বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি

তানভীর আহমেদ

এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি

মুকেশ আম্বানি। ভারতীয় ধনকুবের, রিলায়েন্স  গ্রুপের কর্ণধার। তার সম্পদের পরিমাণ ৬৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা তিনি আছেন নয় নাম্বারে। ফোর্বসের বিবেচনায় মুকেশ টানা ১২ বার ভারতের শীর্ষ ধনী।

রিলায়েন্স গ্রুপের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তাকে টাকার পাহাড়ের ওপর পৌঁছে দিয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, তেল, টেক্সটাইল, শোধনাগারসহ নানামুখী ব্যবসা রয়েছে তার। ব্যবসায়িক জগতে এক অনন্য উচ্চতার সফল ব্যক্তিত্ব মুকেশ আম্বানি হয়ে ওঠেন এশিয়ার শীর্ষ ধনকুবের।

করোনায় ব্যবসায়িক চমক দেখান ভারতের এক নম্বর ধনী মুকেশ আম্বানি। মাত্র ৩০ দিনে হাজার কোটি ডলারেরও বেশি পুঁজি সংগ্রহ করেছেন তিনি। মুকেশ আম্বানি তার মোবাইল ইন্টারনেট কোম্পানি জিওর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ও বহুপক্ষীয় বিকল্প সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি কেকেআরের (কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস) সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে কেকেআর ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১১ হাজার ৩৭০ কোটি ভারতীয় রুপির বিনিময়ে রিলায়েন্স জিওর ২ দশমিক ৩ শতাংশ  শেয়ার কিনেছে। গত এক মাসে জিও মোবাইলের ১৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারের পুঁজি সংগ্রহ করল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল ফেসবুকের কাছে জিওর ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার ৫৭০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে।

 

মোট সম্পদ ৬ হাজার ৩২০ কোটি ডলার

রিলায়েন্স সংস্থায় একের পর এক বিদেশি বিনিয়োগের ফলে সম্পদের পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে মুকেশ আম্বানির। ব্লুুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। সম্পদের দৌড়ে ওরাকেল কর্পের ল্যারি এলিসন এবং ফ্রান্সের সবচেয়ে ধনী মহিলা ফ্রাঙ্কোয়েস বেটেনকোর্ট মেয়ের্সকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। একই সঙ্গে বিশ্বের সেরা ১০ ধনীর তালিকায় উঠে এলেন মুকেশ আম্বানি। এশিয়ার একমাত্র ধনী ব্যক্তি হিসেবে এ স্থান অধিকার করলেন তিনি। ভারতের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ৬৩ বছর বয়সী মুকেশের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩.২ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৩২০ কোটি ডলারে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মুকেশের হাতে। ঋণমুক্ত কোম্পানি হিসেবে রিলায়েন্সের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গত শুক্রবার কোম্পানিটির শেয়ারের দর হু হু করে বাড়ে। শেয়ারপ্রতি মূল্য হয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ রুপি ৫৯ পয়সা। শুক্রবারের লেনদেন শেষের মূল্য অনুযায়ী, রিলায়েন্স এখন প্রথম ভারতীয় সংস্থা হওয়ায় মূল্য ১৫ হাজার কোটি ডলার। এর আগেও ফোর্বসের বিবেচনায় মুকেশ টানা ১২ বার ভারতের শীর্ষ ধনী হয়েছেন। ধনীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

 

থাকতেন দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্টে

ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। তার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবসা জগতের সেরাগুলোর একটি, ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। এ গ্রুপের মালিক তিনি। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি রিলায়েন্স গ্র“পকে। ব্যবসায়িক উন্নতির সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থ-বিত্ত-সম্মান-মর্যাদা। বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় নিজের জাগয়াটা বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছেন তিনি। আর ভারতের হিসাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এখন তিনিই। মুকেশ আম্বানি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী মানুষদের একজন। তার মোট সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য হচ্ছে ৬৩.২ বিলিয়ন ডলার। মুকেশ আম্বানি পরিবার ভারতীয় নাগরিক হলেও তার জš§ কিন্তু ইয়েমেন দেশে। জম্মসাল ১৯৫৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ধনকুবের এ ব্যক্তিটির বাবার নাম ধিরুভাই আম্বানি এবং মায়ের নাম কোকিলাবেন আম্বানি। তিনি তার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। অনিল আম্বানি নামে মুকেশ আম্বানির আরও এক ভাই ও দুই বোন রয়েছে। স্কুল বয়সেই অনন্য মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন তিনি। বিশেষ করে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড থেকে এমবিএ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি স্টানফোর্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তখনো তিনি ধনকুবের হয়ে উঠেননি। অন্য আর দশটি মধ্যবিত্তের পরিবারের মতোই চলছে জীবন। মুকেশ এবং তার পরিবার প্রথমে মুম্বাইয়ের ভুলেশ্বর এলাকায় থাকতেন। জানেন সেই বাড়িতে কয়টি শোবার ঘর ছিল? গোটা অ্যাপার্টমেন্টে ছিল সবেমাত্র দুটি শোবার ঘর। কিন্তু দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে রিলায়েন্স গ্রুপের উত্থানের মাধ্যমে। ষাটের দশকে রিলায়েন্স কোম্পানির ভিত মজবুত হয়ে উঠতে শুরু করে। দিন বদলে যায় মুকেশ পরিবারের। অর্থ-বিত্ত-যশ-খ্যাতি সবই এসেছে এ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে। দুই বেডরুমের সেই অ্যাপার্টমেন্ট এখন শুধুই স্মৃতি। বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি আন্টিলিয়াতে এখন বসবাস আম্বানি পরিবারের।

 

মুকেশ আম্বানির অবিশ্বাস্য উত্থান

রিলায়েন্স কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রিজের আজকের এ ব্যবসায়িক অনন্য উচ্চতা কিন্তু শুধু মুকেশ আম্বানির মেধা আর শ্রমের ফসল নয়। যদিও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমেই আজকে ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। এ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানির বাবা ধিরুভাই আম্বানি। ধিরুভাই আম্বানিকেও ভারতীয় শিল্প ইতিহাসের নায়ক বলেই মানা হয়। ধিরুভাই আম্বানি ১৯৩২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের গুজরাটের জুনাগড় জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে হীরাচাঁদ আম্বানি ও জামনার সংসারে জম্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। বাবার স্বল্প আয়ে সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হতো। তাই নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দিতে পারেননি। তার বড় ভাই রামনিকলাল আম্বানি কাজ করতেন ইয়েমেনের বন্দর নগরী এডেনে। আম্বানি চলে গেলেন এডেনে। সেখানে বড় ভাইয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ধিরুভাই আম্বানি যখন ইয়েমেনে পাড়ি জমান তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। তার প্রথম মাসের বেতন ছিল ৩০০ রুপি। ধীরে ধীরে তেলের ব্যবসা সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞান লাভ করেন। ধিরুভাই আম্বানির কাজের দক্ষতা দেখে তাকে বিক্রয় ব্যবস্থাপক করে দেন পেট্রলপাম্পের মালিক। কিন্তু এ কাজ বেশিদিন করেননি আর। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় মার্চেন্ডাইজিং ফার্মে বিজ অ্যান্ড কোম্পানিতে। সেখানে কাজ করেন প্রায় পাঁচ বছর। সেখানে তার বেতন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১০০ রুপিতে। কিছু পুঁজি হাতে নিয়ে ৮ বছর পর এডেন ছেড়ে ফিরে আসেন ভারতে। নিজে একটি কারখানা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ব্যাংকগুলোর পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়ান। সবাই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তিনি বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এতেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চোখে পড়েন তিনি। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন রিলায়েন্স গ্র“প। মুকেশ আম্বানির বাবা ধিরুভাই আম্বানির হাতে গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের এক সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক শিরোনাম। অনেকেই হয়তো জানেন না, শুরুর দিকে রিলায়েন্স গ্রুপ ইয়েমেন থেকে মসলা আমদানি করত। মসলা আমদানির ব্যবসা নিয়ে পথ চলতে শুরু করে রিলায়েন্স গ্রুপ। ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটতে শুরু করে। মসলা আমদানির পাশাপাশি পরবর্তীতে তারা সুতার ব্যবসা শুরু করে। এদিকে মুকেশ আম্বানির পড়াশোনা শেষ হয়েছে। সাল ১৯৮০। মুকেশ আম্বানি দেশে ফিরে পলেস্টার, আঁশ এবং সুতার ব্যবসা সামলানোর দায়িত্ব নেন। মুকেশ আম্বানির মেধা, দূরদর্শী ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ও কঠোর পরিশ্রমে রিলায়েন্স গ্র“প দ্রুত উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সরকারের কাছ থেকে পিএফআই ব্যবসার লাইসেন্স পেয়ে যায় রিলায়েন্স। এটাকেই  রিলায়েন্স গ্র“পের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। মুকেশ তার বাবার কোম্পানিতে সুতা উৎপাদনের ব্যবসায় সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। এমনকি ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক শ্রমিকও এতে সংযুক্ত হয়। ১৯৮০ সালের দিকে মুকেশ আম্বানির এ ব্যবসায়িক উত্তরণ রিলায়েন্স গ্র“পকে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্ত ভিত গড়ে দেয়। একদিকে রিলায়েন্সের প্রসার, অন্যদিকে মুকেশের অনন্য নেতৃত্বগুণ- সব মিলিয়ে রিলায়েন্স গ্র“প একের পর এক ব্যবসায় ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। তাদের ব্যবসার খাতে যোগ হয়- রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম পরিশুদ্ধকরণ, টেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ইত্যাদি। চারদিকে ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়ে মুকেশ আম্বানি আলোড়ন তুলেন গোটা ভারতে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্র“পের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।

মুকেশও এটাই চেয়েছিলেন। তবে এ রিলায়েন্সের গতি সাময়িকভাবে রুদ্ধ হয় আম্বানির বাবা মৃত্যুবরণ করার পর। ২০০২ সালে তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই মুকেশ ও অনিলের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। কোম্পানির মালিকানাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে এ দূরত্ব হয়। তবে এ বিরূপ পরিস্থিতি বেশ ভালোভাবেই সামাল দেন তাদের মা। মা কোকিলাবেন আম্বানির সরাসরি হস্তক্ষেপে একটি মধ্যস্থতা হয়। মধ্যস্থতার মাধ্যমে অনিল রিলায়েন্সের টেলিকমিউনিকেশন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং বিনোদনের মালিকানা পান।

মুকেশ পান কোম্পানির তেল, টেক্সটাইল এবং সব শোধনাগারের ব্যবসা। এখন রিলায়েন্স পৃথিবীর বৃহত্তম তেল শোধনাগার নির্মাণ করেছে। মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বেই তেল এবং জ্বালানি সমৃদ্ধ হয়েছে ভারত। মুকেশ আম্বানি তার স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আগামী পাঁচ বছরে আম্বানির লক্ষ্য, রিলায়েন্স প্রতিবছর ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করবে এবং ১৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন ভারতীয়ের চাকরির ব্যবস্থা করবে। ভারতের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় রিলায়েন্সের মুদির দোকানগুলো কৃষকদের আরও উৎপাদনশীল করে তুলেছে।

 

যেভাবে কাটে দিন

মুকেশ আম্বানি ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠে পড়েন। সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জিমে শরীরচর্চা করেন। ৮টায় সকালের নাস্তার জন্য প্রস্তুতি নেন। সাড়ে ১০টার মধ্যে গাড়িতে চেপে বসেন অফিসের উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে তিনি নিজেও ড্রাইভ করেন। সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অফিস করেন মুকেশ আম্বানি। ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বাসায় ফেরেন তিনি। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে রাতের খাবার সেরে ফেলেন মুকেশ। রাত ১০টা থেকে ১১টায় পরিবারের সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা সারেন। এরপর স্ত্রী নিতা ঘুমোতে চলে যান আর মুকেশ টেবিলে বসেন। ঘণ্টাখানেক টেবিলে কিছু অফিসের কাজ সেরে শুয়ে পড়েন।

 

তার বার্ষিক বেতন ২৪ কোটি টাকা

মুকেশ আম্বানি রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার। এছাড়া তার এ ব্যবসার আরও অংশীদার রয়েছে। তেল, টেক্সটাইল এবং সব শোধনাগারের ব্যবসা তার হাতে।

ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির দৈনিক আয় ১১ কোটি রুপি। রিলায়েন্সের এসব ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি যে বার্ষিক বেতন পান তার মোট পরিমাণ ২৪ কোটি টাকা।

মাসের হিসেবে দাঁড়ায় ২ কোটি টাকা। তার নানামুখী বিনিয়োগ থেকে যেভাবে অর্থ যোগ হয় তাতে বলা যায় মিনিটে ১৬ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের যে ভাতা পান তার পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। দিনে দিনে এই আয়ের পরিমাণ শুধু বাড়ছেই।

 

মুকেশ আম্বানির বিলাসী লাইফস্টাইল

আম্বানি পরিবারে বিলাসবহুল লাইফস্টাইলের জন্য রয়েছে রোল রয়েস, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজসহ সব দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। নিজস্ব বিমানে ছোটখাটো অফিসও রয়েছে। বিলাসবহুল কেবিন থেকে মিটিং রুম, হোটেল, ভিডিও গেম খেলার ব্যবস্থা, মিউজিক সিস্টেম সবই রাখা হয়েছে। সমুদ্রে সময় কাটানোর জন্য ইয়ট কিনে রেখেছেন আম্বানি। এ ইয়টের ছাদ পুরোপুরি সোলার গ্লাস দিয়ে তৈরি। ভিতরে রয়্যাল সুইট, পিয়ানোবারসহ ডাইনিং রয়েছে নৈশভোজের ব্যবস্থা। মিডিয়াতে মুকেশ আম্বানির মতোই জনপ্রিয় তার স্ত্রী নিতা আম্বানি। নিতার বিলাসবহুল লাইফস্টাইলের অনেক গল্পই আমাদের জানা। যেমন প্রতিদিন তার সকাল শুরু হয় লাখ টাকার চা-পান করে। তিনি একবারের বেশি কোনো পোশাক বা জুতা ব্যবহার করেন না। তার কালেকশনে রয়েছে বিশ্বের সেরা সব ব্র্যান্ডের ব্যাগ-ঘড়ি-সানগ্লাস।  যে কোনো অনুষ্ঠানে শত তারকার ভিতরেও চারপাশ উজ্জ্বল-আলোকিত হয়ে ওঠে মুকেশ-নিতা আম্বানির উপস্থিতিতে।

 

কোটিপতি কন্যা, ব্যবসায়ী ছেলে

ইশা আম্বানি। মুকেশ আম্বানি আর নিতা আম্বানি দম্পতির কন্যা ইশা আম্বানির বয়স ১৬ বছর। ২০০৮ সালের সেরা ১০ জন কোটিপতি তরুণ-তরুণীদের একজন নির্বাচিত হয়েছিল সে। এ বয়সেই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের শেয়ার কিনে নিয়েছে ২০ বছর বয়সী এ কিশোরী। তার ব্যক্তিগত সম্পদ বলেই ফোর্বসের তালিকায় জায়গা করে নেয় ইশা। ইশা আম্বানি সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ অ্যান্ড সাইকোলজিতে ইয়েলে পড়াশোনা করছেন। প্রলচিত আছে, ‘বাপ কা ব্যাটা, সিপাহি কা ঘোড়া।’ ঠিক তাই যেন মুকেশ আম্বানির বড় ছেলে আকাশ আম্বানি। ২৬ বছর বয়স তার। এখনই ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাটছে। মুকেশ আম্বানির ইচ্ছাতে পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তরুণ বয়সেই। বাজারে গুজব রয়েছে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আকাশ আম্বানি।

 

সুন্দরীকে বিয়ে নিয়ে যা বললেন

বছরে ১০০ কোটি টাকা আয়, এমন একজন স্বামী খুঁজছেন ২৫ বছরের তরুণী। তরুণীর নাম পূজা চৌহান। একটি প্লাটফর্মে ধনী স্বামী খুঁজে পেতে পূজা চৌহান লিখেছেন, ‘আমি এই বছর ২৫ বছরে পা দেবো। খুবই সুন্দরী, স্টাইলিশ, রুচিশীল। আমি এমন একজন স্বামী চাই, যার বার্ষিক বেতন হবে ১০০ কোটি বা তার বেশি। আমার কিছু বান্ধবী আছে, তারা দেখতে খুব একটা ভালো নয়, কিন্তু তাদের বিয়ে হয়েছে ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে। ধনী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, আপনি কী দেখে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই নারী আমার স্ত্রী হবেন, আর ইনি গার্লফ্রেন্ড?’ ওই ফোরামটিতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি পোস্টটি দেখে উত্তর দেন। তিনি লিখেন, ‘প্রিয় পূজা, আমি আপনার পোস্টটি খুব মন দিয়ে পড়েছি এবং দেখলাম, আরও বহু মেয়ে আপনার মতোই প্রশ্ন করেছে। দয়া করে একজন পেশাদার লগ্নিকারী হিসেবে আপনার প্রশ্নগুলোকে একটু বিশ্লেষণ করতে দিন। আমার বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকার বেশি। আপনার চাহিদা মতোই। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে বিয়ে করা খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত হবে। খুব সহজ উত্তর। প্রতিবছর আমার আয় বাড়বে, কিন্তু প্রতিবছরই আপনি আরও সুন্দরী হয়ে উঠবেন না। অতএব অর্থশাস্ত্রের নিরিখে, আমি একজন অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাসেট। আর আপনি ডেপ্রিসিয়েশন অ্যাসেট। যে ব্যক্তির বার্ষিক আয় ১০০ কোটি টাকা সে নিশ্চয়ই বোকা নয়। ব্যবসায়ী দৃষ্টিভঙ্গিতে আপনার সঙ্গে ডেট করাই যায়, কিন্তু বিয়ে করা যায় না। অতএব কোনো ধনীকে বিয়ে করার স্বপ্ন আপনার না দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

প্রাসাদসম আন্টিলিয়া

মুকেশ আম্বানি এখন বাস করেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি বাড়িতে, যেটির নাম আন্টিলিয়া। ভারতের মুম্বাই শহরের আলটামাউন্ট রোডে অবস্থিত এ বাড়ির দাম ২০০ কোটি ডলার, যা ভারতের ১৪ হাজার কোটি রুপির সমান। এ বাড়ির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল আর একটি বাড়িই আছে দুনিয়াতে, সেটি হলো ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রধান প্রশাসনিক দফতর বাকিংহাম প্যালেস। আন্টিলিয়া ভবনটি মোট ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায়। আম্বানির পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। এ ছয়জন সদস্যের জন্য গোটা বাড়ি বানানো হয়েছে। বাড়ির ফ্লোর সংখ্যা ২৭। ২০০২ সালে মুকেশ আম্বানি মুম্বাই নগরীতে ৪৯ হাজার বর্গফুট জায়গা কিনে নেন। সাত বছরের নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। বাড়িটির উচ্চতা ১৭৩.১২ মিটার, যা একটি সাধারণ ৬০ তলা দালানের উচ্চতার সমান। প্রথম ৬ তলা নির্ধারণ করা হয়েছে কার পার্কিং স্পেস হিসেবে। আমদানি করা ১৬৮টি লাক্সারি গাড়ি ব্যবহার হয় শুধু পরিবারের প্রয়োজনে। সপ্তম তলা রাখা হয়েছে গাড়ির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ হিসেবে। অষ্টম তলায় রয়েছে একটি বিশাল বিনোদন কেন্দ্র, এখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ জনের আসনক্ষমতা নিয়ে একটি মিনি থিয়েটার। নবম তলা রিফিউজ ফ্লোর, জরুরি প্রয়োজনে উদ্ধার কাজের জন্য এটি ব্যবহার হবে। তার উপরের দুটি ফ্লোর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। একটিতে রয়েছে সুইমিংপুলসহ খেলাধুলার সব সরঞ্জাম। অপরটিতে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সব উপকরণ নিয়ে তৈরি সুবিশাল হেলথ জিম। তিনটি ফ্লোরজুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম ঝুলন্ত বাগান। নানা জাতের গাছ ও ফুলে শোভিত হয়েছে এ সুবিশাল বাগান। দুটি ফ্লোর রাখা হয়েছে আম্বানি পরিবারের আত্মীয়-স্বজন তথা অতিথিশালা হিসেবে। বাড়ির উপরের দিকে চারটি ফ্লোর, যেখান থেকে আরব সাগর ও আকাশের মিলনরেখার অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, নির্ধারিত হয়েছে মুকেশ, তার স্ত্রী নিতা, তিন সন্তান এবং মুকেশের মা কোকিলাবেন এর জন্য। বাড়ির শীর্ষে দুটি ফ্লোরের মধ্যে একটি পরিবারের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং তার পরেরটি হ্যালিপেড এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হবে। বাড়ির শীর্ষে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি হ্যালিপেড। ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গৃহপ্রবেশ’ অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে বাড়িটিতে বসবাস করা শুরু করেছে মুকেশ আম্বানি পরিবার। এ বাড়ি ও বাড়ির মানুষজনের দেখাশোনার জন্য রয়েছে ৬০০ জন কর্মী, যা একটি বাড়ি ও বাড়ির মানুষজন দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত কর্মীর হিসেবেও একটি বিরল ঘটনা।

সর্বশেষ খবর