সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যত কাহিনি

তানভীর আহমেদ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যত কাহিনি

ইলেকটোরাল কলেজ কী?

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতজন ইলেকটোর বা নির্বাচক থাকবেন তা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে। ফলে এই রাজ্যে ইলেকটোরের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৫। ছোট ছোট কিছু রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার আছে তিনটি করে ভোট। আলাস্কা এবং নর্থ ড্যাকোটা রাজ্যের হাতেও তিনটি করে ভোট আছে। কোন অঙ্গরাজ্যে কত ইলেকটোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে, তার মাধ্যমে। প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দুজন সিনেটরের জন্য দুটি ভোট বরাদ্দ থাকে। উদাহরণ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৩টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর মতোই সেখানে রয়েছে দুটি সিনেট আসন। ফলে অঙ্গরাজ্যটির মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫টি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারা দেশে ভোটারদের কাছ থেকে যে ভোট পান সেগুলোকে বলা হয় পপুলার ভোট। ইলেকটোরাল কলেজের ভোটকে বলা হয় ইলেকটোরাল ভোট। কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান। এই বিষয়টি লক্ষণীয়। ধরা যাক, টেক্সাস রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী যদি ৫০.১% ভোট পান, তাহলে ওই রাজ্যের ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট সব তারা পাবেন। ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সব রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

 

ইলেকটোরাল ভোট সমান হলে

ইলেকটোরাল ভোট সমান হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছিল ১৮০০ সালে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন থমাস জেফারসন ও এরোন বার। উভয় প্রার্থী তখন ৭৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে নতুন একটি প্যারা সংযোজিত করতে হয়েছিল। যেখানে বর্তমানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে জটিলতা নিরসনের পদ্ধতির কথা বলা আছে। কোনো কারণে উভয় প্রার্থীর হিসাবে ২৬৯ করে ইলেকটোরাল ভোটের হিসাব জমা হলে কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষে ভোট হবে। প্রতিনিধি পরিষদে ৪৩৫ জন সদস্য। সহজেই একজনের পক্ষে বেশি ভোট পাওয়ার কথা। এখানেও সামান্য সমস্যা আছে। এমন ভোটে প্রতিনিধি পরিষদের প্রতিজন সদস্যের একটি করে ভোট নয়, প্রত্যেক রাজ্যে পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনুযায়ী একটি করে ভোট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মেরিল্যান্ড রাজ্য থেকে সাতজন ডেমোক্র্যাট আছেন প্রতিনিধি পরিষদে। আছেন একজন রিপাবলিকান সদস্য। এ ক্ষেত্রে ম্যারিল্যান্ডের ভোটটি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে চলে যাবে। ফ্লোরিডা রাজ্যে ১৩ জন ডেমোক্র্যাট ও ১৪ জন রিপাবলিকান আছেন প্রতিনিধি পরিষদে। ইলেকটোরাল ভোটের সমান সমান অবস্থার অবসানে ভোট দিতে হলে ফ্লোরিডার একটি ভোট চলে যাবে রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক লোকের বসবাস ১০টি অঙ্গরাজ্যে। ইলেকটোরাল ভোটের সমান সমান অবস্থার অবসানে মাত্র ২০ শতাংশ ভোট এই রাজ্যগুলো দিতে পারে। ইলেকটোরাল ভোটের সমান সমান অবস্থার অবসানে আরও জটিলতা রয়েছে। এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের ভার পড়বে সিনেটের (কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ) ওপর। এমন হলে প্রেসিডেন্ট পদে এক দলের প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভিন্ন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

 

বেশি ভোট পেয়েও পরাজয় কেন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ইলেকটোরাল ভোট চাই। সাধারণ জনগণের পপুলার ভোট বেশি কিন্তু দেশজুড়ে ইলেকটোরাল ভোট কম পেলে প্রার্থী পরাজিত হন। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির এই দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০০ সালে জর্জ বুশ নির্বাচনে ফ্লোরিডার ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে হওয়া জটিলতার কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। সে নির্বাচনে সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েও ওভাল অফিসে বসতে পারেননি ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী আল গোর।

২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ক্লিনটন প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। মোট ভোটের হিসাবে এটি ছিল ২ শতাংশের চেয়ে বেশি। অথচ তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে মাত্র ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।

ফলে ওই তিন অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান ট্রাম্প। হিলারি পরাজিত হন। এই পদ্ধতিতে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য অন্যগুলোর তুলনায় বেশি ক্ষমতা পায়। এর কারণে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক, ইলিনয়, পেনসিলভেনিয়াÑএই ছয় অঙ্গরাজ্যের হাতেই রয়েছে ১৯১টি ইলেকটোরাল ভোট। ‘উইনার টেক ইট অল’ নীতির কারণে এই ছয় অঙ্গরাজ্য তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

মঙ্গলবারেই কেন ভোট হয়

কৃষিকাজের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নির্বাচনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ ওই সময় ফসল কাটা হয়ে যায় এবং কৃষকের হাতে অফুরন্ত সময় থাকে...

প্র্রতি চার বছর পর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার ভোটগ্রহণের জন্য বেছে নেওয়া হয়। ১৮৪৫ সাল থেকে এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। ইতিহাস বলছে, প্রথমে রবিবার ভোট গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছিল। তবে রবিবার ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। সেদিন সবাই গির্জায় যায় সাপ্তাহিক প্রার্থনায় অংশ নিতে। তারপর ঠিক করা হয় সোমবার। তবে সাপ্তাহিক ছুটির পরদিন ভোটের সিদ্ধান্তও বাতিল হয়ে যায়। কারণ উনিশ শতকের মাঝামাঝি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। দূর-দূরান্তের মানুষকে পর্যাপ্ত সময় দিতে অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবারই ভোট গ্রহণ করা হবে। যে দিনই নির্বাচন হোক তাতে যেন ডিসেম্বরের প্রথম বুধবারের আগে ৩৪ দিনের ব্যবধান থাকে এমন একটি বিধান রেখে ১৭৯২ সালে আইন পাস হয়। মূলত কৃষিকাজের সুবিধার কথাটি বিবেচনায় রেখে নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহটা নির্বাচনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ ওই সময় ফসল কাটা হয়ে যায় এবং কৃষকের হাতে অফুরন্ত সময় থাকে।

 

যেন টাকা খরচের উৎসব

এবার হোয়াইট হাউস, সিনেট ও কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার লড়াইয়ের ব্যয় গিয়ে পৌঁছাবে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির কারণে নির্বাচনী ব্যয় বিশাল অংক ছুঁয়েছে। এবারও এসেছে কালো টাকা। নির্বাচনে অস্বাভাবিক টাকার প্রবাহকে বলা হয় ‘ডার্ক মানি’। অলাভজনক বিভিন্ন সংস্থা কিংবা নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া দাতাদের অর্থই ডার্ক মানি হিসেবে পরিচিত। সেন্টার ফর রেসপনসিভ পলিটিকসের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যকার লড়াইয়ে খরচ হবে প্রায় ৬৬০ কোটি ডলার। এই ব্যয় বাড়ার নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে উভয় দলের দাতাদের। অনলাইন ও ছোট ছোট দাতার সংখ্যা বাড়তে থাকাই প্রচার শিবিরের তহবিল বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। একই সময়ে শত শত কিংবা লাখ লাখ কোটি ডলারের মালিকরাও উদারভাবে প্রচার শিবিরগুলোতে অর্থ দিয়েছেন। সংগ্রহ করা তহবিলের বড় অংশই যাচ্ছে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের ব্যয়ে। বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডভার্টাইজিং অ্যানালিটিকসের হিসাবে, এই বছর কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেই ব্যয় হচ্ছে ১৮০ কোটি ডলার। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি সিনেট আসনের নির্বাচনের আটটিই ২০২০ সালে। এর মধ্যে রয়েছে নর্থ ক্যারোলিনা। অঙ্গরাজ্যটির দুই প্রার্থী সিনেট সদস্য রিপাবলিকান থম টিলিস এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কাল কানিংহাম ইতিমধ্যে ২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ করে ফেলেছেন। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ও তাদের মিত্ররা এই বছর ৫৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে ফেলেছেন। এর তুলনায় রিপাবলিকানদের ব্যয় ৩৮০ কোটি ডলার।

 

কীভাবে কাজ করে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার শর্ত

ক) জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক খ) বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর গ) যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এই শর্তগুলো পূরণ হলে যে কেউ মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়াই করতে পারবেন।

 

ধাপ ১ : প্রাইমারি ও ককাস

অনেক মার্কিন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামার আগ্রহের কথা জানান। রাষ্ট্র পরিচালনায় কতটা যোগ্য ও দেশের সেবায় তিনি কতটা আত্মনিবেদিত সেটাই তারা প্রচার করেন। মার্কিন নির্বাচনী লড়াইয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দল সবচেয়ে প্রভাবশালী। সাধারণত এই দুটি দল থেকেই যোগ্য রাজনৈতিক নেতা মার্কিন নির্বাচনে লড়াইয়ে নামেন।

ককাস দলের নিবন্ধিত ভোটার ও কর্মীদের সভা। পার্টি মেম্বার বা নিজ দলের সদস্যরা আলোচনা ও ভোটের মাধ্যমে কাউন্টি পর্যায়ে তাদের দলের একজনকে প্রথমে মনোনীত করেন। ককাস জেতার পর সেই প্রার্থী নিজ দলেই প্রাইমারি নির্বাচনে নামেন।

এবার দলীয় সদস্যরা জাতীয় সাধারণ নির্বাচনে কে লড়বেন সেটি ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করেন। প্রাইমারি হচ্ছে প্রথাগত নির্বাচন, যেখানে দিনব্যাপী গোপন ব্যালটে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রাইমারিতে বিজয়ী প্রার্থী নিজ দলের ওই রাজ্যের প্রতিনিধিদের জাতীয় সম্মেলনে তার পক্ষে ভোট দিতে নিয়ে যান। ককাস ও প্রাইমারি দুই পর্যায়ে যে প্রার্থী মনোনীত হন তিনি সাধারণ নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেন।

 

ধাপ ২ : জাতীয় সম্মেলন

রাজনৈতিক দলগুলো ককাস ও প্রাইমারি পর্যায়ে তাদের যে প্রার্থীকে বাছাই করেছেন তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সময় দেশজুড়ে রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থীর জন্য ভোট চান, প্রচারণা জোরদার করেন। রাজনৈতিক দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী মার্কিন নির্বাচনী লড়াইয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করেন।

নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার সহযোগী, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজনকে বাছাই করেন। তার নির্বাচনী এই সহযোগীকে বলা হয় রানিংমেট। রানিংমেট সাধারণত ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করেন ও তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দুজন মিলে দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা, সভা, মিছিল করেন। এ সময় তারা নির্বাচিত হলে দেশ ও দেশের নাগরিকদের কল্যাণে কী ভূমিকা রাখবেন সেসব প্রচার করে ভোট আদায়ের চেষ্টা করেন। সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রার্থনা ও সমর্থন আদায়ে সভা, প্রচারণার পাশাপাশি নির্বাচনী বিতর্ক দেশটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

 

ধাপ ৩ : সাধারণ নির্বাচন

মার্কিন ভোটাররা সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন না। তারা ভোট দেন একজন ইলেকটোরকে। সাধারণ ভোটারদের ভোটকে বলা হয় পপুলার ভোট।

 

ধাপ ৪ : ইলেকটোরাল কলেজ

যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট থাকে। ওই অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজে কতগুলো ইলেকটোরাল ভোট থাকবে তা নির্ধারিত হয় সেখানকার হাউস অব কংগ্রেস ও রিপ্রেজেন্টেটিভের সংখ্যার ওপর। অঙ্গরাজ্যগুলোতে দুই সিনেটর ও যতগুলো জেলা রয়েছে প্রতিটিতে একজন করে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ থাকেন। এই সংখ্যা দুটি যোগ করে সে রাজ্যের মোট ইলেকটোর সংখ্যা জানা যায়। অঙ্গরাজ্যে পপুলার ভোটে জয়ী যে দলের ইলেকটোর এগিয়ে থাকেন, ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোর ভোট সেই দল পেয়ে যায়। ইলেকটোরদের এই দলকে বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ।

 

ধাপ ৫ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট জিততে হয়। ইলেকটোরাল কলেজ ভোটাভুটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করে। জানুয়ারি মাসে শপথ গ্রহণ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

 

মহাকাশ থেকেও পড়েছে ভোট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মহাকাশ থেকেও পড়েছে ভোট। এক মহাকাশচারী তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তার নাম কেট রুবিনস। তিনি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের বুথে গিয়ে ভোট দেন। সেই ভোটদানের একটি ছবি নাসার পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে ২৩ অক্টোবর। এই কেট ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়েছেন দুই রুশ মহাকাশচারীর সঙ্গে। তিনি সেখান থেকে ফিরবেন ৩ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। ফলে তাকে স্পেস স্টেশন থেকে ভোট দিতে হলো। নাসার পক্ষ থেকে যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওই স্পেস স্টেশনের একটি ভোটিং বুথ তৈরি করা হয়েছে। তার বাইরে কেটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৬ সালেও কেট আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে ভোট দিয়েছিলেন। এভাবে মহাকাশ থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত আইন ১৯৯৭ সালে পাস হয়েছিল। এক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার জন্য ইমেইল মারফত একটি ফরম পাঠানো হয়। সেটি পূরণ করে ফেরত পাঠিয়েছেন কেট।

 

এবার নির্বাচনে দুই বুড়ো প্রার্থী

 

ট্রাম্পের বয়স ৭৪

২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিক দল থেকে এবার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি নির্বাচন করছেন। এখন তার বয়স ৭৪ বছর। সম্প্রতি করোনার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সারা বছরই নানা মন্তব্য করে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম থাকেন তিনি। আগ্রাসী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তার ভূমিকা নিয়ে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

নারীদের নিয়ে কটূক্তি, সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝগড়া ও ভুলভাল তথ্য দিয়ে পরে অস্বীকার করার বহু ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংকট ছিল শীর্ষে। তার নির্দেশে ইরানের শীর্ষ জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংকট তৈরি করেন। কিছু দিন আগে ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেসকে একটি সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। নির্বাচনে হারলেও ফলাফল মেনে গদি না ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

 

 

বাইডেনের বয়স ৭৭

ডেমোক্র্যাট দল থেকে মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেনের বয়স এখন ৭৭ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। সম্প্রতি তার হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশ্বের শীর্ষ জরিপ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বরাবরই জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনকে এগিয়ে রাখছেন।

ট্রাম্পের আগ্রাসী ভূমিকা ও মন্তব্যে বিরক্ত মার্কিনিরা বাইডেনকে পছন্দের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন। ইরানের শীর্ষ জেনারেলকে হত্যা, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন ও সর্বশেষ করোনায় দুই লাখের বেশি নাগরিকের মৃত্যু ট্রাম্পের ব্যর্থতা বলে প্রচার করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, ব্যবসায় মন্দা ও জনসাধারণের আর্থিক দুরবস্থার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করে বাইডেন ভোট চাইছেন।

 

 

দুই দলের প্রতীক গাধা ও হাতি হলো যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রতীক হাতি ও ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতীক গাধা। ডেমোক্র্যাটদের গাধা হলো সহিষ্ণুতার প্রতীক আর রিপাবলিকানদের হাতি হলো বল ও শক্তির প্রতীক। মার্কিন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক আঁকেন শিল্পী থমাস ন্যাস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতীক হাতি ও গাধাকে কেন বেছে নেওয়া হলো, এই প্রশ্ন অনেকেরই আছে। ১৫০ বছর আগে দেশটির রাজনীতিতে কার্টুন ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাধা প্রতীকটি প্রথম ব্যবহার করেন আমেরিকার সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে ‘জ্যাকঅ্যাস’ অর্থাৎ গাধা বলে ডাকা শুরু করেন। বিদ্রূপ করে ডাকা হলেও জ্যাকসন নামটি খুব পছন্দ করেন এবং বিরোধী দলের অপপ্রচারের সুযোগকেই কাজে লাগান নিজের প্রচার হিসেবে। আর গাধাকে তিনি নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। তখন কার্টুনশিল্পী থমাস ন্যাস্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের মাথায় একটি গাধার (জ্যাকঅ্যাস) শরীরের ওপর বসিয়ে কার্টুন আকেন। পরবর্তী সময়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্য নেতাদেরও প্রতীক হয়ে ওঠে গাধা। সেই থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় প্রতীক হিসেবে গাধা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অন্যদিকে ১৮৭৪ সালে থমাস ন্যাস্ট হাতিকে রিপাবলিকানদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি তার কার্টুনে দেখান, সিংহের চামড়া পিঠে চাপিয়ে একটি গাধা বনের সব প্রাণীকে ভয় দেখাচ্ছে। সিংহের ছদ্দবেশী সেই গাধাকে দেখে সবাই ভয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু সবাই ভয়ে পালালেও বনে একটি হাতি স্থির ও অচঞ্চল গাধাটির সামনে। হাতির এই নির্ভীক বিষয়টিই তুলে ধরেন কার্টুনশিল্পী। থমাস ন্যাস্টের এমন অর্থবহ কার্টুন দারুণ পছন্দ হয় রিপাবলিকানদের। আর হাতির সেই কার্টুন লুফে নেয় রিপাবলিকানরা। আর সেই থেকে হাতি হয়ে ওঠে রিপাবলিকান দলের প্রতীক।

 

ডাকে ও কেন্দ্রে গিয়ে দেওয়া যায় আগাম ভোট

এবারের নির্বাচনে বেশ আলোচিত হচ্ছে আগাম ভোটের বিষয়টি। ভোটাররা চাইলে ঘরে বসে ডাকযোগেই ভোট পাঠিয়ে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকর্মীরা ব্যালট পাঠিয়ে দেন ভোটারের বাসায়। ভোট দিয়ে সেই ব্যালট পাঠিয়ে দিতে পারেন ডাকযোগে। আগাম ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে বড় বড় শহরগুলোতে অসংখ্য ড্রপ-ইন বক্স বসানো হয়েছে। নির্বাচন কর্মীরা এসব ব্যালট খুলে গণনা করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে নিজের আগাম ভোট দিয়ে আসতে পারেন ভোটাররা। নির্বাচন বুথে ভোট দেওয়ার সুবিধা হলো এক্ষেত্রে ডাকে ব্যালট গ্রহণ ও পাঠানোর আলাদা ঝামেলা নেই। সাধারণত নির্বাচনের দিন নির্বাচন কেন্দ্রে ভিড় বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভোটারকে। এ ছাড়া এ বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগাম ভোট দিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যে কারণে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে এবার। গতকাল পর্যন্ত ৯ কোটি ১৬ লাখ আগাম ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

 

আগাম ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে বড় বড় শহরে বসানো হয়েছে অসংখ্য ড্রপ-ইন বক্স

সর্বশেষ খবর