বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে দেশে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন

তানভীর আহমেদ

দেশে দেশে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতন

সংবাদমাধ্যমকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শুরু থেকেই কথার বোমাবর্ষণ করে আসছেন। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সাংবাদিকদের গালমন্দ করা, হুমকি দেওয়া ও তাচ্ছিল্য স্বরে অপমান করে বারবার বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনায় বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট তো ছুঁড়ছেই, হাত কড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে অকারণেই। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে এমন হামলার ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশেই বাড়ছে। এ ছাড়া অনেক দেশেই সাংবাদিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা, মামলা ও নির্যাতন বাড়ছে। গত তিনমাসের চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে বিশ্বের নানা প্রান্তে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন কীভাবে বাড়ছে। সাংবাদিক নির্যাতনে নতুন করে আলোচনায় আসা কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আজকের রকমারি-

 

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হামলার টার্গেট সাংবাদিকরা

যুক্তরাষ্ট্র উত্তাল কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে। নিরস্ত্র ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরে হত্যা করে পুলিশ। কালোদের ওপর শ্বেতাঙ্গ পুলিশের এমন নিষ্ঠুরতা নতুন নয় যুক্তরাষ্ট্রে। এসবের কোনো বিচার নেই। এবার ফুঁসে উঠেছে দেশটির সাধারণ মানুষ। কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে হত্যার বিচার চেয়ে সহিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে। আন্দোলনের খবর সংগ্রহে শুরু থেকেই মাঠে রয়েছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তাদের ওপর চড়াও হয়েছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হামলার টার্গেট হয়েছেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে একের পর এক হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে একশরও বেশি সংবাদকর্মী। খ্যাতিমান ও বড় সংবাদাধ্যমে কাজ করেন এমন সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর প্রকাশ পাওয়া নথিভুক্ত হলেও আসল চিত্র আরও ব্যাপক বলে ধারণা করছে ইউএস প্রেস ফ্রিডম ট্রাকার। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন তারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘অতর্কিত’ হামলা চালিয়েছে দেশটির পুলিশ।

টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট আর পিপার স্প্রের মুখে পড়ে আহত হয়েছেন তারা। সাংবাদিকদের দাবি অনেক ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র প্রদর্শনের পরও হামলার শিকার হতে হয়েছে। তিন দিনে একশরও বেশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্নকারী ঘটনা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে অলাভজনক প্রজেক্ট ইউএস প্রেস ফ্রিডম ট্রাকার। এই ধরনের হামলাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক গ্রুপ কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট। হামলার শিকার হওয়া অধিকাংশ সাংবাদিকই বলেছেন, তারা প্রেসের ডকুমেন্ট দেখার পরও হামলার শিকার হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা যে কেবল নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে, তা নয়। বিক্ষোভকারীদেরও রোষের মুখে পড়ে সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার শুরু হয় ২৯ মে, শুক্রবার। ওইদিন লাইভ সম্প্রচারের সময়ই সিএনএনের টিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময়  সে বারবার জিজ্ঞাসা করে কী কারণে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু তার কোন উত্তরস দেয়নি পুলিশ। সেখানে লাইভে দেখা যায় একে একে সাংবাদিক ও তার ক্রু সদস্যদের হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। সিএনএনের টিম ওই সময় মিনিয়াপোলিস  থেকে বিক্ষোভের নিউজ কভার করছিল। তবে পরবর্তী কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বহু সাংবাদিক শারীরিকভাবে হামলার শিকার হওয়ার খবর সামনে আসে। অলাভজনক একটি প্রজেক্ট ইউএস প্রেস ফ্রিডম ট্র্যাকার বলছে, মাত্র তিনদিনে ১০০টির বেশি ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভঙ্গের’ ঘট্না ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ৯০টিই হামলার ঘটনা ছিল। গত ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ভিডিও প্রকাশ হয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভের খবর সরাসরি সম্প্রচারের সময় সিএনএন’র এক রিপোর্টারকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আচরণের বিষয়ে প্রথমবার আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টিতে পড়ে। এরপরই মিনিয়াপলিস শহরে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই টেলিভিশন কর্মীকে লক্ষ্য করে সরাসরি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। কারফিউ ভেঙে মিনিয়াপোলিসে বিক্ষোভের সময় তারা আহত হন। রয়টার্সের ক্যামেরাম্যান জুলিও-সিজার চাভেজ বলেন, একজন পুলিশ অফিসার, যাকে আমি ফিল্ম করছিলাম তিনি আমার দিকে ঘুরে সরাসরি তার রাবার বুলেট রাইফেল তাক করে। রয়টার্স জানিয়েছে, তারা মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগকে ভিডিও ফুটেজ দেওয়ার পরও তারা কোনো মন্তব্য করেননি। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশি আক্রোশের শিকার হয় বিবিসির একজন ক্যামেরাম্যান। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় এক দাঙ্গা পুলিশ অফিসার তার শিল্ড দিয়ে বিবিসির ওই ক্যামেরাম্যানের দিকে তেড়ে আসেন। ওই একই দিন ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে রেডিও রিপোর্টার অ্যাডোলফো গুজম্যন লোপেজের গলায় রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে এক পুলিশ কর্মকর্তা। ভাইস নিউজের সাংবাদিক মাইকেল অ্যান্থনি অ্যাডাস বলেছেন, শনিবার রাতে তার মুখে মরিচের গুঁড়া স্প্রে করে একজন পুলিশ অফিসার। এ সময় তিনি তার কার্ড দেখিয়ে চিৎকার করে প্রেসও বলেছিলেন। গত শুক্রবার রাতে পুলিশের দিক থেকে ছোঁড়া এক প্রজেক্টাইল ফ্রিল্যান্স ফটোজার্নালিস্ট লিন্ডা টিরান্ডোর বাম চোখে লাগে। ফটো সাংবাদিক লিন্ডা তিরাডো বিক্ষোভের ছবি তুললে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, চিরকালের জন্য তার এক চোখ দিয়ে আর দেখতে পাবেন না। তার চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া শুক্রবার রাতে হোয়াইট হাউসের কাছে ফক্স নিউজের এক কর্মীকে ধাওয়া দিয়ে মারপিট করে মুখোশধারী এক দল ব্যক্তি। শনিবার ভাইস নিউজের সাংবাদিক মাইকেল অ্যান্থনি অ্যাডামস জানান, পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তার মুখে পিপার স্প্রে ছুঁড়েছে পুলিশ। জার্মান আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক সাংবাদিকও পুলিশের ছোড়া ধাতব বস্তুর আঘাত পেয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। রিপোর্টার্স কমিটি ফর ফ্রিডম অব দ্য প্রেস বলছে, এই ধরনের ঘটনা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর পরিষ্কার লঙ্ঘন। সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের উপদেষ্টা পরিচালক কোর্টনি রাডিশ জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো থেকে পুলিশকে বিরত রাখতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএস)-এর জার্মান শাখার পরিচালক ক্রিস্টিয়ান মির মনে করেন, ‘ট্রাম্প গণমাধ্যমকে সবসময় দৈত্য এবং শত্রুর মতো করে তুলে ধরেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে ৪ দিনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা

১৯২ হামলার ঘটনা

৩১ সাংবাদিক গ্রেফতার

১৩১ হামলা (১০৮টি পুলিশের হামলা, ২৩ অন্যান্য হামলা)

৩০ জনের ক্যামেরা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ উপাদান ভাঙচুর করেছে পুলিশ

 

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের ওপর কোন ক্যাটাগরিতে কত হামলা পুলিশের

 

৪৫ শারীরিক হামলা (৩০টি সরাসরি পুলিশের হামলা)

৩০ টিয়ারগ্যাস ছুঁড়েছে পুলিশ

১৭ পিপার স্প্রে করেছে পুলিশ ৪৬ রাবার বুলেট ছুঁড়েছে পুলিশ

 

 

কথার আক্রমণে এগিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

সাংবাদিকদের ওপর কথার আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদ সম্মেলন আর টুইটারে সাংবাদিকদের নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য, হুমকি তার চিরচেনা স্টাইল। গত রবিবারও এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ঘৃণা আর  নৈরাজ্য উসকে দিতে ক্ষমতায় থাকা সবকিছুই করছে প্রথাগত সংবাদমাধ্যম। সাংবাদিকদের তিনি ‘অসুস্থ এজেন্ডা বয়ে বেড়ানো সত্যিকার খারাপ মানুষ’ আখ্যা দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাকাটা করে ট্রাম্প বারবার সমালোচিত হয়েছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সিএনএন হোয়াইট হাউস রিপোর্টার জিম একোস্টাকে আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। একোস্টা প্রেসিডেন্টের কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার মতো একজনকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় সিএনএন-এর লজ্জিত হওয়া উচিত। আপনি একজন রূঢ় এবং ভয়ানক মানুষ।’ সেই বাদানুবাদের পর একোস্টার ‘প্রেস পাস’ স্থগিত করে হোয়াইট হাউস। গত বছরের জুনে এমএসএনবিসি উপস্থাপক মিকা ব্রেজেজিন্সকির ওপর ক্ষিপ্ত হন ট্রাম্প। তখন তিনি টুইটারে সেই সাংবাদিককে ‘কম বুদ্ধিসম্পন্ন পাগল মিকা’ হিসেবে আখ্যা দেন। পেনসিলভানিয়াতে এক প্রচারণা চলাকালে এনবিসি উপস্থাপক চাক টডের ওপর নিজের রাগ ঝাড়েন ট্রাম্প। টডের ‘মিট দ্য  প্রেস’ শো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিককে ‘ঘুমচোখা টড’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এ সময় তিনি তাকে গালমন্দও করেন।

 

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বললেন, শাট আপ

ব্রাজিলেও সাংবাদিকরা পড়েছেন প্রেসিডেন্টের রোষানলে। এমনিতেই দেশটিতে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের চাপ ও হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা। তাদের সুরক্ষা নিয়ে মাথাব্যথা নেই পুলিশের। সরকারি বাহিনীর সমালোচনাকারীদের নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় সেখানে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভবনে যেতে গিয়ে সাংবাদিকদের নানাভাবে নাজেহাল হতে হয়। এ কারণে গত ২৫ মে ব্রাজিলের প্রথম সারির সব সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে গিয়ে আর কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, সেখানে গেলে প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা তাদের হয়রানি করেন। সাংবাদিকদের রক্ষায় নিরাপত্তারক্ষীরা এগিয়ে আসে না। প্রেসিডেন্ট বোলসোরানো প্রায় নিয়মিত সাংবাদিকদের অপমান করেন, হুমকির সুরে কথা বলেন। মে মাসের প্রথম দিকে পুলিশ প্রধানকে বরখাস্ত করার কারণ জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে  প্রেসিডেন্ট বলে ওঠেন, ‘চুপ করুন!’ এর আগে মার্চ মাসে প্রেসিডেন্টের কিছু সমর্থক ‘সাংবাদিকরা জনগণকে প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন’ এমন অভিযোগ তুললে প্রেসিডেন্ট তাতে মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে সাংবাদিকদের কোণঠাসা করে রেখেছেন বোলসোরানো।

 

ইউরোপের ২৫ দেশে ১৪২ আক্রমণ

দেশে দেশে সাংবাদিকদের হয়রানি ও তাদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। আফ্রিকা ও এশিয়াতে সাংবাদিকরা কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। চাপ রয়েছে ইউরোপেও। ইউরোপে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কাউন্সিল অফ ইউরোপ’স প্ল্যাটফর্ম টু প্রোটেকশন অফ জার্নালিজম অ্যান্ড সেফটি অফ জার্নালিস্টস-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ইউরোপের ২৫টি দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার মোট ১৪২টি ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বলছে, ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া, মাল্টা এবং যুক্তরাজ্যে সংবাদমাধ্যম চাপের মুখে রয়েছে। তারা আরও বলেছে, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের কাজে হস্তক্ষেপ করে।

 

পানি ঢেলে উপহাস স্কটল্যান্ডে

লরা অল্ডারম্যান কাজ করেন স্কটল্যান্ডের এসটিটিভে। লকডাউন ভেঙে সেখানকার মানুষেরা বাইরে বেরোচ্ছে, এ রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন এডেনবার্গের চিড়িয়াখানায়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সবাইকে ঘরে লকডাউনে থাকার তাগাদা দিলেও অনেকেই বাইরে বেরিয়েছিলেন। লরা ক্যামেরা চালু করতেই ক্ষেপে যান অনেকে। একজন জগিং করতে বেরিয়েছিলেন। সাংবাদিক লরা তার দিকে ক্যামেরা তাক করতেই তিনি ক্ষেপে যান। কারফিউ চলাকালে স্কটল্যান্ডে সাংবাদিকরা কাজের অনুমতি পেয়েছেন জানার পরও সে লোক তার ওপর পানি ঢেলে দেন। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

 

মাস্ক সংকট নিয়ে রিপোর্ট করায় ইউক্রেনে হামলা

ইউক্রেনে চ্যানেল ওয়ান টিভির হয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন সাংবাদিক তেতিয়ানা শিভোকন। দেশজুড়ে মাস্ক সংকট ও সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে রিপোর্ট করছিলেন তিনি। এ কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও সরকারের হয়ে সুবিধাভোগী একদল মানুষ তার ওপর ক্ষেপে যায়। ১১ মে মাস্ক সংকট নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন তেতিয়ানা। সে সময় খবর পান স্থানীয় এক দোকানে মাস্কের বড় চালান রয়েছে। এবং সেগুলো বিক্রি না করে মজুদ রাখছেন দোকানি। হাতেনাতে মাস্কের বড় চালানটি ধরে দোকানদারকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। দোকানদার মাস্কের প্যাকেট সরিয়ে নিয়ে বলেন, এ গুলো তার দোকানের কর্মচারীদের জন্য সাধারণ ক্রেতাদের কাছে তিনি এসব বিক্রি করবেন না। খবরটি চাউর হতেই আরও ব্যবসায়ীরা এসে সাংবাদিক তেতিয়ানাকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে তারা সাংবাদিকের হাত থেকে মাইক্রোফন ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন, তাকে মারধর শুরু করেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বেশ কয়েকটি লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। সরকারি সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা তার ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলায় সরকারের সমালোচনা শুরু হলে তড়িঘড়ি করে একটি তদন্ত কমিটি করে ইউক্রেনের সরকার। হামলায় জড়িতদের বিচারের কথা উঠলেও, এ নিয়ে তদন্ত নামেই যা। ইউক্রেনের সরকারি পুলিশ বাহিনী সাংবাদিকের ওপর হামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

 

জার্মানিতে সাংবাদিককে হামলায় অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যান সহজেই

জার্মানির পাবলিক সার্ভিস ব্রডক্রাস্ট (জেডডিএফ) হয়ে একটি অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে গিয়েছিলেন সাংবাদিক আবদেলকারিম। তার সঙ্গে ছিলেন একজন ক্যামেরাপারসন, তার সহকারী, সিকিউরিটি গার্ড অতিথিসহ বেশ কয়েকজন ক্রু। তারা অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং শেষে ফেরার পথে একদল বিক্ষোভকারীর সামনে পড়ে যান। করোনাভাইরাসের লকডাউন শিথিল ও বিধি-নিষেধ তুলে নিতে একিদল বিক্ষোভকারী সংহিস হয়ে ওঠে। পুলিশ তাদের সরাতে চাইলে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক আবদেলকারিম তাদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাকে উদ্ধার করে অন্য সাংবাদিকরা হাসপাতালে পৌঁছে দেন। এ ঘটনায় চারজন পুরুষ ও দুই নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাদের নির্দোষ রায় দিয়ে মেজিস্ট্রেট ছেড়ে দেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলায় সরকারের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনাও কম হয়নি। ফেডারেল পুলিশ তাদের রিপোর্টে নিশ্চিত করে একদল হামলাকারী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছিল। তবুও সরকারের ঢিলেমি দেখে সাংবাদিকরা হতাশ হয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইলে সরকার একটি স্টেট প্রটেকশন অফিসের হাতে এর তদন্ত ভার তুলে দিয়েছে।

 

সাংবাদিককে খুনের হুমকি চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের

রিপাবলিক অব চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট রামজান কেদরভ এক সাংবাদিককে সরাসরি মৃত্যুর হুমকি দিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। সরকার হুট করেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রকার খবর প্রকাশ না করায় সাংবাদিক এলেনা একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। নভেয়া গ্যাজেটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখাতে সরকার করোনা আক্রান্তের খোঁজ দিচ্ছে না। এ ছাড়া সরকারের নানা কর্মসূচি নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। এরপরই ক্ষেপে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এসব খবর ভুয়া। পশ্চিমাদের পুতুল বলেও এলিনাকে গালমন্দ করেন। ‘ননসেন্স’ বলে তাকে দেখে নেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেন। তিনি আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, তাকে যেন ক্রিমিনাল বা মার্ডারার না বানিয়ে ফেলা হয়। কিছুদিন কারাবাসের হুমকি দিয়ে তিনি সাংবাদিক এলিনার এসব ভুয়া খবর প্রকাশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হন। ২৪ এপ্রিল সাংবাদিককে খুনের হুমকি দিয়ে মন্তব্য করেছে বলে খবর প্রকাশ পায়।

সর্বশেষ খবর