মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

অধিকাংশ হাসপাতালের নিবন্ধন নেই

গোপন আঁতাতে চলছে ব্যবসা নজরদারি নেই, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে চলছে চিকিৎসা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

অধিকাংশ হাসপাতালের নিবন্ধন নেই

খুলনা বিভাগের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই। অনলাইনে নিবন্ধনের নামমাত্র আবেদন করেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। অধিদফতরের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগও রয়েছে নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, খুলনা জেলায় বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে নিবন্ধিত হাসপাতাল ১১০টি। খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, শুধু মহানগরীতেই ৭৮টি ক্লিনিক ও ৮২টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে। একই ভাবে বিভাগে ছোট-বড় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে ৩শটির মতো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে। তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য মতে, খুলনা বিভাগের দশটি জেলায় হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ৬৮২টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৪৬৩টি। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৮৭০টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৫৩৬টি। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, নজরদারি না থাকায় নানা অনিয়মে ভেঙে পড়েছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা। এ অবস্থায় ১৬ জুলাই থেকে অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও কাগজপত্র না থাকায় নগরীর খানজাহান আলী রোডের মীম নার্সিং হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান ও সেটু কুমার বড়–য়া জানান, ক্লিনিকটিতে কোনো সার্বক্ষণিক চিকিৎসক বা নার্স নেই। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা (আয়া) নার্সের পোশাক পরে চিকিৎসা দেয়। চারপাশে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, অনেকটা গোডাউনের মতো। মেডিকেল প্রাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর বিধি অনুযায়ী ৫ দিনের মধ্যে এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মঞ্জুরুল মুরশিদ বলেন, শুধু খুলনা নগরীতে ১৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে এগুলোর মধ্যে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা আছে। নবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৩শটির মতো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে, ডায়াগনস্টিক প্যাথলজির নিবন্ধন ও নবায়ন ফি প্রায় ৪০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন নবায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর তা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। সারা দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকের চাপ তারা নিতে পারে না। এ কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে খুলনার ৭০ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা যায়নি।

সর্বশেষ খবর