শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতিহাসে মহামারী জয়ী শহর

সাইফ ইমন

ইতিহাসে মহামারী জয়ী শহর

ব্ল্যাক ডেথে আক্রান্ত ছিল ইউরোপের প্রতিটি শহর

প্রাগৈতিহাসিক যুগের পর ইউরোপে ধ্রুপদী সভ্যতা শুরু হয়েছিল প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রের বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে রোম সাম্রাজ্য পুরো ভূমধ্যসাগর কেন্দ্রিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে রোম সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের সূচনা ঘটে এখানে।

১৪ শতকের শুরুর দিকে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ঘটে। আর সে সময়ই এখানে হানা দেয় মহামারী। পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়ঙ্কর মহামারী ব্ল্যাক ডেথ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের শহরগুলোতে। প্রশাসনিকভাবে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম চালু হয়েছিল ১৪০০ শতকেই। ব্ল্যাক ডেথের মতো আলোচিত মহামারী আর নেই। কৃষ্ণ সাগরের (ব্ল্যাক সি) উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল বিধায় একে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়। সে সময় ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্য হতো এ কৃষ্ণ সাগর দিয়েই। আর এখান থেকে খাদ্যদ্রব্যের জাহাজগুলোতে চড়ে বসত অসংখ্য ইঁদুর। যেগুলো কি-না রোগের প্রধান জীবাণুবাহী।

এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৪০০ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। ১৭০০ শতক পর্যন্ত প্লেগ পরবর্তী সময়েও এই সংখ্যা আর পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়নি। এমনকি ১৯ শতকেও এটি ইউরোপের কিছু কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছিল। এই মহামারী জয় করে ইউরোপবাসী। ব্যাপক ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল সে সময়। কিন্তু এরপরও মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন সমাজ ব্যবস্থা, কল-কারখানা। ঘটেছে শিল্প বিপ্লব। মহামারীতে ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাওয়ার পরও আবার সব নতুন করে শুরু হয়েছে। যা চলে আসছে অদ্যাবধি। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল।

 

মহামারী আক্রান্ত কনস্টান্টিনোপলে এখন আধুনিক ইস্তাম্বুল

৫২৭ থেকে ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাইজান্টাইনদের সম্রাট ছিলেন প্রথম জাস্টিনিয়ান। ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী অধিকাংশ অঞ্চলই সম্রাটের দখলে তখন। ওই সময় দেখা দেয় এক মহামারী। আর সম্রাটের নামানুসারে মহামারীর নামকরণ করা হয় জাস্টিনিয়ান প্লেগ। ৫৪১ সালে জাস্টিনিয়ান প্লেগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। রোগের প্রথম আক্রমণটা ছিল বাইজান্টাইনের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে। এই কনস্টান্টিনোপলেই বর্তমানের আধুনিক ইস্তাম্বুল শহর। এরপর পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। ওই রোগ ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও আরব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই প্লেগ মহামারীর মূল বাহক ছিল ইঁদুর।

সেই মহামারীতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। অনেকের মতে বিশ্বের তৎকালীন মোট জনসংখ্যার অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ। এক পর্যায়ে এই রোগের প্রকোপ কমে আসে। যারা বেঁচে ছিলেন, তাদের মধ্যে ওই রোগের প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছিল।

 

মৃত্যুপুরী ফ্লোরেন্স এখন সর্বাধুনিক শহর

গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন হিসেবে স্বীকৃত ১৩৩৪ সালের প্লেগ আসলে ছড়ায় চীন থেকে। এরপর ইতালির ফ্লোরেন্স শহরেই ছয় মাসে প্লেগে মারা যায় ৯০ হাজার মানুষ। পরবর্তী কয়েক বছরে এশিয়া-ইউরোপে মারা যায় পাঁচ কোটি মানুষ। ইঁদুরের খাদ্য ও প্রস্রাব থেকে এই ভয়াবহ রোগটি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পুরো ফ্লোরেন্স শহর পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। একপর্যায়ে রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সব অসুস্থ লোকের বাড়িতে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। লাশ জোর করে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। এক সময় এই ভয়ঙ্কর প্লেগ জয় করে মানুষ। নতুন করে শুরু হয় শহরে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছিল। পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূর হয়েছিল এই ভয়ানক মহামারী।

হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল মস্কোতে

ফোর্বস ২০১৩ সালের তথ্য মতে, মস্কো বিশ্বের নবম ব্যয়বহুল শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম নগর অর্থনীতির মধ্যে একটি। এটি বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যেও একটি বলে মানা হয়। এ ছাড়া শহরটিতে পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের এবং শীতলতম মেগাসিটি বলা হয়ে থাকে। এখানে ওস্তানকিনো টাওয়ার অবস্থিত, যা ইউরোপের দীর্ঘতম স্থাপত্য। ইউরোপ মহাদেশের বৃহত্তম এই শহর মসকোভা নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটি স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ৪০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল সবুজ রংয়ে আচ্ছাদিত এবং বিশ্বের অন্যতম সবুজ রাজধানী। রাশিয়ায় ১৮১৭ সালে প্রথম যখন কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তখন এর প্রভাব পড়েছিল মস্কো শহরেও। সে সময় দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। পরবর্তীতে স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি, ভারত ও আমেরিকাতেও কলেরা ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে। জন স্নো নামের এক চিকিৎসক প্রথম কলেরা রোগের সঙ্গে দূষিত পানির যোগসূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। যার কল্যাণে ম্যাজিকের মতো কলেরার সংক্রমণ নানা অঞ্চলে কমে আসতে থাকে।

 

স্প্যানিশ ফ্লুয়ের পর ব্যবসা বাণিজ্যে জমজমাট স্পেন

১৯১৮ সালের শেষ দিকে ভয়ঙ্কর এক মহামারী সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ওই মহামারীর নাম ছিল স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে তখন মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষের। এই সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশি। মহামারীতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সে সময় সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের মৃত্যু হয়েছিল এই ভাইরাসে। যখন এই মহামারী শুরু হয় তখন স্পেনের রাজ পরিবার এবং অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অসুস্থ হওয়ার খবর স্পেনে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। একমাত্র এখানেই সঠিক তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়। যা অন্য দেশ বা শহরে প্রচার করা হয়নি। তখন সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিধানের জন্য আইন পাস করে, দীর্ঘদিনের জন্য বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। এক সময় শেষ হয় ওই মহামারী।

গুটিবসন্তকে জয় করে উত্তর প্রদেশ ও বিহার

গুটিবসন্ত বা স্মল পক্স ভ্যারিওলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতো এবং এটি অত্যন্ত মারাত্মক এক ব্যাধি ছিল। মানবদেহে প্রথমে এক ধরনের গুটি বের হয় যা পরবর্তী সময়ে তিল বা দাগ, কুঁড়ি, ফোস্কা, পুঁজবটিকা এবং খোসা বা আবরণ ইত্যাদি পর্যায়ের মাধ্যমে দেহে লক্ষণ প্রকাশ করে। গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৭৯৬ সালে। পৃথিবীতে শেষবার গুটিবসন্তের বড় মাপের মহামারী হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ভারতে। হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেই মহামারীতে। সে বছর সেই মহামারী নিয়ে বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছিলÑ উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ২০ হাজারের মতো মানুষ। আক্রান্ত রোগীদের একেবারে বিচ্ছিন্ন করে সেই মহামারী সামাল দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই গুটিবসন্তকে জয় করে উত্তর প্রদেশ আর বিহার। এসব অঞ্চলের মানুষ মহামারীকে পেছনে ফেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। লক্ষে হলো উত্তর প্রদেশের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। গাজিয়াবাদ, কানপুর, মোরাদাবাদ, বরেইলি, আলিগড় ও বারানসি রাজ্যের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। গুটিবসন্তের ধাক্কা সামলে অঞ্চলগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে আবারও।

 

হাজারো মৃত্যুর পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল নিউইয়র্ক

১৫২৪ সালে ইতালীয় অভিযাত্রী জোভান্নি দা ভেরাৎসানো প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে বর্তমান নিউইয়র্ক শহর যেখানে অবস্থিত সেই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেন। তখন এখানে প্রায় পাঁচ হাজার আদিবাসী আমেরিকান লেনাপি জাতির লোকের বসতি ছিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নিউইয়র্ক শহরটি বন্দরনগরী হিসেবে প্রভাব অর্জন করে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এই নিউইয়র্ক শহর। কিন্তু এই অবস্থানে আসার পথে অনেক চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে। ১৯১৬ সালে আমেরিকায় প্রথম পোলিও রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় শুধু নিউইয়র্কেই নয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং ছয় হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। নিউইয়র্ক শহর থেকে ক্রমেই পোলিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর বিশ্বে কত শত মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার কোনো সঠিক তথ্যও পাওয়া যায় না। অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যেতে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে ১৯৫০ সালে জোনাস সাল্ক পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে পোলিওর টিকা শিশুর জন্মের পরপরই দিয়ে দেওয়ার নিয়ম চালু হয়। ফলে পৃথিবীতে এখন পোলিওর প্রকোপ নেই বললেই চলে।

 

ইউয়ান, হংকং, গুয়াংজু, মাঞ্জুরিয়া শহর

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ থাকে এই অঞ্চলে। শহরে বিশাল চওড়া রাস্তা, উন্নত অবকাঠামো। কিন্তু এই শহরটি থেকেই আধুনিক যুগে প্লেগ ছড়ায় ১৮৬০ সালে। প্রথমে ইউয়ান নামক একটি ছোট্ট গ্রামে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পরবর্তীতে এই প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে ভারত, আফ্রিকা, ইকুয়েডর, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। প্রায় দুই দশক স্থায়ী ওই মহামারীতে প্রাণ হারায় এক কোটির বেশি মানুষ। ১৮৯০ এর দশকে প্লেগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হওয়ার ফলে রোগের প্রকোপ কমে আসে। ২০ শতকের সবচেয়ে বড় প্লেগ মহামারী দেখা দেয় ১৯১০ সালে। চীনের মাঞ্জুরিয়ায় দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ভ্যাকসিন ততদিনে উদ্ভাবন হওয়ায় রোগটি আর বেশি দূর ছড়াতে পারেনি। এ ছাড়া চীনের গুয়াংজু প্রদেশেও দেখা দেয় মহামারী। প্রাণ হারায় মানুষ। কিন্তু দেশটি আবারও ঘুরে দাঁড়ায়। চীনের সভ্যতা আধুনিক পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য অংশ। হুয়াংহো নদীকে চৈনিক সভ্যতার সূতিকাগার বলা হয়। হাজার হাজার বছর ধরে হোয়াংহো এবং ইয়াংজি নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সভ্যতা মহামারীকে পেছনে ফেলে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছে। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

 

গ্রামের পর গ্রাম জনমানবহীন

ইতিহাসবিদ থুসিডাইডস এই মহামারী নিজ চোখেই দেখেছেন। এর নাম এপিডেমিক অব এথেন্স। এর ফলে গ্রামের পর গ্রাম জনমানবহীন করে দিয়েছিল। এ ব্যাপারে থুসিডাইডসের একটি মন্তব্য হলো- এই মহামারী এতটা ভয়ঙ্কর যে, ইতিহাসের আর কোনো মহামারী কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেও এর তুলনা চলে না! খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে স্পার্টানদের সঙ্গে গ্রিকদের যুদ্ধ চলার সময় এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল। স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার গ্রিক সৈন্য মারা যায় কয়েক দিনের ব্যবধানে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল প্লেগের সংক্রমণ। তবে এই প্লেগের ধরন নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। অন্যদিকে এথেন্সের প্লেগ মহামারী নিয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। এ মহামারীতে ঠিক কত মানুষ মারা গিয়েছিল তাই সঠিকভাবে বলা যায় না। ধারণা করা হয়, এথেন্সের প্রাচীন এই মহামারী নিজ থেকেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল। আক্ষরিক অর্থে, এথেন্সের প্রাচীন মহামারী সম্পর্কে আমরা যা কিছু জানি সবই গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডসের রচনাংশ ‘হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার’ থেকে পাওয়া। একদল ইতিহাসবিদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে এথেন্সে মহামারী হয়েছিল টাইফয়েড, টাইফাস জ্বর, গুটিবসন্ত কিংবা অ্যানথ্রাক্সে। তবে এ দলের বেশির ভাগ মনে করেন, মহামারী হয়েছিল গুটিবসন্তের জন্য। রোগটি ভেরিওলা ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রামক এ রোগটি একজন মানুষের ত্বকের সঙ্গে আরেকজনের স্পর্শে ছড়ায়। এমনকি বাতাসের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় এবং এ কারণে খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ এ গ্রিসের এথেন্সে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, যা ছিল ওই নগরের ২০ শতাংশ মানুষ। এক সময় মহামারী চলে গেলে আবারও শুরু হয় এথেন্সের নাগরিক কার্যক্রম। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। বেশির ভাগ ঐতিহাসিক এথেন্সকে আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তিভূমি বলে স্বীকার করেছেন। রোমান সভ্যতার ওপর গ্রিক সংস্কৃতির প্রচন্ড রকম প্রভাব ছিল, যা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক পৃথিবীর ভাষা, রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, দর্শন, শিল্পকলা এবং স্থাপত্যের ওপর গ্রিক প্রাচীন যুগের প্রভাব অপরিসীম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর