বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিস্ময়কর যত সেতু

সাইফ ইমন

বিস্ময়কর যত সেতু

জীবনযাত্রাকে সহজ করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় সেতু। দুর্গম এলাকা, জলপথ, গিরিখাত বা পাহাড় থেকে জনপদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এসব সেতু রাখে মূল ভূমিকা। সেতুর নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক সময় বিবেচিত হয় পর্যটনস্থান হিসেবে। কোথাও কোথাও চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুগুলো সব সময় আরামদায়ক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিস্মিতও করবে আপনাকে। প্রযুক্তির সহায়তায় এমন অ™ভুত সুন্দর বিস্ময়কর সেতু নিয়ে আজকের রকমারি... 

 

রোলিং করে ফোল্ড করে রাখা যায়

রোলিং ব্রিজ

১২ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই রোলিং সেতুটি দেখলে যে কেউ খুবই চমকপ্রদ হবেন। ২০০৪ সালে এই সেতুটি তৈরি করা হয় গ্র্যান্ড ইউনিয়ন প্রজেক্টের অংশ হিসেবে। একে অনেক সময় কার্লিং সেতু হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি রোবোটিক আর্মের মতো কাজ করে এবং প্রয়োজন ছাড়া এটিকে রোলিং করে ফোল্ড করে রাখা যায়। ফোল্ড করা অবস্থায় এটি দেখতে আরও বেশি চমকপ্রদ বলে মনে হয়। ট্রায়াঙ্গুলার স্টিল সেগমেন্ট, অ্যাকটরস, লাটওয়েট ইত্যাদি দ্বারা এটি তৈরি করা হয়েছে। সেতুটি যখন ফোল্ড করা হয় তখনো এটি দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আর সেতুটির ‘রোলিং’ নামকরণ করা হয়েছে এটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। কোনো নৌযান যেন চলাচল করতে পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা।  

 

প্রয়োজন হলেই ওপরে উঠে  যেতে পারে

জ্যাকুইস চাবান

ফ্রান্সে অবস্থিত এই অনিন্দ্য সুন্দর পন্ট জ্যাকুইস চাবান সেতু। একে বলা হয় ভার্টিক্যাল লিফট ব্রিজ। কারণ এটি ঠিক লিফটের মতোই ওঠা-নামা করতে পারে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় তৈরি হয়েছে এমন ব্রিজ। কারণ এই নদীর ওপর দিয়ে অনেক বিশালাকার জাহাজ চলাচল করে থাকে। তাই অনেক দিন ধরে এই নদীর ওপর কোনো সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে অনেক গবেষণা করে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। পানি থেকে পাশের ভূপৃষ্ঠ খুব বেশি উঁচুতে নয়। এখন আর বড় কোনো নৌযান চলাচল করতে কোনো সমস্যা নেই এখানে। যখনই বড় আকৃতির কোনো জাহাজ চলে তখনই ব্রিজটি লিফটের মতো করে উপরে উঠে যায়। তখন নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল করে।

 

স্বচ্ছ কাচের মেঝে বিশিষ্ট সেতু

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গ্লাস ব্রিজ

জাংজিয়াজি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গ্লাস ব্রিজটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ও দীর্ঘ কাচের সেতু বলে দাবি করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে চীনের জাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্ক গিরিখাতের প্রায় ১ হাজার ফুট উপরে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৫০ ফুট ও প্রস্থে প্রায় ২০ ফুট। নির্মাণ খরচ পড়েছে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। ব্রিজটির নকশা করেছেন ইসরায়েলের স্থপতি হাইম ডটান। স্বচ্ছ কাচের মেঝেবিশিষ্ট সেতুটি দূর থেকে দেখে মনে হবে দুই পাহাড়ের মধ্যে টাঙানো সাদা চিকন সুতা। উচ্চতাভীতি থাকুক বা না থাকুক যে  কেউ সেখানে গেলে আতঙ্কিত হতে পারেন। কেননা আপনার মনে হতে পারে শূন্যে ভাসছেন বা পিছলে পড়ে যাচ্ছেন আপনি। দর্শনার্থীরা এই ব্রিজ দেখতে ছুটে আসেন সব সময়ই।

 

প্রতিদিন ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে

সানশাইন

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সানশাইন ব্রিজটি আত্মহত্যার জন্য আলোচনায় থাকে। ১৯৮৭ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ মানুষ এখান থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৬.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৯৪ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির উচ্চতা ৪৩০ ফুট। আর তাই হয়তো নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য মানুষ এটিকেই বেছে নেন। এই ব্রিজের সবচেয়ে লম্বা স্প্যানটির দৈর্ঘ্য ১২শ ফুট। প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে আত্মহত্যার স্থান হিসেবে কলঙ্কমাখা সেতুটির একটি অন্ধকার অতীত রয়েছে। এই সেতু থেকে নিয়মিত আত্মহত্যার ঘটনা মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করেছে।

