রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

উপমহাদেশের গুপ্তধন কাহিনি

সাইফ ইমন

উপমহাদেশের গুপ্তধন কাহিনি

গুপ্তধনের কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্লভ রত্ন পাথর, সোনা, হীরা, নগদ অর্থমুদ্রার সম্ভার। মাটির নিচে, সমুদ্রতলে এই অমূল্য সম্পদগুলো লুকায়িত থাকে। সময়ের পরিক্রমায় অনেক গুপ্তধনই উদ্ধার করা গেছে। তবে এখনো পৃথিবীর নানা প্রান্তে লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছে গুপ্তধন। বহু গুপ্তধনের কথা মানুষ পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জেনে এসেছে যা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলো নিয়ে প্রচলিত আছে নানা কাহিনি। আমাদের উপমহাদেশের গুপ্তধনের কাহিনি নিয়ে আজকের রকমারি...

 

সোন ভান্ডার, নানা সাহেবের খাজানা ও কড়ৈতলীর আঁধার মানিক

ভৈরব পর্বতের পাদদেশে দুটি গুহা নির্মাণ করেছিলেন ভৈরদেব নামে এক জৈন সন্ন্যাসী। পাহাড়ের গায়েই রয়েছে সেই গুহা, যার দেয়ালে দরজার মতো একটি কাঠামোও রয়েছে। আর তার পাশে এক অজানা ভাষায় লেখা রয়েছে কিছু। স্থানীয়রা মনে করেন, এই লেখনী পড়তে পারলেই সন্ধান পাওয়া যাবে লুকানো সোনার হদিস। ‘সোন ভান্ডার’ নামে এমনই দুটি রহস্যময় গুহা রয়েছে বিহারের রাজগীরে। দুটি গুহাই কৃত্রিম। সম্ভবত তৃতীয় বা চতুর্থ শতাব্দীতে খনন করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সোন ভান্ডারের দ্বিতীয় গুহার একটি দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে নানা ধরনের মূর্তি, যা মূলত জৈন তীর্থঙ্করদের।  প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ‘সপ্তপর্ণী’ গুহা রয়েছে সোন ভান্ডারের মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংরেজ আমলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছিল তারা, সোনার লোভে। পাহাড় ফাটিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইংরেজরা কোনো সোনার সন্ধান পায়নি। তবে অনেকে মনে করেন যে, গুহা দুটির পাথর এক এক জায়গায় এতও বেশি মসৃণ ও চকচকে যে সোনা বলে ভুল হতেই পারে।

এদিকে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক নানা সাহেব ব্রিটিশদের কাছে পরাজয়ের কিছু দিন পরই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। নানা সাহেবের সব সম্পদ ‘নানা সাহেবের খাজানা’ নামে পরিচিত। নানা সাহেবের অন্তর্ধানের পর তার বিপুল সম্পদের কোনো কিছুরই খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইতিহাসবিদদের মতে, নানা সাহেব কখনই বন্দী হননি, বরং তিনি তার সম্পদের বেশ কিছু অংশ নিয়ে নেপালে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও এই ধারণার কোনো প্রমাণ নেই। এত বছর পরও নানা সাহেবের সম্পদের গায়েব হওয়া রহস্যের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৭৫টি গ্রামের মধ্যে একটি গ্রামের নাম হলো কড়ৈতলী। আর এই গ্রামেই রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী এক জমিদারবাড়ি। যেখানে গুপ্তধন রয়েছে বলে ধারণা করেন অনেকে। কড়ৈতলী বাজারের দক্ষিণ কোণের পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই জমিদারবাড়ি, যা এখন সাধারণ মানুষের কাছে বাবুরবাড়ি নামেই বেশ পরিচিত। প্রায় আটশতক আগে বরিশাল জেলার অধিবাসী বাংলা ১২২০ সালে হরিশচন্দ্র বসু এই জমিদারবাড়িটির গোড়াপত্তন করেন। লোকমুখে কথিত আছে এখানে একটি আঁধার মানিক (গুপ্তধন রাখার ঘর) রয়েছে। জমিদারবাড়িটি ৩টি ভবন, একটি দুর্গা মন্দির, বাবুর দিঘি নামে একটি বিশাল দিঘি ও একটি দরবার হল নিয়ে গঠিত।

 

কৃষ্ণা নদীর নিচে হীরার খনি

প্রচলিত আছে যে, ভারতের কৃষ্ণা নদীর নিচে রয়েছে হীরার খনি। সবাই জানি অন্ধ্রপ্রদেশ হীরার জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের বিখ্যাত ১০টি হীরার ৭টিই পাওয়া গিয়েছিল এই অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন খনিতে। একসময় এই অঞ্চল ছিল গোলকুন্ডা শাহীর অন্তর্ভুক্ত। কৃষ্ণা নদীর অববাহিকার কোনো এক স্থানে বিশ্বখ্যাত গোলকুন্ডার হীরক খনিগুলো ছিল। এই কৃষ্ণা নদী ভারতের দীর্ঘতম নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। প্রায় ১৩০০ কিমি দীর্ঘ এই নদী মহারাষ্ট্র রাজ্যের মহাবালেশ্বর থেকে উ™ভূত হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে বইতে থাকে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের হংসলাঢিবি গ্রামের কাছে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। এই দুটি রাজ্য ছাড়া কর্ণাটক রাজ্যের ওপর দিয়েও এই নদী প্রবাহিত হয়। কোহিনূর, হোপ ডায়মন্ডের মতো বিখ্যাত হীরাগুলো পাওয়া গিয়েছিল কৃষ্ণা নদীর তীরের কোনো এক খনি থেকে। কিন্তু নদী তার দিক পরিবর্তন করায় খনিগুলো নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন সময়ে নানা স্থানে খননকার্য চালালেও সেই হীরার খনিগুলোর সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। এই নদীর বদ্বীপ অঞ্চল একসময় ভারতের সাতবাহন বংশ আর ইক্ষাকু সূর্যবংশের রাজারা শাসন করতেন। এই কৃষ্ণা নদীর পাশে সবচেয়ে বিখ্যাত শহরটি হলো বিজয়ওয়াদা। এ সময় কৃষ্ণা নদী মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক আর পশ্চিম অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে উর্বর জমি নিয়ে বদ্বীপ এলাকায় ফেলে।

এই কৃষ্ণা নদীর অববাহিকার কোনো এক স্থানে রয়েছে হীরার খনি। যা এখনো অনাবিষ্কৃতই রয়েছে নদীর দিক পরিবর্তন করায়। কিন্তু অনেক সময় এই নদীর হীরার খোঁজে অভিযান চালানো হলেও তা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। কোহিনূর, হোপ ডায়মন্ডের মতো বিখ্যাত হীরাগুলো কৃষ্ণা নদীর নিচে হারিয়ে যাওয়ায় এগুলো খুঁজতে মানুষকে আরও বেশি উৎসাহিত করেছে। হয়তো ভবিষ্যতে এই নদীর মাঝে হীরার খনি পাওয়া গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

 

