মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা থেকে স্বাভাবিক হতে যত উদ্যোগ

তানভীর আহমেদ

করোনা থেকে স্বাভাবিক হতে যত উদ্যোগ

খুলছে এয়ারলাইন

করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় আকাশপথ। জরুরি কয়েকটি ফ্লাইটে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা ছাড়া বিশে^র প্রায় সব দেশই বন্ধ করে দেয় বিমানবন্দর। এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো বসিয়ে রেখেছে বিমান। এতে করে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখেছে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার ইতিহাদের মতো বড় এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। জানাচ্ছে কবে থেকে তারা ফের যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। দেশে দেশে লকডাউন শিথিল হওয়ায় বুকিং নিতে শুরু করেছে তারা। ১৬ মে থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ তাদের বিমানের ফ্লাইটের বুকিং নিতে শুরু করবে। ফ্লাইট সংখ্যা কিছু কমিয়ে ও কিছু রুটে আপাতত পুরোপুরি সেবা না দিলেও আগামী দুই মাসের মধ্যে সব ফ্লাইট আকাশে উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৬ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের করোনা-পরবর্তী ফ্লাইট দিয়ে ফের যাত্রা শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে তারা ১৭ মে ভারত, শ্রীলঙ্কা, লন্ডন ও ফিলিপাইনে যাত্রী পরিবহনের জন্য বুকিং নিতে শুরু করেছে। লকডাউন না বাড়লে ও বিমানবন্দর খুলে দিলে তারা এসব গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। অনলাইন বুকিংয়ে তারা কোনো জরিমানা ছাড়াই যাত্রা বাতিলের সুযোগ রেখেছেন যাত্রীদের জন্য। দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান পরিচালনার ঘোষণা আসতে শুরু করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা কোরিয়ান এয়ার ১ জুন থেকে তাদের পরিষেবা আন্তর্জাতিকভাবে আবারও চালুর ঘোষণা দিয়েছে। ১ জুন থেকে অন্তত ১৯টি আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল পুনরায় শুরু করবে কোরিয়ান এয়ার। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ  থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওয়াশিংটন, ভাঙ্কুভার, টরেন্টো, ফ্রাঙ্কফুর্ট, সিঙ্গাপুর, বেইজিং এবং কুয়লালামপুরসহ মোট ১৯টি রুটে বিমান চলাচল করবে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে ভ্রমণের ব্যাপারে দেশগুলোর পক্ষ থেকে যে ধরনের দাবি রয়েছে, সেগুলো মেনেই যাত্রী বহন করবে তারা। ভারত সরকার লকডাউন শিথিল করার কাজ শুরু করলেও আন্তঃরাজ্য সরকারি পরিবহন এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের বিভিন্ন ফ্লাইট এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। অগামী ১৭ মে দেশটির লকডাউন তুলে নেয়া হলে বিমান যোগাযোগ খুলে দেওয়া হতে পারে।

 

ভারতে খুলে দেওয়া হলো ট্রেন

১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত ৪০ দিন টানা লকডাউনে থাকার পর থেকেই শিথিল করা বিধি-নিষেধ। লকডাউনের পরেও করোনাকে ঠেকাতে পারেনি দেশটি। ফলে অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করা হয়েছে। রাজ্যগুলোর ভিতরে সবুজ ও কমলা এলাকায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। দেশের সবুজ এলাকা প্রায় পুরোপুরি সচল। কমলা এলাকাতেও কড়াকড়ি কম। শুধু লাল এলাকাগুলোতে তুলনামূলকভাবে লকডাউন নিয়ে কড়াকড়ি।

দেশটির কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আজ থেকে ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আপাতত দিল্লি ও নির্দিষ্ট কিছু স্টেশনের মধ্যে ট্রেন চলবে। দিল্লি থেকে নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে ১৫টি ট্রেন যাবে এবং সমান সংখ্যক ট্রেন দিল্লিতে ফিরবে। দিল্লি থেকে হাওড়ার মধ্যেও ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া আগরতলা, পাটনা, ডিব্রুগড়, বিলাসপুর, রাঁচি, চেন্নাই,  বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, আহমেদাবাদ, ভুবনেশ্বর, জম্মু, সেকেন্দ্রাবাদের মতো একাধিক শহরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। দেশটির রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইন্ডিয়ানস রেলওয়ে আজ ১২ মে থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের ট্রেন সেবা ফের চালু করতে যাচ্ছে। এরপর তারা বিভিন্ন নতুন রুটে আরও বিশেষ সেবা শুরু করবে। ট্রেনযাত্রীদের মাস্ক পরা এবং স্কিনিং মেশিনের ভিতর দিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই কেবলমাত্র এমন যাত্রীরা ট্রেনে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে ভারত কঠোর লকডাউন আরোপ করায় মার্চের শেষের দিকে বিশ্বের এ বৃহত্তম ট্রেন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশটিতে প্রতিদিন ২ কোটিরও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করে।

রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ‘যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে ট্রেন চালানো হবে। এসব ট্রেনে শুধু এসি কোচ থাকবে এবং সব স্টেশনে তা থামবে না।’

এ ছাড়া লকডাউন শিথিল হচ্ছে কৃষির ক্ষেত্রে। দেশটিতে দুগ্ধ, পানিসম্পদ, চা, কফি, রাবার এবং নানা কৃষিজ পণ্য উৎপাদন চালু করা হয়েছে। ছাড় মিলেছে প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে। শর্ত রয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে যেমন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হলে ছাড় রয়েছে। নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ছাড় রয়েছে।

তবে রাজ্যের বাইরে থেকে শ্রমিক আনা যাবে না বলে শর্ত রয়েছে।

সব পণ্য পরিবহনে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ট্রেন ও বিমানেও পণ্য পরিবহন চালু রয়েছে। অফিসের ক্ষেত্রে আইটি সেক্টরে ৫০ শতাংশ কর্মী অফিসে কাজ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। অফিসে মাস্ক পরে থাকতে বলা হয়েছে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ই-কমার্স সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্ক ও শপিংমলে ভিড়

চীনের বাইরে বড় ধরনের করোনা সংক্রমণের শিকার হওয়া প্রথম দিককার দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। তবে  দেশটিতে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। শক্তিশালী কন্টাক্ট ট্রেসিং ও কয়েক লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করে তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়। দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় জনগণকে কাজে ফেরার অনুমোদন দেয় দেশটি। খুলে দেওয়া হয়েছে শপিংমল, পার্ক, গলফ কোর্স ও কিছু রেস্টুরেন্ট। এতে এসব জায়গায় রয়েছে মানুষের ভিড়। ধর্মীয় ও ক্রীড়াবিষয়ক কর্মকান্ডের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে দেশটিতে। এখন দক্ষিণ কোরিয়ার গণপরিবহন,  রেস্টুরেন্ট, খেলার মাঠে মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শহরের পার্কগুলোতে কোলাহল দেখা যায়। পরিবার নিয়ে পার্কে এসে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। শপিংমলে ব্যস্ত শতশত ক্রেতা বিক্রেতা। সামাজিক দূরত্ব কিছুটা শিথিল করায় লোকজন আবার স্বাভাবিক কর্মকান্ডে কর্মসংস্থানে যেতে শুরু করেছেন। এ সপ্তাহ থেকেই কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ও সুরক্ষা কাউন্টারমেজার সদর দফতরের অধীনে রাষ্ট্রীয় জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি, কোরিয়ার জাতীয় লোক সংগ্রহশালা, কোরিয়ার সমসাময়িক ইতিহাসের জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় হাঙ্গুল জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে কিছু শর্তও রয়েছে। যেমন- মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর দর্শনার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এ ছাড়াও স্থানীয় প্রেক্ষাগৃহ এবং বড় বড় পর্যটন এলাকাগুলোতে আগামী সপ্তাহ থেকে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান হচ্ছে সব অনলাইনে। গির্জাগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে প্রার্থনা করতে যারা যাচ্ছেন, তাদের মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রেখে বসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

 

