মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার ওষুধ প্রতিষেধক কাহিনি

সাইফ ইমন

করোনার ওষুধ প্রতিষেধক কাহিনি

বাংলাদেশে ওষুধ তৈরি করছে ৬টি কোম্পানি

করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি সে সব বিষয়েও বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।  গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে যানা যায় জাপানের অ্যাভিগান ট্যাবলেটের প্যাটেন্ট নিয়ে দেশেই তা উৎপাদন করছে বেক্সিমকো ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস। এরই মধ্যে আমেরিকায় রেমডেসিভির সাফল্যে এখন দেশেই উৎপাদন করার অনুমতি পেয়েছে ৬টি কোম্পানি। ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো, বীকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার ও হেলথ কেয়ারকে করোনাভাইরাসের এই সম্ভাব্য ওষুধটি উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ মাসেই উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোম্পানিগুলোকে এই ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ওষুধগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ওষুধটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বলে রাখা ভালো, সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ ভালো কাজ করার ইতিহাস রয়েছে ওষুধটির। রেমডেসিভির প্রধান কাজ হলো মানব কোষে ঢোকার পর ভাইরাস যে বংশবৃদ্ধি করে তা বন্ধ করে দেওয়া ও বংশবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেওয়া। করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে ভাইরাস আরএনএ ডিপেনডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম প্রয়োজন। রেমডেসিভির এই এনজাইমকে ব্লক করে। ফলে ভাইরাসের বিস্তার কম হয়।

 

১০২টি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে

আশার কথা জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।  করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে বসে নেই বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাস প্রতিরোধে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে ১০২টি সম্ভাব্য টিকা তৈরির কাজ চলছে। অথচ এতদিন এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৭টি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তাদের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে গবেষণাধীন সম্ভাব্য এই ১০২টি টিকার মধ্যে ৮টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে। তবে চার দিন আগেও এই সংখ্যা ছিল ৭টি। নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীনে গবেষণাধীন একটি সম্ভাব্য কভিড-১৯ টিকা। প্রথম ৭টি টিকা মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। নতুন করে নথিভুক্ত হওয়া চীনের টিকাটি এখনো মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি সংস্থাটি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন পাওয়া টিকাগুলোর মধ্যে ৪টি চীনের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একটি করে টিকা তৈরির কাজ চলছে। অপরটি যৌথভাবে তৈরির কাজ করছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বায়োটেক কোম্পানি। প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য টিকা মানবদেহে প্রয়োগ করে দ্য আমেরিকান ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট বা এনআইএস। সেই ভ্যাকসিন এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ধাপ অতিক্রম করেনি। সেটি নিয়ে কাজ চলছে।

 

এভিগান ওষুধে  সফলতা জাপানে

করোনাভাইরাসের আক্রমণে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত জাপানের ওষুধ এভিগান যেন আশার আলো হয়ে এসেছে বিশ্ববাসীর সামনে। ফ্লু জাতীয় রোগের এই ওষুধ যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেও দারুণ ফল মিলেছে! জাপানের এই এভিগান ট্যাবলেটের প্যাটেন্ট নিয়ে অন্যান্য দেশেও এই অষুধ তৈরি করছে। এদিকে জাপানে গবেষণায় করোনাভাইরাসের নতুন উপসর্গ চিহ্নিত করা হয়েছে। নিজের আচরণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে করোনাভাইরাস। সাধারণত কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা ও শাসকষ্টের মাধ্যমেই শুরু হয় এই রোগের উপসর্গ। আর উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। সাধারণ এসব লক্ষণের পাশাপাশি নিত্যনতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করায় উপসর্গেও পরিবর্তন ঘটছে। এবার জাপানের চিকিৎসকরা খুঁজে পেলেন করোনার নতুন ১৩ উপসর্গ। জাপানে নতুন ১৩টি উপসর্গ হলো- ১. ঠোঁট বেগুনি রঙের হয়ে যাওয়া ২. দ্রুত শ্বাস নেওয়া ৩. হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি ৪. অল্প একটু হাঁটাচলা করাতেই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৫. বুকে ব্যথা ৬. শুয়ে থাকতে না পারা, উঠে না বসলে শ্বাস নিতে না পারা ৭. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৮. হঠাৎ শব্দ করে শ্বাস নিতে শুরু করা ৯. অনিয়মিত নাড়ির স্পন্দন ১০. মলিন চেহারা ১১. অদ্ভুত আচরণ করা ১২. অন্যমনস্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ১৩. বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া, উত্তর দেওয়ায় অপারগতা।

 

আমেরিকায় রেমডেসিভির অনুমোদন

যে কোনো অ্যান্টি ভাইরাসের কাজই হচ্ছে শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসকে ধ্বংস করা এবং তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও একই রকমভাবে করোনা-আক্রান্তের শরীরে ওই মারণ ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখে সংক্রমণ ঠেকাতে অনেকাংশে সক্ষম রেমডেসিভির। কোনো ভাইরাস মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে তার ভিতর বংশবৃদ্ধি চালিয়ে সেই কোষটিকে ধ্বংস করে। তার পর সে আক্রমণ চালায় পাশের কোষে। এভাবেই একের পর এক কোষ ধ্বংস করে সে। আর মারণ ভাইরাস নিয়ে যায় মৃত্যুর পথে। কিন্তু অ্যান্টি ভাইরাসের কাজ হলো, আক্রান্ত কোষে ঢুকে আগেই ওই ভাইরাসকে ধ্বংস করা। তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। ফলে ভাইরাসটি আর অন্য কোষকে আক্রমণ করতে পারবে না। এতে সংক্রমণ রুখে দেওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আসলে করোনার ঘরে ঢুকে তাকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে এই অ্যান্টি ভাইরাস। রেমডেসিভির প্রয়োগ নিয়ে আমেরিকার সিদ্ধান্তের পর বিশ্বের অনেকেই এখন আশাবাদী হচ্ছেন। এখান থেকেই বিশ্বমানবতার নতুন পথচলা শুরু হবে। আরও অনেক ওষুধ আসবে অচিরেই। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় মাইলস্টোন।

 

জার্মানির সফলতার পেছনে এমিল

করোনায় জার্মানির সফলতার পেছনে মূলত কাজ করছে অধিক পরিমাণে পরীক্ষা। ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে জানুয়ারির মাঝামাঝিতেই জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে। কভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের লক্ষ্যে জার্মানির এক কোম্পানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে। এমন টিকা আবিষ্কার হলে করোনাভাইরাসের মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এই প্রথম জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি পেয়েছে ঠিক কবে থেকে এই পরীক্ষা শুরু হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিয়নটেক কোম্পানির সূত্র অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ২০০ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই টিকা পরীক্ষা করা হবে। এদিকে ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় জাপান এগিয়ে অনেক আগে থেকেই ইমুনোলজিস্ট এমিল ফন বেরিংয়ের কল্যাণে। ১৮৯০ সালে জার্মান ইমুনোলজিস্ট এমিল ফন বেরিং প্রথম ‘প্যাসিভ ইমিউনাইজেশন’ বিষয়টি উদ্ভাবন করেন। সেই সময় ডিপথেরিয়ার কারণে হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছিল। ফন বেরিংয়ের আবিষ্কারের কারণে ডিপথেরিয়া ও টিটেনাসে শিশুমৃত্যু অনেক কমে গিয়েছিল। তাই ১৯০১ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রথম নোবেলটি দেওয়া হয়েছিল তাকে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে ফন বেরিংকে ‘শিশুদের ত্রাণকর্তা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। আফ্রিকায় ইবোলা মোকাবিলায়ও ফন বেরিংয়ের কৌশল কাজে লাগানো হয়েছে।

 

চীনে ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল

চীনা সংস্থা সিনোভ্যাক দাবি করেছে যে করোনার ভ্যাকসিন তারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি যদি সত্যিই কাজ করে তাহলে তা মানবজাতির জন্য একটি সুখবর। এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় তারা। ছাড়পত্র পেয়ে গেলেই গণহারে ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। সিনোভ্যাকের আরও দাবি, তাদের গবেষণাগারে প্রস্তুত ভ্যাকসিনই করোনা ঠেকাতে কার্যকর হবে। সিনোভ্যাকের দাবি, বানরের শরীরে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে এই ভ্যাকসিনের। তবে, গণহারে উৎপাদন শুরুর আগে তাদের আরও কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে। করোনা বিপর্যয়ে চারটি সংস্থার তৈরি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে চীন। তার একটি সিনোভ্যাক বায়োটেকের। বানরের পর মানব শরীরেও পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সিনোভ্যাক জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে বছরে ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে তারা প্রস্তুত। একটি নিষক্রিয় প্যাথোজেনের ওপর ভিত্তি করে এই ভ্যাকসিনের হাজারো শট সাদা-কমলা রঙের একটি প্যাকেজে সজ্জিত করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে করোনাভ্যাক।

 

কানাডায় ভাইরাস লাইক পার্টিকেল

কানাডার বিজহানিরাও কাজ করে যাচ্ছেন করোনা মোকাবিলায়। কানাডায় অবস্থিত একটি বায়োটেক কোম্পানি মেডিকাগো যা মিতসুবিশি তানাবি ফার্মা  কোম্পানির সাবসিডিয়ারি। প্রতিষ্ঠানটি এখন দাবি করেছে তারা করোনাভাইরাসের একটি ভাইরাস-লাইক-পার্টিকেল তৈরি করেছে। এদের সংক্ষেপে বলে ভিএলপি। এই ভিএলপি অনেক প্রোটিনের দ্বারা তৈরি এবং এদের আকার এবং গঠন মূল ভাইরাসের মতোই কিন্তু এদের মধ্যে ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু নেই। এই ভ্যাকসিনগুলো সফল হলে এটা নিরাপদ কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু ধাপ পেরোতে হবে। আর এর জন্য আরও কিছু সময় লাগবে। তারপর অনুমতি মিললে সারা বিশ্বে বড় আকারে বিতরণ করা হবে।

 

যুক্তরাজ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্লাজমা

ভাইরাস আক্রান্ত যেসব রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না, তাদের করোনামুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের শরীর থেকে সংগৃহীত প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী এ ধরনের প্লাজমা ২০০২-০৪ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) মহামারীর সময় কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই পদ্ধতি করোনার চিকিৎসায় বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ সাধারণত কোনো ব্যক্তির এক হাত থেকে রক্ত নিয়ে সেটি যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালিত করে প্লাজমা আলাদা করা হয়, এরপর ওই রক্ত আবারও দাতার শরীরে প্রবেশ করানো হয়। একেকজনের কাছ থেকে দুই ইউনিট করে প্লাজমা পাওয়া যায় এবং এ প্রক্রিয়ায় সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট। এসব প্লাজমা শীতল জায়গায় সংরক্ষণ করে পরেও ব্যবহার করা যায়। যদিও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের চিকিৎসায় এখনো কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন মেলেনি। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, বিভিন্ন ট্রায়াল চলছে। সম্প্রতি অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির দিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়েছে। ট্রায়ালের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, রেমডেসিভির ওষুধে মারাত্মকভাবে অসুস্থ কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। এতে ৬৮ শতাংশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়েছে, ১৫ শতাংশের অবস্থা খারাপ হয়েছে। আর ১৩ শতাংশ মারা  গেছেন। এক কথায় বলা যায়, ম্যাজিকের মতো কাজ করছে এই ওষুধ। অ্যান্টি-ভাইরাল ওই ওষুধ ‘রেমডেসিভিরে’ দুই তৃতীয়াংশ রোগীই সুস্থ হয়েছেন।

 

শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির গবেষণা

মডার্না থেরাপিউটিকস নামে একটি ইউএসভিত্তিক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে একটা নতুন ভ্যাকসিনের ব্যাপারে। এরা যেটা করছে, তা হলো এরা ভাইরাসের একটি জেনেটিক বস্তু, যাকে আমরা বলি মেসেঞ্জার আরএনএ, সেটা তৈরি করেছে। এই ভাইরাসের আরএনএটি শরীরে প্রবেশ করালে এটা কোষে ভাইরাসের উপরিভাগে উপস্থিত স্পাইক প্রোটিনের একটি অংশ তৈরি করবে। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যে কোনো ধরনের বাইরের বস্তু আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে তা বুঝতে পারে এবং এটাকে মারার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই প্রোটিনটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা পদ্ধতি এটার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। শরীরের এই মজুত অ্যান্টিবডি পরবর্তী সময়ে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবে। এ কোম্পানি সিয়াটলে বেশ কিছু সুস্থ ভলান্টিয়ার জোগাড় করেছে এটা প্রয়োগ করার জন্য। এই গবেষণা সফলতার মুখ দেখলে তা হবে করোনার বিরুদ্ধে বড় অর্জন।

 

ভারতে ফাভিপিরাভি ও প্লাজমা থেরাপি

করোনা রোগের ওষুধ তৈরির কঠিন কাজটি এবার সেরে ফেলতে চলেছে ভারত। মুম্বাইয়ের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি লাসা সুপারজেনিক্স এই ওষুধ তৈরির কাজে অংশ নিয়েছে। এক্ষেত্রে এই কোম্পানিকে সাহায্য করছে ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল টেকনোলজি। জাপানের ফুজি কোম্পানির ওষুধ ফাভিপিরাভিরকেই তৈরি করতে চলেছে তারা। দেশের মধ্যে প্রথম হিসেবে এই ফার্মটি এই কাজে নিযুক্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রকার অনুমতি পাওয়া গেলেই আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করে দেবে তারা। এই ফাভিপিরাভির ওষুধটি জাপানের ফুজিফিল্ম কোম্পানি তৈরি করলেও তারা এটির ওপর কোনো পেটেন্ট দেননি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ এই ওষুধটিকে স্বীকৃতি জানিয়েছে এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধের তালিকায় এটির নাম রয়েছে। এদিকে প্লাজমা থেরাপিতে সাফল্য পেয়েছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। এই থেরাপির মাধ্যমে দিল্লিতে সেরে উঠেছেন কভিড-১৯ আক্রান্ত এক ব্যক্তি। এই পদ্ধতি হলো কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন যে সব মানুষ, তাদের শরীরে এই  রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাদের রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে অন্য কভিড-১৯ আক্রান্তকে দেওয়া হয়েছে, সেই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এই পদ্ধতিকেই প্লাজমা থেরাপি বলা হয়। দিল্লিতে সুস্থ হয়ে ওঠা ১১০০ জনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর