সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
টাইম ম্যাগাজিনের চোখে

নিখোঁজ বিখ্যাতদের রহস্য

তানভীর আহমেদ

নিখোঁজ বিখ্যাতদের রহস্য

যার নাম শুনলে এখনো চোখ কপালে তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা

কিছু রহস্য মানুষকে যুগের পর যুগ ধরে ভাবায়। এ ভাবনার কোনো কূলকিনারা না পেয়ে মানুষ বিস্মিত হয়। রহস্যমানব ডিবি কুপার এমনই এক ব্যক্তি যার নাম শুনলে এখনো চোখ কপালে তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তার নিখোঁজ হওয়ার গল্প সিনেমা, রহম্য উপন্যাসের চেয়েও বেশি কিছু যেন। তাকে খুঁজতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত এফবিআই গোয়েন্দারাও ব্যর্থ। একটি  বোয়িং-৭২৭ বিমান হাইজ্যাক করার পর মাঝ আকাশে দুই লাখ ডলারসহ প্যারাসুট নিয়ে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেন কুপার। এরপর কী হলো, কোথায় গেলেন তিনি, সে রহস্য আজও অজানা। ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আমেরিকার পোর্টল্যান্ড এবং সিয়াটলের মধ্য আকাশে এ ঘটনা ঘটেছিল। বিজনেস এক্সিকিউটিভ পরিচয়ে বিমানে উঠেন ড্যান কুপার নামের এক  লোক। প্লেন ছাড়ার পর বিমানবালা ফ্লোরেন্স শেফনারের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন তিনি। তাতে লেখা, ‘আমার ব্রিফকেসে একটি বোমা আছে। তোমরা অপহরণকারীর কবলে পড়েছ। অতএব, চুপচাপ বসে থাক।’ তারপর ফ্লোরেন্সের মাধ্যমে বার্তা পাঠাল ক্যাপ্টেনের কাছে। বিমানের ৩৬ জন যাত্রীর বিনিময়ে তিনি মুক্তিপণ চাইলেন দুই লাখ ডলার। আর চারটি প্যারাসুট। কথামতো মুক্তিপণের ব্যবস্থা হলো। সিয়াটলে অবতরণের পর টাকা আদায় করে চারজন ক্রুসহ বিমান নিয়ে  মেক্সিকোর উদ্দেশে যাত্রা করেন কুপার। ধীরে ও কিছুটা নিচু দিয়ে বিমান চালানোর নির্দেশ দেন কুপার। তারপর ঝড়ো বাতাসের মধ্যে রাতের আঁধারে প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দেন কয়েক হাজার ফুট ওপর থেকে। ইতিমধ্যে পাঁচটি আলাদা বিমান থেকে ফ্লাইট ৩০৫-এর গতিপথের দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছিল, তারপরও সবার চোখ ফাঁকি দেন কুপার। সবার চোখের সামনে যেন স্রেফ বাতাসে মিলিয়ে গেলেন তিনি।  এরপর তার খোঁজে নামে মার্কিন পুলিশ, এফবিআই গোয়েন্দা ও মার্কিন সেনারা। পুরো এলাকায় চিরুনি তল্লাশি করেও  খোঁজ পাওয়া যায়নি কুপারকে। এমনকি সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রতিটি এলাকায় তল্লাশি চালায় মার্কিন গোয়েন্দারা। কিন্তু কেস বন্ধ হওয়া পর্যন্ত কিছুরই সন্ধান পায়নি এফবিআই  গোয়েন্দারা। ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বরের পর ড্যান কুপারকে আর কেউ দেখেনি। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ৪৫ বছর পর হাল ছাড়ে এফবিআই, বুঝতে পারে আর চেষ্টা করে লাভ  নেই। ডিবি কুপার রহস্য নিয়ে প্রচলিত আছে নানা ধারণা। ঘটনার পর চার দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে চলচ্চিত্র, বই, নাটক এমনকি গানেও এসেছে রহস্যময় ডিবি কুপারের চরিত্র।

 

আকাশেই নিখোঁজ অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট

১৮৯৭ সালের ২৪ জুলাই জম্মগ্রহণ করেছিলেন তুখোড় নারী পাইলট অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার ছিল নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনায় অসাধারণ সম্মিলন। একক উড্ডয়নের নানা পরীক্ষায় তিনি এভিয়েশনে আনেন বৈচিত্র্য। তার উড্ডয়নে পরীক্ষা হয়েছিল লকহেড ভেগা ৫বি। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যামেলিয়া পুরো বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট, যিনি একক উড্ডয়নে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। তার ক্যারিয়ারে সাফল্যের গল্পের কোনো কমতি নেই। আমেরিকার পাইলটদের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি ফ্লাইং ক্রস অর্জন করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া তার হাতে ছিল অনেক দুর্লভ ফ্লায়িং রেকর্ড। তার লেখা বই বেস্ট সেলিং হিসেবে চলেছিল বইয়ের বাজারে। ১৯৩৫ সালে তিনি যখন পেরুড বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহী নারীদের পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন তখন তার খ্যাতি আকাশছোঁয়া। মিডিয়ার মধ্যমণি ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই শুরু তার এক অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যাত্রা। আর রহস্যের শুরু এখানেই। বলা বাহুল্য, পাইলট হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে তিনি আকাশে ভেসে পড়েন। এ জন্য তিনি বেছে নেন লকহেড ১০ মডেলটি। যার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের ঘটনা। ধনী এই পাইলট আকাশে উড়ান বিমান। বিশ্বভ্রমণের কথা থাকলেও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আকাশে হারিয়ে যান তিনি। প্যাসিফিক মহাসমুদ্রের ওপর দিয়ে তখন তিনি হোল্যান্ড দ্বীপ পার হচ্ছিলেন। এখানে এসেই তার বিমান হারিয়ে যায়।

আজ পর্যন্ত এই দক্ষ ও খ্যাতিমান নারী পাইলট নিরুদ্দেশ হওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।

 

হারিয়ে মিথ হয়ে ওঠেন অ্যানাসতেসিয়া রোমানোভ

বলসেভিক বিপ্লবের সূত্র ধরেই রাশিয়ার রানী খুন হয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে ১৯১৭ সাল থেকেই। সে বছর অক্টোবরেই একাধিক নারী কিন্তু রোমানোভের পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। অ্যানাসতেসিয়া রোমানোভ তেমনই এক নারী, যিনি হারিয়ে গিয়ে মিথ তৈরি করেছেন লাখো মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে আনা অ্যান্ডারসনকে ঘিরেও অনেক কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। ১৯৯০ সালের দিকে অ্যান্ডারসনের ডিএনএ টেস্ট করে এ বিষয়ে পরিষ্কার ফলাফল বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অ্যানাসতেসিয়া বেঁচে রয়েছেন বলে লোকমুখে প্রচলিত থাকলেও তার অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। রাজপরিবারে এ ধরনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বভাবতই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। ১৯০১ সালে জম্ম নেওয়া অ্যানাসতেসিয়া রোমানোভ এমনই এক মিথ। টিসার-নিকোলাস দুইয়ের সবচেয়ে ছোট মেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু বিপ্লবের অঙ্গারে পুড়তে হয়েছে তার পরিবারকে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া পরিবারের সব সদস্যই গ্রেফতার হয়েছেন, মারা পড়েছেন, নয়তো অজানায় পালিয়ে গেছেন- এসবই গুজব হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বাস্তবে কী হয়েছিল তা একেকজন একেকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিপ্লব-পরবর্তী সময় রাজপরিবারের রক্ত শরীরে বইছে বা রাজপরিবারের সদস্য বলে বহু প্রতারকই হাজির হয়েছে সাধারণ মানুষের সামনে। কিন্তু সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছিল অ্যানাসতেসিয়া বেঁচে রয়েছেন এবং তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাওয় গেল না। একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া এক দুঃখী রাজকন্যা হয়ে মিথ হয়ে রইলেন তিনি।

 

কোথায় গেল লিন্ডবার্গ বেবি ?

১৯৩২ সালের এক গভীর রাতে চার্লস লিন্ডবার্গ তার স্ত্রীকে জানান, আনা, ওরা আমাদের বাচ্চাকে চুরি করেছে। স্ত্রী ছুটে যান বাচ্চার থাকার ঘরে। যে বিছানায় তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল সেখানে এক টুকরো কাগজ পড়ে রয়েছে। ‘স্যার, ৫০ হাজার ডলার প্রস্তুত রাখেন...’ ২০ মাস বয়সী বাচ্চাকে হারিয়ে বাবা-মা যখন পাগলপ্রায়, তখন সবাই খুঁজতে থাকে ঠিক কীভাবে বাচ্চাটিকে চুরি করা হয়। সেটা কী আদৌ সম্ভব ছিল নাকি বাচ্চাটি বাতাসে মিলিয়ে গেছে? তার বাবা চার্লস কিন্তু অপহরণকারীদের কথামতো টাকা পাঠিয়েছিলেন কিন্তু বাচ্চা ফেরত পাননি। তখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বাচ্চাটি কোথায়। জেনে যায় পুলিশ ও মিডিয়া। এই বাচ্চার জন্য পুরো দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। বাচ্চাটি কোথায় কেউ বলতে পারছে না। পোস্টার ছাপানো হলো। পোস্টারে ছেয়ে গেল পুরো শহর। খবরের কাগজে ছোট বড় খবর ছিল প্রতিদিন। কেউ খুঁজে পায়নি বাচ্চাটিকে।

 

ভার্জিনিয়া ডেয়ারের পুরো পরিবার উধাও

আমেরিকার বর্তমান নর্থ ক্যারোলিনা অঞ্চলে জম্মগ্রহণ করেছিল ভার্জিনিয়া ডেয়ার। ১৫৮৭ সালে জম্ম নেওয়া এই কন্যা কিন্তু খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই মিথ হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি রোনোক দ্বীপ ঘিরে। উত্তর ক্যারোলিনা থেকে ছেড়ে আসা এই দ্বীপ থেকেই হারিয়ে যায় এই মেয়েটি। এর আগে একটু জেনে নেওয়া দরকার, ভার্জিনিয়ার দাদা ইংল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। তখনো ভার্জিনিয়ার পরিবার অতটা সচ্ছল হয়নি। আর্থিক অসংগতি দূর করতে ভাগ্য ফেরানো মানুষের দলে নাম লেখাতে ইংল্যান্ডের দিকে যাত্রা শুরুর পর ভার্জিনিয়া বেশ কিছুটা একা হয়ে পড়ে। তখন ও একেবারেই শিশু। কিন্তু দ্বীপে তাকে চেনে না এমন কেউ নেই। ইংলিশ পরিবারের প্রথম সন্তান বলে কথা। ভার্জিনিয়া কলোনির নামানুসারে নাম রাখা হয়েছিল তার। কিন্তু এই নাম এত দ্রুত মিথে পরিণত হবে সেটা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। ভার্জিনিয়ার দাদা ঠিক তিন বছর পর ফিরে এসেছিলেন। ঘরে ফিরে তিনি রীতিমতো বোকা বনে যান। অবাক হয়ে দেখেন দ্বীপে কোনো মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই! শুধু ভার্জিনিয়ার পরিবার নয়, পুরো দ্বীপে যে ইংরেজ কলোনি ছিল তার কোনো হদিস নেই। এই অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখে তিনি নিশ্চিত হলেন হয়তো তার দ্বীপে ফিরতে কোনো ভুল হয়েছে। কিন্তু অচিরেই টের পান, না ঠিকানায় কোনো ভুল নেই। পুরো কলোনির মানুষ সমেত ভার্জিনিয়া হারিয়ে গেছে। ভার্জিনিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আজও পৃথিবীর অমীমাংসিত এক রহস্য হয়ে আছে। পুরো কলোনির মানুষ কোথায় হারিয়ে গেল সে নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে আধুনিক যুগেও। তবে এর উত্তর মেলেনি। অনেকেই দাবি করেছে, হয়তো কোনো দস্যুদলের আক্রমণে তারা মারা গেছেন বা পালিয়ে গেছেন।

 

সেই অ্যাবি হফম্যান

১৯৭১ সালে বেস্ট সেলার ‘স্টিল দিজ বুক’ প্রকাশের পর বই চুরির হিড়িক পড়ে যায়। নিউইয়র্ক থেকে ৩৬ হাজার ডলার মূল্যের কোকেইনসহ ধরা পড়ার পরও তিনি জামিন পান। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর বহু খোঁজাখুঁজি করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি...

ইয়ুথ ইন্টারন্যাশনাল পার্টি সংক্ষেপে ‘ইয়াপ্পি’ নামে প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার অ্যাবি হফম্যান। ১৯৬৮ সালের দিকে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে পুলিশের মুখোমুখি দাঁড়ান। এ ছাড়া আমেরিকান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদমুখর ছিলেন। এ নিয়ে তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়। তাকে অনেকেই পাবলিসিটি স্ট্যান্টের মাস্টার বলেও ডাকেন। মাদক রাখা, মাদক বিক্রি করা, ভাঙচুরে উৎসাহ দেওয়া ছিল তার বিরুদ্ধে নিত্যনৈমিত্তিক অভিযোগ। ১৯৭১ সালে বেস্ট সেলার ‘স্টিল দিজ বুক’ প্রকাশের পর বই চুরির হিড়িক পড়ে যায়। নিউইয়র্ক থেকে ৩৬ হাজার ডলার মূল্যের কোকেনসহ ধরা পড়ার পরও তিনি জামিন পান। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর বহু খোঁজাখুঁজি করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় সাত বছর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ছদ্মবেশ নিয়ে মানুষকে ফাঁকি দেন। সাত বছর তার ছদ্মবেশ ফাঁস হওয়ার পর তিনি আবার জনসম্মুখে আসেন।

 

অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সেই তিনজন

অ্যালকারাজ বন্দীশিবিরে শহরের কুখ্যাত অপরাধীদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। সিভিল যুদ্ধের এই অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। লিন্ডবার্গ অপহরণের পর এফডিআর অ্যাটর্নি জেনারেল এই দ্বীপের বন্দীদের ওপর বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানে জোর দেন। এখানেই বন্দী রাখা হয়েছিল ভয়ঙ্কর অপরাধী আল কেপোনোকে। কেলি, রবার্ট স্ট্রড কে ছিল না সেখানে। ষাটের দশক কাঁপানো অপরাধীদের এই বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে যায় ফ্রাঙ্ক, জন ও অ্যাঙ্গলিন। কারাগারে বাতাস চলাচলের রাস্তা ছোট ছুরি দিয়ে কাটতে শুরু করে তারা। দীর্ঘদিন কাটার পর সেখান থেকে বেরিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে। এরই মধ্যে তৈরি করে অন্য চেহারার মুখোশ। এই প্লাস্টিক মুখোশগুলো পরার কারণে তাদের সামনে থেকে দেখেও নিরাপত্তা প্রহরীরা চিনতে পারেনি। বাতাস চলাচলের পথ দিয়ে বের হয়ে তারা নেমে পড়ে সুড়ঙ্গে। সেখান দিয়ে তারা সোজা গিয়ে  পড়ে উপকূলে। আর সেখান  থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় তারা চিরতরে। কেউ কোনোদিন তাদের খোঁজ পায়নি।

 

মেক্সিকো ভ্রমণে গিয়ে কী হয়েছিল বায়ার্সের

আমেরিকান পত্রিকা সম্পাদনাকারী, সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন বায়ার্স। বিদ্রুপাত্মক ও ছোটগল্প লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘এন অকারেন্স অ্যাট আওয়েল ক্রিক ব্রিজ’ বইটি তার নামকে সমুজ্জ্বল করেছে। তার লেখার নিজস্ব ধরন তাকে অনন্য করেছে। লেখক হিসেবে তার যশ-খ্যাতি যতটা রয়েছে তার চেয়ে কম নয় একজন ভ্রমণকারী হিসেবে। ১৯১৩ সালের ঘটনা। বায়ার্স মেক্সিকোর দিকে যাত্রা করেছিলেন। তখন মেক্সিকান বিপ্লবের বারুদ ছড়িয়ে পড়েছে মেক্সিকোজুড়ে। সিভিল যুদ্ধের এই লগ্নে তার লেখায় ঝড়ত বিদ্রুপ বাক্য। তখন তার বয়স ৭১ বছর। তার চাচাত বোন লরাকে তিনি একটি চিঠি পাঠালেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘শুভ বিদায়। যদি তুমি জানো আমাকে মেক্সিকান পাথুরে ভূমিতে পিঠ ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে, তবে জেনে রেখ আমি মৃত্যুর জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছি। এটা জরা, ব্যাধি জয় করেছে যেমন করে আকাশের তারকার পতন হয়।’ এই চিঠিটিই শেষ লেখা তার। তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বায়ার্সের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেকে দাবি করে থাকেন তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার চিঠি সেরকমই ইঙ্গিত দেয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার চিঠি বলে দিচ্ছে, তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি নন বরং তিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন। এসব যে যাই বলুক আরেক দল মানুষ বলেছেন, এই চিঠি লেখার পরও তিনি বেঁচে ছিলেন এবং তার দেখা মিলেছিল। যাই ঘটে থাকুক না কেন এই সাংবাদিক ও বিখ্যাত লেখক কিন্তু ফিরে আসেননি। অজ্ঞাত কোনো কারণে থেমে গিয়েছিল তার কলম। মেক্সিকো ভ্রমণই ইতি টেনে দেয় তার জীবনের।

সর্বশেষ খবর