রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বতারকাদের বাড়ি কাহিনি

বিশ্বতারকাদের বাড়ি কাহিনি

বিশ্বতারকাদের নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। জীবনের নানা বাঁক বদলে, লড়াই করে তারা পেয়েছেন খ্যাতি। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা, সাফল্য তাদের এনে দিয়েছে অর্থ-বিত্ত। তাদের অঢেল সম্পদ, বিলাসী জীবন, প্রাসাদসম বাড়ি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এ সবকিছুই রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। গল্পের মতো শোনালেও সত্যি বহু বিখ্যাত ব্যক্তি রাত কাটিয়েছেন বন্ধুর বাড়ির সোফায়, পার্কের বেঞ্চে। কেউ দুই কামরার জীর্ণ বাড়িতে থাকতেন, কারও জায়গা হয়েছিল আত্মীয়ের বাসায়। সেই গল্পগুলো নিয়েই আজকের রকমারি। লিখেছেন- উম্মে কুলসুম রাহী

 

ভাঙাচোরা এই বাড়িতে থাকতেন মেসি

এখন মেসি থাকেন ৫.৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড দামি এ বাড়িতে। বাড়িটি নো ফ্লাই জোনে হওয়ায় তার বাড়ির ওপর দিয়ে কোনো বিমান চলাচল করতে পারে না...

ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন এই ফুটবল তারকার খ্যাতি বিশজুড়ে। নানা অর্জনে বর্ণিল তার ক্যারিয়ার। ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যালন ডি অর, ছয়বার ইউরোপীয় গোল্ডেন সু জয় করেছেন তিনি। বার্সেলোনা দিয়ে তার যাত্রা শুরু। লা লিগা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয়ের অবিশ্বাস্য অর্জন রয়েছে তার ঝুলিতে। বারবার নাম তুলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া তারকা হিসেবে। খেলোয়াড় হিসেবে তার মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। খ্যাতি আর অর্থবিত্তে তিনি চূড়ায় পৌঁছেছেন। এখন ৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের দামি বাড়িতে বিলাসী জীবন কাটালেও তিনি একেবারে সাদামাটা এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। আর্জেন্টিনার রোজারিওতে কেটেছিল তার শৈশব। মেসির বাবা স্টিল কারখানায় আর মা পার্টটাইম ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। মেসি থাকতেন রোজারিও শহরের দক্ষিণে ব্যারিও লাস হেরাস এলাকায়। ছোট একটি বাড়িতেই মা, বাবা, ভাই ও বোন নিয়ে থাকতেন তারা। ওই বাড়িতে আত্মীয়স্বজনও থাকতেন। মহল্লার বন্ধু, তার বড় ভাই এবং চাচাতো ভাইদের সঙ্গে খেলাধুলা করেই বেশির সময় কাটত তার। খুব অল্প বয়সেই ফুটবল হাতে পেয়েছিলেন তিনি। জন্মদিনে, ক্রিসমাসে বল উপহার পেতেন। সেসব জমিয়ে রাখতেন। ফুটবলের প্রতি এভাবেই আগ্রহ বাড়তে থাকে তার। সে সময় বড়দের সঙ্গে তাকে খেলতে দেওয়া হতো না। কারণ আর কিছুই না, বড়দের টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যেতেন ফুটবল নিয়ে। তার ভাই ভয় পেতেন কেউ না আবার রেগে খেলার মাঠে তাকে আঘাত করে বসে। রাস্তায়, ফুটপাথে এবং পরিত্যক্ত জায়গায় মেসি তার ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। নিজের বাড়িতে বাগান দূরের কথা এমনকি তাদের মহল্লায় খেলার মাঠও ছিল না। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। বাবা ছিলেন মেসির ফুটবল কোচ। ধীরে ধীরে নানা ক্লাবের হয়ে খেলতে শুরু করেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে ‘দ্য মেশিন অব ৮৭’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু এ গতিতে হঠাৎ ভাটা পড়ে মাত্র ১১ বছর বয়সে। মেসির গ্রোথ হরমোন সমস্যা ধরা পড়ে। জীবন সংকটে মেসির ফুটবল ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায়। চিকিৎসা খরচ ছিল প্রতি মাসে ৯০০ মার্কিন ডলার। মেসির দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ খরচ দেওয়া অসম্ভব ছিল। ঠিক সে সময় আশীর্বাদ হয়ে তার জীবনে এগিয়ে আসে বার্সেলোনার সাবেক পরিচালক কার্লোস রেক্সাচ। মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে তাকে বার্সেলোনায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। চিকিৎসার পাশাপাশি মেসি শুরু করেন পেশাদার ফুটবল। বার্সেলোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়াতে যোগ দেন তিনি। এরপরই যেন মেসিযুগে প্রবেশ করে বিশ্ব। ফুটবলের প্রতি তার নেশা কতটুকু সেটা তার কাতালুনিয়ার বাড়ির দিকে তাকালে বোঝা যায়। তার এই বাড়ি দেখতে পুরো একটি ফুটবল মাঠের মতো। স্প্যানিশ স্থপতি লুইস ডি গারিডো বাড়িটির নকশা করেছেন। ১ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফুটের এ দ্বিতল বাড়ির অর্ধেকজুড়ে রয়েছে ফুটবল মাঠের মতো উঠান। বাকি অর্ধেক সুইমিং পুল। এখানে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য আলাদা খেলার মাঠ, ইনডোর জিম। মখমল আচ্ছাদিত বিশাল লন এবং কাচের ছাদ বাড়িটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। এখন মেসি থাকেন ৫.৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড দামি এ বাড়িতে। বাড়িটি নো ফ্লাই জোনে হওয়ায় তার বাড়ির ওপর দিয়ে কোনো বিমান চলাচল করতে পারে না। বাড়ির সামনে বেলেরিক সমুদ্র। এ ছাড়াও বার্সেলোনায় সমুদ্র উপকূলে মেসির একটি রাজকীয় চার তারকা ট্যুরিস্ট হোটেল রয়েছে। যাতে রয়েছে ৭৭টি শোবার ঘর। বাংলাদেশি মূল্যে এ হোটেলের দাম প্রায় ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাড়ির পাশাপাশি মেসির সংগ্রহে রয়েছে বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি।  ভুলে গেলে চলবে না,  মেসিও প্রথম জীবনে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পেয়েছেন আকাশছোঁয়া সাফল্য।

 

ছিল মাত্র তিন বেডরুম

নানার বাড়িতে থাকতেন ওবামা

আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন বারাক ওবামা। ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বিশ্বরাজনীতির কলকাঠি নেড়েছেন যে ব্যক্তি তিনি এখন থাকেন কালোরামায় ৩৩ কোটি টাকারও বেশি দামি এক বাড়িতে। কিন্তু জীবনের শুরুতে এত বিশাল বাড়িতে থাকার সুযোগ তার ছিল না। ওবামা হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হনলুলুতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু দুই বছর পর তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তার মা বিয়ে করেন ইন্দোনেশীয় এক ছাত্র লোলো সুতোরোকে। ওবামাকে নিয়ে তারা চলে আসেন ইন্দোনেশিয়ায়। পরে পারিবারিক ঝামেলার কারণে ওবামাকে হাওয়াইতে নানা-নানীর কাছে পাঠিয়ে দেন তার মা। তখন ওবামার বয়স মাত্র ১০ বছর। এখানেই তার বেড়ে ওঠা। ছোট এই বাড়িতে ছিল মাত্র তিনটি বেডরুম। যা তার বর্তমান বাড়ির অর্ধেকেরও কম জায়গা। ওবামা এখন যে বাড়িতে থাকেন সেটি তিনি ইজারা নিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রেস সেক্রেটারি জো লকহার্টের কাছ থেকে। আট হাজার ২০০ বর্গফুটের বিশাল এই বাড়িতে আছে নয়টি বেডরুম, আটটি গোসলখানা। রয়েছে বাগান, শরীরচর্চা ও বিনোদনের জন্য আলাদা জায়গা। অতিথি এবং গৃহপরিচারকদের জন্য ঘর। এ ছাড়া বাড়িটির উপরের তলায় আছে একটি অফিসঘর। এখানে বসেই কাজ করেন ওবামা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়াইয়ের আগেই তাকে পার হতে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের খুব কম প্রেসিডেন্টকেই তার মতো দারিদ্র্য, বর্ণবাদ, রাজনীতির মাঠে এত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

 

পুরনো বাড়ি ছেড়ে বিরাট কোহলি থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে

ব্যাটিং স্কিল এবং টেকনিকের জন্য গ্রেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিরাট কোহলিকে তুলনা করা হয়। ভারতীয় এই ক্রিকেট আইকন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বলিউড তারকা আনুশকা শর্মারও মন জয় করেছেন। ২০১৭ সালে বিয়ে করে দুজনেই আছেন মুম্বাইয়ের ওয়ার্লির একটি আবাসিক ভবনে। সাত হাজার বর্গফুটের এই বিশাল আয়তনের অ্যাপার্টমেন্টটি বানাতে ৩৪ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। এই ফ্ল্যাটের নান্দনিক নকশা, ক্ল্যাসিক আসবাব, বিস্তৃত বারান্দা সবাইকে চমকে দেবে। এখন তার নিজের ফ্ল্যাট ও গাড়ির পাশাপাশি রয়েছে অঢেল সম্পদ। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৮২ কোটি রুপি। অথচ তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের গল্পটা এত জাঁকজমকপূর্ণ নয়। ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর বিরাট কোহলিকে মা ও পরিবার নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিল। তখন তারা দিল্লির উত্তম নাগপুরের একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়ির জীর্ণদশা এখন আর নেই। নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রদেশে কাটনিতেও কোহলিদের বাড়ি ছিল। সেখানে তার আত্মীয়রা থাকতেন।  কোহলিও যেতেন সেই পুরনো বাড়িতে। পরে সেই বাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

 

এক সময় জোলির বাড়িতে ছিল না বিলাসী আয়োজন

হলিউডের তারকা অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ১২০ মিলিয়ন ডলারের মালিক জোলি সিনেমা ছাড়াও মানবসেবায় এগিয়ে আসা এক প্রেরণীয় নাম। বিশেষ করে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে তিনি বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তিনি কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব। হলিউডের সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া এই অভিনেত্রী এখন ২৪.৫ মিলিয়ন ডলারের জাঁকজমকপূর্ণ বাড়িতে থাকলেও শৈশবে মাত্র চার বেডরুমের একটি বাড়িতে পুরো পরিবার নিয়েই থাকতেন। সেখানে ছিল না ব্যক্তিগত সুইমিংপুল, সুবিশাল বাগান, গেস্ট হাউস কিংবা আলাদা কোনো বিনোদন ঘর। কিন্তু তিনি নতুন করে জীবনের গল্প লিখেছেন নিজের দুর্দান্ত অভিনয়সত্তাকে কাজে লাগিয়ে। খ্যাতি পেয়েছেন বিশ্বব্যাপী। খ্যাতির সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থবিত্ত। এখন থাকেন ১১ হাজার বর্গফুটের বিশাল বাড়িতে। লস ফেলিজের এ বাড়িতে তার সন্তানরাও থাকেন। বাড়িটিতে রয়েছে ছয়টি বেডরুম, ১০টি বাথরুম। এ ছাড়া আলাদা গেস্ট হাউস, ব্যক্তিগত স্টুডিও, লাইব্রেরি, বিনোদনের জন্য ঘর রয়েছে। বিশাল একটি পুলও রয়েছে বাড়িটিতে।  এমন আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে জোলির।

 

থাকার ঘরই ছিল না বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের

বাস্কেটবল দুনিয়া লেব্রন রেমন জেমসকে এক নামেই চেনেন সবাই। আমেরিকান এই খেলোয়াড় ন্যাশনাল বাস্কেটবল সমিতি ও লস অ্যাঞ্জেলেসের হয়ে খেলে তারকা খ্যাতি পেয়েছেন। তার অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে তিনটি এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপ, চারটি এনবিএ মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ডস, তিনটি এনবিএ ফাইনাল এমভিপি অ্যাওয়ার্ডস এবং দুটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক। জীবনে এত অর্জন যার সেই লেব্রন জেমস ছিলেন গৃহহারা। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এভাবেই। কোথায় রাত কাটাবেন সেটা নিজেও জানতেন না। জীবনের শুরুর ১৭ বছর তার এভাবেই কেটেছে। বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়েছেন বন্ধুর বাড়িতে। বসার ঘরে সোফায় কোনোমতে রাতটা পার করতেন। বাস্কেটবল খেলেই ভাগ্যবদল হতে শুরু করে তার। ওহাইওর অ্যাকরনে তার কোচের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা হয়। ধীরে ধীরে খ্যাতি আর অর্থবিত্ত আসতে থাকে তার জীবনে। এখন লেব্রন থাকেন ২৩ মিলিয়ন ডলার দামি এক বিলাসী বাড়িতে। বাড়ির ছাদে রয়েছে চোখ ধাঁধানো বিলাসী সব আয়োজন। হোম থিয়েটার, ওয়াইন সেলার, একটি ব্যক্তিগত জিম এবং একটি পুল ও স্পা কক্ষসহ বিশাল অঞ্চলজুড়ে রয়েছে গ্যারেজ। যেখানে রয়েছে নামিদামি ব্র্যান্ড ও নতুন নতুন মডেলের অনেক গাড়ি। এ বাড়ি ছাড়াও তার আরও কয়েকটি প্রাসাদসম বাড়ি বা ম্যানশন রয়েছে। লেব্রনের আজকের এ বিলাসিতা দেখে কে বিশ্বাস করবে এক সময় তার থাকার কোনো ঘরই ছিল না?

 

মাইকেল জ্যাকসনের সাড়ে ১৯ কোটি ডলারের সেই বাড়ি

মাইকেল জ্যাকসনের অস্বাভাবিক মৃত্যু, রহস্য ও নানা সমালোচনা তৈরি হওয়ায় বাড়িটির দাম অবিশ্বাস্যভাবে কমে যায়। বাড়িটি বিক্রির জন্য নানা মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে...

বিশ্বের সবচেয়ে সফল তারকা মাইকেল জ্যাকসন। সংগীতবিশ্বকে বদলে দিয়েছিলেন তিনি। পপসাম্রাজ্যের বাদশাহ হয়ে ওঠা মাইকেল জ্যাকসনের উত্থান থেকে মৃত্যুর গল্প যেন এক রোমাঞ্চ উপন্যাস। মাইকেল জ্যাকসনের গান, নাচ, ফ্যাশন পুরো বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। লাখ লাখ ক্যাসেট ও সিডি বিক্রির রেকর্ড রয়েছে তার। পেয়েছেন ১৫টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। আকাশছোঁয়া তারকাখ্যাতি ও সম্পদ-প্রাচুর্যে ঠাসা ছিল তার ক্যারিয়ার। তার নেভারল্যান্ড র‌্যাঞ্চ নামের খামারবাড়ি দেখে চোখ ফেরানো কঠিন। দুই হাজার ৭০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছে এই বাড়ি। রয়েছে রেললাইন, বিশাল সুসজ্জিত বাগান। ১৯৮২ সালে রবার্ট অলটেভার্স এই বাড়ির নকশা করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে সাড়ে ১৯ কোটি ডলারে মাইকেল জ্যাকসন এটি কিনে নেন। পরে তিনি বাড়ির নকশা নিজের মতো পাল্টে ফেলেন। বাড়ির মূল ভবনে রয়েছে ছয়টি বেডরুম ও নয়টি বাথরুম। রয়েছে বিলাসবহুল একটি মাস্টার বেডরুম ও দুটি মাস্টার টয়লেট। সুবিশাল চিলেকোঠা, লেক, খেলার আয়োজন, সুইমিং পুল। নিজস্ব থিয়েটার হলও রয়েছে সেখানে। বিশাল এ বাড়িতে তিনি বিলাসী জীবন কাটালেও তার শৈশব ছিল একেবারেই উল্টো। ইন্ডিয়ানার গ্যারিতে একতলা বাড়িতে থাকতেন মাইকেল জ্যাকসন। মাত্র দুই বেডরুম ও একটি বাথরুম ছিল সেই বাড়িতে। তার পরিবারের ১১ সদস্য থাকতেন এ বাড়িতে। সত্তর দশকে তার পরিবার হলিউডের উদ্দেশে যাত্রা করে। সেখানে তারা দুই একরের জায়গা কিনেছিলেন। ১৯৮৮ সালে মাইকেল জ্যাকসন নেভারল্যান্ড র‌্যাঞ্চ নামের খামারবাড়িতে চলে যান। বর্তমানে এই বাড়ির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে- ‘সাইকেমোর ভ্যালি র‌্যাঞ্চ’। মাইকেল জ্যাকসনের অস্বাভাবিক মৃত্যু, রহস্য ও নানা সমালোচনা তৈরি হওয়ায় বাড়িটির দাম অবিশ্বাস্যভাবে কমে যায়। বাড়িটি বিক্রির জন্য নানা মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বাড়িটির দাম হাঁকা হয়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার!

 

দুই কামরার বাড়ি থেকে এখন প্রাসাদসম মান্নাতে শাহরুখ খান

কেউ তাকে বলেন বলিউড বাদশাহ। আবার কেউ বলেন ‘কিং খান’। কয়েক দশক ধরে বলিউডে রাজত্ব করে আসছেন শাহরুখ খান। তার বাদশাহ হয়ে ওঠার গল্প যে কাউকে বিস্মিত করবে। জীবনের শুরুর দিকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বাবার কোনো স্থায়ী বাড়ি ছিল না। নির্দিষ্ট আয়-রোজগার না থাকায় খুব কষ্টে কাটত দিন। বাবার পরিবহন ব্যবসা, বন্ধুর ক্যান্টিন চালানো- এ ধরনের কাজ করে যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে সংসার চলত না। তখন পশ্চিম দিল্লির রাজিন্দরনগর এলাকায় থাকত শাহরুখ খানের পরিবার। ছোট দুই কামরার বাড়ি। ওই দুটি ঘর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। মুম্বাইতে এসেছিলেন ভাগ্যবদল করতে। সিনেমার নেশা তাকে টেনে এনেছিল এতটা পথ। ফাঁকা পকেটে ফুটপাথের বেঞ্চ ছিল তার বিশ্রামের জায়গা। বলিউডে তার চেনা কেউ ছিল না। কোনো ধরনের বাড়তি সুযোগও পাননি শাহরুখ। সিনেমায় স্রেফ অভিনয়শৈলী আর পরিশ্রমের দাম পেতে শুরু করেন ধীরে ধীরে। বদলে যেতে থাকে তার জীবনচিত্র। এখন ভারত তো বটেই সারা বিশ্বের শীর্ষ তারকাদের একজন শাহরুখ খান।

৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদের মালিক তিনি। সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া দল ছাড়াও তার আরও নানা ধরনের সম্পদ রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ উপার্জনকারী অভিনয় তারকাদের একজন তিনি। আর্থিক কষ্টে বেড়ে ওঠা সেই শাহরুখ খান ভারতের মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় বানিয়েছেন প্রাসাদসম এক বাড়ি। বাড়িটির নাম মান্নাত। এ বাড়ি ছাড়াও বিশ্বের বহু দেশে তার বাংলো রয়েছে। দুবাইয়ে তার দ্য পাম জুমেইর দ্বীপের বাড়িটির কথা অনেকেরই জানা। ৮ হাজার ও ১৪ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে এই দ্বীপে রয়েছে পুল, বিচসহ বিশাল বাংলোবাড়ি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। দুবাই ছাড়াও তার দুই কোটি পাউন্ডের বাড়ি রয়েছে লন্ডনের অভিজাত পার্ক লেনে। তবে তিনি বেশির ভাগ সময়ই মুম্বাইয়ের মান্নাত নামের বাড়িতেই কাটান।  ফাঁকা পকেটে মুম্বাইয়ের ফুটপাথের বেঞ্চ থেকে শাহরুখ পৌঁছে গেছেন আনুমানিক ২০০ কোটি রুপির মান্নাতে।

সর্বশেষ খবর