শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় অভিনব লড়াই

তানভীর আহমেদ

করোনায় অভিনব লড়াই

সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল জাহাজে আইসোলেশন

সিঙ্গাপুরে ভাসমান জাহাজে আইসোলেশন করোনা সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে আধুনিক ও কৌশলী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অনেকটাই সফল সিঙ্গাপুর। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, টেস্ট ও আইসোলেশন- এই তিন কৌশল দারুণ কাজে দিয়েছে সেখানে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কারা এসেছেন সেটা জানতে কাজে লাগানো হয়েছে গোয়েন্দাদের। সিঙ্গাপুরে করোনার সংক্রমণ বেশি হয়েছে ডরমেটরিগুলোতে। এসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক মানুষ থাকেন বলে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল। কারা করোনা আক্রান্ত এটি খুঁজে পেয়ে পুরো ডরমেটরিগুলো কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তারপর ভিতরে প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করে দেখা হয় কারা আক্রান্ত। সুস্থদের খুঁজে বের করে আলাদা করে ফেলা হয়। যাকেই আইসোলেশনে নেওয়া প্রয়োজন মনে হয়েছে তার জায়গা হয়েছে বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে। এমন একটি আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিলাস বহুল জাহাজ বা ক্রুজ শিপকে। এই ক্রজশিপগুলোতে ধনকুবের নিয়ে পাড়ি দেয় সমুদ্র। দিনের পর দিন এই প্রমোদতরীতে তারা আয়েশ করেন, উড়ান কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে খুব দ্রুত এমন দুটি প্রমোদতরী প্রস্তুত করে ফেলে সিঙ্গাপুর। প্রবাসী কর্মীদের আলাদা রাখতে জাহাজ সুপারস্টার জেমিনি হংকং থেকে পৌঁছায় মেরিনা বে ক্রুজ সেন্টারে। আরেকটি প্রমোদতরী সুপারস্টার অ্যাকোয়ানিয়াসও করোনায় আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে আনা হয়। এ দুটি জাহাজে আলাদা কক্ষ, টয়লেটসহ অন্য সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। জাহাজের বায়ুচলাচল ব্যবস্থা, সিকিউরিটি প্রটোকল এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি তদারকি করা হয় সরকারের মাধ্যমে। করোনাভাইরাস থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের ফের আক্রান্তের সম্ভাবনা থেকেই সিঙ্গাপুর এই প্রমোদতরীতে তাদের আইসোলেশনে নেওয়া। সুস্থ হওয়া প্রবাসীদের জন্য এই জাহাজে তারকা হোটেলের মতোই সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জুরং এলাকার দুটো ডরমেটরিতে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে সব শ্রমিককে ভিতরে থাকতে বলা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রত্যেকের করোনা টেস্ট করেন। এরপর আক্রান্তদের আলাদা করে সুস্থদের নিয়ে যাওয়া হয় সমুদ্রে ভাসমান বিলাসবহুল জেমিনি ক্রুজে। ভাসমান এ প্রমোদতরীতে ৫ হাজার কক্ষ রয়েছে। আইসোলেশন সেন্টার তৈরিতেও সিঙ্গাপুর যে কোনো দেশের জন্য মডেল। আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুর এক্সপো সেন্টারকে প্রস্তুত করা হয়। সেখানে ২০ হাজার রোগী রাখার ব্যবস্থা আছে। প্রস্তুত রাখা হয় সিঙ্গাপুরের গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের আরও ২০ হাজার ফ্ল্যাট। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে সিঙ্গাপুরের সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ে জোর দেওয়া। সিঙ্গাপুর যতটা নিখুঁতভাবে রোগী শনাক্ত করেছে, তা অনেক দেশের পক্ষেই করা সম্ভব হবে না। সিঙ্গাপুরের মতো নজরদারির ব্যবস্থা খুব বেশি দেশে নেই। আক্রান্তদের কাছ থেকে সুস্থ শ্রমিকদের আইসোলেশন বা পৃথক করা হয় দ্রুতগতিতে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি একজন থেকে কীভাবে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমিত হয় তা নির্ণয় করা, ওই ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচ্ছিন্ন করা হয়। গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে থাকা মানুষকে খুঁজে বের করা হয়। এ ছাড়া কঠোর ‘সার্কিট ব্রেকার’ কৌশল কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে করোনা থেকে রক্ষায় কাজ করেছে তারা। এ সময় সরকার সব ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে নাগরিকদের। প্রবাসী শ্রমিকদের মোবাইলে টকটাইম থেকে শুরু করে বাড়িতে টাকা পাঠানোর সবই করতে পারছেন।

করোনার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের সব হাসপাতালে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা রোগীদের অপেক্ষায় বসে থাকছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও রেস্টুরেন্ট খোলা। পরিবারের একজন সদস্য সপ্তাহে এক বা দুই দিন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন। তবে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাইরে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। দোকানে আইডি কার্ড স্ক্যান করে রাখা হচ্ছে। যাতে একই ব্যক্তি একাধিকবার দোকানে আসতে না পারেন। অপ্রয়োজনে রাস্তায় নামলেই তল্লাশির মুখে পড়তে হয় নাগরিকদের। এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে মাঠে নামানো হয়েছে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে ইতিমধ্যে ৬০০ ডলার করে ভাতা দেওয়া হয়েছে। যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের অনলাইনে চাকরির আবেদন করতে বলেছে সরকার। সরকারের সম্মিলিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দ্রততার সঙ্গে নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করায় সিঙ্গাপুর করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর কাতারেই পড়ছে। করোনা যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে এ যুদ্ধে এগিয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর।

 

কে কার সঙ্গে দেখা করেছেন ডায়রিতে লিখে রাখতে বলা হয় নিউজিল্যান্ডে

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস দেশে ঢুকতে বাধা দিয়ে সফল হয় নিউজিল্যান্ড। ৫০ লাখ মানুষের এই দেশে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বিমানবন্দরেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছিল। বিদেশ থেকে এলেই পাঠানো হয় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই দেশজুড়ে চালানো হয় চিরুনি অভিযান। এই অভিযানে বিশেষজ্ঞ দল খুঁজে বের করে কে কবে চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া সংক্রমণ ঘটেছে এমন দেশ থেকে কেউ এলেও তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছে দেশটি। গত ১৯ মার্চ নিউজিল্যান্ড ভ্রমণ ও মানুষের কর্মকান্ডের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তৃতীয় ধাপে পৌঁছে গেলেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা অল্প কয়েকটি দেশের তালিকায় রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এক টানা নতুন রোগীর খোঁজ না পাওয়ায় করোনা যুদ্ধে বেশ এগিয়ে তারা। নিউজিল্যান্ডে একবার করোনা পজিটিভ হওয়ার পর দুটি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলে রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এর পাঁচ-ছয় দিন পর আবারও টেস্ট করা হয়। নিউজিল্যান্ড বেশ কঠোর লকডাউন পালন করায় করোনা ছড়িয়ে পড়েনি। সাধারণ নাগরিকরাও ঘরে থেকেছেন। দ্রুত ও পুরোদমে লকডাউন বড় ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া চার মাত্রার সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছিল দেশটির সরকার। গত ২১ মার্চ নিউজিল্যান্ড সরকার চার মাত্রার সতর্কতা ব্যবস্থার ধারণা সামনে নিয়ে আসে। এর সর্বোচ্চটা হলো দেশজুড়ে লকডাউন, আর সর্বনিম্নটায় বোঝাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে চলে যায় নিউজিল্যান্ড, যাতে বোঝায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি বাড়ছে। কয়েক দিনের মধ্যে চতুর্থ মাত্রার সতর্কতায় যায় দেশটি, অর্থাৎ দেশজুড়ে লকডাউন। অফিস-আদালত, স্কুল এবং সমুদ্রসৈকত ও খেলার মাঠ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব ধরনের বার ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ করা হয়। কন্টাক্ট ট্রেসিং ও পরীক্ষার দিক দিয়ে নিউজিল্যান্ড এই লড়াইয়ে এগিয়ে যায়। কারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়লে তিনি অন্য কাদের সংস্পর্শে এসেছে, এর ৮০ শতাংশকে তারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এর ফলে ওই মানুষগুলো ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ডে নিজেদের আলাদা করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ওই সময় শেষ হওয়ার পর তারা পরীক্ষা করিয়েছেন। প্রতিদিন আট হাজার করে পরীক্ষা করা হয় নিউজিল্যান্ডে। কে কার কার সংস্পর্শে আসছেন এর রেকর্ড রাখতে জনসাধারণকে ডায়েরি ব্যবহার করতেও উৎসাহিত করা হয়েছিল। পরস্পর থেকে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখার বার্তাও আগেভাগেই জনগণকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংকটকালে জনগণের সামনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারার জন্যও নিউজিল্যান্ড সরকারের প্রশংসা পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন কার্যকরভাবে ভাইরাস নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন।

 

চীনফেরতদের দ্বীপে আলাদা করে রাখে অস্ট্রেলিয়া

চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলেই বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালায়। সে তালিকায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। করোনা সংক্রমণ আটকে রাখতে পারা সফল দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। করোনা মহামারী আকারে যেন নিজ দেশে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ক্রিসমাস দ্বীপকে বেছে নেয় তারা। চীন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসা নাগরিকদের মূল ভূখন্ডে নেওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য এই নির্জন দ্বীপ বেছে নেওয়া হয়। মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরের ক্রিসমাস আইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় চীনফেরত সবাইকে। অন্য সময় দ্বীপটি অভিবাসন প্রত্যাশীদের বন্দীশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানকার অবস্থা সুখকর নয়। তবু মূল খন্ডে করোনা আটকাতে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি রোগ শনাক্ত করার অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। তার পর পর কয়েকটি ধাপে পুরো অস্ট্রেলিয়াকে তারা লকডাউন করে ফেলেছে। এমনকি বাইরের বিভিন্ন দেশে থাকা বিমান ও জাহাজগুলোর যাত্রীকেও তারা দেশে প্রবেশের আগে অনেক শক্ত কোয়ারেন্টাইন মানতে বাধ্য করেছে। এ ছাড়াও করোনার বিস্তার ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে দেশটি। অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাস লড়াইয়ের সাফল্যের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী চিকিৎসাব্যবস্থা। যে কোনো রোগে আক্রান্ত মানুষ যখনই কোনো চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তাদের সবার আগে করোনার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হচ্ছে। সেখানে করোনার একটি মাত্র উপসর্গ দেখামাত্র তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত হওয়া কিংবা না হওয়ার বাইরে কেউ যদি কোনো সংক্রমিত রোগীর মধ্যে গিয়ে থাকেন তাকে রাখা হয়েছে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে। এ ছাড়া মহামারীর সময় বিধি মেনে চলতেও আইনের কঠোর প্রয়োগ করে দেশটি। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জনপ্রিয় রাগবি খেলোয়াড় এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা, যিনিই নিয়ম ভেঙেছেন তাকেই মাশুল গুনতে হয়েছে। কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যেককে ১ হাজার ১৩৪ ডলার করে জরিমানা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ‘কভিডসেফ’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ চালু করার পর করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অ্যাপ দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে মানুষ সতর্ক থাকতে পারে। কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না জেনেও এসে থাকে, তাহলে এই অ্যাপের কল্যাণে দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে যেতে পারেন। কোনো ব্যক্তি যদি একটি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকায় আক্রান্ত কেউ থাকে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্ক বার্তা পাঠায় এই অ্যাপ। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির জটিলতার অথবা নতুন কারও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছেন। ফলে, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং কমিউনিটির মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা হ্রাস পায় সেখানে। অস্ট্রেলিয়ায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। সেখানে দুজনের বেশি মানুষ এক সঙ্গে হাঁটতে পারবেন না। আর তাতেই মিলছে সাফল্যের দেখা। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসায় অনেকটাই স্বস্তিতে তারা। করোনা পরীক্ষার দিক থেকেই অনেক এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এর মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় দেশটির রাজ্য ও অঞ্চলগুলো কিছু বিধি-নিষেধকে শিথিল করা শুরু করেছে।

 

