শিরোনাম
রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বাসিত গ্রিক রাজপুত্র থেকে রানীর সঙ্গী ফিলিপ

র ণ ক ই ক রা ম

নির্বাসিত গ্রিক রাজপুত্র থেকে রানীর সঙ্গী ফিলিপ

গল্পটা একজন নির্বাসিত গ্রিক রাজপুত্রের। পরবর্তীতে তিনি হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত স্বামীর পরিচয়ে। ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী না হয়েও রানী এলিজাবেথের সঙ্গী হিসেবে নিজের ব্যক্তিত্বের স্ফুরণে রেখেছেন অনন্য ছাপ। জীবনের সাতটি দশক কাটিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছায়ায়। ৯৯ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় বলেছেন ফিলিপ। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর বর্ণিল কর্মজীবন। নির্বাসিত জীবনের পর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারের সংগ্রাম ছাপিয়ে নৌবাহিনীতে প্রবেশ করেন। এরপর মন জয় করে নেন যুক্তরাজ্যের রাজার মেয়ের। পরেরটুকু কর্মব্যস্ত জীবন আর মানুষের মন জয় করে নেওয়ার অনন্য গল্প। ডিউক অব এডিনবরাখ্যাত প্রিন্স ফিলিপকে নিয়েই আজকের রকমারি-


এলিজাবেথের সঙ্গে প্রথম দেখা ও প্রণয় পর্ব

১৯৩৯ সালে তৎকালীন ব্রিটেনের রাজা ষষ্ঠ জর্জ যখন এক সরকারি সফরে গেলেন তখন তরুণ নৌ-কর্মকর্তা প্রিন্স ফিলিপের ওপর দায়িত্ব পড়ল রাজার দুই মেয়ে, প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্সেস মার্গারেটের দেখাশোনা করার। এ বিষয়ে একটা বর্ণনা মেলে তাদের গভর্নেস মেরিয়ন ক্রফোর্ডের স্মৃতিচারণায়। তিনি বলেছেন, তখন প্রিন্স ফিলিপ নিজেকে বেশ একটু জাহির করছিলেন। ১৩ বছর বয়সী প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে তিনি বেশ ভালো ছাপ রাখতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রিন্স ফিলিপ বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি ভারত মহাসাগরে প্রথমবারের মতো লড়াই প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৪২ সালের অক্টোবরে তাঁর বয়স যখন মাত্র ২১, তখন তিনি রাজকীয় নৌবাহিনীর কনিষ্ঠতম ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট হন। এর মধ্যেই কিশোরী রাজকুমারী এলিজাবেথ এবং নৌবাহিনীর অফিসার ফিলিপের মধ্যে পত্র-যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৩ সালের ক্রিসমাসের সময়টা প্রিন্স ফিলিপ রাজপরিবারের সঙ্গে কাটান। এ সময় রাজকুমারী এলিজাবেথের টেবিলে শোভা পাচ্ছিল প্রিন্স ফিলিপের ইউনিফর্ম পরা ছবি। এর মাধ্যমে যেন তিনি তাঁর মনের পছন্দ তুলে ধরছিলেন। তবে রাজপরিবারের অনেকের মধ্যে ফিলিপকে নিয়ে সংশয় ছিল। অনেকের কাছেই ফিলিপকে রুক্ষ, অভদ্র এবং অবিশ্বাসী মনে হয়েছে। কিন্তু সেটা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠেন প্রিন্স ফিলিপ।

শেষমেশ রাজা জর্জ তাঁর মেয়ের সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের অনুমতি দিলেন। কিন্তু এ জন্য প্রিন্স ফিলিপকে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নিতে হলো, তাঁর বিদেশি খেতাব বর্জন করতে হলো এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডের অনুসারী হতে হলো। তবে এক্ষেত্রে এলিজাবেথও কম যাননি। ফিলিপকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে রাজপরিবারের রক্ষণশীলতাকেও ভাঙতে কুণ্ঠা করেননি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

সব বাধা পেরিয়ে, ১৯৪৭ সালে ২১ বছর বয়সে ফিলিপের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাঁদের বিয়েই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। রানীর প্রতি ফিলিপের প্রেম ছিল গভীর ও আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয়। তাঁদের চার সন্তান- চার্লস, অ্যান, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড। নাতি-নাতনি (মোট আটজন) তো বটেই তাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের (এ সংখ্যাও ১০টি) ভালোবাসাও পেয়েছেন প্রিন্স ফিলিপ।


রাজা কিংবা উত্তরাধিকার নন, রানীর সঙ্গী

ক্ষমতাসীন রানীর স্বামী হওয়ার পরও কখনো রাজা হিসেবে পরিচিত হননি প্রিন্স ফিলিপ। বরং তাঁকে বলা হয়েছে রানীর ‘সঙ্গী রাজকুমার’। তাঁকে কখনই রাজার খেতাব দেওয়া হয়নি। এর কারণ, যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, একজন নারী যদি রাজাকে বিয়ে করেন, তিনি আলংকারিকভাবে রানী উপাধি পান, কিন্তু একজন পুরুষ যখন সিংহাসনে থাকা রানীকে বিয়ে করেন, তিনি কখনো রাজার উপাধি ব্যবহার করতে পারেন না। যিনি সিংহাসনে আসীন সত্যিকারের রাজা, এই উপাধি কেবল তাঁর। তবে রানী এলিজাবেথ  চাইলে প্রিন্স ফিলিপকে ‘সঙ্গী রাজার’ উপাধি দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজন মনে করেননি। রানীর পর সিংহাসনে বসার তালিকায় প্রথম অবস্থান প্রিন্স চার্লসের। এরপর আছেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র প্রিন্স উইলিয়াম। এরপর উইলিয়ামের বড় ছেলে জর্জ। এরপর জর্জের ছোট বোন শার্লট।

১৯৪৭ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে বিয়ে করার পর ১৯৫২ সাল থেকেই রাজদায়িত্ব পালন শুরু করেন  ফিলিপ। এককভাবে ২০ হাজারের বেশি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে ঘুরেছেন পুরো বিশ্ব। এই সফর যেমন ছিল রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তেমনি রাজকীয় ভ্রমণও কম ছিল না। রানীর স্বামী হিসেবে গোটা দুনিয়া তাঁকে চিনলেও ব্রিটেনের মানুষের কাছে রানীর পরই তাঁর স্থান। তাঁদের দীর্ঘ ৭৩ বছরের দাম্পত্যও ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে রয়েছে। সংকটের সময় রানীর সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা ছিলেন তিনিই। বহুবার রানী নিজ মুখেও এই ঘোষণা দিয়েছেন।


শখের মানুষ ফিলিপ হয়ে ওঠেন সমাজসেবক

ফিলিপ যৌবনে খুব ভালো পোলো খেলতেন। ফিলিপ ঘোড়া টানা রেসিংয়ের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন। তেলচিত্র আঁকা কিংবা সমসাময়িক কার্টুন বিষয়ে ফিলিপের দারুণ আগ্রহ ছিল। তিনি নানা শিল্পীর কাজ সংগ্রহ করতেন এবং আগ্রহ ভরে পর্যবেক্ষণ করতেন। তবে রানীর সঙ্গী হয়ে হওয়ার পর ফিলিপের শখগুলো পরিণত হয় সমাজসেবায়। প্রচুর জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন ফিলিপ। ফিলিপ প্রায় ৮০০ জলকল্যাণমূলক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এসব সংগঠন বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। এ ছাড়া তরুণদের জন্য ‘ডিউক অব এডিনবার্গ’ বিশেষ পুরস্কারে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ফিলিপ নিজেকে আধুনিক পরিবেশবাদী কর্মীদের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষ হওয়ার কারণে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি ‘খরগোশের সঙ্গে কুঁকড়ে যাবেন না’। তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে প্রচ- আগ্রহী ছিলেন। আগ্রহ ছিল প্রযুক্তি আর খেলাধুলা নিয়েও। চল্লিশের দশক থেকেই প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবনে নিত্য উপস্থিত এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।


বয়সের ভারে ন্যুব্জ শেষ দিনগুলো

ব্রিটিশ ইতিহাসে রাজপরিবারে রাজা বা রানীর জীবনসঙ্গীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় বেঁচে ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। ১৯৯৭ সালে বিয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেওয়া ভাষণে রানী এলিজাবেথ তাঁর স্বামীর প্রশংসা করে বলেন, ‘সব সময়েই তিনি আমার শক্তি। আমি এবং তাঁর গোটা পরিবার তাঁর কাছে, তিনি যতটা দাবি করেন বা যতটা জানেন, তাঁর চেয়েও অনেক বেশি ঋণী।’

২০১১ সালের জুনে ৯০তম জন্মদিনে তিনি খুব খোলামেলাভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতার কথা স্বীকার করেছিলেন। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের কাজের চাপ কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। প্রিন্স ফিলিপ বলেন, ‘আমি মনে করি আমার কাজটা আমি করেছি। এখন নিজের জীবন কিছুটা উপভোগ করতে চাই। কম দায়দায়িত্ব, কম দৌড়াদৌড়ি, তারপর কী বলতে হবে, সেটা নিয়েও কম ভাবতে হবে। তিনি জানান, আমার স্মৃতিশক্তি তো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছুই আমি মনে করতে পারি না। আমি তো অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে আনছি।’

প্রিন্স ফিলিপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রাজপরিবারকে ভিতরে ও বাইরে সমর্থন দিয়ে যাওয়া। বিশেষ করে যখন প্রতিকূলতা নেমে আসে, তখন। দীর্ঘ শাসনকালে তিনি ছিলেন রানীর পেছনে মস্তবড় একটা শক্তি। প্রিন্স ফিলিপ তাঁর জীবনী লেখককে বলেছিলেন, রানী যাতে শাসনকাজে সফল হন, সেটা দেখাই তাঁর প্রধান কাজ বলে তিনি সব সময় মনে করেছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রিন্স ফিলিপ শারীরিক অসুস্থতার কারণে লন্ডনের কিং এডওয়ার্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে লন্ডনের সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে তাঁর সফল অস্ত্রোপচারও হয়েছিল।


ফলের ঝুড়ি থেকে তৈরি খাঁচায় ঘুমন্ত সেই ছেলেটি...

এডিনবার্গের ভবিষ্যতের ডিউক ফিলিপ ব্যাটেনবার্গ ১৯২১ সালের ১০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং প্রিন্সেস অ্যালিস ব্যাটেনবার্গের পরিবারের পঞ্চম সন্তান ছিলেন ফিলিপ। তাঁর জন্ম গ্রিসের করফু দ্বীপের ভিলা মনরেপোসে। বাবা-মায়ের সন্তানদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছেলে। খুবই আদরে কেটেছে তাঁর শিশুকাল।

তাঁর জন্মের এক বছর পর ১৯২২ সালে এক অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী এক আদালতের রায়ে প্রিন্স ফিলিপের পিতার পরিবারকে গ্রিসের ওই দ্বীপ থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। তাঁর কাজিন রাজা পঞ্চম জর্জ তাঁদের উদ্ধার করে আনতে একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ পাঠান, যে জাহাজে করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্রান্সে। বলা হয়ে থাকে ছেলেটি (ফিলিপ) ফলের ঝুড়ি থেকে তৈরি একটি খাঁচায় ঘুমাচ্ছিল। নির্বাসিতরা প্যারিসের শহরতলীর সেন্ট-ক্লাউডের এস্টেটে বসতি স্থাপন করেছিলেন। শুরু হয় তাঁদের নতুন জীবন।


ছিন্নভিন্ন পরিবার প্রতি মুহূর্তে লড়িয়েছে তরুণ ফিলিপকে

শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলো প্রিন্স ফিলিপের জন্য খুব বেশি সুখকর ছিল না। অবশ্য নির্বাসিত রাজপুত্রের জীবন চ্যালেঞ্জের হবে এটাই স্বাভাবিক। গ্রিক রাজপরিবারের বংশধররা ফ্রান্স ও ব্রিটেনে মোটামুটি একাকীই ছিল। এর মধ্যেই ফিলিপের বাবা-মার বিয়ে ভেঙে যায় এবং পুরো পরিবারটি ইউরোপের বিভক্ত যুদ্ধে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তাঁর বাবা প্রিন্স অ্যান্ড্রু ফরাসি রিভেরায় স্থির হয়েছিলেন, অন্যদিকে ফিলিপের মা আক্রান্ত হন সিজোফ্রেনিয়ায়। ফিলিপের বোনেরা জার্মানি থেকে অভিজাতদের বিয়ে করেছিল, তাই যুদ্ধের শুরুতে রাজপুত্র তাঁর সব আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে ছিলেন। এরপরও যুবরাজ কিশোর বয়সে আরও কিছু আত্মীয়-স্বজনকে হারান। ফিলিপের বয়স যখন ১৬ তখন তাঁর নিজের বোন সিসিলিয়া স্বামী-সন্তান-শাশুড়িসহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এক বছর পর তাঁর চাচা ও অভিভাবক লর্ড হ্যাভেন মিলফোর্ড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ফলে দারুণ চ্যালেঞ্জেই কেটেছে ফিলিপের প্রারম্ভিক জীবন।


থামেনি শিক্ষাজীবন

এত চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও ফিলিপের শিক্ষাজীবন কখনই থেমে থাকেনি। নিজের আগ্রহ ও পরিবারের লোকজনের সহযোগিতায় চলতে থাকে পড়াশোনা।

ফ্রান্সে লেখাপড়া শুরু করার পর সাত বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে মাউন্টব্যাটেন পরিবারে তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে চলে আসেন। এরপর ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ডে স্কুলজীবন শুরু হয়। পরে তিনি জার্মানি চলে যান, যেখানে তিনি ১৯৩৩ সালে একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর চলে আসেন স্কটল্যান্ডে। ১৯৩৯ সালে তিনি ডার্টমাউথ রয়েল নেভাল কলেজে প্রবেশ করেন। ফিলিপ ১৯৪০ সালে স্নাতক হন এবং তিনি মিডশিপম্যান পদে ভূষিত হন। চার মাস তিনি রমিলিজ যুদ্ধের কাজ করেন।


সামরিক জীবন

নেভাল একাডেমির সফল ছাত্র ফিলিপ স্নাতক শেষ করতে না করতেই শুরু করেন তাঁর সামরিক জীবন। তখন সারা বিশ্বে যুদ্ধের দামামা বাজছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রিন্স ফিলিপ নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪০ সালে, অক্টোবরে যখন ইতালীয় সেনারা গ্রিসের ভূখন্ডে আক্রমণ করে, তখন ফিলিপ ভূমধ্যসাগরীয় বহরের অংশ হিসেবে যুদ্ধবাহী ভ্যালিয়েন্টে কর্মরত ছিলেন। এরপর ১৯৪৩ সালে সিসিলিতে অবতরণকারী ব্রিটিশ-আমেরিকান অবতরণের জন্য কভার সরবরাহসহ অনেক সামরিক অভিযানে অংশ নেন তিনি। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফিলিপ ব্রিটেনে ফিরে এসে উইল্টশায়ারের ক্রুজার রয়েল আর্থারের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।


টুকরো তথ্যে প্রিন্স ফিলিপের  ৯৯  বছর

১. বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ প্রিন্স হিসেবে পরিচিত হলেও প্রিন্স ফিলিপ মূলত একজন গ্রিক। তাঁর জন্ম গ্রিসের এক রাজপরিবারে। ফিলিপের দাদা ছিলেন হেলেনসের রাজা প্রথম জর্জ। ফিলিপের বাবা ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। মা ছিলেন ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস অ্যালিস। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের মাউন্টব্যাটেনরা ফিলিপের মায়ের দিককার আত্মীয় ছিলেন।

২. ১৯২২ সালে এক অভ্যুত্থানের পর গ্রিসের রাজপরিবার ক্ষমতা হারায়। বিপ্লবীরা তাদের নির্বাসনে পাঠায়। ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পুরো পরিবারকে উদ্ধার করে ফ্রান্সে নিয়ে আসেন।

৩. আমাদের অনেকের মতো প্রিন্স ফিলিপের জন্ম সনদের জন্মতারিখ আর প্রকৃত জন্মতারিখ এক নয়। জন্ম সনদে প্রিন্স ফিলিপের জন্মতারিখ লেখা আছে ১৯২১ সালের ২৮ মে। কিন্তু তাঁর জন্ম ১৯২১ সালের ১০ জুন। এই গরমিলের কারণ হচ্ছে গ্রিসে তখনো পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো না।

৪. নির্বাসন-পরবর্তী জীবনে ফিলিপের মা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। তাঁকে একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে ফিলিপের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল একেবারেই অল্প।

৫. প্রিন্স ফিলিপ এবং প্রিন্সেস এলিজাবেথের বিয়ে হয় ২০ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে। তাঁদের বিয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে এসেছিল ১০ হাজারের বেশি টেলিগ্রাম। সারা দুনিয়া থেকে পাঠানো হয় প্রায় আড়াই হাজার উপহার। ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর হাতে বোনা সুতা দিয়ে তৈরি এক লেস, যার ওপর লেখা ছিল ‘জয় হিন্দ’।

৬. ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রিন্স ফিলিপই একজন যিনি দীর্ঘদিন ধরে কোনো রানীর জীবনসঙ্গী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

৭. প্রিন্স ফিলিপ প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তাঁর কাজের জন্য পরিচিত। কিন্তু ১৯৬১ সালে ভারত সফরে গিয়ে তিনি একটি বাঘ শিকার করেন এবং তারপর আবার সেই বাঘের সঙ্গে ছবিও তুলেছিলেন। এ নিয়ে সে সময় তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।

৮. প্রিন্স ফিলিপ নানা সময়ে মুখ ফসকে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যার জন্য তাঁকে এবং রাজপরিবারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে রানীর সঙ্গে এক সরকারি সফরে চীন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চীনা মেয়েদের ‘কুতকুতে চোখওয়ালা’ বলে মন্তব্য করেন। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এক আদিবাসী ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কি এখনো একজন আরেকজনের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করো?’

৯. বাবা হিসেবে প্রিন্স ফিলিপ নাকি ছিলেন বেশ কড়া মেজাজের। বাবার ধমক খেয়ে ছোটবেলায় প্রিন্স চার্লসকে প্রকাশ্যে কাঁদতেও নাকি দেখা গেছে।

১০. পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তাঁর ব্যবহার নিয়েও অনেক রকম কথা চালু ছিল। ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ অভিযোগ করেছিলেন ডায়ানাকে প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগের কোনো সত্যতাই পাওয়া যায়নি সরকারি তদন্তে। বরং পরবর্তীকালে রাজপরিবারের তরফে প্রকাশ করা প্রিন্সেস ডায়ানার কিছু চিঠিতে বরং দুজনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে প্রিন্সেস ডায়ানা প্রিন্স ফিলিপকে ‘ডিয়ার পা’ বলে সম্বোধন করেন।

সর্বশেষ খবর