রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রেসিং করেই ধনী হয়েছেন বিশ্বসেরা যত ড্রাইভার

তা ন ভী র আ হ মে দ

রেসিং করেই ধনী হয়েছেন বিশ্বসেরা যত ড্রাইভার

গাড়ির গতি প্রতিযোগিতা-রেসিং। রেসিং জগতের হিসাব-নিকাশ হাতের মুঠোয় রাখে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো। তাদের নিত্যনতুন প্রযুক্তির গাড়ির মডেল, ইঞ্জিনের উৎকর্ষ দিয়ে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর পরিবহনের একটা চিত্র পাওয়া যায়। এই কোম্পানিগুলো শুধু গতির গাড়িই তৈরি করে না, তাদের বিস্তর গবেষণা থাকে। বিশ্বসেরা চালকরা রেসিং ট্র্যাকে গতির ঝড় তোলেন। জীবনের ঝুঁকি থাকে তাদের। গাড়ি চালিয়ে তারকা বনে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের রয়েছে সম্পদের পাহাড়। রেসিং করেই তারা আয় করেন শত শত কোটি টাকা...

 

সবচেয়ে ধনী লুইস হ্যামিল্টন

চ্যাম্পিয়ন হওয়াই নেশা সম্পদ ২৮০ মিলিয়ন ডলার

মাত্র ৩৫ বছর বয়স। এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গাড়িচালক তিনি। ব্রিটেনের শীর্ষ ধনী খেলোয়াড় হ্যামিল্টন এফওয়ান রেসিং খেলে এই অঢেল সম্পদ গড়েছেন। এফওয়ান রেসিংয়ে তিনি সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। মোট ছয়টি ফর্মুলা ওয়ান প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্ম এই গাড়িচালকের। মা পুরোপুরি ব্রিটিশ হলেও বাবার দিক থেকে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। নিজেকে এখনো কৃষ্ণাঙ্গ বলেই দাবি করেন। স্কুলে সহপাঠীরা তাকে ভীষণ উত্ত্যক্ত করত। যে কারণে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তাকে কারাতে শেখানোর স্কুলে ভর্তি করা হয়। আত্মরক্ষার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় তখন কারও মাথায় আসেনি। তখনই সাইকেল চালানো শেখা হয় তার। গাড়ি চালানোর প্রতি তার আগ্রহ দেখে বাবা একটি রেডিও নিয়ন্ত্রিত গাড়ি কিনে দেন। সে সময় গতির স্বাদ পান হ্যামিল্টন। তবে প্রতিযোগিতায় নেমে কেউ ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারেননি- এই ছেলে জাত ড্রাইভার! জাতীয় একটি রেসিং প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। শুরু হয় তার পেশাদার রেসিং ক্যারিয়ার। গাড়ি চালানোর পাশাপাশি লরেল, রিবুক, মনস্টার এনার্জির মতো শীর্ষ কোম্পানির সঙ্গে তার চুক্তি রয়েছে। এসব থেকেই তার পাহাড়সম আয়।

 

ফার্নান্দো অ্যালানসো

এফওয়ান রেসিং ট্র্যাকের বিস্ময় তার সম্পদ ২২০ মিলিয়ন ডলার

মিনার্দি, রেনল্ট, ম্যাকলার্ন ও ফেরারি- গতির গাড়ির সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান অভিজাত তাদের গাড়ি চালিয়ে থাকেন ফার্নান্দো অ্যালানসো।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি গো-কার্ট রেসিংয়ে নাম লেখান। সেই বয়সেই তিনি সবাইকে চমকে দেন। ২০০০ সালের পর তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সবচেয়ে কম বয়সে এফওয়ান রেসিং জিতে তিনি ইতিহাস গড়েন। ২০০৫ ও ২০০৬ সালে পরপর দুই বছর ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়ে তৎকালীন সব ড্রাইভারকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বের ২৪তম শীর্ষ আয়ের অ্যাথলেট। তার জন্ম স্পেনে। মোট সম্পদ ২২০ মিলিয়ন ডলার।

 

মাইকেল সুমেখার

রেসিং জগতের বাদশাহর সম্পদ ৭৮০ মিলিয়ন ডলার

রেসিং জগতের বাদশাহ মাইকেল সুমেখার। ফর্মুলা ওয়ানকে রেসিংয়ে সেরা প্ল্যাটফরম মানা হয়। ফর্মুলা ওয়ানের ট্র্যাকের সবচেয়ে আপনজন ও সফল মানুষ তিনি। গতি দিয়ে তিনি যেমন সবাইকে বিস্মিত করেছেন, তেমনি গতিই যে শেষ কথা নয়- রেসিং জিততে ঠাণ্ডা মাথা আর ড্রাইভিংয়ে দক্ষতা দরকার, তা সবাইকে জানিয়েছেন। প্রতিযোগীরা যখন সময়ের গতি দানবযন্ত্রের ওপর ভরসা করতেন তখন মাইকেল সুমেখারকে খুঁজে নিত গাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলো। গাড়ির ইঞ্জিনকে শতভাগ কাজে লাগানোর কৌশল দেখিয়েছেন সুমেখার। জার্মানিতে জন্ম নিয়েছেন তিনি। বাবা প্রথম তাকে গাড়িতে বসিয়েছেন। বয়স তখন চার বছর। খেলতে খেলতে রেসিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়েন কিশোর সুমেখার। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েই জিতে নেন জুনিয়র কার্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করেছেন একের পর এক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেসিং প্রতিযোগিতায় নেমে। ১৯৯৫ সালের পুরো সিজনে তিনি একাই যেন গাড়ি চালিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে তার তারকাখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক ফর্মুলা ওয়ান জিতে নেওয়ার পর। মোট সাতটি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে রেকর্ড গড়েন তিনি। জর্ডান, বেনেট্রোন, মার্সিডিজ ও ফেরারির সঙ্গে জুটি গড়েছেন তিনি। সুমেখার এখন রিটায়ার্ড। গাড়ি চালিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করতেন তিনি। ২০০৫ সালে তিনি বিশ্বের প্রথম বিলিয়নিয়ার অ্যাথলেট হিসেবে রেকর্ড গড়েন।

 

কিমি রেখনান

হাইস্পিড ধরে রাখায় সেরা তিনি, সম্পদ ২০০ মিলিয়ন ডলার

২০০১ সালে রেসিং জগতে তিনি প্রতিযোগিতা শুরু করেন। গাড়ি ড্রাইভিংয়ে উচ্চগতি ধরে রাখায় পটু তিনি। এলোনসো ও মাইকেল সুমেখারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তাকে টিকে থাকতে হয়েছে। ফেরারির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। অনেকে তাকে চেনে আইসম্যান নামেও। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে রেসিংয়ে গতি রাখায় বেশ দক্ষ তিনি। মাথা ঠান্ডা রেখে গতি তুলে নেন সর্বোচ্চ। রেখনানের জন্ম ফিনল্যান্ডে। ২০০৭ সালে তিনি প্রথম ফর্মুলা ওয়ান জিতেছেন। ফেরারির সঙ্গে নাম জুড়িয়েছেন। ২০০৮ সালে ফোর্বস তাকে বিশ্বের ৩৬তম জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকা ও বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ আয়ের খেলোয়াড় হিসেবে তালিকা প্রকাশ করে। ১০ বছর বয়সে কার্ট চালিয়ে রেসিংয়ের যাত্রা তার। এরপর ১৫ বছর বয়সে মোনাকোতে প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেসিংয়ে নামেন। সেবার রেসিং ট্র্যাকেই তার গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ভেঙে যায়। তারপরও সেই গাড়ি চালিয়ে সবাইকে হতবাক করে দেন তিনি।

এলেন প্রোস্ট

কিংবদন্তি ফরাসি রেসিং ড্রাইভার সম্পদ ১৮৫ মিলিয়ন ডলার

ফর্মুলা ওয়ানের চারবারের চ্যাম্পিয়ন তিনি। তাকে এক সময় বিশ্বসেরা ড্রাইভার বলা হতো। ড্রাইভিংয়ে তার দক্ষতাকে অনেকেই মডেল হিসেবে দেখতেন। এই ফরাসি ড্রাইভারকে রেসিং জগতে কিংবদন্তি বলা হয়। উপার্জনের দিক থেকেও তিনি বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেন। তিনি প্রথম বিশ্বকে দেখান গাড়ি চালিয়ে বিশ্বসেরা ধনীদের কাতারে নাম লেখানো যায়। ম্যাকলার্ন, ফেরারি, রেনল্ট ও উইলিয়ামসের সঙ্গে জুটি বেঁধে রেসিং ট্র্যাকে নেমেছেন তিনি। রেসিং ট্র্যাকে তার গাড়ি এতটাই মসৃণ ও শান্তভাবে উচ্চগতিতে ছুটত তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। রেসিং ড্রাইভাররা তাকে ‘দ্য প্রফেসর’ বলেও ডাকতেন।

 

এডি আরভাইন

বিলাসী লাইফস্টাইল তার সম্পদ ১৮০ মিলিয়ন ডলার

তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮০ মিলিয়ন ডলার। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের এই রেসিং ড্রাইভার ফর্মুলা ওয়ান, ওয়ার্ল্ড ড্রাইভার চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গতির ঝড় দেখিয়েছেন। প্রায় ১০ বছর টানা রাজত্ব করেছেন রেসিং ট্র্যাকে। কখনো নিজেই শীর্ষে থেকেছেন, কখনো চ্যাম্পিয়নকে ফেলে দিয়েছেন বেকায়দায়। জাগুয়ার, ফেরারি, জর্ডান- শীর্ষগতির গাড়ি নির্মাতাদের আস্থা ছিল তার ওপর। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ফর্মুলা ফোর্ড চ্যাম্পিয়নশিপে গাড়ি নিয়ে নামেন তিনি। শুরু থেকেই গতি আর ড্রাইভিং দক্ষতায় তিনি সবার নজরে পড়েন। কিংবদন্তি রেসিং ড্রাইভারদের কাতারে নাম লেখিয়েছেন তিনি। তবে অবসরে যাওয়ার পরও খ্যাতি ও আলোচনায় রয়েছেন। কারণ বিলাসবহুল জীবন। জমি বেচাকেনার ব্যবসায় অঢেল সম্পদ বিনিয়োগ করেন। ফ্লোরিডায়    রয়েছে বিচ হাউস, ক্যারিবিয়ানে বিলাসী প্রাসাদতুল্য বাড়ি, ১৮ মিলিয়ন ডলারে কেনা প্রমোদতরীও আছে তার।              

 

জেসন বাটন

জুটি বেঁধেছেন সেরা গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গে সম্পদ ১০৫ মিলিয়ন ডলার

জেসন বাটনের রেসিং ক্যারিয়ার বেশ রঙিন। একের পর এক শীর্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জুটি বেঁধেছেন। যে কারণে তার খ্যাতি সাধারণ দর্শকদের কাছে যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে। আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তির গাড়ি রেসিংয়ে নামার আগে তার নামটাই অনেকের মাথায় প্রথম আসে। জেসন বাটনের জন্ম ইংল্যান্ডে।

এখন তার বয়স ৪০। এই বয়সেই তিনি জুটি বেঁধে রেসিং করেছেন উইলিয়ামস, বেনেট্টোন, ম্যাকলার্ন, ব্রওন, হোন্ডা, বিএআরের সঙ্গে। সাত বছরের আন্তর্জাতিক রেসিং ক্যারিয়ারে জিতেছেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১০ সালে ম্যাকলার্নের হয়ে রেসিং করবেন- এ খবর চাউর হয়। মিডিয়াতে তখন ফলাও করে জানানো হয়, তার সঙ্গে পার্টনারশিপ হচ্ছে সময়ের সেরা ড্রাইভার হ্যামিল্টনের। দুজনই সেরা ড্রাইভার, সঙ্গে ম্যাকলার্ন। সব মিলিয়ে মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়। সে বছর দলের হয়ে পঞ্চম হলেও, পরের সিজনে রানারআর্প হন তিনি।  আন্তর্জাতিক রেসিংয়ে নেমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান।  রেসিংয়ে প্রাইজমানি ছাড়াও বেতন ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে কাজ করে আয় করেছেন ১০৫ মিলিয়ন ডলার।

 

 

 

সর্বশেষ খবর