রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিখ্যাতদের যে মৃত্যুগুলো আজ ও রহস্য

রণক ইকরাম

বিখ্যাতদের যে মৃত্যুগুলো আজ ও রহস্য

মৃত্যু অমোঘ সত্য। এর হাত থেকে কেউই বাঁচতে পারে না। কিন্তু প্রতিটি মানুষই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়। অথচ নিয়তির পরিহাসে নির্মমভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানাতে হয় অনেককেই। অনেকেরই মৃত্যুর পেছনে থাকে স্বার্থ, ক্ষমতা, প্রতিহিংসা কিংবা রহস্যজনক কোনো ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক খ্যাতিমান মানুষ রয়েছেন যাদের মৃত্যুর মূল রহস্য আজও অজানাই রয়ে গেছে। এমন মানুষকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

 

প্রিন্সেস ডায়না

দুর্ঘটনা নাকি হত্যা

প্রিন্সেস ডায়না। সৌন্দর্য আর ফ্যাশনে ছিলেন অদ্বিতীয়। ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজবধূ। তার কোলেই আসে রাজপরিবারের দুই উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি। ডায়না দেশ থেকে দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে। দানশীলতায় ছিলেন অগ্রগণ্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্ল্যামারাস ডায়না ছিলেন আইকন। কিন্তু পরকীয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজপ্রাসাদ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। ক্যামেরার চোখ সব সময় খুঁজত ডায়নাকে। তখন বাজারে খবর আসতে শুরু করে ডায়না এক ধনকুবের দোদি আল ফাহাদের সঙ্গে প্রেম করে বেড়াচ্ছেন। সমুদ্রসৈকতে তাদের দুজনের ছবি প্রকাশের পর পাপারাজ্জিদের চোখ ফাঁকি দিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার চেষ্টা ছিল ডায়নার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট পাপারাজ্জিদের তাড়া খেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ব্রিটেনের সুন্দরী রাজপুত্রবধূ ডায়না ও তার প্রেমিক। ডায়না ও দোদি কালো রঙের মার্সিডিজ এস২৮০ গাড়িতে ছিলেন। প্যারিসের রিজ হোটেল থেকে বের হয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি ছোটান গাড়িচালক। গাড়িটির চালকের আসনে ছিলেন হোটেলটির নিরাপত্তা বিভাগের উপপ্রধান হেনরি পল। প্যারিসের পন্ট-ডি-আলমা রোড টানেল পাড় হওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দোদি-ডায়নাকে বহনকারী মার্সিডিজ গাড়িটি ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে আঘাত করে টানেলের ১৩তম স্তম্ভকে। কংক্রিটের এ স্তম্ভের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পরিণামে গাড়িটি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিন্সেস ডায়না, তার বন্ধু দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল। ডায়নার মৃত্যুর পরই নানা রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল ফাহাদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু নানা তথ্য জট বেঁধে ওঠে। যে তথ্যগুলো সামনে এনে অনেকেই দাবি করেন প্রিন্সেস ডায়নাকে আসলে হত্যা করা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।

 

কিং অ্যাডলফ ফ্রেডরিক

অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ

কিং অ্যাডলফ ফ্রেডরিক ছিলেন সুইডেনের রাজা। ১৭৫১ থেকে ১৭৭১ পর্যন্ত তার শাসনামল বেশ ঘটনাবহুল ছিল। ১৭১০ সালে জš§গ্রহণ করেন অ্যাডলফ ফ্রেডরিক। খাবারের প্রতি অতি আকর্ষণের কারণে ইতিহাসবিদদের কাছেও বেশ ভিন্ন স্বাদে উপস্থাপিত হয়েছেন। তার বাবাও একজন শাসক ছিলেন। যুবক বয়স থেকেই তিনি রাজ্য সামলানোর দায়িত্ব খুব কাছ থেকেই দেখে এসেছেন। সঙ্গত কারণেই তিনি রাজা হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ বেশ অবাক করে সবাইকে। বলে নেওয়া ভালো এই সম্রাটের খাদ্যাভ্যাসও ছিল রাজকীয়। তাকে খাবার পরিবেশনে দায়িত্বে থাকা লোকেরা এতটাই ব্যস্ত থাকত যে, দিনের অন্য কাজ করার সুযোগই মিলত না। তাকে খাবার পরিবেশনের জন্য প্রতি বেলায় আলাদা আলাদা করে কর্মচারীদের শিফট বদল করতে হতো। প্রচুর পরিমাণে শ্যাম্পেইন, ক্যাভিয়ার, স্যুপ ছাড়াও তিনি অত্যধিক ধূমপান করতেন। একরাতে ১৪ পদের অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের কারণেই  তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।

 

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

বিষপ্রয়োগ নাকি ক্যান্সার

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত সেনাপতি ও সম্রাট। ইউরোপীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। তার রাজত্বকালেই ফ্রান্স ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাকে বলা হয় ‘ফরাসি বিপ্লবের শিশু’। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ফ্রান্স যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি ফ্রান্সের প্রয়োজন আমাকে’। সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত অবস্থায় ১৮২১ সালের ৫ মে মারা যান নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। নেপোলিয়নের ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান তিনি। তবে সব পাল্টে যায় যখন সামনে আসে নতুন তথ্য। মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে নেপোলিয়ন একটি ইচ্ছাপত্র (উইল) লিখেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘সময়ের আগেই মারা যাচ্ছি আমি, আমাকে হত্যা করেছে ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের গুপ্তহত্যাকারীরা।’

ধারণা করা হয়, নেপোলিয়নকে খুবই পরিকল্পিতভাবে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। মৃত্যুর ১৯ বছর পর ১৮৪০ সালে প্যারিসে মর্যাদাপূর্ণ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য নেপোলিয়নের মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়েছিল।

ওই সময় নেপোলিয়নের মরদেহ তুলনামূলক বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। কিছু বিজ্ঞানী বলে থাকেন, বিষ হিসেবে আর্সেনিক প্রয়োগের কারণেই নেপোলিয়নের মরদেহে নাকি স্বাভাবিক মাত্রায় পচন ধরেনি। তবে বছরের পর বছর ধরে নেপোলিয়নের মৃত্যুরহস্য নিয়ে আলোচনা চললেও রহস্যের জট খোলেনি কখনোই।

 

অ্যাডগার অ্যালান পো

অকাল মৃত্যু

এই লেখক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। রহস্যরোমাঞ্চ ছোটগল্পের পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন তিনি। মাঝে মধ্যে ছবিও আঁকতেন পো। ১৮৪৯ সালের অক্টোবরে মৃত্যুর ঠিক ছয় দিন আগে নিখোঁজ হন পো। অক্টোবরের ৩ তারিখ বাল্টিমোরের এক পানশালায় হঠাৎ আবির্ভূত হন তিনি। ওই সময় অস্পষ্ট ও অসংলগ্নভাবে কথা বলছিলেন এই লেখক। পরনে ছিল আরেকজনের জামা। এরপর আশপাশের মানুষকে বলে নিজের এক বন্ধুকে খবর দেন পো। কিন্তু ওই বন্ধু পানশালায় এসে পৌঁছানোর আগেই হাসপাতালে নিতে হয় তাকে। এই লেখক তখন প্রলাপ বকছিলেন এবং প্রায় উন্মাদের মতো আচরণ করছিলেন। হাসপাতালে এর পরের কয়েকদিন প্রচন্ড জ্বরে ভুগেছিলেন পো। অ্যাডগারের দেখভাল করেছিলেন চিকিৎসক জন জে মোরান। তিনি জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে একটি নাম বারবার বলছিলেন পো। তা হলো ‘রেনল্ডস’। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং পানশালায় ফিরে আসার ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। অবশেষে ৭ অক্টোবর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় এই লেখকের। এরপরই তার মৃত্যুর কারণের জল্পনা ডালপালা মেলে। ওই সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগে মৃত্যু হয় অ্যাডগারের। কিন্তু তার দেহের কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি। এমনকি চিকিৎসা সম্পর্কিত নথিও হাওয়া হয়ে যায়। অ্যাডগার অ্যালান পোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আজও অজানাই থেকে গেছে।

 

আতিলা দ্য হান

বাসর রাতে মৃত্যু

পৃথিবীর ইতিহাসে তাকে বর্বর শাসক হিসেবেই দেখানো হয়েছে। আতিলা কৃষ্ণসাগরের উত্তর-পূর্বে উচ্চভূমিতে জš§গ্রহণ করেছিলেন। দাবি করা হয় ৪০৬ সালে যাযাবর হানদের এক গোত্রে তিনি পালিত হন। মূলত একটি যাযাবর দলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন আতিলা। অন্তর্কলহে বিক্ষিপ্ত, দুর্বল যাযাবর জনগোষ্ঠীকে দ্রুতই সংগঠিত করে ফেলেন তিনি। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন দুর্ধর্ষ ও ভয়ানক এক বাহিনী। টাইরানিয়ায় তার রাজধানী ছিল। এখান থেকেই একের পর এক ভয়ঙ্কর সব অভিযান চালিয়ে যেতে থাকেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর। কয়েক বছর পর মারা যান তার ভাই, আর তিনি হয়ে উঠেন হানদের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী রাজা। যুগ যুগ ধরে তার তা-বের কথা আতঙ্কের সঙ্গে স্মরণ করে রোমান সাম্রাজ্য। আতিলা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, অত্যন্ত নিপীড়ক শাসক ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সম্রাট ছিলেন। একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবেও তাকে দেখা হয় ইতিহাসে। একজন তুখোড় শাসক ও যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি ও কুখ্যাতি পাওয়া আতিলা প্রেমিকার কাছেই হার মেনেছিলেন। বিয়ের পর বাসর রাতেই অজ্ঞাত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সে রহস্য আজও অজানা।

 

সংগীতের তিন কিংবদন্তি

মাইকেল জ্যাকসন

মাইকেল জ্যাকসন মাত্র ৫ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু সলো ক্যারিয়ার তার গাওয়া ৫টি অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। তাকে পপসংগীতের রাজা বলা হয়। ২০০৯  সালে মাইকেল জ্যাকসন রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী মার্কিন চিকিৎসক ড. কনরাড ৪ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা হয়নি।

 

এলভিস প্রিসলি

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের একজন এলভিস প্রিসলি। তার গাওয়া প্রথম একক গান ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পেয়েই আমেরিকান টপচার্টের শীর্ষে স্থান করে নেয়। তিনি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট হঠাৎ করেই মৃত্যু ঘটে এলভিস প্রিসলির। তার রহস্যজনক মৃত্যুর পর অনেকে মাদকদ্রব্যকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

 

জিম মরিসন

পুরো নাম জেমস ডগলাস মরিসন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সালে জš§ নেওয়া মরিসন ছিলেন একাধারে একজন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং কবি। তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন আমেরিকান রক ব্যান্ড দ্য ডোরসের প্রধান গায়ক ও গীতিকার হিসেবে। তাকে রক সংগীতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। মরিসন মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যারিসে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু পৃথিবীর মানুষকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

 

নেলসন অলড্রিক রকফেলার

চিকিৎসাবিহীন মৃত্যু

নেলসন অলড্রিক রকফেলার ছিলেন ইউনাইটেড স্টেটসের ৪১তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি একাধারে ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড স্টেটসের ৪১তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকার ধনাঢ্য রকফেলার পরিবারের সদস্য নেলসন রকফেলার রাজনীতিবিদ হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি বারহার্বার, মেরিনে জš§গ্রহণ করেন। জন ডেভিসনের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন তিনি। তার বাবা জন ডেভিসন রকফেলার একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। বিশ্বজুড়ে একনামে সমাদৃত স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিসনের বড় ছেলে নেলসন রকফেলার রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগেই ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসায়িক সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। তিনি সম্মানিত ফিলিপ এক্সটার একাডেমি থেকেই সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জন করেন শিক্ষাজীবনে। সাফল্যময় শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে নাম লেখান। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্যবসায়ী হিসেবেই। বাবার নিজের তেল কোম্পানি ছাড়াও ১৯৩১ সালে চেজ ন্যাশনাল ব্যাংকে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। একই বছর রকফেলার সেন্টারের বোর্ড ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করতে থাকেন। নিজেদের পৈতৃক ব্যবসা চালিয়ে তিনি ব্যবসায়িক সমাজে সমাদৃত হন। লাভে থাকা তেল কোম্পানি ছাড়াও রকফেলার সেন্টারের দিন দিন উন্নতি ঘটে। ১৯৬০ সালের দিকে তিনি আমেরিকার মূল রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নাগরিকদের কাছে তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেন। তার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল ছড়িয়েছিল। ১৯৭৯ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যু নিয়ে নানা গুজব রয়েছে। অসুস্থ হওয়ার সময় তার প্রেমিকা মেগান মার্সেক তার পাশেই ছিলেন বলে মত রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি।

 

ইয়াসির আরাফাত

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

২৪ আগস্ট ১৯২৯-এ জš§ নেওয়া ইয়াসির আরাফাত ছিলেন ফিলিস্তিনি জনগণের পরম প্রিয় নেতা। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর চেয়ারম্যান হিসেবে আরাফাত ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারা জীবন সংগ্রাম করেন। প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলবিরোধী থাকলেও পরে আরাফাত ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মেনে অবস্থান পরিবর্তন করেন। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে আরাফাতের দল জর্ডানের সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে গেলে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ও তার ফাতাহ দল ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের আগ্রাসন ও আক্রমণের শিকার হন। দল-মত-নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের অধিকাংশ মানুষ তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক মনে করেন। তবে ইসরায়েলিরা তাকে সন্ত্রাসবাদী মনে করে। ২০০৪-এর শেষদিকে আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং কোমায় চলে যান। আরাফাতের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ না পেলেও চিকিৎসকদের মতে তিনি ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা এবং সিরোসিসে ভুগছিলেন। তিনি ২০০৪ সালের নভেম্বরের ১১ তারিখে প্যারিসে চিকিৎসারত অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে একাধিক সূত্রের দাবি ইসরায়েলি ষড়যন্ত্রের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

 

জন এফ কেনেডি

গুপ্তঘাতক রহস্য

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯১৭ সালের ২৯ মে ম্যাসাচুসেটসের ব্র“কলিনে জš§গ্রহণ করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাত্র তিন বছর পর ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাস স্টেটের ডালাসে সরকারি সফরকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কেনেডি। জন এফ কেনেডি তার গোপন নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যের ছোড়া গুলিতে খুন হন। অস্ট্রেলিয়ার এক অবসরপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা এমন দাবি করেছেন। কেনেডির জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এ কথা বলেন অস্ট্রেলিয়ার ওই তদন্ত কর্মকর্তা কলিন ম্যাকলরেন। ‘জেএফকে : দ্য স্মকিং গান’ এবং ‘মরটাল এরর : দ্য শুট দ্যাট কিলড জেএফকে’ শিরোনামে তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে এ তথ্যের অবতারণা রয়েছে। কেনেডি হত্যার বিস্ফোরক আলামত নিয়ে লেখা হোয়ার্ড ডোনাহুর বই থেকে তারা দুজনেই একমত যে, জর্জ হিকি নামক এক গোপন নিরাপত্তাকর্মীর ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয় কেনেডির। তবে ওই নিরাপত্তাকর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে গুলি করেনি, ভুলবশত গুলিটি গিয়ে তার শরীরে বিদ্ধ হয়। তবে কেনেডির পরিকল্পিত গুপ্তঘাতক হারভে অসওল্ড প্রথম গুলি করেছিল। সেই গুপ্তঘাতককে লক্ষ্য করে কেনেডির নিরাপত্তাকর্মীর ছোড়া গুলিটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কেনেডিকে আঘাত করে আর এতেই তার মৃত্যু নিশ্চিত হয় বলে ম্যাকলরেনের বিশ্বাস।

 

মেরিলিন মনরো

অতিরিক্ত বড়িতে আত্মহত্যা

মূল নাম নর্মা জিন মর্টেনসন হলেও ইতিহাসে তিনি পরিচিত মেরিলিন মনরো নামে। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত আমেরিকান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও মডেল। তিনি তার সময় তো বটেই, যে কোনো সময়ের জন্য শ্রেষ্ঠ যৌনাবেদনময়ী অভিনেত্রী ছিলেন। যার ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।

১৯৫০ সালে অল অ্যাবাউট ইভ নামে চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় বিখ্যাত ছবি দ্য সেভেন ইয়ার ইটচ। সাম লাইক ইট হট ছবিতে অভিনয় করে তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। সাংসারিক শান্তি না মিললেও সংক্ষিপ্ত জীবনে তিন-তিনবার বিয়ে করেন।

১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট লস অ্যাঞ্জেলেসের ব্রেন্টউডে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন মনরো। ধারণা করা হয়, মাত্রাতিরিক্ত বড়ি খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর