। মস্কোতে শরতের সময় আয়োজিত এই বইমেলায় বইপ্রেমীদের ভিড়ে মুখরিত হয় প্রাঙ্গণ।

 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা

জার্মানি

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা বাণিজ্যিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। প্রাচীন এই মেলা ১৭ শতক থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে কিছুদিন এই মেলা বন্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯-এ সেন্টপল চার্চে এই বইমেলা নতুন করে শুরু হয়। তারপর থেকে নিয়মিতভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মেলা। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সাধারণত মেলার আয়োজন করা হয়। মাত্র পাঁচ দিনের এই মেলার প্রথম তিন দিনই নির্ধারিত থাকে শতাধিক দেশ থেকে আগত পাবলিশিং কোম্পানি এবং বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য। শেষ দুই দিন সাধারণ দর্শকদের জন্য উš§ুক্ত করা হয় মেলা প্রাঙ্গণ। সাধারণত দুই থেকে তিন লাখ দর্শকের সমাগম ঘটে এই মেলায়। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে বিশ্বের প্রধান বইমেলা বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মূলত বই বিক্রির পরিবর্তে বই প্রকাশনা সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং রাইটস, লাইসেনসিং ফিস, ডিলস এবং ট্রেডিংয়ের কাজ করে থাকে।

 

স্পেনের জনপ্রিয় বইমেলা

স্পেন

স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের জন্য সবচেয়ে প্রখ্যাত বইমেলা হলো গুয়াডালাজারা বইমেলা। প্রতি বছরের শেষদিকে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম ঘটছে না। ২৫ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে গুয়াডালাজারা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এটি হলো স্প্যানিশ সাহিত্য অনুরাগীদের জন্য একপ্রকার তীর্থ স্থান এবং আগত দর্শনার্থীর দিক থেকে বুয়েন্স আয়ার্সের বইমেলার পরই এর অবস্থান। প্রচুর বইপ্রেমীর আগমন ঘটে এই মেলায়। বিশ্ব মিডিয়ায় বইমেলাটি স্প্যানিশ নামের আদ্যাক্ষরগুলোর সমন্বয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। গুয়াডালাজারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে এই বইমেলা প্রথম শুরু হয়। সময়টা তখন ১৯৮৭ সাল। এই মেলা মূলত মেক্সিকোর জালসিকোতে আরম্ভ হয় প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ শনিবারে। চলে একটানা নয় দিন। ৪০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে মেলা বসে। ২০১৬ সালে এই মেলায় অংশ নিয়েছে ৪৩টি দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার প্রকাশনা সংস্থা। সেবার মেলায় দর্শনার্থী আসে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ।

সর্বশেষ খবর