শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেসবুকে ফিরে পাওয়া

সাইফ ইমন

ফেসবুকে ফিরে পাওয়া

হারানো শিশুকে ফিরে পাওয়া

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ১ ঘণ্টায় হারানো শিশুকে পেলেন বাবা-মা। বরিশাল নগরের কাউনিয়া থানা পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে তার বাবা-মা ফিরে পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আমানতগঞ্জ এলাকার শহীদ শুক্কুর গফুর পার্কের সামনের রাস্তায় চার বছরের শিশুটি ঘোরাফেরা করছিল। বিষয়টি কাউনিয়া থানা পুলিশের সদস্যদের নজরে এলে তাকে তাদের হেফাজতে নেয়। পরে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার নাম জান্নাত এবং তার বাবার নাম হেলাল ও মায়ের নাম সালমা। তবে সে তার ঠিকানা বলতে পারছিল না। তখন থানা পুলিশের সদস্যরা ফেসবুকে থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই তানজিল আহমেদের ফোন নম্বরসহ একটি স্ট্যাটাস দিলে তা নজরে আসে বাবা-মার।

 

১০ বছর পর ছেলের ঘরে ফেরা

১০ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন বাবা-মা। এমন মুহূর্ত নিশ্চয়ই অসাধারণ সবার জন্যই। এমনটি ঘটেছে একটি ফেসবুক লাইভের কল্যাণে। মাত্র সাত বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় শফিকুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধুলিহর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন তাদের ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর বহু দিন সন্তানের খোঁজ করেছেন বাবা-মা। এক সময় সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। তবে ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ১০ বছর পর বাবা-মা ফিরে ফেলেন তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরকান ইউনিয়নের শ্রীগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শেখ জসিম কুড়িয়ে পাওয়া শফিককে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন।

 

৪৭ বছর পর হারানো বাবাকে ফিরে পাওয়া

ফেসবুকের বদৌলতে ৪৭ বছর পর বাবাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা। নিখোঁজ হয়েছিলেন যুবক বয়সে। করতেন ব্যবসা-বাণিজ্য। একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরা হয়নি তার। এর মাঝে কেটে যায় ৪৭টি বছর। এত দিন তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন মাজারে মাজারে। পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। তারা অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য বলে কথা! ফেসবুকের বদৌলতে তিনি ৭৮ বছর বয়সে ফিরে এলেন আপনজনের কাছে। ছেলে-সন্তানরা ফিরে পেয়েছেন তাদের হারানো বাবাকে। তিনি হলেন মো. হাবিবুর রহমান। বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামে। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন বিয়ানীবাজারের পৌর এলাকার কসবা গ্রামে বসবাস করেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে তিনি বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। কিন্তু এর পর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পর তার সন্ধান না পেয়ে হতাশায় কেটেছে প্রায় অর্ধশত বছর। হাবিবুর রহমানের চার ছেলের মধ্যে দুজন থাকেন লন্ডনে। ছেলেরা বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় বিভিন্নভাবে খুঁজছিলেন। অবশেষে ফেসবুকে এক ভাইরাল ভিডিওর মাধ্যমে হাবিবুর রহমানকে ফিরে পায় তার সন্তানরা।

 

হারানো ছেলেকে খুঁজে পেলেন মা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে হারিয়ে যাওয়ার ছয় দিন পর লিমন মিয়াকে ফিরে পেয়েছেন মা-বাবা। বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় প্রতিবন্ধী লিমন। সে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, উপজেলা সদরের কান্দাপাড়ার কৃষক ছিদ্দিক মিয়া দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ির পাশে রাস্তায় অচেনা একটি ছেলেকে দেখতে পান। পরিচয় জানতে চাইলে সে শুধু মায়ের কাছে যেতে চায়। ছেলেটি নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি। পরে সোমবার বিকালে তিনি লিমনকে থানায় নিয়ে যান। ছেলেটিকে তার মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিতে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মাইকিং করান ছিদ্দিক মিয়া। ওইদিন ছিদ্দিক মিয়ার প্রতিবেশী ফারুকুল ইসলাম বুলবুল লিমন মিয়ার ছবি ফেসবুকে আপলোড করে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাস দেখে ফারুকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন লিমনের এক আত্মীয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে মা-বাবার কাছে ফিরে যায় সে। কৃষক সিদ্দিক মিয়া গণমাধ্যমে বলেন, লিমনকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুশি। খুব চিন্তায় ছিলাম ছেলেটিকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব কি-না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

 