গ্রিসে খুলল হার্ডওয়্যার রিটেইল শপ

অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গ্রিস ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। লকডাউন শিথিল করায় দেশটিতে ঘরের বাইরে এসেছে জনগণ। লকডাউন তুলে নেওয়ার দ্বিতীয় ধাপে খুলে দেওয়া হয়েছে ফাইনাল গ্রেডের শিক্ষার্থীদের স্কুল। আগামী সপ্তাহ থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী এবং জুনিয়র ও সিনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরাও এখন পড়তে যেতে পারবেন। হার্ডওয়্যারের দোকান, কাপড় বিক্রির দোকান, রিটেইল শপের দোকান। বড় শপিংমল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোও শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে। ইউরোপে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখন গ্রিসেও এটি আঘাত হানে। এরপর তারা দ্রুত লকডাউন করে। এখন তারা আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কমে আসায় লকডাউন শিথিল করা হয় দেশটিতে। লকডাউন শিথিল করায় সেলুন, ফুলের দোকান খুলে দেওয়া হয়। বইয়ের দোকানেও দেখা যায় মানুষের ভিড়। এখন দেশটির মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে। সামনের সপ্তাহগুলোতে ধীরে ধীরে লকডাউন আরও শিথিলের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। তবে বাইরে অবস্থানকালে সার্জিক্যাল মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাত্রীরা মাস্ক পরছে কিনা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে কিনা তা নিশ্চিতে ভোর থেকে বাস ও মেট্রো স্টেশনগুলো পরিদর্শন করেছে পুলিশ। লকডাউন শিথিল করার পর কেউ বাইরে যাওয়ার জন্য বিশেষ কারণের প্রয়োজন দেখানোর বাধ্যবাধকতা আর নেই। রাজধানী এথেন্স ও অন্যান্য বড় শহরে বিদ্যুৎচালিত পণ্যের দোকানের বাইরে লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে ফুলের দোকান, বইয়ের দোকান ও সেলুনগুলোয়। স্কুল, রেস্টুরেন্ট ও বার এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকেই খুলে দেওয়া হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গ্রিসে গতকাল করোনার আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জন। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

 

অফিস, পার্ক, সমুদ্রসৈকতে যেতে পারবেন ব্রিটিশরা

করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য লকডাউন শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। দেশটির  শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষণা এসেছে, করোনা ঝুঁকি চতুর্থ থেকে তৃতীয় স্তরে নেমে আসায় লকডাউন শিথিলের পথে হাঁটছে দেশটি। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণে সবুজ ও লাল অঞ্চল ভাগ করে মানুষদের বাইরে কাজে যোগ দিতে ও চলাফেরার সুযোগ দেওয়া হবে। বেশি সংক্রমণ এলাকা লাল ও কম সংক্রমণ এলাকা সবুজ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবুজ এলাকার জনগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ফিরবেন স্বাভাবিক জীবনে। যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসনের ঘোষণায় থাকতে পারে, যাদের কাজ ঘরে বসে করার উপায় নেই, তাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করা হবে। শরীরচর্চা করতে একবারের বেশি বাইরে যাওয়া যাবে না, এ নিয়মও তুলে দেওয়া হবে এবং গার্ডেন  সেন্টারগুলো খোলার অনুমতি পাবে। দেশটির সরকারের পরিকল্পনার আওতায়, আগামী বুধবার  থেকে যুক্তরাজ্যের কিছু কিছু নাগরিককে দেওয়া হচ্ছে তাদের কর্মস্থলে যোগদানের অনুমতি। এ ছাড়া আগামী পয়লা জুন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আগামী বুধবার থেকেই ঘরের বাইরে যেতে পারবেন ব্রিটিশরা। সমুদ্রসৈকত ও পার্কে যেতেও পারবেন। তবে শর্ত থাকবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার। কিছু কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রথম ধাপে খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এজন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে সতর্কতা মানতে হবে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে পরবর্তী সময়ে সেবাভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হবে। এসব পদক্ষেপকে সমাজে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার রোডম্যাপের প্রাথমিক নকশা হিসেবে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে, এ সপ্তাহে লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আসলে খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রাথমিক উদ্যোগ নিচ্ছি।’

 

ফ্রান্সে খুলছে অফিস চলছে বেচাকেনা

করোনায় ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যু হয়েছে ফ্রান্সে। সে স্মৃতি পোড়াবে তাদের। তবু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আবার ঘরের বাইরে পা রাখতে শুরু করেছে ফ্রান্সের জনগণ। লকডাউন শিথিল করা হয়েছে দেশটিতে। মানুষ কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যাচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৬ হাজার ২১৭ জন। নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমতেই লকডাউন শিথিল করে দেশটির সরকার। করোনা ছড়িয়ে পড়ায় গত ১৭ মার্চ থেকে লকডাউনে যায় ফ্রান্স। আট সপ্তাহের লকডাউন শেষে অবশেষে সেখানে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেলুনে গিয়েও দেশটির লোকজন চুল কাটতে পারছেন। সেই সঙ্গে পেশাগত কাজে, শেষকৃত্যে ও রোগীদের  সেবার জন্য স্থানত্যাগের অনুমতিও দিয়েছে সরকার। তবে কেউই আপাতত ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে যেতে পারবেন না। আজ থেকে খুলে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে স্থানীয় মেয়র কিংবা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সরকার থেকে বলা হয়েছে যে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো বাধ্যতামূলক না। তবে কিছু বিষয়ে কড়াকড়ি থেকেই যাচ্ছে। এক জায়গায় ১০ জনের বেশি মানুষ সমবেত হতে পারবেন না। সেই সঙ্গে যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি হয়, সেসব জায়গা যেমন- বার, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও জাদুঘর এখনই খুলছে না। অধিক সংক্রমণ রয়েছে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত দেশটির রাজধানী প্যারিসের লোকজনকে সম্ভব হলে ঘরে থেকেই কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে পার্ক ও পাবলিক গার্ডেন আপাতত বন্ধই থাকছে। লকডাউন শিথিল করা হলেও চালক ও যাত্রীদের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারিভাবে মাস্ক বিতরণ করা হবে দেশটিতে।

জার্মানিতে খুলেছে কিছু দোকানপাট

জার্মানিতে গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৮ জন। মারা গেছেন চার হাজার ৭০৬ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৯১ হাজার ৫০০ জন। এ হিসাবে দেশটির ৬০ শতাংশের বেশি করোনা রোগী এখন সুস্থ। আর কোনো দেশে এত রোগী এখনো সুস্থ হয়নি। গত শুক্রবার জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান বলেন, তার দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। ধীরে ধীরে লকডাউন প্রত্যাহার করা হচ্ছে দেশটিতে। লকডাউনের কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। ফলে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পুনরায় চালু হয়েছে। জার্মানি হাঁটছে স্বাভাবিক জীবনের পথে। আপাতত জার্মান সরকার সর্বোচ্চ ৮০০ মিটার আয়তনের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। যত আয়তনেরই হোক না কেন, বইয়ের দোকান, গাড়ি ও মোটরসাইকেল মেরামতের সব দোকান খোলা যাবে। তবে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হলেও করোনা প্রতিরোধে হাত ধোয়া ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে চিড়িয়াখানাও পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।

ডেনমার্কে খুলেছে স্কুল-কলেজ, রেস্টুরেন্ট

ডেনমার্কে সেলুনসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। যুক্তরাজ্যের ড্যানিশ অ্যাম্বাসেডর লার্স থুয়েসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যদি হাসপাতালে, আইসিইউতে এবং ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে থাকা রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে সব সংখ্যাই হয় স্থিতিশীল আছে অথবা ধীরে ধীরে কমছে।’ করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় চার ধাপে লকডাউন শিথিল করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে ডেনমার্ক। করোনা মোকাবিলা করে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ইউরোপের প্রথম সারির দেশ এটি। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মাসব্যাপী বন্ধ থাকার পর ডেনমার্কের স্কুলগুলো ১৫ এপ্রিল খুলতে শুরু করে। ইউরোপে ডেনমার্কই প্রথম তাদের নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুল খুলে দেয়। গত ১২ মার্চ এসব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে ১১ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা নার্সিং স্কুলে ফিরেছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান আর্সেলা ভন ডার লিয়েন লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার একটি রোড ম্যাপ প্রকাশের পরই স্কুল খুলে দেয় তারা। স্কুলগুলোতে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার পাশাপাশি ক্লাসগুলো খোলা আকাশের নিচে নেওয়া হচ্ছে। স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বয়স ছয় থেকে এগারো বছর। পাঁচ সপ্তাহের বন্ধের পর তারা নিয়মিত ক্লাস করছে। ক্লাসে ঢোকার আগে তাদের প্রত্যেককে আগে হাত ধুতে হয়। মধ্যম ও উচ্চশ্রেণির শিক্ষার্থীরা গতকাল থেকে তাদের ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে। খুলে দেওয়া হয়েছে রেস্টুরেন্ট। জুনের ৮ তারিখ থেকে দেশটিতে খুলে যাবে জাদুঘর, বিনোদন পার্ক ও সিনেমা হল। একসঙ্গে ১০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার বিধি নিষেধেও শিথিলতা আনা হয়েছে। এখন চাইলে ৩০ থেকে ৫০ মানুষ একসঙ্গে জড়ো হতে পারবেন। লকডাউন শিথিলের চতুর্থ ধাপে এসে জিম, কনসার্ট ও নাইটক্লাবগুলো খুলে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর