সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বের ব্যস্ত শহর লকডাইন

তানভীর আহমেদ

বিশ্বের ব্যস্ত শহর লকডাইন

নিউইয়র্ক, আমেরিকা

 ঘুমিয়ে গেছে এ শহর

বিশ্ব বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের বুকের স্পন্দন নিউইয়র্ক। যে শহর কখনো ঘুমায় না। পর্যটক, ব্যবসায়ী ও নানা পেশাজীবীর ভিড় লেগে থাকে এ শহরে। এ শহরে রাত নামলে ভিড় হামলে পড়ে রেস্টুরেন্টে। বর্ণিল আলোয় সাজানো শহরে সূর্যোদয় মানে কোটি মানুষের ব্যস্ততা। সেই শহরকে ঘুম পাড়িয়ে দিল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯। না ঘুমানো শহরটিকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন শহরটির গভর্নর। শহরে প্রবেশ ও বের হতে পারছেন না কেউ। বসানো হয়েছে মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হচ্ছে ঘরে বন্দী। হাতেগোনা কিছু ফার্মেসি, রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি শপ খোলা রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে। সীমিত গণপরিবহন। আইন ভেঙে কেউ বাইরে বেরোলেই দেওয়া হচ্ছে দন্ড।

 

রোম, ইতালি

হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী

করোনাভাইরাস জেঁকে বসেছে ইতালিতে। ইতালি থেকে ভাইরাসটি এখন কাঁপিয়ে দিচ্ছে গোটা ইউরোপ। অসহায় ইতালি পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে। লকডাউন কঠোর করতে নেমেছে সেনা। মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে ইতালি হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে কঠোর হয়েছে ইতালি। পর্যটকপ্রিয় শহরগুলোর রাজপথে টহল দিচ্ছে পুলিশ। সবাইকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বসেরা চিকিৎসাব্যবস্থা থাকার পরও ইতালিকে মনে হচ্ছে দিশাহারা। পরিচ্ছন্নকর্মীরা শহরের প্রতিটি অলিগলিতে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস। জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন এলাকা। গভীর রাতের নীরবতা সর্বত্র। শুধু হঠাৎ বেজে উঠছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন।

 

প্যারিস, ফ্রান্স

যেন যুদ্ধ পরিস্থিতি

ইউরোপের এমন করুণ দশা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেউ দেখেনি। ইতালি ও স্পেনের পর ইউরোপের তৃতীয় দেশ হিসেবে লকডাউন করা হয় ফ্রান্স। ১৫ দিনের জন্য দেশটিকে লকডাউন করা হয়। জরুরি কাজ ছাড়া সবাইকে বাড়িতে থাকার আদেশ দেওয়া হয়। মুদি দোকানে কেনাকাটা, কর্মস্থলে যাওয়া, শরীরচর্চা ও চিকিৎসাসেবায় বের হতে না হলে লোকজনকে ঘরেই আবদ্ধ থাকতে হবে। এ আদেশ অমান্য করলে শাস্তির ঘোষণাও দেওয়া হয়। আতঙ্কে কাঁপতে থাকা ফ্রান্সের বড় শহরগুলো রীতিমতো ভুতুড়ে শহর হয়ে ওঠে। রাস্তাঘাট খালি হয়ে যায়। রেস্তোরাঁ, বার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আর রিসোর্টগুলো সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ঘোষণায় ২০ মিনিটে চারবার উচ্চারণ করে ‘যুদ্ধ’ শব্দটি। তার কথাতেই বোঝা যায় দেশটির কী অবস্থা।

 

 মাদ্রিদ, স্পেন

আতঙ্কে গৃহবন্দী সবাই

পুরো স্পেনে সবাই কার্যত গৃহবন্দী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্পেন খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো দেশে লকডাউন কার্যকর করেছে। আগামী দুই সপ্তাহ খাবার, ওষুধ কেনা, হাসপাতালে যাওয়ার মতো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো পুরোপুরি বন্ধ। লকডাউন করার পর বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেশটি। পর্যটকপ্রিয় দেশটির পর্যটন শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও করোনা ঠেকাতে তারা পিছপা হয়নি। লকডাউন ঘোষণার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নিয়েছে মাদ্রিদে। বাইরে বেরোলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা তাপমাত্রা মাপছেন প্রতিটি নাগরিকের। ফোন পেলে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নাগরিক সেবা। সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হচ্ছে। কিছু দোকানপাট খোলা আর সীমিত করে দেওয়া হয়েছে গণপরিবহন।

 

টরেন্টো, কানাডা

ভুতুড়ে এক শহর

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় শহরের চেহারা বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে সফলতা পেয়েছে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া। সে পথে হেঁটেছে কানাডাও। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয় সেখানে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত। কানাডার নাগরিক ও মার্কিন জাতীয়তা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় সরকার। দেশটির বিমান সংস্থাগুলোকেও বলা হয়েছে করোনার লক্ষণ নিয়ে যেন কেউ বিমানে না উঠে। অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিষিদ্ধ। সবাইকে বাড়িতে বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করতে হচ্ছে। খালি হয়ে গেছে শপিংমল। রাস্তা পুরো খালি। বন্ধ অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ব্যস্ত টরেন্টোকে দেখলে মনে হচ্ছে ভুতুড়ে এক শহর।

 

বাভারিয়া, জার্মানি

জনমানবশূন্য রাস্তাঘাট

করোনাভাইরাস ঠেকাতে প্রথমেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে জার্মানি। তারপরও রক্ষা পায়নি দেশটি। ক্রমেই করোনা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এ শহর থেকে ও শহর। উপায় না পেয়ে বড় শহরগুলো লকডাউনের ঘোষণা দেয় জার্মানি। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পর দেশের নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কয়েকটি শপিংমল আর ওষুধের দোকান খোলা রাখা হয়েছে। বাইরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। খুব দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় প্রথম বাভারিয়াকে লকডাউন করা হয়। শহরের রাস্তায় একজন মানুষও নেই। একই চিত্র বার্লিনসহ পুরো জার্মানিতে।

সর্বশেষ খবর