বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাঙল বিল গেটসের সংসার

আবদুল কাদের

ভাঙল বিল গেটসের সংসার

২৭ বছর। সময়টা কম নয়। এতগুলো বছর একে অন্যের হাতে হাত রেখে কাটিয়েছিলেন জীবন। পেশাগত জীবনে প্রেম-প্রণয়; এরপর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে বিশ্বজুড়ে অর্জন করেছেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে গেটস দম্পতির পদক্ষেপগুলো তাঁদের নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়। এত বছর একসঙ্গে থাকার পর হঠাৎ গেটস দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন বিচ্ছেদের।  তবে, বিচ্ছেদ হলেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এর কাজ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

 

সাত বছরের প্রেম তারপর বিয়ে...

১৯৭৫ সালে যাত্রা শুরু করে মাইক্রোসফট করপোরেশন। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটস যার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই মাইক্রোসফট করপোরেশনে প্রথম পরিচয় গেটস দম্পতির। এরপর তাঁদের সাত বছর প্রেম, অতঃপর বিয়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আশির দশকের সেই ভালোবাসার গল্প। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। ১৯৮৭ সালে মেলিন্ডা মাইক্রোসফট করপোরেশনের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানের একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। এ ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। এরপর দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় তাঁদের তুমুল প্রেম। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে বিল গেটস বলেছেন, আমরা একে অপরের খুব যত্ন করেছি। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল। হয় আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ হবে, নয়তো আমাদের বিয়ে করতে হবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট’ জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, বিয়ে করা তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। আর মাইক্রোসফট তাঁর জীবনে বড় অবদান রাখলেও সেটির অবস্থান ২ নম্বরে। বিয়ের পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে বিল গেটসের তালিকা করার কথা মনে করে নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্রে হেসে উঠেছিলেন মেলিন্ডা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, বিয়ে করবে কি না, সে ব্যাপারে বিল গেটসকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। মেলিন্ডা বলেছিলেন, বিল গেটসকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলাম। অতঃপর, ১৯৯৪ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। হাওয়াই দ্বীপের লানাইয়ে হয়েছিল সেই বিয়ের আয়োজন। এরপর বড় হতে থাকে মাইক্রোসফট করপোরেশন। পাশাপাশি তিন সন্তান এবং অঢেল সম্পদ নিয়ে দাম্পত্য জীবন পার করছিলেন বিল ও মেলিন্ডা। কিন্তু গত বছর তাঁরা এ প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান, ব্যস্ত হয়ে পড়েন দাতব্যকাজে। এ জন্য ২০০০ সালেই, অর্থাৎ অবসরের আগেই গড়ে তুলেছিলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে এ ফাউন্ডেশন। কিন্তু যে প্রেমের সম্পর্ককে তাঁরা বিয়েতে রূপ দেন, সোমবার সেই সম্পর্কেরই ইতি টানেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস দম্পতি। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে বেছে নেন বিচ্ছেদের পথ। তবে বিচ্ছেদের কারণ সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, দুজন দুজনের পৃথিবী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কাউকে সময় দিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বছর দুয়েক আগে মেলিন্ডা বলেছিলেন, তাঁদের বিয়েটা বেশ কঠিন পর্যায়ে ঠেকেছে। বিল নিয়মিত দিনের ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। পরিবারের জন্য তাঁর সময় বের করা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ২৫তম বিবাহবার্ষিকীতে সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা এ কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের পথেই হাঁটলেন এই সেলেব দম্পতি।  মেলিন্ডা আরও বলেছেন, কাজ এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সন্দিহান ছিলেন বিল। এমনকি সে হোয়াইট বোর্ডে বিয়ের ভালো মন্দ দিকগুলো লিখতে শুরু করেন। সোমবার টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বার্তায় গেটস দম্পতি বলেন, ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে আমরা বিয়ের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিচ্ছেদের ঘোষণার পর টুইটবার্তায় বিল ও মেলিন্ডা বলেন, গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের  স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে।

 

বিল-মেলিন্ডা; দানবীর ও তারকা দম্পতি...

বিল গেটস, টানা এক দশক ধরে রেখেছিলেন শীর্ষ ধনীর খেতাব। বাবা-মা চেয়েছিলেন বিল গেটস আইনজীবী হোক। কিন্তু তিনি সারা দিন পড়ে থাকতেন কম্পিউটার নিয়ে। স্কুলেই প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি, নিজে নিজেই লিখে ফেলেন গেমিং প্রোগ্রামিং। স্কুল থেকে বহিষ্কার হন নীতিবিরুদ্ধ অপারেটিং সিস্টেম চালানোর জন্য। উল্টো হার্ভার্ডে এসে প্রোগ্রামিংয়ে আরও মনোযোগী হন। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায়ও করেন ফাঁকিবাজি। স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরে ১৫৯০ পেয়েও পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে গড়ে তোলেন মাইক্রোসফট। যখন শুরু করেছিলেন তখন তাঁরা চেয়েছিলেন নিজেরাই তা ব্যবহার করবেন। পরে ঠিক করলেন সেই কম্পিউটার বিক্রিও করবেন তাঁরা। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এনে বদলে দিলেন পুরো কম্পিউটার জগৎ। মাইক্রোসফট হয়ে উঠল বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানির একটি। সেই সাফল্যেই বিল গেটস হয়ে ওঠেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী বনে যান। হয়ে ওঠেন এক সম্পদশালী তারকা (সেলেব)। এই ধনকুবেরের সহধর্মিণী ছিলেন মেলিন্ডা অ্যান ফ্রেঞ্চ। স্কুলের গ-ি পেরিয়ে মেলিন্ডা উরসুলিন অ্যাকাডেমি অব ডালাস থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষে যোগ দেন মাইক্রোসফট করপোরেশনে। মাইক্রোসফটের মাল্টিমিডিয়া প্রকল্প হিসেবে পাবলিশার, মাইক্রোসফট বব, এনকার্টা এবং এক্সপিডিয়ার উন্নয়নে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অল্প কিছুদিন পরই মেলিন্ডা মাইক্রোসফট ত্যাগ করে সংসারী হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি স্বামী বিল গেটসের হাত ধরে গড়ে তোলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশু ও হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে গেটস দম্পতি হয়ে ওঠেন দানবীর দম্পতি। সাধারণ মানুষের সেবায় প্রায় ৫৪ বিলিয়ন  মার্কিন ডলার খরচ করে ফেলেন নির্দ্বিধায়।

 

কার কত সম্পদ!

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণায় আলোচনায় উঠে এসেছে শীর্ষ ধনকুবেরের সম্পদের হিসাবনিকাশ। ফোর্বস ম্যাগাজিনের (ফোর্বস-২০২১) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ধনীর তালিকায় বিল গেটসের অবস্থান চতুর্থ। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মালিক মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমির মালিক তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি অঙ্গরাজ্যে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের মালিকানায় রয়েছে এসব কৃষিজমি। এর মধ্যে লুইজিয়ানায় ৬৯ হাজার ৭১ একর, আরকানসাসে ৪৭ হাজার ৯২৭ একর ও নেব্রাস্কায় ২০ হাজার ৫৮৮ একর কৃষিজমি রয়েছে। তাঁদের বিচ্ছেদ হওয়ায় এখন এই সম্পত্তির ভাগের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আপস-রফা হিসেবে মেলিন্ডা কী পাবেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। এদিকে স্পেয়ার্স ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসে মেলিন্ডা গেটসের সম্পদের হিসাব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেলিন্ডা অ্যান ফ্রেঞ্চ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটসের সহধর্মিণী। মেলিন্ডা গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

 

এক ছাদের নিচে ২৭ বছর

সময়টা ১৯৮৭ সাল। মেলিন্ডা মাইক্রোসফটে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। একই বছর নিউইয়র্কে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে দুজনের প্রথম দেখা। অনুষ্ঠানে পাশাপাশি, খুব পাশাপাশি বসা মেলিন্ডা আর বিল গেটস। বিল গেটস মেলিন্ডার দিকে তাকালেন। ভালো লেগে গেল মেলিন্ডাকে। তখন কোথা থেকে যেন উড়ে এলো প্রেম। সেই থেকে দুজনের প্রেম। প্রেমের এক বছর পর, বিল গেটস কিছু প্রস্তাবনার তালিকা তৈরি করলেন। বিয়ে করলে কি কি হবে, তার তালিকা। টানা ৭টি বছর তারা প্রেমে হাবুডুবু খেলেন। অবশেষে ১৯৯৪ সালে বিল গেটস ও মেলিন্ডা অ্যান ফ্রেঞ্চ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর কেটে গেল দীর্ঘ ২৭টি বছর। সব মিলে তাঁদের প্রেম ও দাম্পত্য জীবন নিয়ে কেটে গেছে ৩৪টি বছর। এ সময় তিন সন্তানের জনক-জননী হন গেটস দম্পতি। বড় মেয়ে জেনিফারের বয়স এখন ২৫ বছর। এরপরে রয়েছে ছেলে রোরি (২১) এবং ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ফোইবি। তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার, অর্থবিত্তে সয়লাব পরিবার, দাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনায় সুনাম রয়েছে গেটস দম্পতির। আকস্মিক ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটানোর ঘোষণায় বিস্মিত বিশ্বের সব মানুষ। তাঁদের সন্তানদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। তবুও বিয়ে ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন গেটস দম্পতি।

 

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন

বিল ও মেলিন্ডা বিয়ে করেন ১৯৯৪ সালে। বিয়ের ছয় বছর পর, অর্থাৎ ২০০০ সালে তাঁরা গড়ে তোলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। তাঁদের কর্মক্ষেত্রও এক। ফাউন্ডেশন নিয়ে দুজনেই ভীষণ ব্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানামুখী কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কাজ করছে গেটস দম্পতির দাতব্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সচেতন, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান বিশ্ব গড়ে তোলা। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ফাউন্ডেশন প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ২০০৮ সালে পোলিও প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার অনুদান দেন বিল গেটস। বর্তমানে মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায়ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ফাউন্ডেশনটি প্রায় ১৫ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির দাতা হিসেবে আছেন আরও কয়েক শীর্ষ ধনকুবের। ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ফাউন্ডেশনের আকার ৪ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার।

 

 

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ!

দীর্ঘ ২৭ বছর। সময়টা কম নয়। এতগুলো বছর একে অন্যের হাতে হাত রেখে কাটিয়েছিলেন জীবন। হঠাৎই বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন গেটস দম্পতি। তাঁদের এই বিচ্ছেদের ঘোষণা বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় দাতব্য সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর জন্য ছিল  ভূমিকম্পের মতো। তবে দুজনই আশ্বস্ত করেছেন, তাঁদের বিচ্ছেদের প্রভাব ফাউন্ডেশনে পড়বে না। তবে সাধারণ মানুষের আগ্রহ এখন শীর্ষ ধনকুবেরের বিচ্ছেদে, কত ব্যয়বহুল হবে এই বিচ্ছেদ? কারণ, বিশ্বের ধনকুবেরের তালিকায় থাকা বিল গেটসের হিসাবনিকাশ হয়তো এতটা সহজ হবে না। কেননা, ২০০৯ সালে ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ দেখেছিল বিশ্ববাসী। ডিভোর্সের পর ম্যাকেঞ্জি বেজোস পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদ। তাই বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আপস-রফা হিসেবে মেলিন্ডা গেটস কী পাবেন, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। তবে গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাউন্ডেশনের কৌশলগত বিষয়ের অনুমোদন, সব আইনি ইস্যু এবং সংস্থার সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণের জন্য একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা।

 

 

আরও যত ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ

অ্যালেক ও জোসেলিন ওয়াইল্ডেনস্টেইন

৩.৮ বিলিয়ন ডলার

ধনকুবের ব্যবসায়ী অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেইন এবং জোসেলিন ওয়াইল্ডেনস্টেইনের সংসার নিয়ে অদ্ভুত সব ঘটনা জানা যায়। আকাশছোঁয়া টাকার পাহাড় ছিল অ্যালেকের। বিয়ে করেন জোসেলিনকে। সিনেমা পাড়ায় তারকাখ্যাতি ছিল তাঁর। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী জোসেলিনের টাকা ওড়ানো দেখে এক কথায় হতভম্ব হয়ে যান অ্যালেক। তাঁর পাগলামির চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পায় দুই মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্লাস্টিক সার্জারির পর। বিড়ালের মতো মুখায়ব তৈরি করেন। জোসেলিনের দাবি, তাঁর স্বামী বিড়াল পছন্দ করে তাই তাঁর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে থাকতেই এ কা-টা করেছেন। ১৯৯৭ সালে স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া, অবাধ যৌনতার অভিযোগ এনে ডিভোর্স চান জোসেলিন। দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পর তাঁদের ডিভোর্স হয়। তবে এ জন্য স্বামী অ্যালেকের পরিশোধ করতে হয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। জানা গেছে, ডিভোর্সের ১৩ বছর পর আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের চেক পাঠিয়ে মীমাংসা হয় দুজনের।

 

 

ডিভোর্সে খরচ সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার

উপস্থাপিকার সঙ্গে প্রেম

অনলাইনে বেচাকেনার সবচেয়ে বড় বাজারের মালিক জেফ বেজোস। অ্যামাজনের হৃৎপি- জেফ বেজোস বিশ্বের শীর্ষ ধনী। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করেছে ২৩ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পণ্য। সব মিলিয়ে ১৩১ বিলিয়ন ডলারের মালিক জেফ। তিনি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৪ সালে। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রথম কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ম্যাকেনজি। ম্যাকেনজির সঙ্গেই পরিচয় ছিল আরও বছর চারেক আগে। অ্যামাজনের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে জেফ বেজোস আর ম্যাকেনজির প্রেম। শূন্য থেকে শুরু করা জেফ বেজোস এক দশকের ব্যবধানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কাতারে নাম লেখান। এরই মাঝে ম্যাকেনজিকে বিয়ে করেন জেফ। তাদের সংসারে চার সন্তান। তিলে তিলে সাজানো সংসারে ফাটল ধরে বছর দুয়েক আগে। নেপথ্যে জেফ বেজোসের পরকীয়া। ইংলিশ মিডিয়ায় বোমা ফাটল, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমে মজেছেন টাকার সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া মানুষটি। সন্তান, সংসার রেখে ফক্স টিভির এক উপস্থাপিকার কাছে ছুটে যাচ্ছেন প্রায়ই। এখন উপস্থাপনা না করলেও বেশ জনপ্রিয় সেই সুন্দরীর নাম লরা সানচেজ। শুরুর দিকে প্রেমের বিষয়টি লুকিয়ে রেখে মুখ বুজে ছিলেন জেফ। কিন্তু সত্য আর কতদিন চাপা থাকে। মিডিয়ায় জেফ আর লরা সানচেজের গোপন পরকীয়ার সব খবর ফাঁস হয়ে যায়। তখন থেকেই স্ত্রী ম্যাকেনজি বিচ্ছেদের পথ খুঁজছিলেন। পরকীয়ার টানাপোড়েন বইতে চান না জেফ বেজোস। মান-সম্মান যা যাওয়ার তা গেছে। স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে এবার আইনিভাবে যাবে টাকার পাহাড়ও। জানা গেছে, স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার পরিশোধ করেন জেফ। অ্যামাজনের শতকরা ৪ ভাগ শেয়ার পাবেন স্ত্রী ম্যাকেনজি। দুই পক্ষের সম্মতিও রয়েছে এতে। জেফ-ম্যাকেনজি দম্পতির বিচ্ছেদ বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ। বিচ্ছেদের পর স্ত্রী ম্যাকেনজি হন বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী। আর জেফ বেজোস বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তকমাও ধরে রাখেন।

 

মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডক ও আনা টোর্ব

১.২ বিলিয়ন ডলার

মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের বয়স এখন ৮৮। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮.৫ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়া- সব মহাদেশেই বড় বড় টিভি, পত্রিকার মিডিয়া হাউসগুলোর শাহেনশাহ তিনি। আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন একের পর এক বিয়ে, প্রেম আর ডিভোর্সে জড়িয়ে। চার বিয়ে কান্ড নিয়ে তাঁকে নিয়ে হইচই কম হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংসার শুরু করেন, তারপর দ্বিগুণ টাকা ঢেলে ডিভোর্স দেন। তবে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে দ্বিতীয় বিয়ে বিচ্ছেদের সময়। বিয়ে করেছিলেন আনা টোর্বকে। আনা টোর্ব সাংবাদিকতা করতেন। ১৯৬৭ সালে টোর্বকে বিয়ের পরই মূলত মারডকের নাম-খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দ্য টেলিগ্রাফের সেই সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে টিকেছিল ৩০ বছর। কিন্তু মানসিক দূরত্বের কারণে আর সংসার করা হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে মারডক খরচ করেন ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা অন্যতম ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর