বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অযত্ন অবহেলায় রংপুর মেডিকেল

নজরুল মৃধা, রংপুর

অযত্ন অবহেলায় রংপুর মেডিকেল

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক, জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। অযত্ন আর অবহেলায় রংপুর মেডিকেলের চেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালেই বেশি রোগী যাচ্ছে। রংপুর মেডিকেলে হৃদরোগ বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে এনজিওগ্রাম মেশিনটি দেড় বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে হৃদরোগীদের ঢাকা ছাড়া সঠিক রোগনির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট প্রকট। এখানে অর্ধেকের বেশি ২০০টির মতো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে ৮৫টির মতো। বেশ কয়েকটি বিভাগের প্রফেসর পদের কোনো চিকিৎসক নেই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বার্ন ইউনিট, নিউরো মেডিসিন বিভাগ। শিশু ওয়ার্ডে প্রফেসর পদে ডাক্তার থাকলেও অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন থেকে অনুপস্থিত। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক চিকিৎসক সংকট রয়েছে।

সূত্র জানায়, ১ হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিত। করোনার কারণে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখন প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।

জানা গেছে, হৃদরোগ বিভাগের এনজিওগ্রাম মেশিনটি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই বিভাগের তিনটি ইকো মেশিনের সবই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে শুধু ইসিজিনির্ভর। এনজিওগ্রাম ও ইকোমেশিন না থাকায় হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছে না রোগীরা। ফলে অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটিও দীর্ঘদিন থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে রোগীদের সিটিস্ক্যান বাইরে থেকে করতে হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ এমআরআই মেশিনটি নষ্ট। ফলে রোগীদের এমআরআই পরীক্ষা অন্য কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হচ্ছে। এতে রোগীদের ব্যয় ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষের কাছে বারবার তাগাদাপত্র দেওয়ার পরেও কোনো প্রকার সুরাহা হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।

লালমনিরহাট থেকে আসা রোগী নাজমা বেগমের স্বজনরা জানান, হৃদরোগসহ বেশ কিছু জটিল রোগের কারণে তারা রোগীকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিলেও যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ করেন আরও কয়েকজন রোগীর স্বজন।

এসব বিষয়ে রমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রোস্তম আলী জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এমআরআই মেশিনটি দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ মাসে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিষয়ক সভা হবে। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যরা উপস্থিত থাকবেন। তাদের কাছে হাসপাতালের সমস্যাগুলো তুলে ধরে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

সর্বশেষ খবর