বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাঙামাটি হাসপাতালে রোগী বেশি, সেবা কম

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটি হাসপাতালে রোগী বেশি, সেবা কম

চিকিৎসক সংকট রাঙামাটিতে। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা। করোনাতে রয়েছে শঙ্কা। এ ছাড়া নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। রাঙামাটি জেলার অধিকাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকার পাশাপাশি নার্স ও কর্মচারী সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। একেবারে ভেঙে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে মারাত্মক চিকিৎসা সংকটে পড়েছে রাঙামাটি জেলার বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে মাত্র ৫০ শয্যা দিয়ে চালু করা হয় রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালটি। পরে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হলেও চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ।

অন্যদিকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদ মেডিসিন কনসালট্যান্ট, সার্জারি কনসালট্যান্ট, অর্থো-সার্জারি কনসালট্যান্ট, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অ্যানেসথেসিয়া ও প্যাথলজিক্যাল এবং রেডিও কনসালট্যান্টসহ কনসালট্যান্ট পদগুলোতে দীর্ঘদিন কোনো ডাক্তার নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা আরও নাজুক।

অভিযোগ রয়েছে, রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে ছয়জন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা কাগজেই। অনেক ক্ষেত্রে একজন মাত্র চিকিৎসক দিয়ে চলছে একটি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতও থাকেন। আবার কেউ কেউ বদলির তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কর্মস্থলে সময় দিতে পারছেন না। চিকিৎসক-নার্স সংকট ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালসহ ৯টি উপজেলায় ১৭৬ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১১৩ জন। বাকি ৬৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এ পদগুলোর বাইরে দ্বিতীয় শ্রেণির ২৭৪ পদের বিপরীতে ১৭৮টি, তৃতীয় শ্রেণির ৫৫১ পদের বিপরীতে ৪৩০টি পদ এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৬৮ পদের মধ্যে ১৯০টি।

কনসালট্যান্ট ৪৭ জনের পদের বিপরীতে ১৪টি। নার্স ২৬৮টি পদের বিপরীতে ১৮২ জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৬৬টি পদের বিপরীতে ৩৭টি। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ১২৩টি পদের বিপরীতে আছেন ৮৯ জন। এ ছাড়া খোদ ১০০ শয্যায় জেলা সদরের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ৩১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৮ জন। আরও ১৩ জন ডাক্তারের পদ এখনো পর্যন্ত শূন্য পড়ে আছে। এ ছাড়া কাপ্তাই উপজেলায় ১২ পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ১১ জন, বিলাইছড়িতে ১২টির বিপরীতে ১১ জন, লংগদুতে ২৮টির বিপরীতে ২০ জন, বরকল ও রাজস্থলীতে ১৩টির বিপরীতে আছেন আটজন ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৯টি পদের বিপরীতে আছেন ১৮ জন। তবে কাগজে-কলমে চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মাসের পর মাস দেখা মেলে না অনেক চিকিৎসকের। এমন অভিযোগও রয়েছে।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈকত আকবর জানান, নানা সংকটের মধ্যে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসকসহ সরঞ্জমের সংকট পুরনো। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সব সময় রোগী থাকে। তবে সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার মধ্যে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। করোনা রোগীর জন্য চিকিৎসক আছে মাত্র পাঁচজন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের। কারণ আইসিইউ সংকট রয়েছে। রোগীদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন এখনো নেই এ হাসপাতালে। যার কারণে রোগীর শরীরের অবস্থা খারাপ হলে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাস খীসা বলেন, বর্তমানে রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসক ও জনবল, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংকটের বিষয়টি সত্য। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ডাক্তার স্বল্পতার পরেও সীমাবদ্ধতার মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি তৃতীয় শ্রেণির টেকনিক্যাল পদে শূন্য কোটা পূরণের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ১১ বছরেও চালু হয়নি রাঙামাটিতে নির্মিত হৃদরোগ চিকিৎসার সিসি ইউনিট ভবন (করোনারি কেয়ার ইউনিট)। ২০০৯ সালে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতালের পাশে সিসি ইউনিট আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ভবনে রয়েছে দুটি কেবিনসহ ২০ শয্যার দুটি ওয়ার্ড। ওই সময় ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, জনবল ও চিকিৎসকের অভাবে চালু করা যায়নি ইউনিটের চিকিৎসা কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ দিন পার হয়ে গেলেও হৃদরোগের সিসি ইউনিটের শূন্য পদগুলো পূরণের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই প্রায় সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে পাহাড়ের মানুষ।

সর্বশেষ খবর