৬৭০ কোটি টাকা মূল্যের খাজানা

ভারতের বেঙ্গালুরুর  সেন্ট মার্কস রোডের একটি ভবন প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো। ভিতরে পরিত্যক্ত কক্ষগুলোতে বেশ কিছু লকার রয়েছে। লকারগুলো কারও নামেও নয়। এমন তিনটি লকার ভেঙে পাওয়া যায় ৬৭০ কোটি টাকার সম্পদ।  শহরের অভিজাত এলাকার এই সড়কের পাশেই ধনীদের ক্লাব বোরিং ইনস্টিটিউট। ক্লাবের পরিত্যক্ত লকারগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন বিব্রত ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বারবার নোটিস দেওয়া হলেও কোনো সদস্যই লকার নিতে রাজি হয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়েই লকার ভাঙতে শুরু করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু লকার ভেঙে হতভম্ব হয়ে পড়েন তারা। ক্লাবের ব্যাডমিন্টন কোর্টের তিনটি লকার ভেঙে পাওয়া  গেছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭০  কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে আছে জমির দলিল,  সোনা ও হীরা, ৪ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা ও ২ কোটি ভারতীয় রুপি। ৬৯, ৭১ এবং ৭৮ নম্বরের লকারের মধ্যে এসব সম্পদ পাওয়া যায়। পরে অবশ্য স্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী অবিনাশ অমরলাল কুকরেজা সম্পদের মালিকানা দাবি করেন। তবে তার দাবি বিশ্বাস করেনি স্থানীয় আয়কর বিভাগ।

 

১৯ টন রুপা

ভারতে ২০০ বছরের পুরনো পুরি মঠে ৮৫ কোটি রুপি মূল্যমানের ১৭ টন রুপার গুপ্তধন পাওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পুরির এ পরিত্যক্ত মঠের পাশ দিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করলেও কারও চোখেই পড়েনি মূল্যবান এ সম্পদ। ধেনকানালে বরুন বড়াল নামে এক ব্যক্তি প্রায় ৩৫ কেজি ওজনের একটি রুপার খন্ড বিক্রি করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বরুন বড়াল জানান, তিনি এ রুপার খন্ড জগন্নাথ মন্দিরের ডানদিকে অবস্থিত ইমার মঠ থেকে চুরি করেছেন। পরে পুলিশ তার এ তথ্যের ভিত্তিতে ২০০ বছরের পুরনো ইমার মঠে যায় তল্লাশি করতে। তারা এ মঠে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি ওজনের ৫২২টি রুপার খন্ড পায়। যার ওজন প্রায় ১৭ টন। বর্তমান বাজার দরে এ রুপার মূল্য ৮৫ কোটি রুপি। রুপার খন্ড গুলো একটি তালাবদ্ধ কক্ষে চারটি কাঠের বাক্সে পাওয়া যায়।

 

সুলতান কুতুব শাহের খাজানা

ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের দর্শনীয় এক স্থাপত্য চারমিনার টানেল। চারমিনার ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত এই প্রাচীন মসজিদ ও সৌধটি হায়দ্রাবাদকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি ভারতের তালিকাভুক্ত সর্বস্বীকৃত একটি স্থাপনা। সুলতান মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহের তত্ত্বাবধানে মিনারটি নির্মিত হয়েছিল এই স্থাপনাটি। চারমিনার পুরনো হায়দ্রাবাদ শহরের মুসি নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্বকোণে লাদবাজার এবং পশ্চিম দিকে গ্রানাইটের তৈরি খুবই উচ্চ কারুকাজ সম্পন্ন মক্কা মসজিদ অবস্থিত। চারমিনার দুটি উর্দু শব্দ চার এবং মিনার এর সমন্বয়ে গঠিত। চারমিনারের নিচে একটি সুড়ঙ্গ আছে। অনেকে বলেন এই সুড়ঙ্গ দিয়ে গোলকুন্ডা দুর্গে যাওয়ার মতো ব্যবস্থা ছিল। কোনোরকম বিপদ এলে যাতে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়া যায় সেজন্যই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে সুড়ঙ্গটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এতে থাকা কোনো এক গোপন কক্ষে নাকি লুকিয়ে রাখা আছে প্রচুর ধনসম্পদ। এখন পর্যন্ত এই গুপ্তসম্পদের সন্ধান কেউ পাননি। ৪৮.৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই চারমিনারের উত্তরদিকে রয়েছে চার কামান বা খিলান। প্রত্যেকটি মিনারের মাথায় মুকুটের মতো সুন্দর কারুকাজ করে কাটা এবং প্রত্যেক মিনারের ভিত্তিতে ফুলের পাপড়ির মতো নকশা করা আছে।

 

জয়পুরের রাজা মানসিংহের লুণ্ঠিত সম্পদ

ইতিহাসবিষয়ক একটি বইয়ে বলা হয়েছে মানসিংহের লুণ্ঠিত সম্পদ নিয়ে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক (১৯৪৭-২০০৭) নামের বইটি সম্পাদনা করেছেন অবতার সিং বাসিন। বাসিন লিখেছেন, ১৯৭৬ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা চলার সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেনাবাহিনীকে গুপ্তধন খুঁজতে জয়গড় দুর্গে পাঠান। দুর্গটি জয়পুরের রাজপরিবারের সম্পদ। জনশ্রুতি ছিল, জয়পুরের রাজা এবং মুঘল বাদশাহ আকবরের সেনাপতি মানসিংহ কয়েকটি অভিযানের সময় সোনাদানাসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ আলাদা করে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরও এই লোককাহিনি প্রচলিত ছিল। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেফতার হন জয়পুরের রাজমাতা গায়ত্রী দেবী। ওই সময়টাকে জয়পুরের কথিত রাজকীয় সম্পদ খুঁজে বের করার সময় হিসেবে বেছে নেন ইন্দিরা গান্ধী। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি বলে যানা যায়। জয়পুরের রাজা মানসিংহ ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি। সম্রাট আকবর ১৫৮০ সালে আফগানিস্তানে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য মান সিংহকে দায়িত্ব দেন। মানসিংহ আফগানদের পরাজিত করে আফগানিস্তানকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধিকারে নিয়ে আসেন। আফগানিস্তান দখল করে মানসিংহ আফগানদের কাছ থেকে এবং আফগান রাজকোষ থেকে প্রচুর ধনরতœ নিজের অধিকারে নিয়ে নেন। সেই লুণ্ঠন করা সম্পদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

 

নিজাম মীর ওসমান আলীর ধনদৌলত

অবিভক্ত ভারতের হায়দ্রাবাদ নামক বিশাল রাজ্যের শেষ নিজাম ছিলেন মীর ওসমান আলী। ২০০৮ সালের ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রচ্ছদে এই নিজামকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ধনীদের মধ্যে পঞ্চম স্থান দেওয়া হয়। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১০.৮ বিলিয়ন ডলার। নিজাম থাকাকালীন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৪০-এর দশকের শুরুর দিকে নবগঠিত ভারতীয় ইউনিয়ন সরকারের কোষাগারের রিপোর্ট মোতাবেক বার্ষিক রাজস্ব ছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং বিখ্যাত নিজাম জহরত-এর সিংহভাগই উদ্ধৃত করা সম্ভব হয়নি। অনুমান করা হয় যে, হারিয়ে যাওয়া ধনদৌলত এখনো লুকিয়ে আছে কুঠি প্রাসাদের গুপ্ত কুঠুরিতে। ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি টাইম ম্যাগাজিনে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি বর্ণনা করে প্রচ্ছদে তার ছবি ছাপা হয়। ধারণা করা হয় যে, ১৯৬৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। ১৯১১ সালে মীর ওসমান আলী ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করেন। সে সময় রাজকোষ প্রায় শূন্য হতে চলেছিল। সাম্রাজ্যের পূর্বতন নিজাম মীর ওসমান আলীর পিতার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য রাজকোষের এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

 

সম্রাট জাহাঙ্গীরের খাজানা

মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭)। তিনি জয়পুরের রাজপুত রাজকন্যা ও সম্রাট আকবরের প্রথম পুত্র এবং তার আসল নাম সেলিম। তিনি তার পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে নূরউদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর উপাধি গ্রহণ করে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আগ্রার সিংহাসনে আরোহণ করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর পরবর্তীতে যখন ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন তখন ইংরেজরা সম্রাটকে দিল্লি থেকে নির্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরাজিত সম্রাট ইংরেজ সরকারকে অনুরোধ জানান তাকে যেন দিল্লি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানের আলওয়ার দুর্গে পাঠানো হয়। ইংরেজ সরকার সম্রাটের অনুরোধ রাখে। তারা সম্রাট জাহাঙ্গীরকে আলওয়ার দুর্গে নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, সম্রাট এখানে থাকাকালীন তার প্রচুর ধনরত্ন দুর্গের কোনো গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে সেই সম্পদের কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

তবে এখনো  সেই খাজানার এক-বৃহদাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

 

সম্রাট নাদির শাহের লুণ্ঠিত সম্পদ

পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ এসেছিলেন ভারত আক্রমণ করতে। এর কারণ ছিল বিচিত্র। তিনি মাত্র ৫৭ দিন ভারতে থেকে মুঘলদের শাসনভার আবার তাদের হাতেই ফিরিয়ে দিয়ে চলে যান পারস্যে/ইরানে। ১৭৩৯ সালে তার এই আক্রমণ চিরতরে বদলে দেয় ভারতবর্ষের ইতিহাস। ভেঙে  দেয় তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের চক্র। যার ওপর ভিত্তি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য সফল হতে শুরু করে। পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারতবর্ষ দখলের পর লুট করে নেন প্রচুর ধনসম্পত্তি।

নাদির শাহ ও তার সৈন্যরা যখন লুটের মালামাল নিয়ে ফিরছিল তখন প্রায় ১৫০ মাইল দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। জাহাঙ্গীরের ময়ূর সিংহাসন থেকে শুরু করে রাজকোষের সব সম্পদ নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি তার। ১৭৪৭ সালে নাদির শাহ যখন নিজ দেশে ফিরছিলেন যাত্রাপথে এক তাঁবুতে অবস্থানকালীন তাকে হত্যা করা হয়। নাদির শাহের মৃত্যুর আগে আহমদ শাহ সম্রাটের খাজানা কোথায় লুকানো আছে তার হদিস পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অনেকেই এই সম্পদের খোঁজ করেছিলেন কিন্তু সেই লুট করা সম্পদ আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

 

পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের ‘ভল্ট বি’

ভারতের কেরালায় অবস্থিত জগদ্বিখ্যাত শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির। এই মন্দিরে থাকা ধন-রতেœর অর্থমূল্য শুনলে যে কারও চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে ওই মন্দিরের যে কয়েকটি ভল্ট এখনো পর্যন্ত খোলা হয়েছে, তাতেই প্রায় ১ লাখ কোটি রুপির ধনসম্পদের হদিস মিলেছে। বস্তুত দক্ষিণ ভারতের কেরালায় হিন্দুদের এমন বেশ কয়েকটি মন্দির আছে যেগুলোর পাহাড়সম ধনসম্পদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি প্রচলিত। কিন্তু এগুলোর মধ্যেও নিঃসন্দেহে সবার আগে তিরুবনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দির। এই প্রাচীন মন্দিরটিকে অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ধর্মীয় উপাসনালয় বলে বর্ণনা করে থাকেন। এই মন্দিরে পাওয়া সম্পদের বাজারমূল্য ২২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের কাছাকাছি। শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের আসল আকর্ষণ এর ‘ভল্ট বি’। এই ভল্টটিকে ঘিরে রহস্য এবং কিংবদন্তির কোনো শেষ নেই। কারণ এটি এখনো খোলা হয়নি। তাই এই ভল্ট নিয়ে সবার আগ্রহ তুঙ্গে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়েছে ‘ভল্ট এ’-তে থাকা মূল্যবান সামগ্রীগুলো ঠিকমতো নথিভুক্ত করা গেলে তবেই খোলার অনুমতি দেওয়া হবে এ ভল্টটি।

সর্বশেষ খবর