রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কারবালার শোকাবহ ইতিহাস

মোস্তফা কাজল

কারবালার শোকাবহ ইতিহাস

কুফায় তাজিয়া মিছিল

হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও শোকাবহ ঘটনা। ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের মতো এত দীর্ঘস্থায়ী এবং আহাজারি মুসলিম জাতি আর কোনো শাহাদাতের জন্য করেনি। সব শাহাদাতে মুসলমানদের শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অপূরণীয় ক্ষতি হলেও শোক ও আবেগের দিক দিয়ে ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত বেশি মর্মান্তিক। এমন শোকাবহ ঘটনা  যে, আগের এবং পরের যুগেও এর কোনো নজির নেই

ইয়াজিদের মসনদ দখল

আমিরুল মু’মিনিন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর বিছাল শরীফ-এর পর ইয়াজিদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। পরে তার মধ্যে সীমাহীন অহঙ্কার ও গর্ববোধের সৃষ্টি হয়। ফলে এমন কাজকর্ম শুরু করলেন, যা শরিয়তসম্মত নয়। তিনি বলতে লাগলেন, আমার পূজা ও আরাধনা কর। সে-ই রক্ষা পাবে যে আমার পূজা করবে। আর যে আমার পূজা করতে অস্বীকার করবে, তাকে আমি খতম করব। এ কারণেই তিনি অনেক লোককে হত্যা করেছিলেন। তিনি ক্ষমতায় আরোহণের পর হজরত ইমাম হুসাইন (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বাইয়াত তলব করলেন। একে তো তারা ছিলেন সাহাবি। সম্মানিত ব্যক্তি। বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বংশধরও ছিলেন তারা। তাই তারা কীভাবে ফাসিক-ফাজির ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করতে পারেন? সুতরাং তারা অস্বীকার করলেন।

অস্বীকার করার পর হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রা.) মদিনা শরিফ থেকে মক্কা শরিফে চলে গেলেন। হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) মদিনা শরিফের গভর্নর ওয়ালিদের আহ্বানে তার দরবারে তাশরিফ নিলেন।

আলোচনা করলেন। মদিনা শরিফের গভর্নর বললেন, ইয়াজিদ আপনার বাইয়াত তলব করেছেন। তিনি বললেন, ‘আমি ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করতে পারি না। ইয়াজিদ হলো ফাসিক। এ ধরনের লোকের হাতে আমি বাইয়াত করতে পারি না। ইমাম হুসাইন (রা.) অস্বীকারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করে দিলেন, হজরত ইমাম (রা.) শত কষ্ট-যাতনা ভোগ করতে পারেন। অনেক বিপদ-আপদের মুকাবিলা করতে পারেন। এমন কি আপন পরিজনের নির্দয়ভাবে শহীদ হওয়াটা অবলোকন করতে পারেন। নিজেও জালিমদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করতে পারেন। কিন্তু ইসলামের নিজাম বা বিধান ছত্রভঙ্গ হওয়া কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। নিজের নানাজান হাবিবুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীন ধ্বংস হওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। আল্লাহতায়ালার মনোনীত বান্দাগণের এটাই শান যে, বাতিলের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে যান। তীর-তলোয়ারের সামনে বুক পেতে দেন। কিন্তু কখনো বাতিলের সামনে মাথা নত করেন না।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর