বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পরিবর্তনের লড়াইয়ে নারী

পরিবর্তনের লড়াইয়ে নারী

গত ৮ মার্চ ইডব্লিউএমজিএল কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোর আয়োজন করে ‘পরিবর্তনের লড়াইয়ে নারী’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক। সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীর সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে আমাদের সমাজের নারীদের বর্তমান অবস্থা, সাফল্য, চ্যালেঞ্জ, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ আনুষঙ্গিক নানা বিষয়। ওই বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন- জামশেদ আলম রনি ও আবদুল কাদের 

ছবি : জয়ীতা রায়

 

সাহসে, শৌর্যে নারী কোনো অংশে কম নয়

অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, নারীর লড়াই অনাধিকাল থেকেই চলছে। আমার মনে হয় না লক্ষ্য অর্জন হলেই আমাদের লড়াই থেমে যাবে। লক্ষ্য অর্জন করে সেটি ধরে রাখতে হলে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এ লড়াই বিরতিহীন। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ- সব জায়গায় নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, যুদ্ধ করেছে। আমরা একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেয়েছি। সংবিধানে নারীকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারও দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন, নারী সেভাবে এগোতে পেরেছে কি না। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর কাছে রোল মডেল। বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতি অবশ্যই প্রশংসাব্যঞ্জক এবং উল্লেখ করার মতো। সাহসে, শৌর্যে নারী কোনো অংশে কম নয়। বর্তমান সরকার নারী উদ্যোক্তা  সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে।

 

 

চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন

ডা. জাহানারা আরজু বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। এটা শুধু পুরুষের পথচলায় হয়নি, তাতে নারীদেরও সমান সংশ্লিষ্টতা ছিল। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা। চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন। তবুও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ হয়নি রাস্তাঘাট। এখনো নারীর পোশাক ও পথচলা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের নানা আপত্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এমন শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ মোটেই কাম্য নয়। মূলকথা আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। নারীদের প্রতি পুরুষ সহকর্মীদের সহানুভূতিশীল হতে হবে।  আর কর্মক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব নিয়ে সচেতন হতে হবে।

 

 

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা এখনো অনিরাপদ

বছরের ৩৬৫ দিন আমি একজন গর্বিত বাংলাদেশি নারী। বাংলাদেশের নারী নেতৃত্ব এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সাফল্য মেয়েদের হাত ধরে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা নেতৃত্ব প্রদানে অনেক পিছিয়ে। নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য এখনো তাদের অবস্থান আঁধারে আছে। ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা এখনো অনিরাপদ। সেখানেও নারীরা হচ্ছে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার। নারী ক্রিকেটারদের ভাষ্য, তারা প্রশিক্ষণের সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দুঃখজনক যে, নারী ক্রীড়াবিদদের অধিকার আদায়ে এখনো কোনো সংগঠন তৈরি হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে এখন পর্যন্ত কোনো নারী পরিচালক নেতৃত্বে না আসায় হতাশা প্রকাশ  করেন এই ক্রীড়া সংগঠক।

 

 

কর্মক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে অস্ট্রেলিয়ার পর বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে নারীর অধিকার এবং উন্নয়ন দ্রুত ত্বরান্বিত হয়েছে। বড় বড় অর্জন এসেছে আজ নারীদের পক্ষে। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা থামেনি। ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড’- তবু থেমে থাকেনি ধর্ষণ। কমেনি যৌন নির্যাতন। পরিবার থেকে ছেলেবেলা যৌন শিক্ষা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়া হয় না। ফলশ্রুতিতে সমাজে বেড়ে চলেছে যৌন হেনস্তা। মহামান্য আদালত বলেছে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ভাগ্য, ৭৭ ভাগ কর্মজীবী জানেন না কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি আচরণ কেমন হওয়া উচিত। এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে নারীকে ক্ষমতায়িত করতে ‘স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর সমান অধিকার’ বিষয়ক আইনের দিকেও আমাদের  নজর দেওয়া উচিত।

 

 

নারীকে সংবেদনশীল হওয়ার শিক্ষা পরিবার থেকে আসা উচিত

নারীর লড়াই এক দিনের নয়, দীর্ঘদিনের। এই প্রতিকূলতা শেষ হওয়ার নয়। মানুষ যতদিন আছে, অপরাধ ততদিন থাকবে। সব প্রতিকূলতা পার করে নারীদের টিকে থাকতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আমাদের এখন লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে লিঙ্গ সচেতন হতে হবে। কারণ, নারী মা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। নারীদের শারীরিক পরিবর্তনে তাদের জীবনযাত্রায়ও খানিকটা পরিবর্তন আসবে। এটাই স্বাভাবিক। সবক্ষেত্রে শুধু নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে হবে না। তারা সমান সুযোগ পাচ্ছেন কি না সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধও বেড়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে অনেক মেয়ে প্রতারণার শিকার হন। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বলতে চাই, আমরা নারীরা যেন আরেকটু সংবেদনশীল হই। সেই শিক্ষা পরিবার থেকে আসা উচিত।  তবে যদি অপরাধ কমাতে পারি,  তা হবে সফলতা।

 

 

দেশের উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা উচিত

আরিফা রহমান রুমা বলেন, নারীর কাজের জন্য কোনো কোটা বা সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। কেননা, আমাদের দেশে নারীদের যোগ্যতা, সক্ষমতা এবং দক্ষতা প্রমাণের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। আমাদের দেশের উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা উচিত। শুধু নারী হওয়ার কারণে সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ধর্ম বিবেচনায় উত্তরাধিকার আইন বাস্তবায়নে কোনো বাধা নেই। পাশাপাশি দ্বিতীয় আইনও থাকা উচিত। চাইলে যেন দ্বিতীয় আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করা যেতে পারে। এ ছাড়া নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। হাঁটতে চলতে নারীরা প্রতিনিয়ত অবমাননার শিকার হচ্ছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।  অনলাইনে নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে অনেক নারীকে।

 

 

যে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীর জন্য তা অনুকূল নয়

উচ্চশিক্ষায় নারীদের প্রবেশাধিকার বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যোগদানও বেড়েছে। নব্বই দশকের অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলতা দেখছি। তবে নানা পরিবর্তনের মধ্যেও নারী সহিংসতা কমেনি। করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা কয়েক গুণ বেড়েছে। করোনাকালের প্রথম দশ মাসে ১ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর একজন নারীকে যে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় নারীর জন্য তা অনুকূল নয়। এমনকি ধর্ষিত ওই নারীকে সামাজিকভাবেও হেনস্তার শিকার হতে হয়। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে এখনো আমাদের অনেক কাজ করার আছে। লিঙ্গ বৈষম্য কমলেও এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার  জায়গায় নারী এখনো পিছিয়ে আছে।

 

 

বিরূপ পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে

সামাজিকভাবে ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত নারীদের একটু ভিন্ন দৃষ্টিতেই দেখা হয়। এ পেশায় যেসব নারী আছেন, তারা সম্মানজনক পেশায় জড়িত বলে ধারণা করা হয়। কাজের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় সবসময়ই নিবেদিত। মেয়েদের সাহসের ঘাটতি আছে। সেটা পরিবারে হোক কিংবা কর্মক্ষেত্রে। আরেকটি বিষয় হলো, প্রতিবাদ। প্রয়োজনীয় জায়গায় সেটা মেয়েরা করতে পারে না, সেটা ঘরেই হোক কিংবা বাইরে। পরিবার থেকেই সেই শিক্ষাটা গ্রহণ করা উচিত। তবেই সেই মেয়েটি বাইরের জগতে সমান তালে এগিয়ে যেতে পারবে। কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিরূপ জায়গা থাকবেই।  এ পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

 

 

আমাদের একেবারে গোড়া থেকে বদলাতে হবে

কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন ধন্যবাদ প্রস্তাবনা দিয়ে বলেন, নারীর পরিবর্তনের লড়াই শুরু হয়েছে অনেক আগেই। আমাদের লড়াইয়ের গতিটা খুব তীব্র নয়। নারীর প্রতি সম্মানটা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে? প্রকৃত অর্থেই তৈরি হয়েছে? আমরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। গ্রামের প্রান্তিক নারী  গোষ্ঠীর কথা আদৌ আমরা জানি? কেমন কাটে তাদের জীবন? জীবিকার সন্ধানে প্রবাসে কর্মরত আমাদের নারীদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। আমাদের বদলাতে হবে একেবারে গোড়া থেকে, পরিবার থেকে। শিশুরা যখন বুঝতে শিখে তখন থেকে পরিবর্তনটা আমাদের করতে হবে, শেখাতে হবে।  সম্মানটা নারীর প্রতি তৈরি করতেই হবে।

 

 

দেশের জিডিপিতে নারীর  গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, প্রতিটি দিনই নারীর সংগ্রামের দিন। জন্মের পর থেকে  মানুষ তার মায়ের হাত ধরে বড় হয়। জীবনের পথচলায় কী ভালো, কী মন্দ তার গাইডেন্স বা নির্দেশনা দিয়ে থাকেন মা। মায়ের ওপর এই নির্ভরশীলতা থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। আজ নারী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, শহরের বিশাল ভবন নির্মাণ, মধ্যপ্রাচ্যে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে দেশের জিডিপিতে অবদান রেখে চলেছেন। নবাব ফয়জুন্নেসা ১৮৬২ সালে বর্তমান কুমিল্লাতে ইংরেজি স্কুল খুলেছিলেন।  শিক্ষা প্রসারে ১ লাখ টাকা দান করেছিলেন। নারী উন্নয়ন সংগ্রামে তিনি ইতিহাস হয়ে আছেন।

 

 

মহিলা শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে দূতাবাসে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ করুন

সেনাবাহিনীতে নারীরা অনেক ভালো আছেন। তাদের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। তাদের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ সেনাবাহিনীতে রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা করেছি, তাদের কাছে গিয়েছি। দূতাবাসে তাদের করুণ অবস্থা দেখেছি। তাদের শেল্টার হোমে গিয়েছি। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এখনো তারা বিরাজ করছে। মহিলা শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোতে দূতাবাসে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ করুন।  এ ছাড়াও নারীদের মধ্যে ঐক্য  আরও বাড়ানো দরকার।

 

 

অনেক নারী ভুক্তভোগী, অবহেলিত নানাভাবে নির্যাতনের শিকার

পরিবর্তনের লড়াইয়ে জয়ী সব নারী সৈনিকই এখানে উপস্থিত। সবাইকে নারী দিবসের অভিবাদন। কিন্তু এই চিত্রটিই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র নয়। আমরা গুটিকয়েক উদাহরণ মাত্র। স্বল্প আয়ের নারীরা পিছিয়ে পড়া নারী। এদের শক্তি এবং মানসিক বল দিয়ে দুটি পা এগিয়ে দেওয়ার উদাহরণ আমাদের তৈরি করতে হবে।

একজন নারী আমরা অন্য নারীর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি নানাভাবে। কর্মক্ষেত্রে আমি অনেক সুবিধা অর্জন করতে করতেই এখানে এসেছি বলে আজ এই গোলটেবিলে আছি। আমি ভুক্তভোগী বলব না। কিন্তু আমাদের মতো অনেক নারী রয়েছেন যারা ভুক্তভোগী, অবহেলিত হন এবং নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন।

একজন নারীর পেছনে যেমন একজন নারী লাগে, তেমনি একজন পুরুষের পেছনেও পুরুষ লাগে যদি এগিয়ে যাওয়ার দলে হন। মুক্তির যে আকাশ সেই স্বপ্নের বীজটি আমরা যেন  প্রতিটি নারীর জন্য বপন করতে পারি।

 

 

নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি

নারীর লড়াই নিয়ে কথা বললে সবার আগে নারীর সুস্বাস্থ্যের বিষয় উঠে আসবে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি তিনজন নারী হৃদরোগীর মধ্যে একজন মারা যান। প্রতি দুজন নতুন শনাক্ত ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর মধ্যে একজন মারা যান। প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে শতকরা ৭০ শতাংশ নারী হাড়ক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে ৩০ জন নারী স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন সেই রোগে মারা যান। নারীর ঋতুস্রাব; আমরা নারীরা এটাকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিই। অথচ এটা জরায়ু ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ। কাজেই নারীকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নারীকে নিজের স্বাস্থ্যের জন্য স্বার্থপর হতে হবে। নারী নিজে যদি সুস্থ থাকেন, তবেই তারা পরিবার, সমাজ এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হতে হলে তার নারীত্ব বিসর্জন দিয়ে নয়,  সগৌরবে তার নারীত্বকে তুলে ধরেই এগিয়ে যেতে হবে।

 

 

সন্তানকে পরিবার থেকেই নারীকে সম্মান করা শেখাতে হবে

ড. সুমাইয়া মামুন সিমরান বলেন, আইন-শৃঙ্খলার যতই উন্নতি হোক না কেন, মানুষ হিসেবে যদি আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না আসে তাহলে নারীর অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। কোনো সমস্যা সমাধান হবে না। নারী হিসেবে নিজের ভাব, চেতনা প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রয়োজন। সেই অধিকার নারীকে দেওয়া হোক। মেয়েকেই সংসারের সব দায়িত্ব নিতে হবে এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন সফল নারীর পেছনে পুরুষের বড় অবদান থাকে। এখনো নারীকে পেশাগত প্রয়োজনে বাইরে কাজ করা নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। পরিবার থেকেই সন্তানকে  নারীকে সম্মান করা শেখাতে হবে।

 

 

পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় সব পুরুষ খারাপ নয়

কর্মক্ষেত্রে আমরা অনেক ভালো পরিবেশে কাজ করি। নারী বিদ্বেষ আমাদের সেক্টরে অতটা তীব্র নয়। আমার অভিজ্ঞতায় ২০ জনের ইউনিটে কাজ করেছি। যেখানে আমি একা নারী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি একা নারী সেখানে কাজ করেছি। একবারও মনে হয়নি নারী হিসেবে আমার সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য অনেক ক্ষেত্রেই কমবেশি হয়। আজকে নারী বিদ্বেষ নয়, পুরুষ বিদ্বেষ নিয়ে বলতে চাই। পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় সব পুরুষ খারাপ নয়। সহযোগিতা আমরা অনেক পাই, এ জন্য লিঙ্গ বৈষম্য অনেক কমে গেছে। এটা ধীরে ধীরে আরও কমতে  থাকবে বলে আমরা আশা করি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর