বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশে দেশে আজব যত আইনকানুন

সাইফ ইমন

দেশে দেশে আজব যত আইনকানুন

সন্তান নেওয়ায় বিধিনিষেধ

সন্তান যখন পৃথিবীতে আসে তখন বাবা-মার মনে আনন্দ বয়ে যায়। কিন্তু এমন যদি হয় যে বিয়ে করতে পারবেন কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না তবে? কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য- নিকটাত্মীয় বা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তান হতে পারে প্রতিবন্ধী বা শারীরিকভাবে অপরিপক্ব। আর এ কথাকে মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু প্রদেশে আপন কাজিন ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে রয়েছে আইন। বিয়ে করার স্বাধীনতা থাকলেও  এমন বিয়েতে কিন্তু সন্তান নেওয়া যাবে না। পরবর্তী প্রজন্ম যেন জিনগত ত্রুটি ও শারীরিক সমস্যা নিয়ে না জন্মায় এ জন্যই সন্তান ধারণের এমন বিধিনিষেধ। এমন অদ্ভুত আইন রয়েছে দেশটির ২৬টি প্রদেশে।  সুস্থ মানব প্রজন্ম তৈরির উদ্দেশ্যেই এই আইন।

 

ডেটিং করতে বাধ্য মেয়েরা

ডেটিং নিয়ে নিয়মের বেড়াজালে রয়েছে জাপানি মেয়েরা। জাপানে কোনো মেয়েকে কোনো ছেলে ডেটিংয়ে যেতে বললে বা কোনো প্রণয় প্রস্তাব দিলে মেয়েটি আইন অনুসারে ‘না’ করতে পারবেন না। এতে ছেলেদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। আপনার সঙ্গে কেউ যদি ডেটিং করতে না চায় তাহলে জোর করে ডেটিংয়ে গিয়ে কোনো আনন্দ নেই বইকি! আবার জাপানেই কারও বড় ভাই তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করে ছোট ভাইকে সম্মানিত করতে চাইলে আইন অনুসারে গার্লফ্রেন্ড অসম্মতি জানাতে পারবেন না। এদিকে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটা অদ্ভুত আইন প্রচলিত আছে যে, কোনো পুরুষ নারীর সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করলে তাকে  ২৫ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। ভালোবাসার ভান করা আইন করেই নিষিদ্ধ হয়েছে।

 

কুমারীত্ব যখন অভিশাপ!

কুমারীত্ব কখনো অভিশাপ হতে পারে না। কিন্তু গুয়ামের আইন অনুসারে কোনো কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেন না। অথচ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছেলেরা আশা করে তার জীবন সঙ্গী হবে একজন কুমারী। গুয়ামের নিয়মকানুন যেন উল্টো। সেখানে কিছু লোক আছে পেশাদার হিসেবে মেয়েদের কুমারীত্ব দূরীকরণে কাজ করে। তারা পয়সার বিনিময়ে এই কাজ করে থাকেন। মেয়ের বাবা-মা এর জন্য অনেক টাকাও খরচ করেন এবং কাজ শেষে মেয়েদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এমন আইনও আছে যে, কুমারী মেয়েদের সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ। এমনকি বিয়ের পর বাসর রাতেও স্বামী তার কুমারী বধূর সঙ্গে সহবাস করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রেরই কলাম্বিয়া প্রদেশে রয়েছে আরেকটি অদ্ভুত আইন।  সেখানে মেয়ের বাসর রাতে তার মার উপস্থিতি আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

ভূত বিয়ে ঐতিহ্য

ভালোবেসে মৃত মানুষকে বিয়ে করা এবং তাকে মমি বানিয়ে রাখার ঘটনা আলোড়ন তোলে। বিষয়টি অদ্ভুত হলেও এমন আইন রয়েছে ফ্রান্সে। আইনটি হলো রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে মৃত মানুষকে আয়োজন করে বিয়ে করা যাবে। তবে রাষ্ট্রপতি থেকে অনুমতি নিতে প্রয়োজন পড়বে কিছু প্রমাণাদির। মৃত মানুষটি জীবদ্দশায় ওই পুরুষ বা নারীকে ভালোবাসত কি না বা তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কি না, এসব তথ্যাদি পেশ করতে হয় রাষ্ট্রপতির সমীপে। তারপর যদি রাষ্ট্রপতি মনে করেন এই বিয়ে হওয়া উচিত তাহলেই বিয়ে করা যাবে মৃত ব্যক্তিকে। এদিকে মৃত ব্যক্তির ‘ভূত বিয়ের’ প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল। আরও অনেক জায়গাতেই অবিবাহিত মৃত ব্যক্তিদের বিয়ে দেওয়া হয়। ভূত বিয়ের ঐতিহ্য প্রায় ২৫০০ বছরের পুরাতন। চীনের প্রথম রাজবংশের সময় থেকে এই অদ্ভুত বিয়ের রীতি শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। চীনের ভূত বিয়ের রীতি বিস্তৃতি লাভ করে হান রাজবংশের সময় বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই ভূত বিয়ের রীতি প্রচলিত হওয়ার পেছনে রয়েছে অদ্ভুত সব রীতিনীতি। যা প্রচলিত হয়েছে বিভিন্ন মিথ থেকে। কোনোটা ধর্মীয় বিশ্বাস আবার কোনোটা সামাজিক বিশ্বাস। এসব আচার অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য থাকে স্বীয় গোষ্ঠীর জীবিত কিংবা মৃত মানুষের মঙ্গল কামনায়। ঘটনা যেভাবেই ঘটুক পৃথিবীতে মৃত মানুষের সঙ্গে এই ভূত বিয়ের রীতি প্রচলিত রয়েছে। সুতরাং মানুষ ভালোবেসে কারও মৃত্যুর পর ভূত বিয়ে করলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।  ভালোবাসার প্রতি এমন দৃষ্টান্ত সবাই পজিটিভ হিসেবেই দেখে।

 

বিয়ে ঘোষণার সময়

বিয়ে করা যাবে অবশ্যই, কিন্তু বিয়ে করার সময় নিয়ে রয়েছে বাধ্যবাধকতা। বিয়ে ঘোষণার সময় ইচ্ছামতো দিনে বিয়ে করা যাবে না। এমন আইন রয়েছে মোনাকোয়। দেশটির নিয়মানুযায়ী, দুটি রবিবারসহ মোট ১০ দিন হাতে রেখে বিয়ের ঘোষণা দিতে হবে। তার পরই বিয়ে করতে পারবেন হবু স্বামী-স্ত্রী। তা না করলে সে বিয়ে বৈধতা পায় না সেখানে। এ তো গেল বিয়ের প্রসঙ্গ, এখন আসি বিয়ে ভাঙার প্রসঙ্গে। পুরো বিশ্বেই ডিভোর্স রেট বেশি বর্তমানে। তবে শুধু দুটি দেশ ছাড়া। এই দুটি দেশে আসলে ডিভোর্স দেওয়াটাই বেআইনি। স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হলেও একসঙ্গে বসবাস করতেই হবে। এমন আইনের দেশ দুটি হলো- ভ্যাটিকান ও ফিলিপাইনস।  চাইলেই আপনি সেখানে ডিভোর্স দিতে পারবেন না।

 

শিশুদের অদ্ভুত আইন

বড়দের জন্য অনেক রকম অদ্ভুত আইন তো রয়েছেই। কিন্তু শিশুদের বেলাতেও রয়েছে আজব কিছু আইন। আমেরিকার আরিজোয়ানাতে শিশুরা পিয়াজ খেয়ে স্কুলে যেতে পারবে না বলে আইন আছে। ১৮৮০ সালে এই পিয়াজ নিষিদ্ধকরণ আইন পাস হয়। আমেরিকার আরেকটি আইন হলো কেউ রসুন খেয়ে গির্জা থিয়েটার ইত্যাদিতে যেতে পারবে না। ম্যাসাচুসেটসের একটা আইন কেউ গির্জায় চীনাবাদাম খেতে পারবে না। এদিকে স্পেনে রয়েছে শিশুদের নিয়ে এক আইন, রীতিমতো আইন তৈরি করে বাধ্যবাধকতা গড়ে দেওয়া হয়েছে যে, শিশুদের ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করতে হবে। খুব বেশি বাড়াবাড়ি মনে হলেও ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করতে শিশুদের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অনেকেই হয়তো বিস্মিত হয়েছেন এই তথ্য জেনে। কিন্তু এ আইনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে শিশুদের ঘরের কাজে পিতা-মাতাকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে আবার স্বামীকেও কাজে স্ত্রীকে  সাহায্য করতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

চুইংগাম আইন

চুইংগাম নিয়ে রয়েছে অদ্ভুত আইন সিঙ্গাপুরে। সেখানে আপনি চুইংগাম খেলেই হতে পারে শাস্তি। সিঙ্গাপুর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে অতুলনীয়। আর এর পেছনে রয়েছে কড়া সব আইনকানুন। সিঙ্গাপুরে কেউ যদি যত্রতত্র চুইংগাম ফেলে তবে তার জন্য ১ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে। দ্বিতীয়বার যদি একই অপরাধ কেউ করে থাকেন, তবে তার জরিমানা ২ হাজার ডলার। সঙ্গে শাস্তিস্বরূপ এক দিনের জন্য পাবলিক প্লেস পরিষ্কার করার বাধ্যবাধকতা। তারপরও কেউ যদি তৃতীয়বার চুইংগাম ফেলে তবে তাকে বিব পরে রাস্তা পরিষ্কার করতে হবে যেখানে লেখা থাকবে ‘I’m a litterer’। এমনকি ফার্মেসিগুলোতে যদি কেউ মেডিকেল চুইংগাম বিক্রি করেন  তার দুই বছরের জন্য জেল হবে।

 

কমোডের ফ্ল্যাশ

অদ্ভুত নিয়ম কমোডের ফ্ল্যাশ নিয়ে। সুইজারল্যান্ড সরকার রাত ১০টার পরে ফ্ল্যাশ করাকে শব্দ দূষণ হিসেবে ধরে...

স্বপ্নের দেশ মনে করেন অনেকেই সুইজারল্যান্ডকে। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের দেশ এটি। প্রতিবছর এখানে বহু লোক পর্যটক হিসেবে আসে। যদি কখনো সুইজারল্যান্ড যেতে চান তাহলে এ বিষয়টি আপনাকে জানতেই হবে। সুইজারল্যান্ডে কখনই রাত ১০টার পর কমোড ফ্ল্যাশ করতে পারবেন না। সুইজারল্যান্ড সরকার রাত ১০টার পরে ফ্ল্যাশ করাকে শব্দ দূষণ হিসেবে ধরে। শব্দ দূষণ রোধে পৃথিবীতে নানা দেশেই রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন। এ সংক্রান্ত আইনকে বলা হয় উচ্চ শব্দ অথবা হুইসেলিং আইন। অন্টারিওতে অবস্থিত পেট্রলিয়া শহরে উচ্চমাত্রার শব্দের ওপরও আইন বহাল আছে। কোনো প্রকার হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি, হুইসেলিং, এমনকি উচ্চৈঃস্বরে গান গাওয়া পর্যন্ত নিষেধ সেখানে। সুতরাং চাইলেই অনুষ্ঠান আয়োজন করে পার্টি করা যাবে ন আর যদি তা করতেই হয় তবে আপনাকে তা করতে হবে কোনো প্রকার শব্দ  দূষণ করা ছাড়া।

 

জাপানে কোমরের মাপ

জাপানের জনগণের গড় আয়ুষ্কাল বেশি। এর পেছনে রয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। কিন্তু মানুষের মাঝে এই সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে বেশ কিছু আইন। এর মধ্যে একটি হলো ৪০ বছরের বেশি কেউ ভুঁড়ি বা কোমর বাড়াতে পারবে না। সে দেশের কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই হলো প্রবীণ। বয়স্ক এই কর্মী বাহিনীকে কর্মক্ষম রাখার জন্য ২০০৮ সালে আইন করে ৪০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের কোমরের মাপ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী জাপানে কোনো দফতর বা কারখানা যদি তাদের মোটিয়ে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ২৫ ভাগ কমাতে না পারে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা। এর ফলেই জাপানের মানুষজন  বেশি কর্মদক্ষতা দেখাতে পারে।

 

মাসে দুবার বউ  পেটানো যাবে না

স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে গেলে সর্বনাশ। বাসায় বউয়ের মাস্তি তো পেতেই হবে। হওয়াই উচিত! কিন্তু ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র ওশেনিয়ার সামোয়া আইন প্রণয়ন করেছে এ বিষয়ে। স্ত্রীর জন্মদিনকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে দেশটি। সেখানে কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যান ও সময়মতো শুভেচ্ছা না জানান, তা হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেই স্ত্রী তার ভুলোমনা স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার অধিকার পেয়ে যান। কিন্তু আইনটি স্ত্রীর বেলায় প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোয় রয়েছে একটি আইন। সেখানে রবিবার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতে একেবারেই নিষেধ। রবিবার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে শুধু বিচ্ছেদই নয়, স্বামীকে কারাগারেও পাঠাতে পারবেন স্ত্রী। আবার আরাকানসায় মাসে দুবার বউ পেটালেই দন্ড। আবার নেভাদায় আইন হলো বউ পেটানোর সময় ধরা পড়লে  তাকে আট ঘণ্টা বেঁধে রাখা হবে।

 

গোসল নিয়ে কান্ড

অস্ট্রেলিয়ার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা প্রতিদিন গোসল করেন, চীনের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সপ্তাহে দুই দিন...

নিয়মিত গোসল করা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যে পড়ে। নিয়মিত গোসল করা সবারই উচিত। কিন্তু গোসলের জন্য আইন করা হয়েছে এথেন্সে। সেখানের পুলিশ কোনো গাড়ির চালকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে যদি ওই চালক গোসল না করে গাড়ি চালায় অথবা চালকের বেশভূষা না ঠিক থাকে। ২০১৯ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল প্রকাশিত এক জার্নালে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিক প্রতিদিন গোসল করেন। চীনের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সপ্তাহে মাত্র দুবার গোসল করেন। অনেক দেশে পানির সংকট আছে। কখনো কখনো পানি ছাড়া গোসলের নানা পদ্ধতিও তৈরি করেছে। নভোচারীদের মধ্যে পানি ছাড়া গোসলের  পদ্ধতি আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর