রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বগুড়ায় রোগী বাড়ায় সংকট হাসপাতালে

হাসপাতালগুলোতে ভিন্ন চিত্র থাকলেও এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আর স্বাভাবিক হতে গিয়েই হাসপাতাল দুটি রোগীদের চাপে পড়ে আছে। বেড়েছে সরকারি ওষুধের চাহিদাও

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় চিকিৎসা সরঞ্জামসহ নানা সংকটে জেলার দুটি সরকারি হাসপাতাল। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনসেবা দিতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে হাই ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট, করোনাকালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক মাল্টিপারপাস ভবন, বাড়ানো হচ্ছে চিকিৎসকদের জন্য নানা সুবিধা। এদিকে করোনাকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী খুব কম থাকলেও এখন বেড়েছে কয়েক গুণ। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতালগুলোতে ভিন্ন চিত্র থাকলেও এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আর স্বাভাবিক হতে গিয়েই হাসপাতাল দুটি রোগীদের চাপে পড়ে আছে। বেড়েছে সরকারি ওষুধের চাহিদাও। রোগীদের চাপের কারণে এক্সরে, ইসিজিসহ নানা পরীক্ষায় সময় লাগায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে যেন রোগীদের দুর্ভোগ কমে যায়। জানা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০ শয্যার হলেও করোনাভাইরাসের আগে রোগী ভর্তি থাকত প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জন। রোগীরা বেড না পেয়ে হাসপাতলের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিত। ফলে ৫০০ শয্যার জনবল নিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হতো এই হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব জনবলকে। মার্চ মাসে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন ভর্তি ছিল। আগস্ট মাসের শেষ থেকে রোগীর চাপ আবারও বাড়তে থাকে। নভেম্বর মাসে এই রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯ জনে। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য মেশিনপত্র সচল রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। বর্তমানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী সেবা নিচ্ছে। হাসপাতালে আইসিইউ পাঁচটি, সিসিইউ ৭৫টি বেড রয়েছে। বগুড়া জেলায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়। একেবারে অপ্রস্তুত এই হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসাসেবা দিয়ে কর্মকর্তা, চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্য কর্মচারী সবাই প্রশংসিত হন। এই হাসপাতালে মধ্য মার্চ থেকে বহির্বিভাগ বন্ধ করার পর আবারও খোলা হয়েছে। এখন হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার রোগী সেবা নিচ্ছে। করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে গাইনি বিভাগ, ইএনটি, চক্ষু ও সার্জারি বিভাগ খোলা হয়েছে। খোলার পর থেকে এসব ওয়ার্ডে রোগীও ভর্তি হয়েছে। ভালো সেবার স্বাক্ষর রাখলেও এখনো রয়েছে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকট। এই সংকটের মধ্যেই এই হাসপাতালে একদিকে চলছে করোনা রোগীর সেবা অন্যদিকে চলছে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা। করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে রোগীদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করা হতো। সেই সংকট দূর করতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই কাজটি শুরু হবে হাসপাতালে। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৯৪ জনের। নিয়োগ রয়েছেন ১৩৯ জন। বাকি পদ ফাঁকা রয়েছে। এভাবে অন্য সব কর্মচারীর পদেও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। জনবল সংকট নিয়েই দ্বিগুণ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। ১ হাজার ২০০ বেডের অনুমোদন পাওয়া গেলেও জনবল অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খাইরুল বাসার মোমিন জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। হাসপাতালের গাইনি ও সার্জিক্যাল বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানেও রোগী ভর্তি হচ্ছে। সম্প্রতি একটি অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করার অনুমতি পেয়েছে হাসপাতালটি। করোনা রোগীদের জন্য এই অক্সিজেন প্লান্ট হাই ফ্লো হওয়ার কারণে চিকিৎসায় খুবই কাজে দেবে।

সর্বশেষ খবর