শিরোনাম
রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র, শেনচেন, চীন

প্রযুক্তি দুনিয়ার দুই রাজধানী

তানভীর আহমেদ

প্রযুক্তি দুনিয়ার দুই রাজধানী

৩০০ বর্গমাইল এক শহরে পৃথিবীর শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর হেডকোয়ার্টার

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি বিশ্ব প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রতি বছরই নতুন নতুন স্টার্টআপ এই শহর থেকে যাত্রা করে। এদের কোনো কোনোটি পৃথিবীর চালচিত্র ও অর্থনীতির গতি বদলে দেয়। সিলিকন ভ্যালি শহরটি যুক্তরাষ্ট্রের সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। যে কারণে প্রায় শীর্ষ সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এই শহরে তাদের হেডকোয়ার্টার গড়ে তুলেছে। ভিড় করছেন সেরা প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষার্থীরা। বলা হয়, এই শহরে দক্ষ প্রযুক্তিবিদদের বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো সেরা কর্মীদের সর্বোচ্চ বেতন সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দিয়ে থাকে। সিলিকন ভ্যালি শহরটি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায়। ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে সিলিকন ভ্যালির অবস্থান। সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তির এই শহরেই গুগল, ইয়াহু, অ্যাপল, অ্যাডোবি, এইচপি, ইন্টেল, ইবে, ওরাকল, আসুস, ফেসবুক, সিমেন্সের মতো বড় বড় কোম্পানির শুরু হয়। ১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে। এখন এই শহরে মাঝারি আকৃতির একটি বাড়ি কিনতে গেলেই গুনতে হবে ১০ লাখ মার্কিন ডলার। সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সম্ভবত ইস্ট পালো আলটো। এখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। এর উত্তরে ফেসবুক, আর দক্ষিণে গুগলের সদর দফতর।  প্রযুক্তির এই শহরে সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। এখানে বাথরুমসহ এক বেডরুমের ফ্ল্যাটের জন্য ভাড়া গুনতে হয় বাংলাদেশি টাকায় ১-৫ লাখ। এর কারণও রয়েছে। এসব বাসা সাধারণ শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় পদের কর্মীরা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাদের উচ্চ বেতন ও আয়ের কারণেই শহরটিতে বাসা ভাড়া এত বেশি। অনেকে আবার রিক্রিয়েশনাল ভ্যান তৈরি করে নিয়েছেন। এসব ভ্যানের ভিতরে এসি, সোফা, টিভি, রান্নাঘর সবই আছে। সিলিকন ভ্যালির ২০ শতাংশ কর্মী সান ফ্রান্সিসকোর বাইরে থাকেন। স্টকটন বা মডেস্টোর মতো শহরগুলোতে। যেখান থেকে আসতে কর্মীদের দেড় ঘণ্টা গাড়িতে থাকতে হয়। যাতায়াতের জন্য সিলিকন ভ্যালিতে ইলেকট্রিক স্কুটার ব্যবহারের জনপ্রিয়তা এখন ব্যাপক। সিলিকন ভ্যালিতে আয়ের বড় একটি উৎস হতে পারে বক্তৃতা। এখানে বক্তৃতা দিয়ে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করে বসেন অনেকে। এর পেছনে বড় কারণ দুনিয়া পাল্টে দেওয়া বড় প্রযুক্তিবিদরা বিভিন্ন সেমিনারে হাজির হন। এসব সেমিনার সামনাসামনি বসে শোনার সুযোগও পায় খুব সীমিত সংখ্যক লোক। উচ্চমূল্যে টিকিট কেটে তবেই শুনতে হয় এখানে বক্তৃতা।

 

