রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গাইবান্ধায় বেহাল চিকিৎসাব্যবস্থা

পুরো হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন। পোস্ট অপারেটিভ রুম এবং করিডরগুলো ব্যবহার হচ্ছে স্টোর হিসেবে। অকেজো যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও আসবাবগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখায় চলাচলের রাস্তাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

গত ২২ মার্চ গাইবান্ধায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। যে কারণে মানুষ নানা অসুখ-বিসুখেও চিকিৎসা নিতে গাইবান্ধা সদরের জেনারেল হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন। ফলে প্রায় রোগীশূন্য হয়ে পড়েছিল এই হাসপাতাল। কিন্তু বর্তমানে মানুষের করোনাভীতি কেটে যাওয়ায় আবার হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে একদিকে চিকিৎসক সংকট অন্যদিকে নানা অব্যবস্থাপনায় রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে এক বছরের বেশি সময় ধরে মেডিসিন বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। অথচ মেডিসিন চিকিৎসকের খোঁজেই বেশির ভাগ রোগী হাসপাতালে এসে থাকেন। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে এখানে ১০টি বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। সার্জারি, ইএনটি, চক্ষু, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট পদগুলো দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য। জেলার ২৫ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর আধুনিক চিকিৎসার জন্য ২০০৩ সালে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৬ সালে এটি ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল ও অবকাঠামো রয়েছে ১০০ শয্যারই। বর্তমানে হাসপাতালের ৪২ জন চিকিৎসকের পদে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট যেমন নেই, তেমনি নষ্ট হয়ে আছে এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন। ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, ডায়ালাইসিস, বায়োমেডিকেল, ইকোর জন্য মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের ১৫টি পদ থাকলেও এখানে কোনো পদেই লোক নেই। একইভাবে কার্ডিওগ্রাফারের দুটি পদ, ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ার টেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ডার্করুম সহকারী, ওটি বয়, কুকসহ ১৮৭ পদের গুরুত্বপূর্ণ ৬১ পদই শূন্য পড়ে আছে। ফলে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও এখানে হচ্ছে না। এই সুযোগে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এমনকি নারী দালালরাও এখানে সক্রিয়। অ্যাম্বুলেন্সগুলোও রোগীর জন্য হাসপাতাল চত্বর দখল করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পুরো হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন। পোস্ট অপারেটিভ রুম এবং করিডরগুলো ব্যবহার হচ্ছে স্টোর হিসেবে। অকেজো যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও আসবাবগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখায় চলাচলের রাস্তাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাথরুম, টয়লেটগুলো পানি আটকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতাল চত্বরে হাত ধোওয়ার জন্য যে তিনটি জায়গায় বেসিন বসানো হয়েছে তার সবগুলোই অকেজো। ময়লা জমে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ৪৯ নং শয্যায় চিকিৎসাধীন রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল জব্বার (৫০) জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব বাহির থেকে দালালদের সঙ্গে গিয়ে করতে হয়েছে। মশারি, চাদর এগুলো বাড়ি থেকেই আনতে হয়েছে। সেবাদানকারী নার্সদের আচরণ ভালো নয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ৫০ নং শয্যার ভাদুরিয়া গ্রামের রোগী রাশেদুল (৩২) জানান, ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। তবে যে খাবার রোগীদের দেওয়া হয় তা খাবার অনুপযুক্ত। পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঠিকভাবে পরিষ্কার করার কাজ করে না। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক থাকা খুবই দরকার। সব শূন্য পদের জন্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত চিঠি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির পর এখন আবার প্রতিদিন বহির্বিভাগে চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। আর হাসপাতাল শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী আসায় মেঝেতে রেখেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। গত ২২ মার্চ গাইবান্ধায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর করোনা চিকিৎসার জন্য আনসার ট্রেনিং সেন্টারে ৮০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় তা বন্ধ করে গত ১২ আগস্ট গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার করোনা ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে রোগী না থাকায় এটি এখন রোগীশূন্য অবস্থায় আছে। তবে কেন্দ্রটিতে কোনো আইসিইউ বা কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর