শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা থেকে বেঁচে ফেরার অবিশ্বাস্য লড়াই

তানভীর আহমেদ

করোনা থেকে বেঁচে ফেরার অবিশ্বাস্য লড়াই

করোনাভাইরাসের তান্ডব দেখছে বিশ্ব। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হলেও মানুষের বেঁচে ফেরার লড়াই আশা জাগিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বেঁচে ফিরেছেন ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রাণঘাতী করোনায় কেউ ৩০ দিন কোমায় ছিলেন, কারও অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে চিকিৎসকরা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তার মৃত্যু ঘোষণার। ১১৩ বছর বয়সী নারীও করোনাকে হারিয়ে ফিরে পেয়েছেন জীবন। এভাবেই বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন পরিবার-স্বজনদের কাছে। বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে এখন বিশ্ববাসী-

 

 

চিকিৎসকরা নিয়েছিলেন মৃত্যু ঘোষণার প্রস্তুতি

করোনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা। প্রায় মাসখানেক ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। ‘দ্য সান’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণনা করেছেন হাসপাতালে তার চিকিৎসার সব খুঁটিনাটি বিষয়। কীভাবে তার জীবন বাঁচাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনরাত কাজ করে গিয়েছেন। গত ২৬ মার্চ বিশ্ববাসী জানতে পারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর নিজেই চলে যান কোয়ারেন্টাইনে। কয়েকদিনের মধ্যেই তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। ভর্তি হন লন্ডনের সেন্ট থমাস হসপিটালে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন তিনি সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। শুরু হয় তার করোনার সঙ্গে জীবনমরণ লড়াই। বরিস জনসন বলেন, তার থেকে যেন অন্যদের সংক্রমণ না হয়, একথা বারবার তিনি চিকিৎসকদের বলেছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। অস্বীকার করব না এটা কঠিন স্মৃতি। চিকিৎসকরা আমার মৃত্যু ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।’ করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আইসিইউতে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চিকিৎসকরা ‘লিটার-লিটার’ অক্সিজেন  দেন। তার শ্বাসনালি দিয়ে টিউব প্রবেশ করানোর সময় বাঁচার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি চলে আসে। আইসিইউতে অক্সিজেন দেওয়া হলেও তাকে ভেন্টিলেটর দিতে হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করার নানা উপায় খুঁজছিলেন। যে চিকিৎসা পদ্ধতি তার শরীরে কাজ না করলে, তার বিকল্পও ভেবে রেখেছিলেন তারা। আইসিইউতে তিন রাত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। পরে অবস্থার উন্নতি হলে আবার তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর তিনি টুইটারে একটি ভিডিওতে বলেছেন, ‘বেঁচে থাকা অথবা মরে যাওয়া, যে কোনো কিছুই হতে পারত। হাসপাতালের ফ্রন্ট লাইনে হাসপাতালের কর্মীরা কতটা সাহসের সঙ্গে কাজ করছেন সেটা আমি দেখেছি।’ করোনা জয়ের পর মেলে আরও একটি সুখবর। ২৯ এপ্রিল ছেলে সন্তানের মুখ দেখেন বরিস। ছেলের নাম রেখেছেন উইলফ্রেড ল্যারি নিকোলাস জনসন। এই শিশুর নামের মধ্যেই রয়েছেন সেই দুই চিকিৎসক, যারা প্রাণপণ লড়াই করে বরিস জনসনকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। নিকোলাস রেখেছেন ড. নিক প্রাইস এবং ড. নিক হার্টের নামানুসারে, যারা গত মাসে তার ‘জীবন রক্ষা করেছেন’।

 

কোমায় ছিলেন এক মাস

করোনায় লন্ডভন্ড যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় এলি বিয়ার। ইসরায়েলের নাগরিক এলির বয়স ৪৬। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতেই চলে তার চিকিৎসা। তার অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর। করোনা পজিটিভ আসার পর তাকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তখনো চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন তিনি হয়তো দ্রুত করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে বেঁচে ফিরবেন। তবে সে হিসাব শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেল। সপ্তাহ না ঘুরতেই তিনি মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি কথাই বলতে পারছিলেন না। অবস্থা গুরুতর দেখে দ্রুত তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসও চালাতে পারছিলেন না এলি। কোনোভাবেই তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে কোমায় চলে যান। ৩০ দিন কোমায় থাকা এলি বেঁচে ফিরবেন সে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু এলি বেঁচে ফিরলেন। করোনার সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। সুস্থ হয়ে এলি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আর কখনো আমার সন্তানদের মুখ দেখতে পারব না। অবশেষে আমি এর সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছি।’ করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর শারীরিক আক্রমণ দেখেছেন তিনি। বলেন, ‘সাধারণ ফ্লু’র চেয়ে এই করোনাভাইরাস ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই ভাইরাস সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়। সেখানে আক্রমণ চালায় এবং যা কিছু পায় ধ্বংস করে দেয়।’ করোনাযুদ্ধ জয়ী হওয়ার পর এক বিত্তশালী ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জেট বিমান দিয়ে এলিকে ইসরায়েলে পৌঁছে দেন। স্বজনদের কাছের ফিরে আসায় তাকে নিয়ে দেশে দেশে নানা গল্প ছড়িয়ে পড়ে। টুইটার ও ফেসবুকে তার অবিশ্বাস্য করোনাজয়ের গল্প কোটি মানুষকে আশান্বিত করেছে।

 

১১৩ বছর বয়সী নারীর করোনা জয়

১১৩ বছর বয়স মারিয়া ব্রানিয়াসের। স্পেনের এই বৃদ্ধ নারী করোনার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছেন। স্পেনে তো বটেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী নারীর করোনা জয়ে তিনি শীর্ষে। করোনা পজিটিভ আসার পর কয়েক সপ্তাহ তিনি আইসোলেশনে ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মারিয়া এপ্রিলের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওলট শহরের বাড়িতে বসেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২০ বছর ধরে সেখানেই রয়েছেন তিনি। কীভাবে তার কাছে করোনা পৌঁছাল তা ভাবিয়ে তুলেছে গবেষকদের। করোনা নিয়ে সচেতন ছিলেন তিনি। জানতেন করোনা আক্রান্ত হলে শরীরে কী লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও শ্বাসকষ্ট শুরুর পর নিজেকে আলাদা করে ফেলেন তিনি। নিজেকে ঘরের মধ্যেই আইসোলেট করেন তিনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের খবর দিলে তারা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এরপরই জানতে পারেন তিনি করোনা পজিটিভ। এরপর বাড়িতেই চলতে থাকে তার চিকিৎসা। করোনা তার শরীরে খুব জোরালোভাবে ঝেঁকে বসেনি। তার পরিবারের লোকজন মনে করেন, তিনি মাইল্ড করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাই তার ওপর করোনা অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ধীরে ধীরে করোনা মুক্ত হতে শুরু করেন মারিয়া।

মনের জোরেই ১১৩ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ নারী করোনার বিপদ কাটিয়ে ওঠেন। ফের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মারিয়া এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলছেন। স্পেনের এই প্রবীণ নারীকে নিয়ে সাম্প্রতিক বছরে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মারিয়া ব্রানিয়াস ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন উত্তর স্পেনের সাংবাদিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মারিয়া তার পরিবারের সঙ্গে স্পেনে চলে আসেন। স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় তিনি স্পেনেই ছিলেন। সেটিও কাটিয়ে ওঠেন তিনি। এবারও করোনা মহামারী থেকে বেঁচে ফিরলেন মারিয়া।

 

মনে হয়েছিল আমি মরে যাচ্ছি

ওলুওয়াসুন ওসোওবি। ২৯ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান অধিকারকর্মী। ওসোওবি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গঠিত ‘স্ট্যান্ড টু অ্যান্ড রেপ ইনেসিয়েটিভ’ নামের একটি আইনজীবীদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। গত ৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে ওমেনওয়েলথ দিবসের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অফিশিয়াল পতাকা বহন করেছিলেন। তারপর ফিরে আসেন নাইজেরিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী লাগোসে। লন্ডন  থেকে ফেরার অল্প কিছুদিন পরই তার মধ্যে করোনার লক্ষণগুলো দেখা দেয়। করোনা পরীক্ষা করাতে আর দেরি করাননি। তখনই ধরা পড়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত। ভর্তি হন হাসপাতালে। তাকে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। ওসোওবি বলেন, ‘আমার প্রচন্ড জ্বর হয়েছিল। সঙ্গে ভয়াবহ কাশি এবং ক্ষুধা কমে গিয়েছিল। খুব দুর্বল লাগত, সারাক্ষণ আমার মাথা ঘুরাতো এবং বিছানা থেকে উঠলেই পড়ে যেতে চাইতাম। আমি কোনো কিছুর স্বাদ পাচ্ছিলাম না।’ কয়েকদিন পরেই তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। তিনি তার পরিচিত এক ডাক্তারকে মোবাইলে মেসেজ দিয়ে সে খবর জানান। ওসোওবি বলেন, ‘আমার প্রথম মনে হয়েছিল আমি মরে যাচ্ছি। আমি বমি করতে শুরু করলাম। তখন আমি আমার পরিচিত এক ডাক্তারকে মোবাইলে মেসেজ পাঠাই, ‘আমি মরতে চাই না, আমাকে সাহায্য করুন।’ তখন কিছু নার্স আমার কাছে ছুটে আসেন এবং আমাকে সাহস জোগাতে থাকে। তারাও আমার সঙ্গে প্রার্থনা করতে থাকেন।’

ওসোওবির করোনায় জটিলতা শুরু আগে থেকেই বেশ কিছু ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। তবে কোনো ওষুধেই তার বমি বন্ধ হচ্ছিল না। বমির সঙ্গে সব ওষুধ বেরিয়ে পড়ছিল। সে অবস্থায় ওষুধ শরীরে ধরে রাখতে পারাটা ছিল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ওষুধে সাড়া দিতে শুরু করেন তিনি। ওসোওবি বলেন, ‘দিনে দিনে আমার অবস্থা ভালো হতে লাগল। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, এবারের মতো আমি তাহলে বেঁচে যাচ্ছি। এই ভাইরাসকে আমি পরাজিত করতে পেরেছি। এটি এমন একটি যুদ্ধ যাতে আমি শেষ পর্যন্ত জিতেছি।’ ওসোওবি মার্চের শেষ দিকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। বেঁচে ফিরে তিনি একটা কথাই সবাইকে বলেন, ‘আমার শত্রুরও যেন এ রোগ না হয়।’

 

ঘরবন্দী জীবন কাটিয়ে বাইরে ফেরা

চীনের উহানে থাকেন ইউ উয়ং। শহরটিতে ২৩ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করে চীন সরকার। রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় রেল, বাস, বিমানবন্দর। এক রাতের ব্যবধানে স্কুল, অফিস, দোকানপাট, বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়। লকডাউনে উহানবাসীকে পাঠানো হয় কোয়ারেন্টাইনে। কিছু বুঝে ওঠার আগে সেখানে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উহানে লকডাউন জারির পর প্রতিটি ঘরে তালাবদ্ধ জীবন শুরু হয়। পুরো শহরের চিত্রই, যেন পাল্টে যায়। ঘরে বসে শুধু মিলেছে নানা ধরনের খারাপ খবর। একদিকে করোনার ভয়, উদ্বেগ আর একদিনে ঘরবন্দী জীবনে দুঃসহ যন্ত্রণা। এ সময় অনেকে জীবনের গল্প দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইউ উয়ং বলেন, ‘করোনার সময় প্রতি ১০ দিন পরপর আমি হাসপাতালে আমার দাদির জন্য খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতাম। দাদির স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সময় অ্যাম্বুলেন্স দেখতাম। সব সময় কোনো না কোনো পরিবার কাঁদত। করোনার ভয়ঙ্কর সময়ের একটা কথা মনে পড়ে যায়। যখন হঠাৎ করেই রাস্তায় মানুষকে পড়ে যেতে দেখতাম। ভয়ে কেউ এগিয়ে যেত না। দূর থেকে শুধু তাকিয়ে দেখত।’ দুই মাস পর লকডাউন উঠে সেখানে। ঘরের বাইরে আসার সেই দিনটির কথা বলেছেন ইউ উয়ং, বলেন, ‘লকডাউনের পর যেদিন প্রথম ঘরের দরজার বাইরে পা রাখি সেদিন বাইরে বেশ ঠান্ডা। রাস্তায় গিয়ে কাউকে হাঁটতে বা সাইকেল চালাতে দেখিনি। আগে বেশ কিছু বাস যেত এই রাস্তায়। কিছু মেট্রো আবার চালু হয়েছে। আগে মেট্রোতে উঠলেই নিরাপত্তারক্ষী অনেক প্রশ্ন করত, এখন সেসব নেই। লকডাউনের সময়টা মানুষ যেন বাড়িগুলো থেকে পালাতে চাচ্ছিল। লকডাউন উঠতে শুরু করলে আমার এক বন্ধু লেকের কাছে গিয়ে একগাদা ছবি তুলে। অনেকে অফিসে গিয়ে ছবি তুলেছেন। কেউ কেউ ম্যাকডোনাল্ডস আর স্টারবাকসের হোম ডেলিভারি পেয়েও ছবি তুলে ফেলেছিলেন। স্বাভাবিক জীবনের সূচনায় এমনই আনন্দ হয়।’

 

স্প্যানিশ ফ্লু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তারপর করোনা জয়

১৯১৯ এর স্প্যানিশ ফ্লু এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার করোনাভাইরাস মহামারী। তিন মহামারীর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছেন ১০১ বছর বয়সী বৃদ্ধ। ইতালির রিমিনি শহরে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সময় অন্যরকম এক ইতিহাস লিখলেন মিস্টার পি নামের এই বৃদ্ধ। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় উত্তর-পূর্ব ইতালির রিমিনি শহরের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রিমিনি শহরের ডেপুটি মেয়র গ্লোরিয়া লিসি জানান, ১৯১৯ সালে জন্ম নেওয়া ওই বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়ার পরই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০০ বছরের বেশি এই বৃদ্ধ যদি এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, তাহলে আমরাও পারব, এই বিশ্বাস ফিরে এসেছে সবার মনে।’ লিসির কথায়, ‘রোজ ঘুম থেকে উঠি খারাপ খবর শুনে। এই ভাইরাসের কবলে প্রাণ হারাচ্ছেন মূলত বয়স্ক মানুষজনই। এরই মাঝে ১০০ বছরেরও বেশি কোনো এক ব্যক্তি সুস্থ হলেন।

 

কোমায় কথা বলেন মৃত বাবার সঙ্গে

করোনায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন সারা বিশ্বেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু চিকিৎসক করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাও এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই হার মেনেছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বেঁচে ফেরা একজন বেলজিয়ামের অন্তোনো সেসিন। তার বয়স ৫৮। কাজ করেন ব্রাসেলসের ডেল্টা চিরেক হাসপাতালে। এখানে কাজ করার সময়ই তিনি ও তার দলের সহকর্মীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ৫৮ বছর বয়সী এই চিকিৎসক এবং তার টিমের সব সদস্যের দেহে করোনার লক্ষণ ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

এরপর প্রায় তিন সপ্তাহ তিনি কোমায় ছিলেন। কোমায় থাকা অবস্থায় অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। সেসিন বলেন, কোমায় থাকা অবস্থায় আমি বাবাকে দেখতে পেয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলেছি।’ সেসিনের বাবা ৪ বছর আগে মারা গেছেন। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। নতুন জীবন পেয়ে বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় হচ্ছে আমি ঘুম থেকে উঠে আমার বন্ধুদের মুখ দেখতে পেয়েছি। এটা আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ সুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে দেখা পান স্ত্রীর। অনেক দিন পর স্ত্রীকে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন সেসিন। কোমায় যাওয়ার আগে মৃত্যুভয় জেঁকে বসেছিল তার। হাসপাতালের কক্ষে বসে সাসিন বলছিলেন, ‘আমি আমার জীবনের শেষ  দেখতে পাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, আমি মরে যাচ্ছি। আমি আর কখনই জাগতে পারব না।’ কিন্তু বেঁচে ফেরার প্রচন্ড ইচ্ছা তাকে আবারও জাগিয়ে তুলেছে। সুস্থ হয়ে হাসিমুখে ফিরে গেছেন বাড়ি সেসিন।

সর্বশেষ খবর