ছয় বছরের রানীকে ফিরে পাওয়া

হারিয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ নয় মাস নিখোঁজ ছিল শিশু রানী। অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে বাবা-মা খুঁজে পেলেন শিশু রানীকে। নয় মাস আগে বগুড়ায় বাড়ির পাশে খেলতে থাকা ছয় বছরের রানীকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে চুরি করে নিয়ে যায় এক নারী। খুঁজে পাওয়ার পর বগুড়া সদর থানার পুলিশ শিশু রানীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করে। একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে আবেগে ভাসেন রানা শেখ ও লিপি বেগম দম্পতি। মা লিপি বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রানী ছিল আমার সংসারের রাজকন্যা। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আমার সুখের রাজ্যটা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় বাকরুদ্ধ ছিলাম। নয় মাস পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। রানী ফিরে আসায় সাত রাজার ধন ফিরে পেয়েছি।’ রানীর বাবা রানা শেখের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরাবাজার গ্রামে। রানা শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের ১ ডিসেম্বর রানী বিসিক এলাকার সিএনজি স্টেশনের সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। এ সময় এক নারী চকলেটের লোভ দেখিয়ে রানীকে ডেকে নেয়। বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেয়েটির ছবি দিয়ে তার মা-বাবার সন্ধান চান। সেখান থেকে ছবিটি শেয়ার করেন সাখাওয়াত জনি নামের এক গণমাধ্যমকর্মী। সাখাওয়াত জনির ফেসবুকে শেয়ার করা শিশুটির ছবি দেখে চিনতে পারেন বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় রানীদের প্রতিবেশী মাসুম তালুকদার। আর এভাবেই হারানো সন্তানকে ফিরে পান বাবা-মা।

 

ছেলেকে পেলেন মা

ফেসবুকের কল্যাণে ১৫ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন মা। রূপকথাকে হার মানিয়েছে এ ঘটনাটি। ফেসবুকের কল্যাণে ১৫ বছর আগে ‘হারানো’ ছেলেকে ফিরে পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক মা। জনাথন নামে ওই ছেলের মা হোপ হল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। জনাথনের বয়স যখন তিন বছর তখন তাকে নিয়ে মেক্সিকোতে চলে যান হল্যান্ডের স্বামী। আর কোনো দিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এত কম বয়সে মায়ের কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ায় মায়ের স্মৃতি কিছু মনে ছিল না জনাথনের। জনাথনকে ফিরে পাওয়ার আশায় নিজের ফেসবুক একাউন্টে জনাথন নামের সবাইকে ফেন্ডলিস্টে রেখেছিলেন তিনি। একদিন নিজের সঙ্গে থাকা ছোটবেলার ছবি জনাথন পোস্ট করলে ঠিকই নজরে আসে মায়ের। ছবিটিতে জনাথন ও তার বড় ভাই জ্যাকবকে খালি গায়ে একটি বাথটাবে খেলতে দেখা যায়। এরপরই মা-ছেলের মধুর মিলন ঘটে।

 

স্বামীকে ফিরে পেলেন স্ত্রী

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার খারুভাজ গ্রামের বাড়ি থেকে বাজার করতে গিয়ে প্রায় ১০ বছর আগে নিখোঁজ হন সিদ্দিক হোসেন। এই ১০ বছর বহু খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এক সময় পরিবারের লোকজন আশাই ছেড়ে দেন। ফিরে পাওয়ার ৬ দিন আগে সিদ্দিক মিয়াকে হারাগাছ মেট্রো থানার বাহার কাছনা এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখেন ওই এলাকার বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম। পরে তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করান। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে হারাগাছ থানায় জিডি করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃদ্ধ সিদ্দিক হোসেনের ছবি পোস্ট করেন। আর এভাবেই সিদ্দিক হোসেন তার পরিবারকে ফিরে পান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি ক্রাইম) কাজী মোস্তাকি ইবনু মিনান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহিগঞ্জ জোন ফারুক আহমেদ, হারাগাছ থানার ওসি রেজাউল করীমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

 

জমি ফিরে পেলেন রাহেলা

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী রাহেলা খাতুনকে তার বাবার সম্পত্তির ৩ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দিয়ে ঠাঁই করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ। গত বছর একটি অনলাইনে এমন খবর প্রকাশের পর তা ভাইরাল হয়। অনেকেই শেয়ার করেন খবরটি। ফেসবুকের কারণেই এমন ঘটনার উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। জানা যায়, রাহেলার কুঁড়েঘরের সেই জমিটুকু মেপে ৩ শতাংশ জমিতে পিলার দিয়ে সীমানা করে দেয় প্রশাসন। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমিটা নিজেদের দাবি করে ঘর নির্মাণে বাধাসহ উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল। প্রভাবশালীদের ভয়ে কোনো কথা না বললেও পরে কয়েকজন প্রতিবেশী ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফেসবুক আইডিতে মেসেজ দিলে বৃদ্ধা তার প্রাপ্য ফিরে পান। তাৎক্ষণিক ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী রাহেলা খাতুনকে জমি বুঝিয়ে দেন।

 

নদীতে হারানো সন্তান

নদীতে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেলেন বাবা-মা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ঘটনার ১৯ দিন পর হারিয়ে যাওয়া প্রতিবন্ধী সন্তান সাবিহাকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা বাবা-মা। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিপিএম শিশু সাবিহাকে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। মানিকগঞ্জ থেকে ১৯ দিন আগে সাবিহাকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় পান মফে বিশ্বাস নামে এক জেলে। পরে তিনি মেয়েটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ সুপার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উদ্ধার হওয়া শিশু সাবিহার ছবি আপলোড করেন। এর পর ওই ছবির সূত্র ধরে সাবিহার বাবা  মিলন ও মা হাজেরা খাতুন তাদের হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে চিহ্নিত করেন। এর পরই মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার ১৮ দিন পর শিশু সাবিহা তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পেরেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর