বুধবার, ১০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

Forbes এর দৃষ্টিতে সেরা ধনী ২০২০

সাইফ ইমন

Forbes এর দৃষ্টিতে সেরা ধনী ২০২০

জেফ বেজোস

মোট সম্পত্তি, ১১৩ বিলিয়ন ডলার

অ্যামাজন সাম্রাজ্যের অধিপতি জেফ বেজোস। ২০১০ সালে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৪৩তম শীর্ষ ধনী। আর বর্তমানে তিনি ১০৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক। গত ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৪ ডলার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট অ্যামাজন নয়, বলা হচ্ছে অনলাইনের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস অ্যামাজন ডটকমের কথা। অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। অ্যামাজন ডটকমের ১৭% শেয়ার এখন তার নামে। অ্যামাজন বিশ্বের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান যেটি সবচেয়ে দ্রুত ১০০ বিলিয়ন বিক্রির রেকর্ড গড়েছে। ১৯৯৪ সালে অনলাইনে বই বিক্রির সাধারণ আইডিয়া নিয়ে জেফ বেজোস যাত্রা শুরু করেছিলেন। অনলাইনে কেনাকাটার সেই ধারণা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে অ্যামাজন ডটকম রীতিমতো গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। বেতন, বোনাস, শেয়ার ও অন্যান্য খাত থেকে বছরে তার আয় হয় ১৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার। দীর্ঘ সময় সাহসী উদ্যোক্তার মতোই প্রতিষ্ঠানটিকে টেনে নিয়ে যান জেফ। একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরির চেয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেই মনোযোগী ছিলেন এই উদ্যোক্তা। বিশ্বকে সেটাই করে দেখিয়েছেন বর্তমানের এই শীর্ষ ধনকুবের।

 

বার্নার্ড আর্নল্ট

মোট সম্পত্তি, ৭৬ বিলিয়ন ডলার

ফ্রান্সভিত্তিক বিলাসপণ্যের কোম্পানি এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও সিইও বার্নার্ড আর্নল্ট। গত বছর প্রথমবারের মতো সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোয় সেরা ধনীদের তালিকার তিনে উঠে আসেন ৭০ বছর বয়সী আর্নল্ট। বর্তমানে ১০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২০১০ সালে তার ধনসম্পদের নিট মূল্য ছিল ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এক দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৮০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তার মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৭৬ বিলিয়ন ডলার। প্যারিসভিত্তিক এলভিএমএইচ কোম্পানির অর্ধেকের বেশি শেয়ার তার হাতে। পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ৯৭ শতাংশ মালিকানাও তার। ১৯৮৪ সালে একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মালিক হয়ে প্রথমবারের মতো অভিজাত পণ্যের বাজারে পা রাখেন এ ব্যবসায়ী। চার বছর পর ক্রিশ্চিয়ান ডিওর বাদে ওই গ্রুপের বাকি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে এলভিএমএইচের নিয়ন্ত্রণ নেন আর্নল্ট। শুধু টাকা-পয়সাই নয়, বার্নার্ড আর্নল্টের সংগ্রহে আছে ডেমিয়েন হার্স্ট, মারিজিও ক্যাটেলান, অ্যান্ডি ওয়ারহোল, পাবলো পিকাসোর মতো চিত্রকরদের বিখ্যাত সব চিত্রকর্মসহ অনেক মহামূল্যবান জিনিস।

 

ওয়ারেন বাফেট

(৭৯.১ বিলিয়ন ডলার)

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। গত ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন। বর্তমানে তার নিট সম্পদমূল্য ৭৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তাকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মাল্টি-বিলিয়ন ডলার কনগ্লোমারেট ‘বার্কশায়ার হ্যাথাও’-এর মালিক এবং চেয়ারম্যান। তিনি তার সম্পদের ৯৯ ভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। তিনি জীবনে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। ছোটবেলায় তিনি প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে পেপার বিলি করতেন।

 

 

 

 

মার্ক জুকারবার্গ

মোট সম্পত্তি, ৫৪.৭ বিলিয়ন ডলার

ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের বর্তমানে সম্পদমূল্য ৭২ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০০৪ সালে ফেসবুকের যখন যাত্রা তখন মার্ক জুকারবার্গের বয়স ১৯। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু ফেসবুক তাকে বানিয়ে দিয়েছে বিলিওনিয়ার। অল্প বয়সী সিইওদের তালিকায়ও তিনি এক বিস্ময়। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৫৪.৭ বিলিয়ন ডলার।  সাত বিলিয়ন জনসংখ্যার পৃথিবীতে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারী অন্তত দুই বিলিয়ন। গোটা বিশ্ব ফেসবুকে আক্রান্ত। সামাজিকভাবে তো বটেই, ব্যবসায়িকভাবেও ফেসবুকের গুরুত্ব বাড়ছে। অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য ফেসবুক এখন বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সোনার খনি। বিয়ের পর মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকের ৯৯ শতাংশ শেয়ার দান করে দিয়েছেন। সম্প্রতি হার্ভার্ড থেকে ডিগ্রি নিয়ে ড্রপআউটের তকমা ঝেড়ে ফেলেছেন। প্রতি বছর ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ নতুন একটা চ্যালেঞ্জের কথা জানান। ২০২০ সালের চ্যালেঞ্জ হিসেবে জুকারবার্গ জানিয়েছেন তিনি সামাজিক যোগাযোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করবেন।

 

বিল গেটস

মোট সম্পত্তি, ৯৮ বিলিয়ন ডলার

বাবা-মা চেয়েছিলেন বিল গেটস আইনজীবী হোক। কিন্তু বিল গেটস সারাদিন পড়ে থাকতেন কম্পিউটার নিয়ে। স্কুলেই প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি তার। নিজে নিজেই লিখে ফেলেন গেমিং প্রোগ্রামিং। স্কুল থেকে বহিষ্কার হন নীতিবিরুদ্ধ অপারেটিং সিস্টেম চালানোর জন্য। উল্টো হার্ভার্ডে এসে প্রোগ্রামিংয়ে আরও মনোযোগী হন তিনি। স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরে ১৫৯০ পেয়েও পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে গড়ে তোলেন মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এনে বদলে দিলেন পুরো কম্পিউটার জগৎ। মাইক্রোসফট হয়ে উঠল বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানির একটি। সেই সাফল্যেই এলো হাজার হাজার কোটি টাকা। এক সময় টানা প্রায় দেড় দশক বিশ্বের শীর্ষ ধনীর আসনে ছিলেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। গত বছর তিনি ১০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক ছিলেন। ২০১০ সালে যা ছিল ৫৩ বিলিয়ন ডলার। বিগত দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বিল গেটস দানশীল হিসেবে খুবই খ্যাত। তিনি তার সম্পত্তির বেশির ভাগই দান করে দিয়েছেন। তবু সম্পদ বাড়ছেই। তার মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

 

জিম ওয়ালটন

(৫৪.৬ বিলিয়ন ডলার)

মেক্সিকোর ওয়ালটন পরিবার বিশ্বের ধনকুবের পরিবারের তালিকার শীর্ষে আছে। এদের সম্পদের পরিমাণ ১৯০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ওয়ালটন মূলত খুচরা ব্যবসা করে। স্যাম ওয়ালটন ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

তাদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ওয়ালমার্ট এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানির একটি, ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তাদের রাজস্ব ছিল ৫১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। স্যাম ওয়ালটনের ছোট ছেলে জিম ওয়ালটন। বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির অর্থমূল্য ৫৪.৬ বিলিয়ন ডলার। শীর্ষ ধনকুবের তালিকায় তার অবস্থান ৮ম।

 

 

 

 

এলিস ওয়ালটন

(৫৪.৪ বিলিয়ন ডলার)

এলিস ওয়ালটন হলেন ওয়ালটন পরিবারের কন্যা। স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে। ওয়ালটন পরিবার মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুচরা দোকান পরিচালনা করে। সারা বিশ্বের ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রে ১১ হাজারেরও বেশি রয়েছে ওয়ালমার্টের শাখা। তাই বলা হয় ওয়ালমার্ট বিশ্বের সর্ববৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে আয়ের দিক থেকেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়।

ওয়ালটন পরিবারের মেয়ে ৭১ বছর বয়সী এলিস ওয়ালটনের  বর্তমান সম্পত্তির অর্থমূল্য ৫৪.৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবারের তিনজনই রয়েছেন শীর্ষ ধনকুবের তালিকায়। 

 

 

 

অ্যামানসিও ওর্তেগা

মোট সম্পত্তি, ৫৫.১ বিলিয়ন ডলার

স্পেনের ইনডিটেক্স ফ্যাশন গ্রুপের (চেইনশপ জারার মূল কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান অ্যামানসিও ওর্তেগা। এখন বয়স ৮০ বছর। থাকেন স্পেনের লা করুনায়। ২০১০ সালে ছিলেন ২৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। বর্তমানে তার সম্পদের নিট মূল্য ৫৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বিগত দশকে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় অর্ধশত বিলিয়ন ডলার। ফ্যাশন হাউসকে ঘিরে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন সবাই অ্যামানসিও ওর্তেগাকে গুরু মানেন। কারণ রীতিমতো ফ্যাশন বিপ্লব ঘটিয়েছেন শূন্য থেকে শীর্ষে ওঠা এই স্প্যানিশ ধনকুবের। ২০১১ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ইন্ডিট্যাক্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি স্পেনের জারা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার। বর্তমানে ফ্যাশনের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে পা দিচ্ছেন তিনি। তার মালিকানায় রয়েছে এপিক হোটেল, একটি ৫৪তলার বিলাসবহুল ভবনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ওর্তেগার বাবা ছিলেন রেল কর্মচারী। তাই এক শহরে বেশিদিন থাকা হতো না। ১৯৭২ সালে ওর্তেগা প্রথম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। চালু করেন একটি ফ্যাশন হাউস। এই ‘জারা’ ব্র্যান্ড নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এখনো সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত তিনি।

 

ল্যারি এলিসন

মোট সম্পত্তি, ৫৯ বিলিয়ন ডলার

মার্কিন ব্যবসায়ী ল্যারি এলিসন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। ল্যারি এলিসন ওরাকল করপোরেশনের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ১৯৪৪ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করা ল্যারি তার শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত অমনোযোগী। পড়াশোনা তার বিশেষ ভালো লাগত না। বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত সফলভাবে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়ার সময়ে তিনি প্রথম পরিচিত হন কম্পিউটার ডিজাইনের সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে তিনি স্থায়ীভাবে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন। সত্তরের দশকে তিনি এমডাল করপোরেশনে কাজ শুরু করেন। এখানে তার একটি কাজ ছিল সিআইএর জন্য ডাটাবেজ  তৈরি করা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করতে। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ। পরে ১৯৭৯ সালে এরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ওরাকল, যা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।

 

রব ওয়ালটন

(৫৪.১ বিলিয়ন ডলার)

ওয়ালমার্ট সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান প্রদানকারী পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ওয়ালটন পরিবার এই সংস্থার প্রায় ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এতেই তাদের সম্পদের পরিমাণ হয়েছে পাহাড় সমান। এই পরিবারের বড় সন্তান রব ওয়ালটন।

স্যাম ওয়ালটনের  আরেক সন্তান জিম এবং এলিস ওয়ালটন দুজনেই আলাদাভাবে ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও  বেশি মূল্যের সম্পদ নিয়ে  ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় রয়েছেন। বড় ভাই রব ওয়ালটনও কম যান না। তিনি ৫৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে ফোর্বসের শীর্ষ ধনকুবের তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর