বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবায় সংকটই সঙ্গী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবায় সংকটই সঙ্গী

চিকিৎসা উপকরণ সংকটে ভোগান্তিতে রোগীরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর চালু করা হয় নতুন এমআরআই (ম্যাগনেটিং রিজোনেন্স ইমেজিং) মেশিন। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি মেশিনটির (হিটাচি ১.৫ টেসলার) ওয়ারেন্টির তিন বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৫ অক্টোবর। কিন্তু ২৯ অক্টোবরই মেশিনটির ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর থেকে অতি জরুরি এ রোগ নির্ণয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।  

এভাবে কেবল এমআরআই মেশিন নয়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নানা চিকিৎসা উপকরণ সংকট দীর্ঘদিনের। অভিন্ন অবস্থা চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান জেনারেল হাসপাতালেরও। চট্টগ্রামের এ দুটি সেবা প্রতিষ্ঠান সংকটকে সঙ্গী করেই চলছে। ফলে চরম ভোগান্তি-দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। ব্যয় হয় অতিরিক্ত অর্থ। অতিমাত্রায় সমস্যায় পড়তে হয় অসহায়-গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষকে। 

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, এমআরআই মেশিনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকার উপকরণ ক্রয় করা হবে। ইতিমধ্যে এসব উপকরণ ক্রয়ে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চিকিৎসা উপকরণগুলো যুক্ত হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সংকট দীর্ঘদিনের। এ সংকট নিরসনও একটি চলমান প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে এসব উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা উপকরণ সংকট আছে। তবে এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু চাহিদাপত্র অনুযায়ী উপকরণ পেতে একটু সময় লাগে। আশা করছি, কম সময়ের মধ্যে চলে আসবে।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালের নতুন কার্ডিওলজি বিভাগের নিচতলায় অবস্থিত এমআরআই কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক রোগী হাসপাতালে সুলভ মূল্যের এমআরআই করাতে এসে ফেরত যাচ্ছে। হাসপাতালের এমআরআই মেশিনে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ জনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতালের ৩ হাজার টাকার এমআরআই বেসরকারিভাবে করাতে লাগে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। গতকাল এমআরআই করাতে আসা রোগী কফিল উদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসক বলছেন কোমরের ব্যথার জন্য এমআরআই করাতে। এখানে এসে দেখি তা বন্ধ।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে নিয়মিত সংকট থাকে সিটি স্ক্যান মেশিন একটি, কার্ডিয়াক মনিটর, এনজিওগ্রাম মেশিন, অ্যানেসথেটিক মেশিন, অটোমেটিক ইএসআর অ্যানাইজার (মিনিমাস ৪০ স্যাম্পল), ইলেকট্রোলাইট অ্যানাইজার, কমপ্লিট অটোমেটিক বায়োকেমিস্ট্রি (মিনিমাম ২০০ স্যাম্পল), কমপিউটেড রেডিওথেরাপি মেশিন, এক্স-রে মেশিন (রেডিওলজি), ফোর ডি কালার ডাপলার আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ওপিজি মেশিন (রেডিওলজি), অপারেটিভ মাইক্রোসকোপ (নাক, কান, গলা এবং বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি)সহ নানা উপকরণের। তবে চমেক হাসপাতালে জনবল সংকট কম। একইভাবে জেনারেল হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি নষ্ট, তিনটি ইসিজি মেশিনের মধ্যে দুটি মেরামত অযোগ্য, সাতটি অ্যানেসথেসিয়া মেশিনের মধ্যে পাঁচটি মেরামত অযোগ্য, তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে সচল আছে একটি।  তাছাড়া ৪২টি পদের মধ্যে শূন্য আছে চারটি এবং নার্স কর্মরত আছেন ২১ জন।

সর্বশেষ খবর