বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় চিকিৎসকরাই সত্যিকারের নায়ক

তানভীর আহমেদ

করোনায় চিকিৎসকরাই সত্যিকারের নায়ক

করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে অচল করে দিয়েছে। নতুন আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। করোনার সঙ্গে মানুষের লড়াই জীবন-মৃত্যুর। এ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সারা বিশ্বের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। তারাই করোনাভাইরাসকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছেন। লাখ লাখ রোগীর চাপ সামলাতে সন্তান, পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। বিশ্বজুড়েই চিকিৎসকদের জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত সুরক্ষা পোশাক। অপ্রতুল ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। এত প্রতিকূলতা নিয়ে করোনাযুদ্ধে থাকা চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, প্রাণ হারাচ্ছেন। চিকিৎসকরাই করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে বিশ্ববাসীর আস্থা, তারাই সাহস নিয়ে করোনাকে মোকাবিলা করার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। করোনায় চিকিৎসকরাই সত্যিকারের নায়ক-

শিশুপুত্রকে জড়িয়ে ধরতে পারলেন না চিকিৎসক বাবা

করোনার ভয়াবহতা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। চীন থেকে শুরু ভাইরাসটির। ইউরোপের মৃত্যুর মিছিল এখন যুক্তরাষ্ট্রকে কাঁদাচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশে করোনার ছোবল লেগেছে সেখানেই চোখের জল মানুষের। অনেক চিকিৎসক ও নার্স চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখলেও তাদের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে এর অনেক বড় প্রভাব পড়ছে। এমনকি ঘরে ফিরেও নিজেকে পরিবারের সঙ্গে আলাদা রাখতে হচ্ছে। সৌদি আরবের এক চিকিৎসকের একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও দেখে মন ভেঙেছে সবার। মাইক নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। দেখে বোঝা যায়, সৌদি আরবে এটি ধারণ করা। ৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালের কাজ সেরে এক চিকিৎসক ঘরে ঢুকতেই তার ছোট শিশুপুত্র তাকে জড়িয়ে ধরতে ছুটে আসে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে তাকে কাছে আসতে বারণ করেন বাবা। এরপর নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই চিকিৎসক। নিজের সন্তানের কাছ থেকে এভাবে দূরে থাকার বেদনা বুকে নিয়ে সারা বিশ্বে লাখ লাখ চিকিৎসক, নার্স, সেবাকর্মী করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। হৃদয়বিদারক এমন ভিডিও দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই চিকিৎসকের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন সবাই।

প্রথম করোনা শনাক্ত করে বীর হয়ে ওঠেন

বিশ্ববাসী কেউ তখন জানে না করোনাভাইরাসের কথা। চীনের উহানে কাজ করতেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনলিয়াং। হঠাৎ করেই তিনি সাধারণ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত রোগীর দেখা পান। ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখেন এবারের জ্বর-কাশির লক্ষণগুলো সার্স ভাইরাসের সঙ্গে মেলে। এ কথা একটি চ্যাটগ্রুপে তিনি তুলে ধরেন। ২০০৩ সালে সার্স বিশ্বে মহামারী তৈরি করেছিল। গত বছর ডিসেম্বরে প্রায় সাতটি ঘটনা থেকে লি ধারণা করেন নতুন কোনো ভাইরাস থেকে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ৩০ ডিসেম্বর তিনি তার সহকর্মী চিকিৎসকদের কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করেন। তিনি একটি চ্যাটগ্রুপে তার সহকর্মী ডাক্তারদের কাছে সতর্ক বার্তায় লেখেন, ‘সবাইকে সংক্রমণ এড়াতে প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে।’ তার চার দিন পর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নেয়। সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তার কাছ থেকে এসব ‘মিথ্যা না ছড়ানোর’ অঙ্গীকার নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মোট আটজনকে তখন পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। লি ওয়েনলিয়াং সেই আটজনের একজন ছিলেন। পুলিশ তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি আরও দ্রুত খারাপ হতে থাকে। যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল সে গুজব যে সত্যি তা টের পায় উহানবাসী। অনেকেই মনে করেন, উহান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের এ চক্ষু বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা যখন জানা গিয়েছিল তখনো যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো আজ বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের চিত্র ভিন্ন হতো। সে যাই হোক, করোনাভাইরাস জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই দ্রুত উহানকে ঘায়েল করে ফেলে। এ সময়ের মাঝে ডা. লি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওইবোতে তিনি জানান, ১০ জানুয়ারি তিনি কীভাবে কাশি দিতে শুরু করেন। পরদিন তার জ্বর হয়। এবং দুদিন পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৩০ জানুয়ারি তার শরীরে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস নিয়ে পূর্ব সতর্কতা দেওয়া এ চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায় চীনা নাগরিকরা। সে জন্য পরে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। ততদিনে চীনে বীর বনে যান ওই চিকিৎসক। সবশেষ সেই চিকিৎসকও করোনাভাইরাসের কাছে হার মানেন। তার মৃত্যুর পর পিপলস ডেইলি একটি টুইট করে জানায়, ডা. লির মৃত্যু ‘জাতীয় শোক’ ছড়িয়ে দিয়েছে।

দূর থেকে সন্তানকে আলিঙ্গন মায়ের

সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারলেন না মা। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে পরিবার-সন্তানের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্সদের। চীনে প্রথম যখন করোনা ভয়াবহ রূপ নিল তখন একটি ভিডিও সবাইকে কাঁদিয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পেশার খাতিরে নিজের  মেয়েকেও কাছে এসে ছুঁয়ে দেখতে পারেননি মা। সন্তানকে দেখে হাত বাড়িয়ে দূর থেকে আলিঙ্গন করলেন। মায়ের স্নেহ না পেয়ে অঝরে কেঁদে চলছে শিশু সন্তান। ওই নার্স দূরে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে সন্তানকে কোলে নেওয়ার ভঙ্গি করেন। কাঁদতে থাকা শিশু সন্তানের কান্না থামাতে বলেন, ‘আমি এক দুষ্টু দানবের সঙ্গে লড়াই করছি। তাকে মেরেই বাড়ি ফিরব।’ মায়ের জন্য সন্তান কিছু খাবারও নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তা মায়ের থেকে কিছুটা দূরে রেখে ফিরে যেতে হয়েছে শিশু সন্তানকে। করোনা আতঙ্কে সন্তানকে দূর থেকে মায়ের এমন আলিঙ্গনের দৃশ্য কাঁদিয়েছে সবাইকে।

ইতালিতে চিকিৎসকদের লড়াইয়ে চোখের জল

করোনা থেকে বাঁচতে আগাম সতর্কতা নিয়েছিল ইতালি। কিন্তু সতর্কতার মাঝেও ফাঁক রেখেছিল তারা। কিছুক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সেখানে করোনা ভয়াবহ রূপ নেয়। চীনের পর সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত হয় সেখানে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কোরানা আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু মৃত্যুর মিছিলে এগিয়ে ইতালি। ইতালির লম্বার্ডিয়া অঞ্চল করোনা বিস্তারের কেন্দ্রে পরিণত হয়। দিনে প্রায় এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ড নিয়ে ইতালি করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেতে শুরু করে। অসহায় হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় ও শুরুর দিকে অসচেতন থাকায় খোদ চিকিৎসকরাই করোনার হুমকির মধ্যে পড়েন। ইতালিতে শুরু দিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ৯ শতাংশ ছিলেন চিকিৎসক। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিসাব যোগ করলে এ মাত্রা আরও বাড়বে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে ইতালির চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখেই কাজ করছেন। ইতালির অনেক চিকিৎসকই করোনা সেবা দিতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েছেন তা প্রকাশ পেয়েছে খবর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া ভিডিওতে। মাত্র কদিন আগে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে দিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দেশটির একজন প্যারামেডিক চিকিৎসক। তিনি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লম্বার্ডিয়া অঞ্চলে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ৪৬ বছর বয়সী ডিয়েগো বিয়ানকো নামের ওই প্যারামেডিক চিকিৎসক নিজের বাড়িতে মারা যান। মৃত্যুর আগে ৭ দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন দেশটির চিকিৎসকরা। রোগীর চাপে হাসপাতালে জায়গা নেই। এত রোগী যে সবাইকে চিকিৎসাও দিতে পারছেন না তারা। কারা চিকিৎসায় দ্রুত সেরে ওঠবেন তাদের আগে চিকিৎসা দেবেন নাকি যারা গুরুতর তাকে আগে সেবা দেবেন তা নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাদের। কাউকে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর হাতে ছেড়ে দেওয়ার মতো অমানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাঁদছেন চিকিৎসকরাও। প্রতিদিন চোখের সামনে মারা যাচ্ছেন শত শত রোগী। কাজের চাপ আর রোগীর ভিড়, অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম- চিকিৎসক, নার্সদের মন ভেঙে দিচ্ছে। এত চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে তারা অবিরাম কাজ করছেন। করোনায় জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ইতালির চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

হাতে স্যালাইন লাগিয়ে ইরানি চিকিৎসকের লড়াই

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর ইরানে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। হাজার হাজার রোগীর বিপরীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা দিতে জীবন বাজি রেখে কাজ করতে শুরু করেন ইরানি চিকিৎসক। করোনা পরিস্থিতির বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ চিত্র দেখে সহজেই অনুমান করা যায় চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের অপ্রতুলতা কীভাবে ভোগাচ্ছে প্রতিটি দেশকে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে করোনার কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইরান প্রচন্ড চাপে রয়েছে। যে কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে সে দেশের চিকিৎসকরা অসম এক লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন ইরানের শোহাদা হাসপাতালের চিকিৎসক শিরিন রুহানি। তার সম্পর্কে খবর প্রকাশ করে এক সাধারণ ব্যক্তি। পরে সেই খবর ভাইরাল হয়ে যায়। ইরানে বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় একজন চিকিৎসককেই অনেক রোগী দেখতে হচ্ছে। নার্স সংকটের কারণে চিকিৎসকদেরই রোগীকে পরিচর্যার যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।

দেশজুড়ে চিকিৎসক, নার্স সংকট বাড়ছেই। বসে থাকার জো নেই। হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় দিনের পর দিন শিরিন রুহানিকে হাসপাতালেই থাকতে হয়েছে। বাড়িতে যাওয়ার অবসর নেই। নিজের হাসপাতালের পাশাপাশি আশেপাশের হাসপাতালেও ছুটে গিয়ে রোগী দেখে আসতে হয়েছে। নিরলসভাবে কাজ করতে থাকা এ চিকিৎসককে যিনি দেখেছেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখে পানি এসেছে তারই। শত শত করোনা রোগী তার কাছ থেকে সেবা নিয়ে ঘরে ফিরে গেছেন তাদের প্রিয়জনের কাছে, পরিবারের কাছে। চিকিৎসা দিতে গিয়ে একসময় ধরা পড়ল তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জীবন বাজি রেখে যে কাজ শুরু করেছিলেন তা থেকে পিছুু হটেননি তিনি। হাতে আইভি স্যালাইন লাগিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যান। রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় তখন চিকিৎসক, নার্স কারও বসে থাকার সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও করোনা রোগীদের ছেড়ে নিজের শরীরের যতœ নেওয়া আর হয়নি তার। করোনাতেই প্রাণ হারান এ চিকিৎসক। ইরানে চিকিৎসকরা কী পরিমাণ চাপ এবং দুঃসাহস নিয়ে এ ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়ে কাজ করে চলেছেন তার অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন তিনি। শিরিন রুহানির মৃত্যুর পর দেশের মানুষের কাছে বীর চিকিৎসক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছেন যে ডাক্তার

 করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় পাকিস্তানের তরুণ চিকিৎসক উসামা রিয়াজের। তিনি লাহোরের একটি নার্সিং হোমের চিকিৎসক। ইরান ও ইরাক থেকে ফিরে আসা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন তিনি। গিলগিতে সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসায় যে আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয় তিনি তাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাত্র ৭ দিনের মাথায় নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান উসামা রিয়াজ। তবে মৃত্যুর আগে বিশ্ববাসীকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর ঠিক ৩০ মিনিট আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মোবাইলে একটি ভিডিও করেন রিয়াজ। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে একেবারেই রসিকতা নয়। এ ভাইরাস ভয়ঙ্কর। সাবধানে থাকুন। সচেতন থাকুন। এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে হবে। দেশকে বাঁচাতে, বিশ্বকে বাঁচাতে সবাইকে একজোট হতেই হবে। আমার পরিবার, আপনার পরিবার সবাইকে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হবে।’ প্রয়াত ডাক্তারের সহকর্মীরা বলেন, ডা. রিয়াজ নিজের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করে গভীর রাত পর্যন্ত করোনা রোগীদের সেবা দিতেন। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রাণ হারানো এ ডাক্তারকে সিভিল অ্যাওয়ার্ড বা বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত করার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। গিলগিত বালতিস্তান অঞ্চলের তরুণ চিকিৎসক ডা. রিয়াজ প্রথম পাকিস্তানি ডাক্তার, যিনি দায়িত্বরত অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ডা. রিয়াজের গৌরবদীপ্ত কাজের জন্য প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।

অনুপ্রেরণা খুঁজতে চিকিৎসকদের গান

করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে কাজের ফাঁকে গান গেয়ে সবাইকে কিছুটা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকরা। ভারতের রাজস্থানের চিকিৎসকরা গেয়েছিলেন ‘হাম হিন্দুস্তানি’ ছবির গান ‘ছোড়ো কাল কি বাতে’। গত ২৫ মার্চ রাজস্থানের ভিলওয়াড়া হাসপাতালের ওই চিকিৎসকদের ৫৭  সেকেন্ডের গানের ভিডিওটি পোস্ট করেন রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচিব রোহিত কুমার সিং। তার ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘রাজস্থানের ভিলওয়াড়া সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার মুস্তাক, গৌর, প্রজাপত, মুকেশ, জ্ঞান, ঊর্বশী, সরফরাজ ও জালাম ২৪ ঘণ্টা ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। আপনারাই হলেন আমাদের আসল নায়ক। এটাই নতুন ভারতের স্পিরিট।’ ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সুরক্ষিত পোশাক ও চশমা এবং মুখে মাস্ক পরে হাসপাতালের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছেন ওই চিকিৎসকরা।

এভাবেই গান গাইতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে দুই মার্কিন চিকিৎসকের গানের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারা গাইছেন জন লেননের বিখ্যাত গান ‘ইমাজিন’। গানের ভিডিও নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছেন চিকিৎসক এলভিস ফ্রানকোস। ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘জীবনে বহু জিনিস আমাদের বিভাজিত করে রাখে। ধর্ম, জাতি, রাজনীতি, সামাজিক অবস্থা ও আর অনেক কিছু... কিন্তু করোনা আমাদের এক জায়গায় এনেছে। আগামী কয়েক মাসে স্বাস্থ্যসেবার পরীক্ষা হবে। প্রচুর জীবন হারিয়ে যাবে। কিন্তু আজকের এ অন্ধকার সময়ে মানুষের উজ্জীবনী শক্তির থেকে উজ্জ্বল আর কিছু নেই।’

সর্বশেষ খবর