 

নাগরদোলার মতো ঘুরে ঘুরে এই সেতুর ধরন পাল্টায়

ফলক্রিক হুইল ব্রিজ

নাগরদোলায় চড়েছেন নিশ্চয়ই। নাগরদোলায় চড়ার অনুভূতি পাবেন এই ফলক্রিক হুইল সেতুতে। কিন্তু এটি হয় সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে। স্কটল্যান্ডে ২০০২ সালে এই সেতুটি উদ্বোধন করা হয় মিলেনিয়াম লিংক প্রজেক্টের মাধ্যমে। সেন্ট্রাল স্কটল্যান্ড নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এই সেতু। সেতুটির নিচে দিয়ে যে কোনো জলযান গেলে প্রায় ৮০ ফুট ওপরে উঠতে পারে। আর সেতুটি ওপরে ওঠার সময় জলযান এর নিচ দিয়ে চলে যেতে পারে। গোটা বিশ্বে এমন আর একটিও সেতু নেই। কারণ এই সেতুটি দুটি নদীর মাঝে একটি বন্ধন তৈরি করেছে।  এক নদী থেকে উঠে অন্য নদীতে চলে যাওয়ার মতো বিষয় অনেকটা। এতে যাতায়াতকারীদের সময়ও বেঁচে যায় অনেকখানি। অনেক মানুষ এখানে দর্শনার্থী হিসেবেও আসেন।     

 

অসম্ভব দৃষ্টিনন্দন এই সেতু

গেইটসহেড মিলেনিয়াম

গেইটসহেড মিলেনিয়াম বিস্ময়করই শুধু নয় এটি চমকপ্রদও বটে। দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের তাইনি নদীর ওপর দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০১ সালে এটি প্রথম জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই সেতুটি অনন্য দৃষ্টিনন্দন। এর ডিজাইন অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। তাইনি নদীর উত্তর তীরে গেলেই সেতুটি চোখে পড়বে। এই সেতুটি কোনো জলযান চলাচালের সময় নিজে থেকে উপরের দিকে উঠে যায়। আবার নিজে থেকেই নিচে নেমে আসে। এটি ভারী যানবাহনের জন্য ব্যবহৃত হয় না। শুধু মানুষ হেঁটে এর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। অনেক দর্শনার্থী বিকাল বা সন্ধ্যায় ঘুরতে আসে এখানে। আবার নববর্ষের সময় এখানে নানা রকম পার্টি-কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

 

ইয়েলো রিভারের ওপরে মনে হবে জলপ্রপাত

সাসপেনশন ব্রিজ

২০০৪ সালে চীনের প্রাচীন ইয়োলো রিভার, নিংজিয়ায় ২.৬ মিটার প্রশস্ত ও ৩২৮ মিটার দীর্ঘ একটি কাঠের সাসপেনশন সেতু উদ্বোধন করা হয়। পানি থেকে এর উচ্চতা রাখা হয় মাত্র ১০ মিটার। ২০১৭ সালে এসে সেতুটির কাঠের প্যানেলগুলো সরিয়ে কাচের প্যানেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে সেতুটি যেন হঠাৎ করেই বেশি রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। পরিষ্কার, স্তরযুক্ত, টেম্পারেড কাচ, যা দেখে দর্শকদের মনে হতে পারে পায়ের নিচে ছুটে যাচ্ছে বাদামি পানির প্রবাহ। তবে বিল্ট-ইন ৩ডি দৃশ্যের সঙ্গে কাচের স্তরগুলো এমন কৌশলে আঁকা তাতে মনে হতে পারে, খাড়া পাহাড়ের ওপর ছুটে আসছে জলপ্রপাত, কোথাও কোথাও ভয়ঙ্কর উপত্যকায় ডুবে আছে পথ।

 

পাহারের কিনারা থেকে শূন্যের দিকে

ইউনিয়াং লং গাং

২০১৫ সালে চিংকিয়ের থ্রি জর্জেস জলাশয় অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে ইউনিয়াং লং গাং জিওলজিক্যাল পার্কে অশ্বক্ষুরাকৃতির ২৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ঝুলন্ত সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। এই অঞ্চলের পর্যটনস্থান বলতে গুহা, বন, পাহাড় এবং গিরিখাত রয়েছে। এই ধারণাটি বিশ্বের দীর্ঘতম ও বড় খিলানের আকাশচুম্বী সেতু নির্মাণের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সুরক্ষার সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি ‘এ’ অক্ষরের আকৃতিতে নির্মিত ইউনিয়াং সেতুটি নতুন দর্শনার্থীদের জন্য বেশ ভয়ঙ্কর বলা যায়। তবু শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য থেকে নিজেদের বঞ্চিত করতে চান না। মাটির স্তর থেকে এটি প্রায় ২০০ মিটারের বেশি উঁচু পাহাড়ের সঙ্গে ক্লিপের সঙ্গে আটকে ঝুলে আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর