বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাবিশ্বে অনেক কিছু

জামশেদ আলম রনি

করোনাবিশ্বে অনেক কিছু

ভ্যাকসিন পৌঁছায়নি এখনো ৮৮ দেশে

করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকা গ্রহণ। বিশ্বের অনেক দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও এখনো ৮৮টি দেশে পৌঁছায়নি টিকা। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা এ ভাইরাস প্রতিরোধের টিকা তৈরিতে সচেষ্ট ছিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের বিজ্ঞানীরা টিকা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। একসময় নতুন এ টিকা উপযুক্ত ও নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ায় এর প্রয়োগ শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৯০ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে মানুষকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসাধারণের ৭০ শতাংশকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা গেলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব। আর এটি অর্জন করা গেলে নতুন করোনাভাইরাস প্রকৃতি থেকে বিনাশ না হলেও তা মানুষের মধ্যে তীব্র রোগ কিংবা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারবে না।  বিশ্বজুড়ে টিকা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য এটাই।

 

বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ লাগামহীন

বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমাগত বাড়ছেই। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১৪ কোটি ২৮ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছে ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৯ জন। বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ এবং বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ। সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হওয়ার হার ৯৮ শতাংশ এবং মারা যাওয়ার হার দুই শতাংশ। বিশ্বে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন এবং বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল। বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে- ভারত, ব্রাজিল, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন, তুরস্ক, ইতালি, স্পেন ও জার্মানি। ইউরোপের দেশগুলো করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দিচ্ছে। এ জন্য বায়োএনটেক ও ফাইজারের ১০ কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ভরে গেছে। কানাডায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কয়েক বিলিয়ন ডলার পুনর্বাসন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জনজীবন স্বাভাবিক চলছে লন্ডনে

করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শেষ হলো। ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটা এগিয়ে যুক্তরাজ্য। দেশটি বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক। রাজধানী লন্ডনে মানুষ স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এটা বিশাল জাতীয় কৃতিত্ব। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস কাজের ফলে এটা সম্ভব হলো। জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে এক ডোজ করে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করতে চায় ব্রিটেন। ইউরোপের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ এ দেশটিতে মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যে খুবই ছোঁয়াচে ও মারাত্মক করোনাভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অদৃশ্য ব্যাধি করোনার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে গোটা দুনিয়া। বিশ্ববাজারে ভ্যাকসিনের ৭৮০ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ ছাড়া রয়েছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না এ অতিমারীর দাপট। আর এই মহামারী যে এখনই নিয়ন্ত্রণে আসবে না, বিশ্বব্যাপী করোনাকে ঠেকাতে যে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জেনারেল টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস। পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে টানা সাত সপ্তাহ ধরে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর টানা চার সপ্তাহ ধরে বাড়ছে কভিডের কারণে মৃত্যু। তাই সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এ  তথ্য জানান।

 

হুলুস্থুল অবস্থা ভারতে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে ভারতে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য এই ধাপের সংক্রমণে নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে। ভারতের জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশও ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে উত্তরপ্রদেশ কর্তৃপক্ষ ভীষণ হিমশিম খাচ্ছে, নাকাল হয়ে পড়েছে সাধারণ জনগণ। বিবিসি জানিয়েছে, কানওয়াল জিত সিংয়ের ৫৮ বছর বয়সী বাবা নিরঞ্জন পাল সিং গত শুক্রবার মারা গেছেন। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে শয্যা না থাকায় পরপর চারটি হাসপাতাল ঘুরতে হয়েছে তাকে।

কানওয়াল বলেন, এটা আমার জন্য হৃদয়বিদারক দিন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি যদি সঠিক সময় চিকিৎসা পেতেন, তাহলে বেঁচে থাকতেন। কিন্তু পুলিশ, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী কিংবা সরকারের কেউ সাহায্য করল না। প্রথম ধাপের সংক্রমণে উত্তরপ্রদেশ বিপাকে না পড়লেও দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণে এসে চরম বেকায়দায় পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে লক্ষেèৗ, বারানসি, কানপুর এবং এলাহাবাদের মতো অন্য বড় শহরগুলোতে পরীক্ষা কেন্দ্রে, হাসপাতালগুলোতে, শ্মশানের মাঠে ভিড়ের ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপক হারে ওঠে আসছে। গত সোমবার এক দিনেই ভারতে ১ হাজার ৭৬১ জন মারা গেছেন। ভারতে এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ জন। একই সময় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ছাড়িয়েছে। রাজধানী দিল্লিতেও এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। ভারতের নতুন ধরনটি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক। ভারত ছাড়িয়ে এই ধরন ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। তাই করোনার এই ধরন নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষিদ্ধের লাল তালিকায় ইতিমধ্যে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

মদের জন্য মিছিল ভারতে

লকডাউন ঘোষণার পরপরই মদ কেনার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় দিল্লির বিভিন্ন দোকানে। এ সময় ক্রেতাদের মধ্যে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই। লম্বা লাইন ভেঙে দোকানের মধ্যে ঢুকে পড়েন অনেক ক্রেতা। বেশ কয়েকটি দোকানে হাতাহাতিও হয় ক্রেতাদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয় বেশ কয়েকটি স্থানে। একেকজন ক্রেতাকে ১০ থেকে ১২টি করে মদের বোতল কিনে নিতে দেখা যায়। বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণ পরই শেষ হয়ে যায় স্টক। দিল্লিতে মদের দোকানে ভিড় দেখে মনেই হচ্ছে না করোনা আক্রান্ত বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দেশটি। মদের দোকানের বেপরোয়া লাইনে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক না পরে লকডাউনের সাত দিন ‘ওষুধ নয় মদ চাই’-এই কথাটির সত্যতা প্রমাণ দিয়েছেন তারা। এদিকে, দিল্লিতে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছেন  মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

 

বাজে অবস্থা ব্রাজিলে

বিশ্বে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম ব্রাজিল। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দেওয়া তথ্যানুসারে, বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার তিন নম্বরে রয়েছে ব্রাজিল। সে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৫ জন এবং মারা গেছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ জন। এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের নারীদের উদ্দেশে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানিয়েছে, সম্ভব হলে করোনা মহামারী চলা অবস্থায় গর্ভধারণ থেকে তারা যেন বিরত থাকে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহেও দেশটি সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাবে না।

করোনার দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়ায় এমন ধরন প্রথম ব্রাজিলে শনাক্ত হয়। যা বিশ্বে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বড় কারণ। প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ক্রমাগত ভাইরাসের ভয়াবহতাকে খাটো করে আসছিলেন। এখন তিনিই দেশজুড়ে ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করছেন।

 

দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরন প্রতিরোধী টিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার ধরন প্রতিরোধী টিকা আনছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। চলতি বছরের শেষ নাগাদ নতুন টিকা আসতে পারে। গবেষণায় বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ধরনটির বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কম কার্যকর। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অস্ট্রিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সারা ওয়াল্টার্স বলেছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত উপসংহারে যাওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক গবেষণা এখন পর্যন্ত হয়নি। তবুও সম্ভাব্য প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটির বিরুদ্ধে একটি পরিবর্তিত সংস্করণের টিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, গবেষকরা আশা করছেন, পরিবর্তিত সংস্করণের এই টিকা চলতি বছরের শেষ নাগাদ তৈরি হয়ে যাবে। জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার ধরনটি অনেক বেশি সংক্রামক।

 

ঘরের বাইরে মাস্ক নিয়ে নতুন গবেষণা

করোনা সংক্রমণ এড়াতে সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন গবেষকরা। তবে এবার তাঁরা সব সময় মাস্ক পরার গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের বিজ্ঞানী জোস লুইস জিমেনেজ বলেছেন, ঘরের ভিতরের চেয়ে ঘরের বাইরে নিরাপদ। কারণ, মানুষ ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করে; ঘরের ভিতর নয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে জিমেনেজ বলেন, ঘরের ভিতর করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, ঘরের ভিতর আবদ্ধ থাকে। সেখানে বাতাসের চলাচল কম থাকে। তবে ঘরের বাইরে কম বিপজ্জনক। কারণ, এখানে বাতাসের চলাচল বেশি থাকে। জিমেনেজ এও বলেন, কম ঝুঁকি মানে এটা নয় যে, একেবারেই ঝুঁঁকি নেই। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আমেশ আদালজা বলেন, বদ্ধ ঘরে সামাজিক দূরত্ব না থাকলে মাস্ক পরতে হবে। বিশেষ করে যারা টিকা নেননি।

 

স্কুল খুলে দিয়েছে ইসরায়েল

করোনার প্রকোপ কমে আসায় অনেক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ইসরায়েল। বাইরে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে দেশটি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও। তবে, নিয়ম মেনে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে। দেশটিতে ৫০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছে। দৈনিক করোনা সংক্রমণ ১০০-এর বেশি হওয়ার পরও এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পুরো প্রক্রিয়া নজরদারির মধ্যে থাকবে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

আমেরিকায় সবকিছুই স্বাভাবিক

যুক্তরাষ্ট্র ভ্যাকসিন প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য দেখিয়েছে। দেশটির পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকের অর্ধেক অন্তত ভ্যাকসিনের একটি ডোজ গ্রহণ করেছে। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি রবিবার এই তথ্য জানিয়েছে। সিডিসি জানায়, দেশটির ১৮ থেকে তার বেশি বয়সী প্রায় ১৩ কোটি লোক ভ্যাকসিনের অন্তত একটি ডোজ গ্রহণ করেছে, যা বয়স্ক জনসংখ্যার ৫০.৪ শতাংশ। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে টিকা দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  দেশটিতে বর্তমান পরিস্থিতি অনেটাই স্বাভাবিক বলা চলে। তবে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

 

কোয়ারেন্টাইনবিহীন অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড সীমান্ত

অস্ট্রেলিয়া থেকে স্বাধীনভাবে দেশে ফিরতে শুরু করেছে নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দারা। গত ১২ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণ উন্মুক্ত হয়, যাকে ‘ট্রাভেল বাবল’ বলা হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয় কোয়ারেন্টাইন। গত অক্টোবর থেকে নিউজিল্যান্ডের বেশির ভাগ ভ্রমণকারী কোয়ারেন্টাইন ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারছে। সীমান্ত বন্ধের বছর পার হলে ‘ট্রাভেল বাবল’ চালু করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, আমরা উভয়পক্ষই সীমান্ত খুলে দিয়েছি। আমরা জানতাম, অবশ্যই দুই দেশের সীমান্ত সংযুক্ত থাকবে। আমরা একসঙ্গে একটা যাত্রার অংশ হতে চলেছি। আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়া এটা গ্রহণ করবে। যদিও সম্প্রতি অকল্যান্ড বিমানবন্দরের এক কর্মীর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এবং বিমানবন্দরের ওই কর্মী টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছিলেন।

 

টিকা নেওয়ার পর আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম

গবেষণায় দেখা গেছে, কভিড-১৯-এর টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কম। টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত ২০০ জনের ওপর এক গবেষণায় নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়টির কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষাগারে মোট ৬ হাজার ১৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১ হাজার ৭৫২ জনের করোনা পজিটিভ হয়। এর মধ্যে ২০০ জন ছিলেন টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণকারী। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০০ জনের মধ্যে ১৬৫ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। ৩৫ জনকে (১৭.৫ শতাংশ) হাসপাতালে ভর্তি হতে হলেও তাদের মারাত্মক কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।

 

করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়ানোর প্রমাণ

কভিড-১৯-এর জন্য দায়ী সার্স-সিওভি-২ ভাইরাস যে মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় সে বিষয়ে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ’ ও ‘দৃঢ় প্রমাণের’ দাবি করেন একদল গবেষক। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নির্গত ড্রপলেট বা জলকণার এবং সেসব ড্রপলেট যে তলে পড়ে তা দূষিত হওয়ার পর সে সবের সংস্পর্শে এসে অন্যরা সংক্রমিত হয় বলে মহামারীর শুরুর দিক থেকে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩২টি দেশের ২০০ বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা চিঠিতে করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এমন প্রমাণ আছে বলে জানিয়েছিলেন। নতুন এ গবেষণাও একই কথা বলছে। গবেষক দলের এক সদস্য কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসে-লুইস জিমেনেজ বলেন, বায়ুবাহিত সংক্রমণ যে অনেক বেশি এবং বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়- আমাদের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ তা সমর্থন দিচ্ছে। তিনি বলেন, এখন জরুরি হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলোর তাহলে বায়ুবাহিত সংক্রমণ কমানোর দিকে নজর দেওয়া। তারা বলেন, উপসর্গহীন ব্যক্তি মোট সংক্রমণের ৪০ শতাংশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর