শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা অভিযাত্রী

যুগে যুগে বহু অভিযাত্রী বিশ্বের বহু প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা অপরূপ সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছেন। তাদের দেখানো পথে হেঁটেছেন পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ধারণ করেছেন সংস্কৃতি, জীবনাচরণের ভিন্নতা আর অনুকূল প্রতিকূলতার অভিজ্ঞতা। কখনো কখনো অন্য জায়গা থেকে অর্জন করা অভিজ্ঞতার আলোকে তারা নতুনের রচনা করেছেন। আবার কোথাও কোথাও হয়েছেন বিতর্কিত। পৃথিবীর মানুষ নানা অজানা জানতে পেরেছেন অভিযাত্রীদের মাধ্যমে। বিশ্বের সেরা অভিযাত্রীদের নিয়ে আজকের রকমারি...

সা ই ফ ই ম ন

বিশ্বসেরা অভিযাত্রী

অপরাজেয় ইবনে বতুতা

সাতশ বছর আগে সুদূর মরক্কোর তাঞ্জিয়ের থেকে পৃথিবী দেখার নেশায় ঘর ছেড়েছিলেন এক মুসলিম যুবক। তিনি ইবনে বতুতা। ২০ বছর বয়সেই শুরু করেন পর্যটক জীবন। মধ্যপ্রাচ্য ইরাক, ইরান, বসরা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ঘুরে এসেছিলেন আমাদের বাংলায়ও। জীবনের ৩০ বছরে তিনি ভ্রমণ করেছেন ৭৫ হাজার মাইল বা ১ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার পথ। তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে বতুতা ছিলেন মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ, বিচারক। তিনি ১৩০৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মরক্কোর তাঞ্জিয়েরে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেওয়া এক ঐতিহাসিক নাম তিনি। বিশ্ববিখ্যাত এই ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তি ঘুরে বেড়িয়েছেন আফ্রিকা থেকে ভারত উপমহাদেশ, ভারত থেকে তুরস্ক পর্যন্ত। এমনকি বাংলাদেশেও তার পদচিহ্ন পড়েছে। তিনি বিশাল এ পথ পাড়ি দিতে কখনো পেড়িয়েছেন নদীপথ, কখনো উট কাফেলায় আবার কখনোবা পায়ে হেঁটে। ২১ বছর বয়স থেকে তার এ ভ্রমণ শুরু। এরপর প্রায় ৩০ বছর বিশ্বভ্রমণ করেছেন। অনেকে মার্কো পালোকে তার সমকক্ষ মনে করেন। তবে মার্কো পালোর চেয়ে ইবনে বতুতা বেশি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। এ কারণে অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতাকেই বিশ্বের সেরা ভ্রমণকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বিশ্ব ভ্রমণের সময় তিনি জীবনের অনেকটা সময় কাজীর চাকরি করেছেন, মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এমনকি কখনো রাষ্ট্রদূত কখনো সেনাকমান্ডের দায়িত্বও পেয়েছেন। বেশির ভাগ ভ্রমণে ইবনে বতুতার সঙ্গে কাফেলা ছিল। তিনি নিজে একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তার পূর্বপুরুষরা কাজীর পেশায় ছিলেন। ফলে তিনি যে দেশে গেছেন সেখানেই রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছেন।

নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিশেষ প্রয়োজনে তিনি কখনো কখনো পরিচয় গোপন করেছেন এবং কূটনৈতিক কারণে ভিন্ন নামও ব্যবহার করেছেন। চীনে তার নাম ছিল শামসুদ্দিন এবং ভারতে তার নাম ছিল মাওলানা বদর উদ্দীন। ইবনে বতুতা সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে বেড়িয়েছেন। পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি। প্রথম তিনি পবিত্র হজ পালন করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা হন। জীবনের পরবর্তী ৩০ বছর তিনি প্রায় ৭৫ হাজার মাইল (১,২০,০০০ কি.মি.) অঞ্চল পরিভ্রমণ করেছেন। তিনি সে সময়ের সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময়ের সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কথা লিখে গেছেন। তিনি যেমন মহান মুসলিম শাসকদের গুণগান করেছেন তেমনি অত্যাচারী শাসকদের বর্বরতার কথাও লিখেছেন। বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে মিসর, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন। তার কিছুকাল আগে এমন দীর্ঘ ভ্রমণ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন ভেনিসের ব্যবসায়ী এবং পরিব্রাজক মার্কো পোলো। কিন্তু তিনি মার্কো পোলোর চেয়েও তিনগুণ বেশি পথ সফর করেছেন। ভ্রমণকালে তিনি এই উপমহাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সুফি, সুলতান, কাজী এবং আলেমদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৩০ বছরের ভ্রমণকালে প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ করেন।

 

আমেরিকার আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাস

ক্রিস্টোফার কলম্বাস একজন ইতালীয় অভিযাত্রী, নেভিগেটর এবং উপনিবেশবাদী ছিলেন। তিনি ক্যাথলিক। আটলান্টিক মহাসাগরজুড়ে চারটি যাত্রা সম্পন্ন করেন। একসময় যখন ইউরোপীয় সাম্রাজ্যগুলো সাম্রাজ্যবাদ ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বারা অনুপ্রাণিত নতুন বাণিজ্য পথ ও উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে, ঠিক সেই সময় কলম্বাস পশ্চিমাঞ্চল অতিক্রম করে পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলে পৌঁছানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যেটি স্প্যানিশ ক্রাউনের সমর্থন পেয়েছিল। পরবর্তীতে এই কলম্বাস ভারতের বদলে আমেরিকা আবিষ্কার করে। কিন্তু এই দুঃসাহসী নাবিকের শুরুটা ছিল এক সাধারণ তাঁতি পরিবার থেকে। ইতালির জেনোয়া শহরে কলম্বাসের জন্ম। সঠিক দিনটি জানা না গেলেও অনুমান করা হয় ১৪৫১ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে কোনো এক দিনে জন্ম হয়েছিল কলম্বাসের। বাবা ছিলেন তাঁতি। কিশোর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছিলেন কলম্বাস। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী। কিন্তু অতিকষ্টে জীবন ধারণ করতেন কলম্বাস। পরিশ্রম মেধা মিলিয়েছিলেন এক বিন্দুতে। ভেসে চললেন কলম্বাস। একদিন সবাই কলম্বাসের চোখে পড়ে ভাঙা গাছের ডাল। সবুজ পাতা। অনুমান করতে অসুবিধা হয় না স্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন। তারপর আসে ১২ অক্টোবর। একজন নাবিক নাম রোডারিপো প্রথম দেখলেন স্থলের চিহ্ন। কলম্বাস নামলেন বাহমা দ্বীপপুঞ্জের এক অজানা দ্বীপে। পরবর্তীকালে তিনি সেই দ্বীপের নাম রাখেন সান সালভাদর। বর্তমান নাম ওয়েস্টলিং আইল্যান্ড। এই বিষয়টি নিয়ে যদিও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে যে তিনি আসলে কোথায় প্রথম নেমেছিলেন। কলম্বাস ভেবেছিলেন সমুদ্রপথে তিনি এশিয়ায় এসে পৌঁছেছেন। আর এভাবেই তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন। শেষ জীবনে রাজ অনুগ্রহ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছিলেন কলম্বাস। তার আবিষ্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করার ক্ষমতা দেশবাসীর ছিল না। এরপর মোট চারবার স্পেন থেকে আমেরিকা মহাদেশে অভিযান চালান তিনি। মহাদেশের মূল ভুখণ্ডেও তিনি পৌঁছান। অথচ তখনো জানতেন না তারা নতুন এক মহাদেশে পৌঁছেছেন। সে কথাটি বের করেন আমেরিগো ভেসপুচি নামে আরেক নাবিক। তার নাম অনুসারেই হয় আমেরিকার নাম। কলম্বাস সত্যিই ছিলেন দুর্ভাগা। মহাদেশের প্রথম আবিষ্কারক হয়েও তার নামে এটির নামকরণ হলো না। কিন্তু বিতর্কও রয়েছে কলম্বাসকে ঘিরে। কলম্বাস যে একেবারে নতুন কোনো নতুন বিশ্ব আবিষ্কার করেননি এটাও সত্যি। কারণ তার আগমনের বহু আগে থেকেই আমেরিকাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। বিতর্কের ধাক্কায় কলম্বাস দিবসের স্থান দখল করে নিচ্ছে আদিবাসী দিবস।

 

ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা

১৯৬৩ সালের ১৬ জুন পৃথিবীর মহাকাশজয়ী নারী হিসেবে প্রথম নাম লেখান ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা। তেরেসকোভার জন্ম ১৯৩৭ সালের ৬ মার্চ, রাশিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম মাসলেননিকোভায়। তার বাবা ছিলেন একজন ট্রাক্টরচালক আর মা কাপড়কলের একজন শ্রমিক। আট বছর বয়সে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে স্কুল ছেড়ে টায়ার কারখানায় কাজ শুরু করেন। করেসপন্ডেস কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। ছোটবেলা থেকেই ছিল তার প্যারাস্যুট ঝাঁপের প্রতি বিশেষ আগ্রহ। বুকোভস্কোই এয়ারফোর্স একাডেমি থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালের ২১ মে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি প্রথম প্যারাস্যুট নিয়ে ওড়েন। প্যারাস্যুটে ওড়ার ক্ষমতা তাকে প্রথম নারী হিসেবে মহাশূন্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। সেদিন সোভিয়েত রাশিয়া স্পুটনিক-১ নামের কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠানোর মধ্য দিয়ে সূচনা করে মহাকাশ জয়ের। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর রাশিয়া মহাকাশ অভিযানে লাইকা নামের একটি কুকুরকে পাঠায়। লাইকাই পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা প্রথম প্রাণী। এরপর ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল পৃথিবীর প্রথম মহাকাশচারী মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত মহাকাশ জয়ে নারীর কোনো অবদান ছিল না। এপ্রিল মাস। চারদিকে তখন হৈচৈ আর আলোচনা। দেশে বিদেশে একই কথা। ইউরি গ্যাগারিন নামের ২৭ বছর বয়সী এক যুবক মহাকাশ জয় করেছেন। পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে এক ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ভেসেছেন তিনি। খবরটা শুনে রাশিয়ার মাসলেননিকোভা গ্রামের এক মা তার মেয়েকে বললেন, ছেলেরাতো মহাকাশের অভিজ্ঞতা নিয়ে এলো, এবার নিশ্চয়ই মেয়েরা যাবে। মায়ের কথা কানে এসে বিঁধল মেয়েটির। ঠিক কানে নয় যেন বুকে এসেই বিঁধল। তারপর গিয়ে মিশল স্বপ্নে। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তখন থেকেই তেরেসকোভার ধ্যান জ্ঞানই যেন তার হয়েছিল সেই মহাকাশে যাওয়া। কোনো একদিন একটি মেয়ে যদি আকাশ জয় করে, তবে সেই মেয়েটি হব আমি, এমনই এক স্বপ্ন বাসা বাঁধল তার মনে। এরই মধ্যে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা থেকে ঘোষণা হলো, বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে একজনকে মহাকাশ ভ্রমণে পাঠানো হবে। এ জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হলো। চার শতাধিক আবেদনকারীর মধ্যে মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে নির্বাচিত হলেন  ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা। আর সুযোগ পেলেন প্রথম নারী এবং প্রথম বেসামরিক হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণের। ভøাদিমিরোভনা তেরেসকোভা। মহাকাশ অভিযানে প্রথম সফল নারী নভোচারী।

 

পরিব্রাজক মার্কো পোলো

১২৫৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভেনিসে জন্মগ্রহণ করেন মার্কো পোলো। কেউ কেউ বলেন, তার জন্ম হয়েছিল কনস্টান্টিনোপলে। তার বাবা ছিলেন নিকোলো পোলো আর মায়ের নাম নিকোলি আনা ডিফিউসে। মার্কোকে ছোট্ট রেখেই মারা যান তার মা। এ সময় তাকে বড় করে তোলেন তার চাচা-চাচি। তাদের কাছ থেকেই যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন মার্কো। কারণ মায়ের মৃত্যুর পরই তার বাবা আরেক বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। একসময় হেঁটে হেঁটে বাগদাদ শহরে এলেন মার্কো পোলো। সে সময় বাগদাদই ছিল বিশ্বের সেরা নগরী। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা-চাচা। ১২৫৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভেনিসে জন্মগ্রহণ করা মার্কো পোলোকে ইতিহাসের সেরা পরিব্রাজক হিসেবে সম্বোধন করা হয়। তার জন্ম হয়েছিল কনস্টান্টিনোপলে। মার্কো পোলোর বয়স যখন সতেরো বছর তখন থেকেই মার্কো বাবার দুঃসাহসিক যাত্রার সঙ্গী হন। এখান থেকেই মার্কো পোলোর পৃথিবী ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। এই শুরুর মাধ্যমেই মার্কো পোলো পরবর্তীকালে পৃথিবীর সেরা পর্যটকে পরিণত হন। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তারা পৌঁছান আকর বন্দরে। তখন স্থলপথে যান্ত্রিক কোনো বাহন ছিল না। হেঁটে, খচ্চর বা উটের পিঠে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে পথ চলতে হতো। দূর ভ্রমণে পথিকদের ঘুমাতে হতো খোলা আকাশের নিচে। সে অভিজ্ঞতা অবশ্যই কষ্টকর। তবে মার্কোর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। রুক্ষতার মাঝেও ফুলেল সৌন্দর্য খুঁজে নিতে পারতেন তিনি। যে এলাকা ভ্রমণ করতেন তার সবকিছু ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। একসময় ভেনিসে ফিরে যান মার্কো পালো। অসুস্থতাজনিত কারণে বিছানা নিলেন মার্কো। ১৩২৪ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

এশিয়া এবং ইউরোপে সংযোগ তৈরি করেছিলেন ভাস্কো দা গামা

ভাস্কো দা গামা নামটা আমরা সবাই জেনে এসেছি ছোটবেলা থেকে। তিনি প্রথম ইউরোপীয় যিনি জাহাজে করে কয়েকশ বছর আগে এই উপমহাদেশে এসেছিলেন। এর আগে আর কেউ আসেননি। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সমুদ্রপথে তিনি ইউরোপ থেকে ভারতে আসেন। এ ভ্রমণের মাধ্যমেই পর্তুগিজদের এশিয়া মহাদেশে দীর্ঘকালীন উপনিবেশ স্থাপনের পথ সুগম হয়েছিল। তার ভ্রমণে এশিয়া এবং ইউরোপকে সংযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরকে সংযোগ করেছিল এবং এ দিক থেকেই তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে পাশ্চাত্য দুনিয়ার সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন তার প্রথম ভারতমুখী

ভ্রমণের মাধ্যমে। ভাস্কো দা গামার এই আবিষ্কার বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে অতি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল কারণ এই ভ্রমণের দ্বারাই পর্তুগিজদের এশিয়া মহাদেশে দীর্ঘকালীন উপনিবেশ স্থাপনের পথ সুগম হয়েছিল। তার দ্বারা আবিষ্কৃত পথটি বিবাদপূর্ণ মধ্য সাগর এবং বিপজ্জনক আরব উপদ্বীপ পার হওয়া থেকে রেহাই দিয়েছিল কারণ সমগ্র পথটিই ছিল সাগর পথে। পর্তুগালের ভাস্কো দা গামাকে ইতিহাস সব  সময়ই মনে রাখবে ইউরোপীয়দের ভারতে আসার পথ সুগম করার পথপ্রদর্শক হিসেবে। কিন্তু তার আগমন ভারতবর্ষের জন্য আদৌ সুখকর ছিল না। তবে ইতিহাস বইগুলো তার ভারত ‘আবিষ্কার’কেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখে। যে কারণে ভারতবর্ষে তার করে যাওয়া বর্বরতা খুব কম মানুষই জানে। কখনো কখনো অন্য জায়গা থেকে অর্জন করা অভিজ্ঞতার আলোকে তারা নতুনের রচনা করেছেন কোথাও কোথাও। সেতুবন্ধন গড়েছেন পৃথিবীর এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের।

 

স্যার এডমন্ড হিলারি

স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি। তিনি নিউজিল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী ছিলেন। মাউন্ট এভারেস্টের নাম সবাই জানে। অনেক অভিযাত্রী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন এই শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে তিনি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে নেপালি পর্বতারোহী শেরপা তেনজিং নোরগের সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণ করেন।

এই পর্বতারোহী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে তিনি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে নেপালি পর্বতারোহী শেরপা তেনজিং নোরগের সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণ করেন। কমনওয়েলথ ট্রান্স-আটলান্টিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু পৌঁছান। পরবর্তীকালে তিনি উত্তর মেরু অভিযান করলে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর দুই মেরু ও সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদার্পণের দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেন। এডমন্ড হিলারি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাই নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল পার্সিভাল অগস্টাস হিলারি ও মাতার নাম ছিল গার্ট্রুড ক্লার্ক। হিলারির পিতামহ ও মাতামহ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার থেকে এসে নিউজিল্যান্ডের ওয়াইরোয়া নদী তীরে বসতি স্থাপন করেন। গ্যালিপলির যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে পার্সিভালকে টুয়াকাউ অঞ্চলে জমিদান করা হলে তারা সপরিবারে সেখানে চলে আসেন। হিলারি টুয়াকাউ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অকল্যান্ড গ্রামার স্কুল থেকে শিক্ষালাভ করেন। ষোল বছর বয়সে বিদ্যালয় থেকে মাউন্ট রুয়াপেহু পর্বতে ভ্রমণের সময় তিনি পর্বতারোহণের প্রতি উৎসাহিত হন। তিনি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক হন।

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণ আল্পস পর্বতমালার মাউন্ট অলিভিয়ার পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করার মাধ্যমে তার জীবনের প্রথম শৃঙ্গজয় করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর