বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
Forbes এর দৃষ্টিতে

মৃত্যুর পরেও শীর্ষ ধনী তারকা

সাইফ ইমন

মৃত্যুর পরেও শীর্ষ ধনী তারকা

আসলে ‘প্রাণ’ এক আশ্চর্য সম্পদ, ক্ষয়হীন আশা, মৃত্যুহীন মর্যাদা। মানুষ মরে গেলেও থেকে যায় তার কাজের পরিধি। অনেকে বলেন, কর্মই জীবন। আর এ কর্মের মধ্য দিয়েই মানুষ অমরত্ব লাভ করে। এমনই কয়েকজন তারকা আছেন যারা তাদের কাজের মাধ্যমে শুধু মানুষের মনে চিরকাল গেঁথেই যাননি বরং তাদের কর্মের মাধ্যমে এখনো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে। গত কয়েক বছরের আয়ের ওপর ভিত্তি করে এমনই কয়েকজন তারকা নিয়ে আমাদের আজকের রকমারি...

 

মাইকেল জ্যাকসন

মাইকেল জ্যাকসন গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী সর্বকালের সবচেয়ে সফল এন্টারটেইনার। ২০০৯ সালের ২৫ জুন ৫১ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। জীবিত অবস্থাতেই আর্টিস্ট অব দ্য সেঞ্চুরি হয়েছেন। ১৩টি গ্র্যামিসহ একাধিকবার আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ বহু অ্যাওয়ার্ড এবং দেশ-বিদেশের অগণিত অ্যাওয়ার্ডস পেয়েছেন। যার দীর্ঘ সংগীতজীবনে আমেরিকার সব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টই কোনো না কোনোভাবে তার সঙ্গে সংযোগ রেখেছেন। যাতে তার অবিশ্বাস্য ভক্তকুল দ্বারা তাদের নির্বাচনী সমর্থন বাড়াতে পারেন। একমাত্র মাইকেল জ্যাকসনেরই আছে সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবামের রেকর্ড। জীবিত অবস্থায় তো  সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা তারকাদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেনই। মৃত্যুর পরও গত পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করছেন মৃত অবস্থায় সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা তারকাদের তালিকার শীর্ষে। পুরনো অ্যালবাম তো আছেই, তার ওপর নতুন মুক্তি পাওয়া গানের অ্যালবাম থেকে তার গত বছর আয় হয়েছে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

এলভিস প্রিসলি

এলভিস প্রিসলি ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার এবং অভিনেতা। তাকে কালচারাল আইকনও বলা যায়। তিনি এলভিস নামেই বহুল পরিচিত। তিনি রক অ্যান্ড রোল সংগীতের জনক। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেওয়া এলভিস কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি দারুণ অভিনয় করতেন। ১৯৭৩ সালে এলভিস স্টেজে একটি গান করেন। যা সে সময় প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট থেকে দেখানো হয়। সারা বিশ্বের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষ একসঙ্গে গানটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার রেকর্ডগুলোর প্রায় ৬০০ মিলিয়ন সংখ্যা বিক্রি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি জিতেছেন তিনটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড এবং গ্র্যামি লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। তার নামে রয়েছে এলভিস প্রিসলি মেমফিস এন্টারটেইনমেন্ট কমপ্লেক্স এবং একটি সদ্য খোলা হোটেল। যেগুলোর বাৎসরিক আয় ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখনো ইউটিউবসহ অন্য অনলাইন মাধ্যমগুলোতে তার গানের ভিউ হয় কোটি কোটি।

 

এলিজাবেথ টেইলর

ডেম এলিজাবেথ রোজমন্ড টেইলর ডিবিই বা লিজ টেইলর একজন ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ-মার্কিন অভিনেত্রী। তিনি তার অভিনয় প্রতিভা ও সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সেই সঙ্গে তার হলিউড জীবনপদ্ধতির জন্যও। যেমন অনেকগুলো বিয়ে করা। টেইলরকে হলিউডের স্বর্ণযুগের অন্যতম অভিনেত্রী হিসেবে ধরা হয়। তাকে তাই বলা হয় জীবনের থেকেও বড় তারকা। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট টেইলরকে তাদের নারী কিংবদন্তি তালিকায় ৭ম স্থানে রেখেছে। জীবিত অবস্থায় একটি সুগন্ধি সংগ্রহশালা ও গয়না কোম্পানি চালু করেছিলেন। এগুলোই তার উপার্জনকে এখনো চালু রেখেছে। আর বছর বছর সেখান থেকে আয় হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

আইনস্টাইন

একদিন আইনস্টাইনের বাবা তার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান, ভবিষ্যতে তার ছেলেটির কোন পেশা বেছে নেওয়া উচিত? শিক্ষক জবাব দিয়েছিলেন, যে পেশাই হোক, তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ কোনোটিতেই ও কিছু করতে পারবে না। সেই ছেলেই বড় হয়ে অসাধ্য সাধন করেন। বিজ্ঞান জগতে মহাবিপ্লব রচনা করেন। বিশ্ব ও জগৎ সম্পর্কে নিউটনের ধারণা যা প্রচারিত হয়ে আসছিল তা ভেঙে দেন। আবিষ্কার করেন ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ বা ‘আপেক্ষিক তত্ত্ব’। আইনস্টাইন মৃত্যুর আগে তার নাম ও ছবির স্বত্ব ধার দিয়ে গিয়েছিলেন ফোরিয়ার সিস্টেম নামের এক ইসরায়েলি টেক কোম্পানিকে। তার সব ব্যক্তিগত নথিপত্র, মেধা সম্পত্তির এবং তার ছবি ব্যবহারের অধিকার জেরুজালেমের এক হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন। গ্রিনলাইট নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব পরিচালনা করছেন। এসব মিলিয়ে প্রতিবছর আয় হয় কয়েক মিলিয়ন ডলারের মতো। তথ্যমতে ২০১৭ সালে এই টাকার অংক ছিল ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

জন লেনন

‘ইমাজিন দেয়ার ইজ নো হেভেন’ গানটি যিনি শুনেছেন তিনিই মজে গেছেন জন লেননে। বারবার শুনেছেন এ অসাধারণ গানটি। যারা আগে থেকেই রাখতেন লেননের খোঁজখবর তারা তো গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ফিরে গিয়ে খুঁজে ফেরেন বিটলসকে। ব্রিটিশ ব্যান্ডদল দ্য বিটলসের নাম শোনেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছেন। অনেকেই গুরু মানেন এ শিল্পীকে। ষাটের দশকে শুরু হওয়া বিখ্যাত এ ব্যান্ড মাত্র ১০ বছরেই যে পরিমাণ বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন করেছিল, আর এ বিটলসের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হলেন কিংবদন্তি জন লেনন। ১৯৮০ সালের দিকে এক বন্দুকধারীর হাতে মাত্র ৪০ বছর বয়সে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিল লেননকে। তবে লাস ভেগাসের সেই সার্ক দু সলিল শো আজও বাঁচিয়ে রেখেছে দ্য বিটলস আর জন লেননকে। সেখান থেকেই জন লেননের নামে ২০১৯ সালে জমা হয়েছে ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবছরই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় হয়। ফলে এ কিংবদন্তি জন লেনন প্রতিবছরই থাকেন শীর্ষ ধনী মৃত ধনী তারকার তালিকায়।

 

আরনল্ড পালমার

আরনল্ড পালমার একজন কিংবদন্তি গলফ খেলোয়াড়। বলা হয়ে থাকে গলফের মাঠগুলোকে যদি সাম্রাজ্য হিসেবে ধরা হয় তাহলে সেই সাম্রাজ্যের রাজা হলেন আরনল্ড ড্যানিয়েল পালমার। বিশ্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ গলফারদের একজন ছিলেন তিনি। এ কিংবদন্তি সবাইকে ছেড়ে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এখনো প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করে যাচ্ছেন এ গলফ কিংবদন্তি। তার নামে কাপড়ের ব্র্যান্ড বিশ্বজুড়েই নন্দিত। গোটাবিশ্বে চারশ’রও বেশি কলথিং স্টোর এখনো পালমার ব্র্যান্ডের কাপড় বিক্রি করে। ফোর্বসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর এ আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়।

 

বব মার্লে

তৃতীয় বিশ্বের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের নাম ‘বব মার্লে’। এই আধুনিক সময়ে এসেও বব মার্লেকে মানা হয় তারুণ্যের প্রতীক, বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে। এখনকার তরুণদের মধ্যেও বিশ্বব্যাপী তার গানের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। তার গানে তিনি অধিকার-বঞ্চিত মানুষের কথা বলেছেন সবসময়। ‘বাফেলো সোলজার’, ‘নো ওম্যান, নো ক্রাই’, ‘গেট আপ স্ট্যান্ড আপ’, ‘ব্ল্যাক প্রগ্রেস’-এর মতো অনেক ভুবন কাঁপানো গান দিয়ে সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করেছিলেন বব মার্লে। মৃত্যুর শেষ দিনগুলোতে তিনি চেয়েছিলেন তার প্রিয় জন্মভূমি জ্যামাইকাতে কাটাতে। শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য তাকে জ্যামাইকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শরীরের নাজুক অবস্থার কারণে ১৯৮১ সালের ১১ মে পথেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বব মার্লের বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। তবে মৃত্যুর এত বছর পরেও আজও মানুষ তাকে স্মরণ রেখেছে। আজও বিক্রি হচ্ছে তার রেকর্ডস, অডিও পণ্য এবং চালু আছে মার্লে বেভারেজ কোম্পানি। যেখান থেকে ২০১৯ সালে আয় হয়েছে ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

মেরিলিন মনরো

মূল নাম নর্মা জিন মর্টেনসন হলেও ইতিহাসে তিনি পরিচিত মেরিলিন মনরো নামে। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত আমেরিকান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, সংগীত শিল্পী ও মডেল। তিনি তার সময় তো বটেই, যে কোনো সময়ের জন্য শ্রেষ্ঠ যৌনাবেদনময়ী অভিনেত্রী ছিলেন। যার ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ১৯৫০ সালে অল অ্যাবাউট ইভ নামে চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় বিখ্যাত ছবি দ্য সেভেন ইয়ার ইটচ। সাম লাইক ইট হট ছবিতে অভিনয় করে তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। সাংসারিক শান্তি না মিললেও সংক্ষিপ্ত জীবনে তিন তিনবার বিয়ে করেন। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন মনরো। ধারণা করা হয়, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর ৬০ বছর পরেও এ তারকার আবেদন জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি। এখনো তার নামে বাৎসরিক আয় হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। গত বছর এ আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩ মিলিয়ন ডলার।

 

প্রিন্স

পপ সুপারস্টার, এক কথায় বলা যায় পপ জগতের কিংবদন্তি, ‘প্রিন্স’ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্স রজার্স নেলসন। এ তারকার ৩৯টি অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। ২০০৪ সালে ‘পার্পল রেন’ ছবির গানের জন্য অস্কার এবং ২০০৭ সালে ‘হ্যাপি ফিট’ ছবিতে ‘সং অব দ্য হার্ট’ গানটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সংগীতের এ বরপুত্রের বিভিন্ন অ্যালবামের প্রায় ১০০ মিলিয়নের মতো কপি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এই স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে পৃথিবীর সর্বকালের সেরা গায়কদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জীবিত অবস্থায় মিলিয়ন ডলার উপার্জন করা এ গায়ক মৃত্যুর পরেও উপার্জন করে চলেছেন। ২০১৯ সালে তার নামে জমা হয়েছে ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সর্বশেষ খবর