শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বড় শহরে নতুন জীবন

সাইফ ইমন

বড় শহরে নতুন জীবন

করোনায় লকডাউন শিথিল করেছে বেশির ভাগ দেশ। অনেক জায়গায় নেই লকডাউন। বড় বড় শহরে চলছে গাড়ি, রাস্তায় বেরিয়েছে মানুষ। অফিস, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট খুলছে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে। কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে দেশগুলোতে। দেশে দেশে খুলে দেওয়া হয়েছে পার্ক, পর্যটন কেন্দ্র। বিমানবন্দর, সীমান্তের বিধিনিষেধও তুলে নিতে শুরু করেছে অনেক দেশ। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আদেশ এখনো বহাল আছে। নতুন নিয়মে নতুন জীবন শুরু করেছে পৃথিবীর মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে থাকা বড় দেশগুলোর প্রধান শহরগুলোতে।

 

মস্কোতে নানা জায়গায় বসেছে জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গ

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাড়িতে বসেছে জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গ। মস্কোসহ অন্যান্য শহরেও বসেছে এমন জীবাণুনাশক ব্যবস্থা। ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে রাশিয়ায় প্রায় তিন মাসব্যাপী লকডাউন  শেষে তুলে নেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে খুলে দেওয়া হয়েছে পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। এতে দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে বেশ খুশি স্থানীয়রা। স্থানীয়দের একজন বলেন, আমরা এ মুহূর্তটির জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলাম। অপেক্ষার পালা আপাতত শেষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানেই মানুষ ফেলছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। অনেকে বলছেন, আমরা এখন ঘুরতে পারছি, সাঁতার কাটতে পারছি। দোকান খুলতে পেরে আমরা খুবই খুশি। লকডাউন শেষ হয়েছে। ক্রেতারাও ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন। তবে শহরে চালু করা হয়েছে বেশ কিছু নতুন নিয়মকানুন। করোনা থেকে বাঁচতেই এই ব্যবস্থা। স্থানীয় বার ও রেস্তোরাঁগুলোর টেবিলগুলো কমপক্ষে এক মিটার দূরে স্থাপন ও জীবাণুমুক্ত করার নিয়ম মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জারি করা লকডাউন শিথিল করা হয়েছে রাশিয়ার অন্যান্য শহরেও। তবে তা কেবল সম্ভব সরকারের দেওয়া কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে। দেশটির প্রতিটি নাগরিককে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার এবং গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। দোকানপাট খুলেছে, তাতে বেঁধে দেওয়া হয় সময়সূচি। প্রাথমিকভাবে কম আয়তনের দোকানগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। যদিও সেখানে মানুষজনকে এখনো কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। মানুষজন নিয়ম মেনে আবারও শুরু করেছে স্বাভাবিক জীবন। তবে একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছে সবার মাঝেই। পৃথিবী থেকে যতদিন এই মরণঘাতী ভাইরাস না চলে যাবে ততদিন এমনই চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

ফ্লোরিডায় মানুষ সাইকেল চালাচ্ছে, সার্ফিং করছে

আমেরিকায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। আক্রান্ত ২২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। কয়েকটি প্রদেশে কমলেও আলসকা, অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, কানসাসের মতো ২১টি প্রদেশে গত এক সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তবুও মানুষ বের হচ্ছে, সাঁতার কাটছে। সাইকেল চালাচ্ছে। সার্ফিং করছে। হাঁটছে কিংবা দৌড়াচ্ছে। বরশিতে মাছ ধরছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের জ্যাকসনভিল সৈকতের এই চিত্র করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগের নয়। বরং তরতাজা! কভিড-১৯-এর সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী লড়াইয়ের মাঝপথে গত ১৭ এপ্রিল বিকালে জ্যাকসনভিল সৈকত পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ বেড়া নামানোর পরপরই মানুষ ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এই বেলাভূমিতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার কিছুদিন স্থগিত ছিল।  জ্যাকসনভিল ওয়েবসাইটে জানা যায়, চিত্তবিনোদনের জন্য সমুদ্রতীরে পায়চারি,  দৌড়ানো, বেড়ানো, সাইকেল চালানো এবং সাঁতারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সূর্যস্নান কিংবা দলবেঁধে থাকা যাবে না সৈকতে। এ ছাড়া যোগ হয়েছে নিত্যনতুন নিয়মকানুন। তোয়ালে, কম্বল, চেয়ার, খাবার পানির কন্টেইনার আনা নিষেধ। মেয়র লেনি কারির মন্তব্য, ‘স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার শুরুটা হতে পারে এখান থেকে। অনুগ্রহপূর্বক আমাদের নির্দেশাবলী মেনে চলুন। নিজে সুস্থ থাকার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় নিয়ম অনুসরণ করুন।’ সবকিছু পুনরায় খুলে দেওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকে। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা ও বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে জ্যাকসনভিল সৈকত। শহরের পার্কগুলো আবারও খোলা হয়েছে। সেখানে ছোট ছোট, তবে কোথাও অর্ধশত লোকের বেশি জমায়েত না করার আদেশ বহাল থাকছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সৈকত, পার্কসহ জনসাধারণের অন্যান্য স্থান উন্মুক্ত করার ধারণায় একমত পোষণ করেছেন তিনি। গভর্নর বলেন, ‘লক্ষ্য করলে দেখবেন, বেশির ভাগ মানুষ সাধারণত ইনডোরে অন্যের সংস্পর্শে আসার কারণে জীবাণুতে সংক্রমিত হয়েছে। তাই থেমে না থেকে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষকে ভালো ও নিরাপদ পন্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করতে চাই আমরা।’

 

সবখানে মাস্ক বাধ্যতামূলক রোমে

এরই মধ্যে করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত ইতালি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। করোনার প্রভাব দুর্বল হতে থাকায় লকডাউন শিথিল করছে ইতালি সরকার। এর ফলে দেশটিতে বেশ কিছু খাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে দেশটির রাজধানী রোম। তবে লকডাউন শিথিল হলেও রোগীদের বাঁচানোর লড়াই জারি রয়েছে শহরটিতে। শুরু হয়েছে উৎপাদন শিল্প, নির্মাণ খাত ও পাইকারি দোকান। এ ছাড়া বার, রেস্তোরাঁ, খুচরা ও পাইকারি দোকানপাট, স্টেশনারি, বইয়ের দোকান, বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান, কম্পিউটার ও কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। গত ১৮ মে থেকে বাণিজ্যিক কিছু অংশ, প্রদর্শনী, জাদুঘর, প্রশিক্ষণ টিম, ক্রীড়াক্ষেত্র ও গ্রন্থাগার খোলা হয়েছে। এ ছাড়া ১ জুন থেকে রেস্তোরাঁ, বার, সেলুন, ম্যাসাজ সেন্টার খোলা হয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে খোলার কথা রয়েছে। তবে লকডাউন শিথিল করা হলেও কভিড-১৯-এর প্রকোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সবাইকে গণপরিবহনসহ বাসার বাইরে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই বাসার বাইরে বের হওয়ার কারণ জানাতে হবে। ১৮ বছরের নিচের বয়সীরা লিগ্যাল গার্ডিয়ানের সঙ্গে বের হওয়ার সুযোগ পাবে।

 

তেহরানে ইসলামী সুরক্ষা

ইরানে লকডাউন ঘোষণার সাত দিন পরই লকডাউন তুলে নেয় দেশটির সরকার। যেসব এলাকা করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় মসজিদ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে দেশটির অধিকাংশ সরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে কর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ। বর্তমানে বেড়েছে কর্মী সংখ্যা। অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে মানা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি।  দেশের প্রশাসনিক বিভাগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১৩২টি এলাকায় মসজিদ পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দলবেঁধে প্রার্থনা করার চেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছেন  প্রেসিডেন্ট রুহানি। তিনি ইসলামী সুরক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন। এ ছাড়া শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে  দেওয়া হবে। দেশে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও লকডাউনে নারাজ ইরান সরকার শুরু থেকেই। তাই জীবনযাত্রা এখনো স্বাভাবিক সেখানে।

 

আবার শুরু ইংলিশ লিগ

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির একটি দলের করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলো নিয়ে তৈরি করা এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। মানুষ প্রবেশ করছে স্বাভাবিক জীবনে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে তিন মাসেরও বেশি সময় পর ফিরছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ১৭ জুন শুরু হয়েছে স্থগিত হওয়া মৌসুমের বাকি অংশ। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বাকি ম্যাচগুলো। লন্ডনে মানুষজন বাইরে বেরোতে শুরু করেছে। বাড়িতে থেকে কাজ না করতে পারলে লোকদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে উৎসাহিত করা হয়। মে মাসের শুরুতে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা কঠোর নিয়মনীতি মেনে ছোটখাটো সংস্কার চালান। এতে করে মানুষ এখন বাইরে পার্কে নিরাপদ দূরত্বে অন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার স্বাধীনতা লাভ করেছে। খুলছে দোকানপাট। মানুষজন রাস্তায়, পার্কে, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়া শুরু করেছে। 

 

ওয়েলিংটনে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে জনজীবন

নিউজিল্যান্ড সম্প্রতি নিজেদের ‘করোনামুক্ত’ ঘোষণা করেছিল। তুলে দেওয়া হয়েছিল লকডাইন। কিন্তু ফের নতুন দুটি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তাই এবার সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে। দেশটির প্রধান শহর ওয়েলিংটনেও একই অবস্থা। তবে জনগণের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পারিবারিক বড় অনুষ্ঠান অথবা পুনর্মিলনী করা যাবে না। খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা, চিকিৎসকের কাছে ও ফার্মেসিতে যাওয়া যাবে। নিজ এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ এবং নিজস্ব এলাকায় হাঁটা, দৌড়ানো ও সাইক্লিংয়ের অনুমতি আছে। তবে একত্রে বেশি লোকের সমাগম করা যাবে না। সবাইকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। সংক্রমণের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী সুস্থ হওয়ায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্কুল, রেস্তোরাঁসহ সুপারশপ এবং স্টোরগুলো আবারও চালু হয়েছে। বেশির ভাগ অফিস সচল হয়েছে। কর্মীরা আবারও অফিসে কাজ করতে শুরু করেছে। লাইব্রেরি, জাদুঘর ও জিমগুলো আবার খুলতে পারবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

 

প্যারিসের পানশালা রেস্তোরাঁয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

সংক্রমণ আর মৃত্যু ঠেকাতে লকডাউন   ঘোষণা করে ফ্রান্স সরকার। কিন্তু সংক্রমণের হার কমে আসায় সরকার সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। অনেকদিন পর দেশটি নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করতে শুরু করেছে। ফলে প্যারিসে শুরু হয়েছে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য। বার এবং

রেস্তোরাঁগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শহরের বিল্ডিং সাইট এবং কারখানাগুলোও খোলা হয়েছে এবং আরও অনেক স্টোরের পাশাপাশি জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারগুলোও পুরোপুরি চালু হয়েছে। ফ্রান্সের অন্যান্য শহরেও

রেস্তোরাঁ, পানশালা সবকিছুই খুলতে শুরু করেছে আগের মতো। মে মাসের মাঝামাঝি সময় বলা হয়েছিল কেবল  খোলা আকাশের নিচেই খাবার দিতে পারবে রেস্তোরাঁগুলো। সে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রও। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ের ভেরান বলেন, ‘মহামারীর সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি আমরা পেছনে ফেলেছি। কিন্তু ভাইরাস এখনো মরেনি। আমরা ভাইরাসকে একেবারে হারাতে পারিনি, এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা পরীক্ষা করে যাব।’

 

পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে বার্লিন

জার্মানির অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অবর্ণনীয় ক্ষতি হচ্ছে। অবরুদ্ধ অবস্থার কারণে পারিবারিক ও মানসিক জটিলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক জায়গায় লকডাউনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও শুরু হয়েছে। ফলে লকডাউন শিথিল করতে বাধ্য হয় সরকার। জার্মানির বার্লিন ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে পুনরায় চালু হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। যদিও এর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়ে গেছে। গত মাসের শুরুতে গির্জা, হেয়ারড্রেসার, খেলার মাঠ এবং স্কুলগুলো খুলতে শুরু করে। তবে দ্য গার্ডিয়ানের মতে, এখন থেকে দেশটির পরিবারের লোকেরা অন্য পরিবারের সঙ্গে  দেখা করতে পারছে।

জার্মানির জনপ্রিয় বুন্দেসলিগা পেশাদার ফুটবল লিগ গত ১৬ মে থেকে শুরু হয়। অন্যদিকে বইয়ের দোকান, গাড়ি ও  মোটরসাইকেল মেরামতের সব দোকান  খোলা হয়েছে। বেশ কিছু অঞ্চলে চিড়িয়াখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সংক্রমণ আবার শুরু হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় লকডাউন আবার জারি করা হয়েছে। তবে দেশটির জনসাধারণ ফিরে পাচ্ছে স্বাভাবিক ছন্দ।

 

স্টকহোমে ছিল না লকডাউন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ অবরুদ্ধ ছিল লকডাউনে। কিন্তু হালের বিপরীতে হেঁটেছিল বিশ্বের অন্যতম সুখের দেশ সুইডেন। করোনাভাইরাসের এমন সময়ও সুইডেনের অধিকাংশ নাগরিকই অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারছেন। সুইডেনের এই কৌশল অবলম্বন করার  পেছনে দেশটির নাগরিকদের সমর্থন ছিল।  দেশটির বিজ্ঞানীরা এই কৌশলের প্রবর্তক এবং সরকার এটিকে সমর্থন করেছে। সঙ্গত কারণেই দেশটির রাজধানী স্টকহোমে জনগণের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সবাই প্রায় স্বাভাবিক দিন পার করছে সেখানে। সুইডেনের বিভিন্ন পানশালার ভিড় আর আইসক্রিমের দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই  বেশ আলোচিত। কীভাবে এমন পরিস্থিতি  মোকাবিলা করছে দেশটি, তা নিয়ে কৌতূহল থাকতেই পারে। লকডাউন ছাড়া জনগণ  স্বেচ্ছায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, হাত  ধোয়া এবং মাস্ক পরার নিয়ম মেনে চলছে। যদিও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুইডেনের উন্মুক্ত এই পদ্ধতি অনেক সমালোচিত হয়। এমনকি অনেকে ভাইরাস মোকাবিলায় দেশটি বিপজ্জনক কৌশল বেছে নিয়েছে বলে শঙ্কাও প্রকাশ করে।

 

নিউইয়র্কে নির্বাচনী আমেজ

যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস এপিসেন্টার নিউইয়র্কে লকডাউন উঠানো হয়েছে। কিন্তু শহরজুড়ে প্রতিবাদের মিছিল দেখলে বলার উপায় নেই কদিন আগেও এই শহরবাসী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গৃহবন্দী ছিল।

জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনা পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। কভিড-১৯ আতঙ্ক, বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদের মিছিল, পাশাপাশি ঘনিয়ে আসা প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনী আমেজ- সব মিলিয়ে নিউইয়র্ক সরগরম। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর গণপরিবহন চালু হতে যাচ্ছে সেখানে। কীভাবে মানুষকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা শতভাগ সচল করা যায় তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। রাস্তায় সাইকেল, মোটরসাইকেল তো চলছেই। এখন ভাড়ায় ক্যাব চলবে সেখানে। স্কুল সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে। ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। কয়েকটি প্রদেশে লকডাউন এরই মধ্যে শিথিল করে দেওয়ায় সেখানে ক্যাসিনোগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। জুনের ১৫ তারিখের মধ্যে সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে নিউইয়র্কে। ঘুমিয়ে পড়া নিউইয়র্ক আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যেই।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর