বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্ল্যাকমেইলের শিকার তারকারা

ব্ল্যাকমেইলের শিকার তারকারা

তারকাখ্যাতি যেমন গর্বের তেমনি আশঙ্কারও। হাজার ভক্তের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধালোভীরা সৃষ্টি করে নানা ধরনের বিড়ম্বনা। মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে এসব তারকার গোপন তথ্য প্রকাশ্যে আনার হুমকি দেওয়া হয়। নিজেদের তারকাখ্যাতির সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নানা সময়ে ব্যক্তিগত ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন বহু তারকা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন-  তানিয়া তুষ্টি

 

জেফ বেজোস

বেজোস বলেন, ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হয়ে তিনি অনেক শক্তিশালী মানুষের শত্রু হয়েছেন, যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প

বহুজাতিভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক ই-কমার্স সাইট আমাজন ডটকম। এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস সম্প্রতি শিকার হয়েছেন ব্ল্যাকমেইলের। বিশ্বের এই শীর্ষ ধনীর অভিযোগ মার্কিন ট্যাবলয়েড সাময়িকী ন্যাশনাল এনকোয়ারারের মালিক ডেভিড পেকারের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার এক ব্লগ পোস্টে বেজোস জানান, একটি ই-মেইল আমেরিকান মিডিয়া ইনকরপোরেশনের (এএমআই) প্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাকে হুমকিস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। বেজোস ও তার প্রেমিকা লরেন সানচেজের অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশের কথাও বলা হয়েছে তাতে। বেজোসের অভিযোগ, ওই প্রতিষ্ঠান তাকে একটি তদন্ত করতে নিষেধ করেছে। স্ত্রী ম্যাকেঞ্জির বিচ্ছেদ হতেই ম্যাগাজিনটি বেজোসের পরকীয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শত্রুতার জেরে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা তার। বেজোস বলেন, ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হয়ে তিনি অনেক শক্তিশালী মানুষের শত্রু হয়েছেন, যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এএমআইয়ের বস পেকারের বন্ধু।

 

জেনিফার লোপেজ

ক্ষতিপূরণ হিসেবে লোপেজ উল্টো ২০ মিলিয়ন দাবি করেন সিকিউরিটির কাছে

নিয়োগের এক মাসের মাথায় নিজের সিকিউরিটি প্রধান হ্যাকব ম্যানুকিয়ানের বিরুদ্ধে জোর ব্যবস্থা নেন জেনিফার লোপেজ।

তিনি বুঝে যান, নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে চরম বিপদের কারণ হয়ে উঠেছেন এই নিরাপত্তা রক্ষী। এই সিকিউরিটি প্রধান জেনিফার লোপেজের ব্যক্তিগত অনেক কথোপকথন ফাঁস করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। জেনিফারের সার্বক্ষণিক চলাফেরার সঙ্গী হওয়ার সুবাদে সিকিউরিটি প্রধান পেয়ে গিয়েছিলেন গোপন কিছু তথ্য। সেটিই মূলত কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ২.৮ মিলিয়ন ডলার।

কিন্তু লোপেজ আদালতের সাহায্য নেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে লোপেজ উল্টো ২০ মিলিয়ন দাবি করেন সিকিউরিটির কাছে। এরপর নিজের নিরাপত্তায় দুজন পুলিশকে হায়ার করেন।

 

জ্যানেট জ্যাকসন

ধারণা করা হয়, জ্যানেট মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রাক্তন স্বামীর মুখ বন্ধ করেছেন

জ্যানেট জ্যাকসনের সঙ্গে ১৩ বছর সংসার করেন রেনি এলিজান্ডো। কিন্তু তারা দুজনই বিচ্ছেদকে বেছে নেন।

শীর্ষ তারকাখ্যাতি থাকায় জ্যানেটের প্রতি প্রতিহিংসাও জন্মে রেনি এলিজান্ডোর। তখন তিনি লিখিতভাবে একটি বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করে বসেন জ্যানেটের কাছে। রেনি লিখিত দাবিতে উল্লেখ করেন, নিজেদের দাম্পত্য জীবনের সব গোপনীয় ছবি ও তথ্য সংযুক্ত করে একটি বই প্রকাশ করবেন। এমনকি বইটিতে রেনির সাবেক সম্পর্কগুলোও উল্লেখ থাকবে।

এখন জ্যানেট যদি রেনিকে ২০ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি থাকে তবে এসবের কিছুই হবে না। এ পরিস্থিতিতে জ্যানেট আদালতের শরণাপন্ন হন। পরে অবশ্য এই মামলার কোনো কিছুই প্রকাশ্যে আসেনি। ধারণা করা হয়, জ্যানেট মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রাক্তন স্বামীর মুখ বন্ধ করেছেন।

 

জে. কোল

তিনি গুলি করার জন্য ব্যবহার করেন বিবি-গান। এমন কাজের জন্য অবশ্য ক্ষমাও চান সেই ভক্ত

২০১৩ সালে গানের অ্যালবাম ‘বর্ন সিনার’ প্রকাশের পর ভক্তদের ভালোবাসায় ব্যাপক খুশি ছিলেন র‌্যাপার জে. কোল। অ্যালবামটি এত বেশি শ্রোতা আকর্ষণ তৈরি করে যে, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তার খ্যাতি আকাশ ছোঁয়। কিন্তু বেশি খ্যাতিও যে কখনো কখনো বিড়ম্বনার কারণ হয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন জে. কোল। ভক্তদের একজন ক্যাপশনসহ একটি ছবি টুইট করেন। ছবিতে দেখা যায়- একটি ছোট বাচ্চাকে বন্দুক তাক করা। আর ক্যাপশনে লেখা, তিনি যদি জে. কোলের রিটুইট না পান তবে নিজের বোনকে গুলি করবেন। কোল এতে ঘাবড়ে যান এবং দ্রুত রিটুইট করেন। কোলের মনে হয়েছে, এই পর্যন্ত তিনি যত ফলোয়ারের পাল্লায় পড়েছেন এই ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক।

পরে অবশ্য পুলিশ অভিযানে সেই টুইটকারীকে খুঁজে বের করা হয়। তিনি গুলি করার জন্য ব্যবহার করেন বিবি-গান। এমন কাজের জন্য অবশ্য ক্ষমাও চান সেই ভক্ত।

 

ফারাহ আব্রাহাম

ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে ১ হাজার ডলার করে আদায় করে ছেড়েছেন লি রিচেস।

ফারাহ আব্রাহামের সঙ্গে সব সময় যা কিছু ঘটে তা শেষমেশ জটিল আকার ধারণ করে। ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটে কো-আর্টিস্ট জনাথন লি রিচেসের বেলায়ও। এই কো-আর্টিস্ট ফারাহকে ব্ল্যাকমেইলের শিকারে পরিণত করেন।

তাদের একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও করা হয়, যা ফারাহ জানতেনই না। এই ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে ১ হাজার ডলার করে আদায় করে ছেড়েছেন লি রিচেস।

এমনকি বিভিন্ন এন্টারটেইনমেন্ট সাইটে ভিডিওগুলো বিক্রি করে দেওয়ার ভয়ভীতিও দেখানো হয় তাকে। পরিস্থিতি জটিল হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

পরে অবশ্য এটি নিয়ে দুই পক্ষের কেউ মুখ খোলেননি। ধারণা করা হয় নিজেরা আপস করে নিয়েছেন।

 

টম ও কেটি

২০০৬ সালে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ইতালিতে বিয়ে করেন হলিউডের আলোচিত দুই তারকা টম ক্রুজ ও কেটি হোমস। বিশ্ব মিডিয়ায় তাদের বিয়ের সংবাদ ফলাও করে প্রচারও হয়। কিন্তু সেই বছরই তারা বড় মাপের একটি চাঁদাবাজির হুমকিতে পড়েন। তাদের বিয়ের সময় নিযুক্ত ফটোগ্রাফারের কম্পিউটারটি নষ্ট হয়ে যায়। বিপদ শুরু হয় তখনই। কম্পিউটারটি সারিয়ে নিতে নিয়ে যান একটি দোকানে। সেখানকার সারাইকারী মার্ক লুইস গিটলম্যান পেয়ে যান টম-কেটির কিছু অপ্রকাশিত অন্তরঙ্গ ছবি।

এই ছবিগুলো প্রকাশের হুমকি দিয়ে ১.৩ মিলিয়ন ডলার দাবি করে বসেন টমের কাছে। কিন্তু ওই ব্যক্তির বদ উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়। এফবিআই তাকে আটক করে অল্প দিনের মধ্যেই।

 

 

ক্রিস জেনার

২০১৫ সালে ওয়েব সেলিব্রেটি হিসেবে নিজের নাম উজ্জ্বল করেন ক্রিস জেনার। কিন্তু এই তারকাকে বিপাকে ফেলা হয় আইক্লাউড হ্যাক করে। কোনো এক হ্যাকার গ্রুপ তার আইক্লাউড হ্যাক করে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বসে। শুধু দাবিই করে না, তারা আদায় করেও ছাড়ে। এরপর আবার সেই হ্যাকার গ্রুপ জেনারের ওয়াশরুমে গোপন ক্যামেরা সেট করে নগ্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে। এবারও দাবি করে মোটা অঙ্কের চাঁদা। তখন ক্রিস জেনারকে ভিডিও ফুটেজটি কিনে নিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা কিনতে রাজি হননি। পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত পুলিশকে জানান। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়। ঘটনাটি তার জীবনের প্রথম হয়রানি নয়। এর আগেও তার ফোনকল ট্র্যাক করে একাধিক নম্বর থেকে বলা হয়, ক্রিসের অ্যাডাল্ট ভিডিও তাদের কাছে আছে। ফলে এবারও তিনি খুব বেশি ঘাবড়াননি।

 

জন ট্রাভোল্টা

প্রতিটি মানুষের জীবনে কমবেশি বিপদ আসে। তেমনি জন ট্রাভোল্টা বিপদে পড়েছিলেন ২০০৯ সালে। ১৬ বছরের ছেলেকে হঠাৎ হারিয়ে দিশাহারা। ঠিক তখনই একটি পক্ষ ছেলের মৃত্যুর জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। এমনকি মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করে তারা।

এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ও এক আইনজীবী ট্রাভোল্টার স্বাক্ষরিত একটি ডকুমেন্ট ব্যবহার করে এমন কূটচাল চালে। সেই ডকুমেন্টে ট্রাভোল্টা ডাক্তারি সেবাকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। কোর্ট দাবি করে, সামান্য ইনজুরিতে কেউ ডাক্তারি সেবা অগ্রাহ্য করতে পারে কিন্তু জীবন-মরণের বিষয়ে করলে অবশ্যই তিনি দায়ী হবেন। এই মর্মে ছেলের মৃত্যুর জন্য হলিউড স্টার ট্রাভোল্টাকে ২৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিপদের ওপর বিপদ আসায় শরণাপন্ন হন পুলিশের।

 

গিগি হাদিদ

ক্যালিফোর্নিয়ার নামকরা মডেল ও টিভি ব্যক্তিত্ব গিগি হাদিদ। ২০১৫ সালে বিপাকে পড়েছিলেন নিজের আইফোনটি হ্যাক হওয়ায়। একটি গ্রুপ তার ফোন হ্যাক করে ব্যক্তিগত অনেক ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দেয়। যদি গিগি তাদের দাবি পূরণ না করে তারা ফোন থেকে প্রাপ্ত কিছু কনটেন্টও বিভিন্ন আউটলেটে বিক্রি করে দেবে বলে জানায়। মডেল এতে ঘাবড়ে না গিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এমনকি প্রাইভেট সিকিউরিটি ফার্মের সঙ্গেও একটি চুক্তি করেন। শেষমেশ অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বিভাগ তাকে পুরোপুরি সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়। তাই কোনোভাবেই যেন হ্যাকারদের দাবি উপেক্ষা করার উপায়ই ছিল না। অথচ অন্য সেলিব্রেটিদের যেভাবে আইক্লাউড হ্যাক করা হয় এটিও তার থেকে ভিন্ন কিছু ছিল না।

 

ক্রাউফোর্ড-গার্বার

ক্রাউফোর্ড-গার্বার কোনোরকম ঝুঁকি নেননি, দ্রুত পুলিশকে ব্যাপারটি জানান।

২০০৯ সালে মডেল কিনডি ক্রাউফোর্ড এবং মডেল ও ব্যবসায়ী স্বামী র‌্যান্ডি গার্বার একটি বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলা চলাকালীন তাদের মেয়ে কিয়ার সঙ্গে একটি ছবি তোলে ক্রাউফোর্ডের মা। ছবিটি নিতান্তই মজা করেই তোলা হয়। ক্রাউফোর্ড-গার্বার কেউই অবগত নন ছবিটির বিষয়ে। কিন্তু যেভাবেই হোক ছবিটি ইডিস কায়লার নামের একজনের হাতে পেঁৗঁছায়। আর তখনই ঝামেলা বাধে। ছবিটি প্রকাশ্যে আনার হুমকি দেয় কায়লার। ১ হাজার ডলারে কায়লারকে আপসে আনতে চাইলেও তিনি দাবি করেন ১ লাখ ডলার। ক্রাউফোর্ড-গার্বার কোনোরকম ঝুঁকি নেননি, দ্রুত পুলিশকে ব্যাপারটি জানান। তাদের অভিযোগ পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে এফবিআই কায়লারকে আটক করে। ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পান এ মডেল জুটি।

সর্বশেষ খবর