বিদেশিদের দখলে প্রযুক্তি শহর

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট অর্থনীতি ও প্রযুক্তি বাজার কালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি। এই প্রযুক্তি বাণিজ্য কেন্দ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদেশিরা। ভ্যালিতে কর্মরত কর্মীদের সিংহভাগই বিদেশি নাগরিক। কয়েক বছর আগে সিলিকন ভ্যালির এক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভ্যালিতে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ৭৪ শতাংশ, যারা কাজ করেন কম্পিউটার ও গণিত বিভাগে। অর্থাৎ এই দুই বিভাগের ৪ ভাগের ৩ ভাগ পদই বিদেশিদের দখলে। এই কর্মীদের বেশির ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ কর্মী ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় কাজ করছেন ২৭ শতাংশ।

৪০ বছর আগেও এখানে জেলেরা আসত মাছ শিকার করতে

১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে শেনচেন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল নগরীগুলোর একটি ছিল।  ১৯৭৯ সালে চীনের অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্মোচন নীতি অবলম্বনের পর থেকে শেনচেনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নগরীর অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হয়। বর্তমানে শহরটি সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি কেন্দ্র। অনেক গণমাধ্যমে এটিকে ভবিষ্যতের সিলিকন উপত্যকা নাম দেওয়া হয়েছে। ১৯৮০ সালে শেনচেনে চীনের সর্বপ্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শেনচেনের ২০১৭ সালের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এর আয়তন ২ হাজার বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা আইটি পণ্য কিনতে এখানে ভিড় করেন। ঝকঝকে সুউচ্চ ভবনে সাজানো গোছানো শহরে চলে জমকালো আলোর খেলা। পরিকল্পিত এই শহরে রয়েছে সবুজের সমারোহ। গত ২০ বছর ধরে চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা ছিল না। তারা অন্যান্য দেশের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর অনুলিপি করে অপেক্ষাকৃত সস্তায় বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছিল। এ জন্যই চীনের পণ্যগুলোকে একটু তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখছিল মানুষ। তবে তারা এখন মৌলিক গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর একটি বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে হুয়াওয়ে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা আলীবাবা যুক্তরাষ্ট্রের এলফাবেট, ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, ই-পেসহ বিভিন্ন অনলাইন বাজারের তুলনায় অনেক এগিয়ে। বিশ্বের বহু দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আইটি পণ্য কেনা ও আইটি প্রযুক্তি নিতে এ শহরে ভিড় করেন। অথচ ৩৭ বছর আগে এ শহরটি মৎস্যজীবীদের মাছ শিকার কেন্দ্রিক অঞ্চল ছিল। এ শহরের এমন রূপান্তর কী করে হলো তা সবার চোখের সামনে। চীন তার যে কয়েকটি শহর দ্রুত বদলে দিয়েছে তার একটি শেনচেন। তাদের নেতা চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দেং শিয়াও পিং এ শহরের রূপকার। চীনের প্রথম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল এ শহরটি  সাজিয়েছেন তখনকার প্রেসিডেন্ট। এখন শহরটি বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে সড়কের ওপর থার্মো প্লাস্টিক রিফ্লেকটিভ রোড মার্কিং স্থাপনের বিষয়টি আকর্ষণীয়। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লাসবেড দেওয়ার ফলে রাতে গাড়ির আলো পড়ার সঙ্গে রিফ্লেক্ট করে পথ দেখিয়ে দেয়। মূল শহরটির অদূরে হংকং। কোথাও ব্রিজের ও-পাশ হংকং, এ-পাশ শেনচেন। কোথাও রাস্তার একপাশ শেনচেন, আরেকপাশ হংকং। মূল শহরের আশপাশে বহুতল ভবনে রয়েছে বিশ্বখ্যাত হুয়াওয়ে, কনকা, স্কাইওর্থ, টেনসেন্ট, ওয়ান প্লাসের মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর। শেনচেন শহরে একটি শেয়ারবাজার আছে। এখানে অনেক বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত,       যাদের মধ্যে জেএক্সডি, হাইটেরা, সিআইএমসি, এসএফ এক্সপ্রেস, শেনচেন এয়ারলাইনস, নেপস্টার, হাসি, ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর