রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনামুক্ত ভাগ্যবান দেশগুলো

চীনের উহান থেকেই শুরু করোনাভাইরাসের। ভাইরাসটি প্রথমে চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ পর এটি বিশ্ব মহামারী আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করা হলেও বেশ কয়েকটি দেশে এখনো নেই কোনো করোনা রোগী। যদিও দেশগুলো নিয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে ভাইরাসের দেখা নেই।

আবদুল কাদের

করোনামুক্ত ভাগ্যবান দেশগুলো

যেসব দেশ এখনো করোনামুক্ত

করোনাভাইরাস আতঙ্কে গোটা বিশ্ব। মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- বিশ্বে এমন কোনো দেশ কি আছে যারা এখনো করোনামুক্ত? অবাক করার মতো হলেও এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- হ্যাঁ, এরকম কিছু দেশ এখনো আছে। জাতিসংঘের সদস্য এমন দেশের সংখ্যা হচ্ছে ১৯৩টি। এর মধ্যে সর্বশেষ তথ্যানুসারে ১৩টি দেশ কোনো করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর জানায়নি। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ওশেনিয়া মহাদেশের ১৩টি দেশ এখনো করোনামুক্ত। তবে সেখানে ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কি না তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর মধ্যে কোনো কোনো দেশে হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে কিন্তু তা ধরা পড়েনি বা প্রকাশ করা হচ্ছে না।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আশঙ্কা করেছিল পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দেশে এখনো করোনা শনাক্ত হয়নি। যেমনÑউত্তর কোরিয়া। সরকারিভাবে দেশটি দাবি করছে সংক্রমণ শূন্য। আবার একই সঙ্গে এটাও সত্য, কোনো কোনো দেশে সম্ভবত ভাইরাস পৌঁছেনি। কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে-রাষ্ট্রগুলো একেবারেই ক্ষুদ্র এবং দ্বীপ রাষ্ট্র। তাই বলে এসব দেশ কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই।

সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্বের নতুন নিয়মে যখন আটকে পড়েছে বিশ্ব, এসব দেশও বহু আগে থেকে এক ধরনের সেল্ফ আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে প্রত্যেক দেশ। যেহেতু এখনো এসব দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি সেই হিসেবে এই দেশগুলোকে ভাগ্যবান বলা যেতেই পারে। অবাক হলেও সত্য, এশিয়ার উত্তর কোরিয়া ও তুর্কমেনিস্তানে এখনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এদিকে আফ্রিকার যে দেশটি করোনাভাইরাসমুক্ত সেটি হলোÑ লেসোথো।

এ ছাড়া ওশেনিয়া মহাদেশের কিরিবাতি, টুভ্যালু, টঙ্গো, সামোয়া, মার্শাল আইল্যান্ড, সোলোমান দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, পালাও, ভানুয়াতু ও মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জে করোনা রোগী নেই। এদের মধ্যে বেশির ভাগ দেশের ফ্লাইট অনেক আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে।

এখন পর্যন্ত দেশগুলোর সবচেয়ে সেরা কাজ হবে- যত দিন সম্ভব আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যতেই রাখা।

আর করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশগুলো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে- তা সত্যিই কার্যকর। যুক্তরাজ্যের লিভারপুল স্কুলের ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পিটার ম্যাকফারসন বলেন, তথ্য-প্রমাণ বলছে, এসব দেশেও করোনাভাইরাস পৌঁছে যাবে। তবে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো যে পদক্ষেপ নিয়েছে-তা প্রশংসনীয়।

 

এশিয়া মহাদেশ

উত্তর কোরিয়া ও তুর্কমেনিস্তান

 

ওশেনিয়া মহাদেশ

কিরিবাতি, টুভ্যালু, টঙ্গো, সামোয়া, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, পালাউ, ভানুয়াতু ও মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ

 

আফ্রিকা মহাদেশ

লেসোথো

 

উত্তর কোরিয়া

একদিকে চীন। করোনার উৎপত্তিস্থল। অন্য দিকে দক্ষিণ কোরিয়া। করোনা আক্রান্ত দুই দেশের সীমান্ত ছুঁয়ে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু কিম জং উনের দেশে করোনা নেই! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, দুই কোটি ৫৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে করোনায় মৃত্যু দূরে থাক, গোটা দেশে এখন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ রোগীই মেলেনি। তবে দেশটির এমন দাবি ঘিরে রয়েছে সংশয়। কিম জং উন সরকারের নেওয়া কঠোর ব্যবস্থা আর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই এই সফলতা বলে দাবি করছে দেশটি। পূর্ব সতর্কতা এবং বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপের কারণে এমন সফলতা বলে মনে করেন উত্তর কোরিয়ার সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি অ্যান্টি-এপিডেমিকের পরিচালক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘উত্তর কোরিয়ার সর্বত্র করোনা পরীক্ষা চলছে। পাঁচশোর বেশি মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত একজনেরও করোনা পজিটিভ ধরা পড়েনি।’ এর আগে আরও একদফায় (গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে) ২৪ হাজার ৮৪২ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩৮০ জন বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। এদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

তুর্কমেনিস্তান

করোনা সংক্রমণ নেই, এমন দেশগুলোর মধ্যে তুর্কমেনিস্তান অন্যতম। মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান। দেশটির ৮০ শতাংশ মরুভূমি। আয়তনে বড় হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৫৮ লাখ। কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানে ঘেরা দেশটির একপাশে কাশপিয়ান সাগর। তুর্কমেনিস্তান শুরু থেকেই স্বাস্থ্যসেবায় অযোগ্য বলে পরিচিত। দেশটির সত্য গোপন করার ইতিহাস রয়েছে। যা এর আগে ১৯২০ সালে প্লেগের সময়ও অনুসরণ করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দেশের সরকারকে বিশ্বাস করা যায় না। সরকার সত্য গোপন করছে। যদিও দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘তুর্কমেনিস্তান কোনো তথ্য গোপন করছে না।’ এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে ৩০ হাজার টেস্ট কিট রয়েছে। রাশিয়া, তুরস্ক ও জার্মানি থেকে আরও ৪০ হাজার অর্ডার করেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৫১ জন দেশি-বিদেশি লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যদিও তাদের কারও মধ্যে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েনি।

এ ছাড়াও দেশের সব নাগরিককে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে দেশটি।

 

কিরিবাতি

ছোট্ট একটি দেশ কিরিবাতি। ৩২টি বলয়াকৃতি দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। এটি মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাজ্য। পর্যটনশিল্প দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। জনসংখ্যাও মাত্র এক লাখ ১৬ হাজার। সরাসরি ফ্লাইট চলে এরকম সবচেয়ে কাছের বড় শহরটি হলো- অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন। দেশটির আশপাশের দেশগুলো করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। এমন  মহামারী পরিস্থিতিতেও দেশটিতে এখনো কোনো করোনা পজিটিভ রোগী মেলেনি। তবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জ ইতিমধ্যে প্রতিরোধমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক সরকার দেশটিতে জারি করেছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। করোনাকালীন দুর্যোগের কারণে বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দর। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের আগে দেশে অবস্থান ভিনদেশিদের দেশত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিল আঞ্চলিক সরকার। দেশটির স্বাস্থ্যসেবা মানসম্মত না হওয়ায় আঞ্চলিক সরকারগুলো করোনা প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। স্থানীয়দের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিচ্ছে প্রশাসন।

পালাউ

ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম দেশ পালাউ। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র। জনসংখ্যাও মাত্র ১৮ হাজার। চলমান বৈশ্বিক মহামারীতেও দেশটিতে নেই কোনো করোনা সংক্রমণ। কয়েকশ কিলোমিটার দূরের প্রশান্ত মহাসাগর বেষ্টিত পালাউ দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য সমুদ্র যেন নিজেই ভাইরাস প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে পালাউয়ের এক বাসিন্দাকে করোনা পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। তখন ছোট্ট দ্বীপটিতে বেশ ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।

যদিও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী আকার ধারণ করায় দ্বীপরাষ্ট্রটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোট্ট দ্বীপটিতে পণ্যসামাগ্রী সরবরাহের জন্য জাহাজ ও প্লেনই প্রথম এবং শেষ ভরসা। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বভাবতই দ্বীপটিতে খাবার এবং পণ্য সরবরাহ কমে গেছে।

সামোয়া

দেশটির নাম সামোয়া। ছোট্ট  দ্বীপরাষ্ট্র। জনসংখ্যা দুই লাখেরও কম। ‘লাপিতা’ জনজাতির মানুষজন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে আবিষ্কার করে সামোয়া দ্বীপ এবং সেখানেই বসবাস শুরু করে। সামোয়া দ্বীপপুঞ্জে নেই করোনা পজিটিভ। সম্ভবত এক রকম বিচ্ছিন্নতা দেশটিতে সংক্রমণ না ছড়ানোর অন্যতম কারণ। তবে আঞ্চলিক সরকারগুলো তাদের দ্বীপগুলোতে সংক্রামক ভাইরাস কতটা খারাপ পরিস্থিতি বয়ে আনতে পারে সে সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত। গত বছর দেশটিতে সংক্রমিত হামের অভিজ্ঞতা তাই বলে। আঞ্চলিক সরকার করোনা প্রতিরোধে দেশটির বন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার বসিয়ে সমস্ত আগত নাগরিককে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছে। যদিও বাইরে থেকে আসা ২০০ লোককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কিন্তু তাদের কভিড-১৯ পজিটিভ আসেনি। চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের জন্য মেডিকেল মাস্ক, গ্লাভস এবং সার্জিক্যাল গাউন বা ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসকরা তাইওয়ান থেকে করোনা পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করেছেন। দেশটিতে পাঁচটি আইসোলেশন কক্ষ নির্মাণ করেছে, যাতে কমপক্ষে ১৪ জন বা তার বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম।

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ

প্রশান্ত মহাসাগরীয় বৃহত্তম দ্বীপরাজ্য সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকশো দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে দেশটি গঠিত। জনসংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি। দেশটিতেও নেই কোনো করোনা পজিটিভ। নিশ্চিতভাবে কভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া না গেলেও আঞ্চলিক সরকার অলস বসে নেই। আঞ্চলিক প্রশাসন দেশটিতে সার্বজনীন জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। সন্দেভাজন সর্দি-কাশির রোগীদের বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দেশের বাইরে থেকে আসা ও দেশের ভিতরের সন্দেহভাজন ১১ জনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত কারও মধ্যে কভিড-১৯ পজিটিভ আসেনি। পরবর্তীতে সন্দেহভাজন আরও তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। যার ফলাফলও এসেছে নেগেটিভ। তবে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ইতিমধ্যে আশপাশের রাষ্ট্রের সঙ্গে  যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে রেখেছে। ইতিমধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

নাউরু

মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বের দেশ নাউরু। প্রাকৃতিক লীলভূমির অনন্য উদাহরণ নাউরু। এখানকার সমুদ্রতটের সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটককে আকর্ষণ করে খুব সহজেই। দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। এখান থেকে আশপাশের যে কোনো রাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব প্রায় দু’শো মাইল। সবচেয়ে নিকটতম দ্বীপরাষ্ট্র হচ্ছে কিরিবাতি। সরাসরি ফ্লাইট চলে এরকম কাছের বড় শহরটি হলো- অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন। দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার মাইল। ভূমির আয়তন বিবেচনায় এটি জাতিসংঘের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এখানেও নেই কোনো করোনাভাইরাস সংক্রমণ। যদিও দেশটিতে নেই একটি হাসপাতালও। নেই কোনো ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা। ডাক্তার-নার্সেরও রয়েছে ব্যাপক সংকট। এমতাবস্থায় দেশটি কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতেই নারাজ। মার্চের মাঝামাঝি নাউরু এয়ারলাইন্স ফিজি, কিরিবাতি এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। ব্রিসবেনের সঙ্গে ফ্লাইট কমিয়ে এনেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা সবাইকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, প্রতিদিন তাদের পরীক্ষা করা হয়। কারও জ্বর হলে তাকে আরও আলাদা করে ফেলা হয় এবং কভিড-নাইনটিনের টেস্ট করা হয়।

 

মাইক্রোনেশিয়া

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ৬০০টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা দেশ মাউক্রোনেশিয়া। দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত দেশটির চারটি প্রদেশও রয়েছে। পামগাছ বিস্তৃত সমুদ্রসৈকতের জন্য বিখ্যাত এই দেশ। জনসংখ্যা মাত্র এক লাখ ১৩ হাজার। কিন্তু এর মধ্যেও নেই কোনো করোনা পজিটিভ। কিন্তু দেশটির সরকার করোনা প্রতিরোধে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করে, যেসব লোক পূর্ববর্তী ১৪ দিন যুক্তরাষ্ট্রসহ করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে আসবেন, তাদের ফেডারেটেড স্টেট অফ মাইক্রোনেশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মাউক্রোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি ডেভিড পানুয়েলো বলেন, মাইক্রোনেশিয়ায় আসা লোকেরা বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। পাশাপাশি দেশের প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। শুধু তাই নয়, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্থানীয়দের ভ্রমণে নিরুৎসাহিতও করছেন তিনি।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ

প্রশান্ত মহাসাগরের একাধিক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। দেশটি হাওয়াই ও ফিলিপাইনের মাঝামাঝি অবস্থিত। জনসংখ্যা ৫৮ হাজারের কিছু বেশি। বলয়াকৃতির এই দ্বীপে একজনের শরীরেও মেলেনি করোনাভাইরাস সংক্রমণ। তবে পর্যটন দেশ হওয়ায় দেশটি এখনো করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঝুঁকির দিক বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে দেশটি তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠন করেছে। জনসাধারণের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান।

লেসোথো

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই দেশটিকে সম্পূর্ণভাবে স্থলভূমি পরিবেষ্টন করে রেখেছে। ছোট্ট ভূখন্ডের উচ্চ অক্ষাংশের এই দেশটির অভ্যন্তরে জালের মতো বিছিয়ে রয়েছে প্রচুর নদী-নালা। দেশটির জনসংখ্যা ২১ লাখের কিছু বেশি। এখানেও করোনা থাবা মেলতে পারেনি। কেউ আক্রান্ত না হলেও ক্ষুদ্র দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় লেসোথো সরকার এপ্রিলের শুরু থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশটিকে লকডাউন করে রেখেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশটিতে লকডাউন চলবে বলে জানায় দেশটির সরকার। ইতিমধ্যে লেসোথো পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তাই তো করোনা থেকে দেশটিতে এখনো মুক্ত।

সর্বশেষ খবর