রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো

আবদুল কাদের

করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো

করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে গোটা বিশ্বে। এই রোগে বেসামাল যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্যসহ অন্য বহু দেশ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো রয়েছে বিপাকে। করোনাভাইরাসে বেসামাল ১০টি দেশের মধ্যে দুটি এশীয়, আমেরিকান ও আফ্রিকান একটি এবং পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ অন্তর্ভুক্ত।

 

যুক্তরাষ্ট্র

২০ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৫০ দিন পরে রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় ১ হাজার। পরে এক লাফে রোগী ছাড়িয়ে যায় ৫ হাজার। গত ২৬ মার্চ থেকে পরীক্ষা বাড়ানোর পরই শুরু হয় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটির মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ ২২ হাজারের বেশি। মারা গেছে প্রায় ৭৯ হাজার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে। দেশটির চারদিক এখন স্তব্ধ। কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। সুনসান নীরবতা। শুধু থেকে থেকে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। সামাজিক দূরত্বে অবহেলা আর বিলম্বিত পরীক্ষা দেশটির এমন পরিস্থিতির মূল কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শুরু থেকেই মার্কিন প্রশাসন মুখে মুখে আশ্বস্ত করলেও, রোগ পরীক্ষা এবং লোকজনকে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। ঠিকমতো পরীক্ষা না হওয়ায় ভুল বার্তা পেয়েছে দেশের মানুষ, জানতে পারেনি দেশে আসলে কত মানুষ আক্রান্ত। ফলে তারাও বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। চলাফেরা-মেলামেশায় সতর্ক হয়নি। এদিকে দেশটির রাজ্যগুলোতে পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিটের অভাব দেশের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তায়। অন্যদিকে ভেন্টিলেটরের অভাবে মৃত্যুর মিছিল আরও বাড়ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিটি নগরী যেন এখন মৃত্যুপুরী। অথচ চীনে জানুয়ারির শেষের দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছিল, তখনই ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল দেশটির রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনেক দিন সময় পেয়েও শুরুর দিকে এসব উদ্যোগ নেয়নি। ফলাফল আজকের এই ভয়ানক পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বে দেশটি এখন ১ নম্বরে। এমতাবস্থায় ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তা বলা বড্ড মুশকিল!

 

ইতালি

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনে হলেও এর ভয়াবহতা দেখেছে ইউরোপীয় দেশ ইতালি। নানাকিছু করেও ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন যে হারে মৃত্যুর মিছিল বেড়েছে, তা শিউরে ওঠার মতোই। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রথম করোনা আক্রান্ত একজন মারা যান। সে সময় সংবাদপত্রে লেখা হয়, ‘ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু’। এর পরপরই দেশটির ১০টি শহর অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিষিদ্ধ হয় জনসমাগমস্থলে যাওয়া।  ইতালীয় সরকার প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ করে দেয়। সুপারমার্কেট, ওষুধের দোকান, ব্যাংক এবং পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সবই বন্ধ। কিন্তু ততক্ষণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ইতালির পরতে পরতে। ইউরোপের ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম স্থান এবং বিশ্বজুড়ে ২য় স্থানে অবস্থান করে দেশটি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২০১ জনে। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ১৮৫ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনায় অবহেলা আর সামাজিক দূরত্ব না মানাই দেশটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

 

জার্মানি

ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী দেশ জার্মানি করোনাভাইরাসের আক্রান্তের তালিকায় চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবেশী ফ্রান্সের মতো, জার্মানিও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে প্রচুর জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের ইভেন্টগুলো নিষিদ্ধ করেছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটির বড় আয়োজন বাণিজ্য মেলা এবং দ্য হ্যানোভার মেস ইত্যাদি স্থগিত করা হয়েছে। তবে জার্মানিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ১.৩ শতাংশ। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। জার্মানির রোগ নিয়ন্ত্রণ দফতরের হিসাব অনুযায়ী, আক্রান্তের পরিমাণ এখন শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এর অর্থ হলো, প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যক্তি একজনের চেয়ে কম মানুষে এ রোগ সংক্রমণ ঘটিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর জার্মানি ব্যাপক হারে পরীক্ষা শুরু করে। দেশটির ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে এসব শুভ সংবাদের পাশে একটি খারাপ খবর হলো, দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণও। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭ হাজার ৫১০ জন। করোনাকালের এমন পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ শিথিল করছে জার্মান সরকার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে খুলবে। তবে সুইমিংপুল, শরীরচর্চাকেন্দ্র্র, জাদুঘর, চিড়িয়াখানাসহ অনেক প্রতিষ্ঠান আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে।

 

স্পেন

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কভিড-১৯ আক্রান্তের তালিকায় চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে পেছনে ফেলে দেয় স্পেন। পয়লা ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। স্প্যানিশ একজন মন্ত্রীও আক্রান্ত হন করোনায়। শুধু তাই নয়, দেশটিতে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় রাজপরিবারের নামও। দেশটির ৮৬ বছর বয়সী রাজকন্যা মারিয়া টেরসা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় স্পেন দ্বিতীয় স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয় ২৬ হাজার ৩০০ এর বেশি জনের। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। স্প্যানিশ সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরো দেশকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারি অফিসগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করার জন্য পরামর্শ দেয়। করোনাকালে স্প্যানিশ সব পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

চীন

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীন সরকারের ওয়েবসাইটে উহানে অজ্ঞাত নিউমোনিয়ার কারণে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঘোষণ দেওয়া হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রোগটির নাম দিল করোনাভাইরাস। চীন এবং পাশের রাষ্ট্র হংকং সংক্রমিত হতে থাকল ভাইরাসে। সরকারের তরফে বারবার বলা হচ্ছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে।  কিন্তু ততক্ষণে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল চীনের কয়েকটি প্রদেশে।  ২৫ জানুয়ারি নতুন বছরের ঠিক দুদিন আগে উহানকে অবরুদ্ধ এক কোটিরও বেশি মানুষের শহর উহান। স্থানীয় লোকজন তো বটেই, সারা পৃথিবী চমকে উঠেছিল। এর পরপরই বদলে যেতে লাগল সব কিছু। লোকজনকে ঘরবন্দী থাকতে হলো দিনের পর দিন। শহরের প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলো করোনাভাইরাসে। আর সমগ্র চীনে আক্রান্ত হলো ৮২ হাজার ৮৮৮ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয় ৪ হাজার ৬৩৩ জন। তবে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৮০ শতাংশ ছিল উহান শহরের। দুই মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ ছিল চীনের উহানবাসী। পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। চীন সরকারের দ্রুত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রতিক্রিয়ার কারণে এই সফলতা আসে। আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আসার পর ধীরে ধীরে সচল হতে থাকে চীন।

 

ফ্রান্স

করোনাভাইরাসে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে। শৈল্পিক ফ্রান্সে কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা যায় প্রায় ২৬ হাজার ২৩০ জন। ফরাসী সরকার মার্চ থেকে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। প্যারিসের প্রশাসন করোনাভাইরাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনপ্রিয় ল্যুভের জাদুঘরটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে রেখেছে। প্যারিসের অ্যামিয়েন্স, বোর্দো এবং সাভোয়েসহ অন্য অঞ্চলগুলো বাদে বেশির ভাগ স্থানে করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। ডিজনিল্যান্ড প্যারিসের এক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছিল জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স। চলমান করোনার প্রকোপ ফরাসি পর্যটন শিল্পের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তবে, সুসংবাদ হলো- ফ্রান্সে গত কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় ১১ মে পর্যন্ত যদি এমন পরিস্থিতি থাকে তবে অবরুদ্ধ শিথিল করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ফরাসীরা।

 

ইরান

ইরান, অন্যতম একটি দেশ, যেখানে কভিড-১৯ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইরানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। আর  ৬ হাজার ৫০০ এরও বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ হাজারের বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কভিড-১৯-এ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গেছে ইরানে। তবে আশংকা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের থেকে অনেক বেশি। ইরানের এমপিসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা  গেছেন। এমনকি ইরানের একটি এয়ারলাইনের ফ্লাইটের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগও ওঠে। বেশ কয়েকটি দেশ ইরান ভ্রমণের সময় তাদের করোনাভাইরাস-সংক্রমণ শনাক্ত করেছে। দেশটির একটি সংবাদ সংস্থা মিজান জানিয়েছে, কারাগারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সরকার প্রায় ৭০ হাজার বন্দীকে অস্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা করেছিল।

 

রাশিয়া

আমেরিকা ও ইউরোপের পর এবার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে রাশিয়ায়। দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন। দেশটির আরও দুই মন্ত্রীর করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটির মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে প্রায় ১ হাজার ৭২৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৩০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৪৪ লাখ নমুনা পরীক্ষায় এসব তথ্য মিলেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে মস্কোয় সংক্রমণের হার ১৬ শতাংশ বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মস্কোয় অবরুদ্ধ কার্যকর হওয়ায় পরিবহন ব্যবস্থায় কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। রাশিয়ায় নতুন সংক্রমণের হার রেকর্ড পরিমাণ বাড়ার পর চলাফেরার ব্যাপারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে। তবে, মস্কোর অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করছেন মেট্রোর লম্বা লাইন ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দেশটির সরকার বলছে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে এবং রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না। তারা অতিরিক্ত শয্যা প্রস্তুত করছে। দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, করোনা শনাক্ত হওয়ার পরও অনেক চিকিৎসককে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

 

ব্রাজিল

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ব্রাজিলেও হু হু করে বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে করোনার পরবর্তী হটস্পট আফ্রিকা মহাদেশের ব্রাজিল। দেশটিতে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই প্রায় তিনগুণ হয়েছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, ব্রাজিলে এ পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি প্রাণ। এদিকে, করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে ব্রাজিলের আমাজন বনের মাঝে অবস্থিত সবচেয়ে বড় শহর মানাউশেও।  সেখানে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে করোনা পরিস্থিতি। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলা ওই শহর কর্তৃপক্ষকে খুঁড়তে হচ্ছে গণকবর। অন্য এক খবরে বলা হয়, ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও করোনার বিস্তার রোধে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা অবরুদ্ধ অবস্থা দিতে রাজি হননি ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। তার দাবি, মহামারীর চেয়ে অর্থনৈতিক সংকট বেশি ভয়াবহ। শুধু তাই নয়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বিতর্কিতভাবে সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো নিয়ে বিদ্রুপ করেছেন এবং মহামারীর তীব্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একে ‘সামান্য একটি ফ্লু’ বলে বর্ণনা করেছেন।

 

যুক্তরাজ্য

মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মার্চের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে ইউরোপের এই দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। তখন থেকেই করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় চলে আসে যুক্তরাজ্য। ২৩ মার্চ সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫,১৪১ জন। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ২২ এপ্রিল, ৩৪,০০০ অতিক্রম করে। এরপর লাখ ছাড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়,  ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে দ্বিতীয়, যুক্তরাষ্ট্রের পর। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে ইতিমধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজারের বেশি মানুষের। দেশটির করোনাভাইরাসের রেকর্ড অনুযায়ী গেল ১৭ মার্চ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো হয়। দুর্ভাগ্যবশত কভিড-১৯ ফলাফলও পজিটিভ হয়। প্রথম ধাপে সংক্রমণের পর এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও বিপরীত অবস্থায় যুক্তরাজ্য। মাত্র কয়েকদিন শান্ত থাকার পর দেশটিতে (মে মাসে) দ্বিতীয় ধাপে আবারও মৃত্যু মিছিল বাড়তে থাকে। এপ্রিলে দেশটির বিজ্ঞানীরা মানবদেহে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালান। যদিও এর ফলাফল পেতে কমপক্ষে আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে দাবি করেন বিশ্লষকরা। অন্যদিকে প্রথম সংক্রমণের পর এটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ভাইরাসটির সাম্প্রতিক জিনগত বিশ্লেষণে এই নতুন তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।  বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৬০০ রোগীর কাছ থেকে নেওয়া নমুনা থেকে কভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসটির জিনগত বিশ্লেষণ করা হয়। তবে, করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হবে প্রথম এবং শেষ সমাধান।

সর্বশেষ খবর