ঘরে ঘরে রোগী খুঁজেছে তাইওয়ান

ঘরে ঘরে করোনা আক্রান্ত রোগী খুঁজে বের করার কৌশল নিয়েছিল তাইওয়ান। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এই রোগী খুঁজে বের করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে করোনাকে ঠেকিয়ে দেয় তারা। তাইওয়ান একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। অনেকেরই ধারণা হয়েছিল চীনের এত কাছে থাকা দেশটি হয় করোনায় মৃত্যুপুরী হয়ে উঠবে। চীনের খুব কাছে থাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তাইওয়ানকে ‘দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ অঞ্চল হিসেবে পূর্বাভাস পাওয়া হয়েছিল। এখানকার সাড়ে আট লাখ মানুষ চীনের মূল ভূখন্ডে কাজ করেন। একেবারে চীনা নববর্ষের সময় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা তাইওয়ান বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি তাইওয়ানে শক্তিশালী পূর্ব সতর্কতা নেওয়ার কারণে। তাইওয়ানের করোনা সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে ২০০৩ সালের সার্স রোগের অভিজ্ঞতা। সেসময় সার্সে তাইওয়ান বড় ধরনের সংকটে পড়েছিল। তখন থেকেই তাইওয়ান এ ধরনের মহামারীকে কীভাবে রুখে দেওয়া যায় তা শিখেছিল। সার্স আক্রমণের পর তাইওয়ানের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড  সেন্টার স্থাপন করা হয়। এর একটি বিশেষ শাখাকে বড় ধরনের মহামারীর সময় কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি সরাসরি, স্বচ্ছ যোগাযোগের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড পোস্ট হিসেবে কাজ করে। এটি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা ও কোয়ারেন্টাইনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেন্টার এপিডেমিক কমান্ড সেন্টার (সিইসিসি) সক্রিয় করে গত ২০ জানুয়ারিতে। এতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান নীতি ও কৌশল কার্যকর করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। এবার করোনার খবর তাদের কানে পৌঁছতেই তারা চীন, ম্যাকাওসহ আশপাশের দ্বীপ ও দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। নোঙর ফেলতে দেয়নি ক্রুজ শিপ, বিভিন্ন কার্গো জাহাজকে। দেশের জনগণ সবাই মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরতে শুরু করেন। এই স্বাস্থ্যাভ্যাস তাদের আগে থেকেই ছিল। সরকার বিদেশে মাস্ক রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। প্রত্যেক নাগরিক এক সপ্তাহে যে কয়টি মাস্ক প্রয়োজন তা কিনতে অনুমতি দেয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা দেশের প্রতিটি নাগরিকের চলাচল জেনে নেয়। মোবাইল ট্র্যাকিং করে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত ও করোনা ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টাইন করে। এ ছাড়া বিগ ডেটা এবং প্রযুক্তি সংযুক্ত করে তাইওয়ান সরকারের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ  নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এক দিনেই তাইওয়ান সরকার ন্যাশনাল হেলথ ইনস্যুরেন্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সির কাছ থেকে যাত্রীদের ১৪ দিনের ভ্রমণের তথ্য বের করে। এখান থেকে রোগী শনাক্ত করার কাজ করে। এ ছাড়া নাগরিকদের বাড়ির নিবন্ধন পদ্ধতি ও বিদেশিদের আগমনসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্ত করে। কোয়ারেন্টাইনে গেলে তাদের বাড়িতে দুই সপ্তাহ পুষ্টিকর খাবার ও চিকিৎসার জন্য দিনে ৩০ ডলার করে সাহায্য দিয়েছে তারা। যে কারণে কেউ তাদের রোগের কথা গোপন করেনি। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় জানুয়ারি মাসেই তারা শতাধিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রতিদিন সতর্কতামূলক বুলেটিন প্রচার করেছে। তাইওয়ানের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বের সেরা দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যোগ্য। তারা তখনই করোনা টেস্ট করতে শুরু করে। সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়া রোগীদের আলাদা করে ফেলা হয়। এমনকি যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের তখন থেকেই খুঁজে বের করা হয়।

প্রত্যেকের ভ্রমণ ইতিহাস যাচাই-বাছাই করা হয়। যারাই স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলছে না তাদের দন্ডিত করা হয়। এসব কারণেই তাইওয়ান সফল। এখন সেখানে জীবনযাত্রা একেবারেই স্বাভাবিক। শুধু গণপরিবহনে চলাচলের সময় লোকজনকে মাস্ক পরতে হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর