বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দুনিয়া কাঁপানো বিমান ছিনতাই

সাইফ ইমন

দুনিয়া কাঁপানো বিমান ছিনতাই

রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে উড়োজাহাজের আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হলেও এমন একটি যন্ত্রের চিন্তাভাবনা প্রথম শুরু করেছিল বিখ্যাত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। ইতিহাসে দেখা যায় অনেকেই বিমান তৈরির চেষ্টা করেন। এমনই একজন লিলিয়েনথাল। ১৮৯৬ সালে লিলিয়েনথালের মৃত্যুতে গবেষণাটি থমকে যায়। কিন্তু ততদিনে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় লিলিয়েনথালের উড়ন্ত যানের নকশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। অসম্পূর্ণ এবং ভুলে ভরা আখ্যা দিয়ে এটিকে কেন্দ্র করেই শুরু হলো তাদের নতুন প্রচেষ্টা। বছরের শেষ দিকে ১৭ ডিসেম্বর অরভিল এবং উইলবার রাইট তাদের তৈরি বিমান উড়িয়ে দিলেন। বিমান তৈরির প্রায় ৪৫ বছর পর মহাকাশে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটল-যা নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে।  ১৯২৮ থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ১৪০টিরও বেশি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।  আজ আমরা জানব দুনিয়া কাঁপানো কয়েকটি বিমান ছিনতাইয়ের গল্প-

 

বিমানটি ম্যাকাও সাগরে বিধ্বস্ত

১৬ জুলাই ১৯৪৮

বিমান ছিনতাইয়ের ইতিহাসকে খুব বেশি প্রাচীন বলা যাবে না। তবে উড়োজাহাজ বা বিমানকে আধুনিক সভ্যতার অনুষঙ্গ ভাবলে ছিনতাইয়ের ইতিহাসকে কোনোমতেই নতুন বলা যাবে না। ইতিহাসের প্রথম বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে বিমান আবিষ্কারের প্রায় ৪৫ বছর পর। ১৯২৮ সালে বিমান ছিনতাইয়ের কথা বলা হলেও স্বীকৃত বিমান ছিনতাই ১৯৪৮ সালে। তারিখটি ছিল ১৬ জুলাই, ১৯৪৮। যদিও ছিনতাইকারীরা বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছিল, এরপরও ছিনতাইয়ের পরিণতিস্বরূপ বিমানটি ম্যাকাও সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। সে সময় ঘটনাটি বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ম্যাকাও থেকে হংকং যাওয়ার পথে ‘ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ’ এর ‘ক্যাটেসিনা বিমান’টি উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিট পরই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। ওয়ং উ ম্যান নামক একজনের নেতৃত্বে মোট চার বন্দুকধারীর ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল যাত্রীদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা। আর সেই লক্ষ্যে ডাকাতদের একজন বিমানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পাইলটকে নির্দেশ দিল। কিন্তু বিমানের চালক তার কথা শুনল না। উল্টো হাইজ্যাকাররা পাইলটের কাছ থেকে বাধাপ্রাপ্ত হলো। কো-পাইলটও প্রধান পাইলটের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন। আর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হাইজ্যাকাররা পাইলটকে গুলিবিদ্ধ করে। তখন বিমানটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং ম্যাকাও সাগরে পতিত হয়। বিমানে সর্বমোট ২৬ যাত্রী ছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কেবল একজনই বেঁচে ছিলেন। আর তিনি সেই ডাকাত দলের নেতা ওয়ং উ ম্যান। পরবর্তী সময়ে তার স্বীকারোক্তি থেকেই বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি পরিষ্কার হয়। প্রথমে কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববাসী এটিকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলেই ভেবেছিল। কিন্তু বিমানের ধ্বংসস্তুপ থেকে গুলিবিদ্ধ অংশ খুঁজে পেলে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তখন বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী হংকং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওয়ংকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়।  তার পাশের শয্যায় পুলিশ নিজেদের একজনকে রোগী সাজিয়ে শুইয়ে রাখে। ওয়ংয়ের পাশের সেই রোগীর সঙ্গে কথার ফাঁকেই প্রকাশ হয় পৃথিবীর প্রথম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা।

 

নিরজা বাঁচিয়ে গেছেন ৩৬০ প্রাণ

৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬

১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুম্বাই থেকে করাচি হয়ে নিউইয়র্কের পথে যাত্রা করা প্যান অ্যাম সেভেনটি থ্রি বিমানটি জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিমানটি সাইপ্রাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর সেখানে যাত্রীদের জিম্মি করে নিজেদের দলীয় কিছু সন্ত্রাসীকে জেল থেকে মুক্ত করবে। নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে চার জঙ্গি করাচি থেকে বিমানে ওঠে। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমান উড়িয়ে নেওয়ার জন্য প্রায় ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করে সন্ত্রাসীরা। এরপরই শুরু করে গুলি। এ সময় তিন শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান নিরজা। তবে মারা যাওয়ার আগে ৩৬০ যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে যান তিনি। মৃত্যুর দুই দিন পরই ছিল তার ২৩তম জন্মদিন। হাইজ্যাকের ঘটনায় ৩৮০ যাত্রীর মধ্যে নিরজাসহ নিহত হয়েছিলেন মোট ২০ জন। বাকি যাত্রীদের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিলেন নিরজা, যিনি খুলে দিয়েছিলেন বিমানের জরুরি নির্গমনের পথটি। এর ফলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালানো শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত যাত্রীরাই হামলে পড়ে এই চার জঙ্গির ওপর। তার আগেই নিরজাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে তার মাথায় গুলি করে জঙ্গিদের প্রধান। এই ভয়ংকর সময়ের পুরোটা জুড়েই নিরজা শান্ত আর কর্মক্ষম ছিলেন। তিনিই সবার আগে হাইজ্যাকের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন বিমানচালক এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই ককপিট থেকে বেরিয়ে যান যেন বিমানটি উড়তে না পারে। সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে ভারত সরকার নিরজাকে ‘অশোক চক্র’ পুরস্কারে ভূষিত করে, আমেরিকার সরকার তার জন্য ঘোষণা করে ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন ‘হিরোইজম অ্যাওয়ার্ড’। পুরস্কারের ঘোষণা আসে পাকিস্তান ও কলম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও। ২০০৪ সালে অসম সাহসী এই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের নামে একটি স্ট্যাম্পও বের করে ভারত সরকার। ওই অভিশপ্ত বিমানে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী, ডক্টর কিশোর মূর্তি। তিনি জানিয়েছেন, করাচি বিমানবন্দরে ৩৬১ জন যাত্রী ও ১৯ বিমানকর্মীসহ ওই বিমানটিকে হাইজ্যাক করে চার সশস্ত্র জঙ্গি। বিমানসেবিকা হিসেবে নিজের প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ পেয়েও বিমান ছেড়ে পালিয়ে যাননি নিরজা। নিজের থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ঘটনার সময় ভারতীয় ও মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি তিনি। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সব বিমানযাত্রীকে বিমান থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু দুটি বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়েই জঙ্গিদের চোখে পড়ে যান নিরজা। ছয় নম্বর রো থেকে নিরজার মৃত্যুর সেই ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছিলেন ডক্টর মূর্তি। তার চোখের সামনে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক দূরত্ব থেকে নিরজাকে খুন করে জঙ্গিরা।

১৯৬৩ সালে ভারতের চন্ডীগড়ে জন্ম নিরজা ভানোটের। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইয়ে চলে আসেন তিনি। মুম্বাইয়ের সেইন্ট জেভিয়ার্স থেকেই গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৮৫ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মা-বাবার পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান নিরজা। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ক্রমাগত পণের জন্য চাপ দেওয়ায় এক সময় স্বামীকে ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন নিরজা। এরপর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ‘প্যান অ্যাম’ সংস্থায় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং কাজ শুরু করেন।

 

ভারতীয় ফ্লাইট ৮১

২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯

১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের ফাইট ৮১৪ নামের একটি যাত্রীবাহী বিমান নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল। ভারতের আকাশসীমায় আসার পরপরই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ল। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী দল হরকাতুল মুজাহিদীন এই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। ছিনতাইয়ের মূল কান্ডটি ঘটায় একজন সশস্ত্র লোক। সে বোমা মেরে বিমানটি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিল এবং চালককে বিমানের গতিপথ পাল্টে পূর্ব দিকে উড্ডয়নের জন্য নির্দেশ দিল। সেই অনুসারে অমৃতসর, লাহোর, দুবাই ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত হাইজ্যাকাররা বিমানটিকে আফগানিস্তানের কান্দাহারে অবতরণ করতে বাধ্য করে। দুবাইতে তারা ১৭৬ যাত্রীর মধ্যে ২৭ জনকে মুক্তি দেয়। কিন্তু একজনকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং আরও কয়েকজনকে আহত করে। ছিনতাইকারীদের দাবি অনুসারে ভারত সরকার তাদের হাতে বন্দী মুশতাক আহমেদ জারগার, আহমেদ ওমর সৈয়দ শেখ এবং মাওলানা মাসুদ আজহারকে মুক্তি দিলে সাত দিনের ছিনতাই নাটকের অবসান ঘটে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনাটিকে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ও শ্বাসরুদ্ধকর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা মানা হয়।

 

ডিবি কুপার হাইজ্যাক

২৪ নভেম্বর ১৯৭১

২৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে ইতিহাসের আরেকটি আলোচিত বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এবার বিমানের ছিনতাইকারী একজন রহস্য মানব। যাকে ইতিহাসে ডিবি কুপার নামে ডাকা হয়। তিনি বোয়িং ৭২৭ নামের একটি বিমান ছিনতাই করে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেন। মজার ব্যাপার হলো- ডিবি কুপারের এই মামলা এখন পর্যন্ত অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। এফবিআই কর্মকর্তারা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেননা কুপারকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। যদিও কয়েক দিন আগে খবর বেরিয়েছিল, কুপার মারা গেছেন। তবুও এ রহস্য রহস্যই রয়ে গেছে।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি ভুয়া পরিচয়ে ডেন কুপার নামে বিমানের টিকিট কেনেন। বিমানটি ছিনতাইয়ের পর তিনি তৎকালীন ২ লাখ আমেরিকান ডলার মুক্তিপণ গ্রহণ করেন এবং সেখান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে পালিয়ে যান। সেই টাকা তো দূরে থাক, মানুষটাকে পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। বিমানে জিম্মি হিসেবে থাকা ৩৬ যাত্রী এবং ৬ ক্রুর সবাই জীবিত ছিলেন। এরপর ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ছোট ছেলে কলম্বিয়া নদীর তীরে মুক্তির বিলের একটি ছোট গুপ্ত ভান্ডর আবিষ্কার করেছিল।  ঘটনাটি নতুনভাবে আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত কেবল রহস্যই থেকে যায়।

 

ছিনতাইয়ের বিমান ঢাকায়

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭

আমাদের দেশেও ঘটে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা। হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকেই ঘটনাটি জানে না। সময়টা ছিল ১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। ফ্লাইট ৪৭২ নামের একটি জাপানি বিমান ১৫৬ জন যাত্রী নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে জাপানের টোকিওর হেনাডা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। এই বিমানের যাত্রাবিরতি ছিল ভারতের মুম্বাইয়ে। কিন্তু মুম্বাই থেকে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। বিমানটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে। জাপানের বামপন্থি সংগঠন ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’ বিমানটি ছিনতাই করে। ওসামো মারোয়াকার নেতৃত্বে বামপন্থি সশস্ত্র সংগঠনের মোট পাঁচ ছিনতাইকারী বিমানটি ছিনতাই করে নিয়ে আসে ঢাকা বিমানবন্দরে। ঢাকায় অবতরণের পর ছিনতাইকারীরা যাত্রীদের ছাড়ানোর জন্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জেলে থাকা তাদের সংগঠনের ৯ সদস্যের মুক্তি দাবি করে। ১ অক্টোবর জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকিও ফুকুদা ঘোষণা করেন যে, সরকার ছিনতাইকারীদের দাবি মেনে নিতে রাজি আছে। তখন ছিনতাইকারী সংগঠনের ৬ কর্মীকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরের দিন ২ অক্টোবর জাপান এয়ারলাইনসের চার্টার্ড বিমানে করে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা ও ছয় রেড আর্মি বন্দীকে নিয়ে আসা হয়। একই দিনে তাদের মধ্যে বিনিময় হয়। ওইদিন হাইজ্যাকাররা ১১৮ যাত্রী এবং ক্রুকে মুক্তি দেয়। পরের দিন অর্থাৎ অক্টোবরের ৩ তারিখ ছিনতাইকারীরা বিমানটি নিয়ে সিরিয়ার দামেস্কে পৌঁছায়। সেখানে তারা আরও ১১ জিম্মিকে মুক্তি দেয়।  শেষমেশ বিমানটি আলজেরিয়ায় উড়ে যায়। সেখানে বিমানটি কর্তৃপক্ষের দ্বারা বাজেয়াপ্ত হয় এবং বাকিদেরও মুক্ত করা হয়।

 

ইজিপ্ট ফ্লাইট ৬৮

২৩ নভেম্বর ১৯৮৫

এটিকে ইতিহাসে ভয়াবহতম বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর একটি মনে করা হয়। এটি ছিল আবু নিদাল সংগঠনের ভয়াবহতম হামলাগুলোর একটি। এই হামলা অনেক মৃত্যুর কারণ হয়েছিল বলে এটিকে ভয়ংকর বিমান হাইজ্যাকের ঘটনা বলা হয়। ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর উড্ডয়নের মাত্র ১০ মিনিট পরই সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিমানটি আক্রান্ত হয়। নিজেদের ইজিপ্ট রেভ্যুলুশন পরিচয় দেওয়া ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী দলটি ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গ্রেনেডে সজ্জিত ছিল। পুরো দলটি বিমানটি নিয়ন্ত্রণে উঠেপড়ে লাগে। এই দলের নেতা ওমর রাজ্জাক যাত্রীদের পাসপোর্ট কেড়ে নিতে শুরু করলেন। তখন ইজিপশিয়ান সিকিউরিটি অফিসার গুলি চালালে সেখানেই একজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। আর এতে করে বিমানটির মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং ছিনতাইকারীরা নৃশংস হয়ে ওঠে। যার ফলে ১২টির বেশি প্রাণ ঝরে যায়। বিমানটির মূল  গন্তব্য ছিল লিবিয়া। কিন্তু ফুয়েলের অভাবে তারা মাল্টায় অবতরণে বাধ্য হয়েছিল।

 

প্রথম ব্রিটিশ বিমান

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭০

ডসনের ফিল্ড হাইজ্যাকিংয়ের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসীরা নিয়মিত বিমান ছিনতাই শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭০ সালে তারা একযোগে চারটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। আর এর মধ্যে একটি বিমান ছিল ইংল্যান্ডের। এ বিমানটিই ছিল ছিনতাইয়ের কবলে পড়া প্রথম ব্রিটিশ বিমান। ১৯৭০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে বিওএসির ‘সুপার ডিসি-১০’ বিমানটি ১১৪ জন যাত্রীসহ ছিনতাই করে ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য গঠিত পপুলার ফ্রন্টের গেরিলারা। অস্ত্রধারী গেরিলারা বিমানচালককে জর্ডানের আম্মানের উত্তর-পশ্চিমে একটি বিমানবন্দরে নামতে বাধ্য করে। এর আগে তারা ওখানেই সুইস বিমান ডিসি-৮ এবং টি ডব্লিউ বোয়িং-৭০৭ বিমান ১৮৪ জন যাত্রীসহ ছিনতাই করে। লন্ডনে আটক গেরিলানেত্রী লায়লা খালেদ এবং সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিতে আটক অন্য আরব বন্দীদের মুক্তির দাবিতে তারা ওই বিমান ছিনতাই করে। তাদের এই ছিনতাই প্রচেষ্টা যেমন সফল হয়েছিল, তেমনি তাদের উদ্দেশ্যও চরিতার্থ হয়েছিল। যথাযথ কর্তৃপক্ষ জিম্মিদের জীবনের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত গেরিলাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে গেরিলারা তিনটি বিমান উড়িয়ে দিলেও লায়লা খালেদ এবং অন্যদের বিনিময়ে তারা সব যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেয়।

সর্বশেষ খবর