শিরোনাম
শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর

৯/১১ ট্র্যাজেডি

তানভীর আহমেদ

৯/১১ ট্র্যাজেডি

জায়গাটি এখন গ্রাউন্ড জিরো

গ্রাউন্ড জিরো, মার্কিনিদের শোক জানানোর সবচেয়ে মুখর স্থান। এক সময় এখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি ভবন। সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে দুটি ভবন ধসে পড়ে। অসংখ্য প্রাণের সেই মর্মান্তিক প্রয়াণ আজও কাঁদায় বিশ্ববাসীকে। যাত্রীবাহী বিমানের আঘাতে যেখানে টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়েছিল সেটাই এখন ‘গ্রাউন্ড জিরো’। সেখানে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ। চারদিকে করুণ নিস্তব্ধতা নিয়ে সেই গ্রাউন্ড জিরো বেয়ে এখন ঝরনার পানি যেন লাখো কোটি মানুষের অশ্রুই বয়ে নিয়ে যায়।  ভিতরের দিকে নিহতদের স্মরণে বানানো হয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি স্মৃতিফলক।

 

সেখানে নির্মিত ফ্রিডম টাওয়ার

হামলার ক্ষত শুকিয়ে আবারও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। প্রায় পাঁচটি বেজমেন্টসহ এর ফ্লোর সংখ্যা ১০৪টি। পুরোটা মেঝে ৩৫,০১,২৭৪ বর্গফুটের। শুধু উঁচুই নয়, বিশালাকার এই ভবনটি ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানির অফিস হিসেবে। তা ছাড়াও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণেরও একটি অংশ এখান থেকেই হচ্ছে। এবার নিরাপত্তার জন্য রয়েছে আরও অনেক আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।  যে কোনো বিমান এই ভবনের দিকে ছুটে এলেই শক্তিশালী রাডারের নিখুঁত গণনায় সেটিকে ভূপাতিত করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে।

 

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। অন্য দিনের মতোই জেগে উঠেছিল নিউইয়র্ক সিটি। শুধু দিন শেষের গল্পটাই পাল্টে গিয়েছিল। সেদিনের সকালের সঙ্গে অন্য আট-দশটি সকালের কোনো পার্থক্য ছিল না। অথবা পৃথিবীতে কোনো দুর্যোগের আগাম সংকেত ছিল না। ফলে অন্য সব দিনের মতো সেদিনও সকাল সকালই কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। স্থানীয় সময় তখন ৮টা ৪৬ মিনিট। হঠাৎ করে ঘটল সেই ভয়াল ঘটনা। মুহুর্তেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল সন্ত্রাসের আগুনে কীভাবে জ্বলেপুড়ে শেষ হচ্ছে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। ‘টুইন টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম উঁচু দালানটিতে আঘাত হানে সন্ত্রাসীদের দখল করা দুটি যাত্রীবাহী বিমান। এ কোনো সাধারণ আঘাত নয়, রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হলো। নিউইয়র্কের নীল আকাশ ঝকঝকে রোদের বদলে ঢেকে গেল নিকষ কালো ধোঁয়ায়। মুহুর্তেই মুখ থুবড়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গৌরবের প্রতীক নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গৌরবের প্রতীক ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবনেও হামলা চালায় আরেকটি বিমান। এ ছাড়া পেনসিলভেনিয়ায় আরেকটি বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কীভাবে ঘটেছিল এই নারকীয় তান্ডব? ১১ সেপ্টেম্বরের সেই ভয়াল সকালে আল-কায়েদার ১৯ জঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রীবাহী চারটি বিমান হাইজ্যাক করে। এর মধ্যে দুটি বিমান দিয়ে তারা নিউইয়র্ক শহরের টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। এতে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। দুই ঘণ্টার মধ্যে টুইন টাওয়ার ধসে পড়ে। সঙ্গে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর পাশের কয়েকটি ভবনও। এ দুটি ফ্লাইটের ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালীনই তৃতীয় ফ্লাইটটি দিয়ে জঙ্গিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে আঘাত হানে। চতুর্থ ফ্লাইটটি নিয়ে হাইজ্যাকাররা পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের শাংকসভেলি এলাকার আকাশে যায়। ওখান থেকে তারা সেটিকে নিউইয়র্কের দিকে নিতে চায়। তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল হিল ভবন অথবা হোয়াইট হাউসে আঘাত হানা। এ সময় কিছু যাত্রী ও ফ্লাইটের ক্রু বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য হাইজ্যাকারদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এতে ফ্লাইট আকাশে বিধ্বস্ত হয়ে শাংকসভেলি এলাকার মাটিতে পড়ে। আরেকটি বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যায় আমেরিকা। কিন্তু ওই ফ্লাইটের কেউ বাঁচেননি। এ ঘটনায় ১৯ হাইজ্যাকারের সবাই নিহত হয়। এ ছাড়া টুইন টাওয়ার ও এর আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ২ হাজার ৭৪৯ জন প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক ব্যক্তি, নারী ও শিশু। নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছেন ৩৪৩ জন দমকল কর্মী ও ৬০ পুলিশ কর্মকর্তা। পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় তখন ১৮৪ জন নিহত হন। উল্লেখ্য, আল-কায়েদার তখনকার ওই হামলায় যারা প্রাণ হারান তারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন না। ওই হামলায় ৭০টি দেশের মার্কিন প্রবাসীরাও নিহত হন। প্রসঙ্গত, ওই হামলায় তাৎক্ষণিক মৃত্যুই শেষ কথা নয়, উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা আহত, অসুস্থ এবং বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮৩৬ জন পরে মৃত্যুবরণ করেন। এই একটি ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ হামলার জের টানতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশটির ঋণের খাতায় যোগ হয় প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। যুদ্ধ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এসব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ওই হামলার পর থেকে কমপক্ষে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক। রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ‘কস্ট অব ওয়ার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চালানো হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৯৯৫ জন। ওই হামলায় ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের। আর এ ঘটনার জেরে নাইন-ইলেভেনের পর থেকে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, নাইন-ইলেভেনের প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বে। নাইন-ইলেভেনের ঘটনা সারা বিশ্বের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল। রাতারাতি পাল্টে দিয়েছিল বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সন্ত্রাসবাদ ও ভয়াবহ আক্রমণের দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ববাসীকে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে আফগানিস্তান ও ইরাকে। মার্কিন নেতৃত্বের সেই সামরিক অভিযানেও কম রক্ত ঝরেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে এখনো। সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এখনো লড়ে যাচ্ছে আমেরিকা। এ লড়াইয়ে সাফল্যের বড় উদাহরণ নাইন-ইলেভেন হামলার জন্য দায়ী সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু।  পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল কমান্ডোরা।

 

কী হয়েছিল সেদিন

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের লোগান বিমানবন্দর থেকে একটি বিমান ছেড়ে গেল। আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট নম্বর ১১। বোয়িং ৭৬৭ মডেলের এই বিমান আকাশে উড়ল ১৪ মিনিট দেরি করে। বিমানে ছিল ৮১ জন যাত্রী, ১১ জন বিমান ক্রু। সব স্বাভাবিক ছিল। কে জানত বিমানে  যাত্রীবেশে চড়ে বসেছে পাঁচ জঙ্গি?

 

একই বিমানবন্দর থেকে ৮টা ১৪ মিনিটে আরও একটি বিমান ১৪ মিনিট লেট করে আকাশে পাখা মেলে। ইউনাইনেট এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ১৭৫। এ বিমানে যাত্রী ছিল ৫৬ জন,  বিমান ক্রু ছিল নয়জন। এ বিমানেও যাত্রীবেশে ছিল ৫ জঙ্গি।

 

ওয়াশিংটনের ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ১০ মিনিট দেরি করে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৭৭ যাত্রা শুরু করে। ৫৮ জন যাত্রী আর ছয়জন ক্রু ছিল বিমানটিতে।  পাঁচ জঙ্গিও ছিল সেখানে। বিমানের গন্তব্য লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দর।

 

৪২ মিনিট লেট করায় যাত্রীরা অধৈর্য হয়ে উঠেছেন নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ৯৩ নম্বর ফ্লাইটে যাত্রী ছিল ৩৭ জন, ক্রু সাতজন। বিমানের গন্তব্য সান ফ্রান্সিসকো। বিমানটিতে চার জঙ্গি ছিল তাদের সঙ্গে। হঠাৎ বিমান হাইজ্যাকাররা জিম্মি করে ফেলল সবাইকে।  বিমান এখন জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে।

 

সকাল ৯টা ২ মিনিটে ফ্লাইট ১৭৫ প্রথম আঘাত করল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৭৭ থেকে ৮৫ তলার মাঝখানে। দালানের বুকে ঢুকে গেল বিমানটি। দানবীয় আগুন আর ধোঁয়ায় মানুষ আতঙ্কে যেন পাথর হয়ে গেল। ফ্লাইট ৭৭, ৯টা ৩৭ মিনিটে আঘাত করল পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে। সেখানেও ছড়িয়ে পড়ল আগুন। ৯টা ৪৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্র তার আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করে এবং সব ধরনের বিমানকে জরুরি অবতরণের নির্দেশ দেয়।

 

ফ্লাইট ৯৩ এর যাত্রীরা টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা জেনে যায়। জঙ্গিরা এ বিমানেও দখল নিতে গেলে যাত্রীদের সঙ্গে শুরু হয় মারামারি, হট্টগোল। ককপিটে মারামারির একপর্যায়ে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়।  এটি পেনসিলভেনিয়ায় আছড়ে পড়ে। সবাই মারা যায়।

 

সকাল ১০টা ৫০ মিনিট। পেন্টাগন আগুনে পুড়ছে। অগ্নিনির্বাপণ কর্মী, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন ও সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো তাকিয়ে দেখছে ভয়ানক আগুনে সব জ্বলছে। পাঁচ তলা উঁচু পেন্টাগনের একাংশ পুরোপুরি পুড়ে ধসে পড়ল। কেউ কিছুই করতে পারল না।  মানুষ ভয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়ল।

 

বিকাল ৫টা ২০ মিনিট। সামরিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র যেন হঠাৎ করেই অসহায় হয়ে গেল। আতঙ্ক আর ভয়ে স্তম্ভিত যুক্তরাষ্ট্রবাসী। সাধারণ মানুষের কান্না, আহাজারি পথে-ঘাটে। পুরো বিশ্ব অবিশ্বাস্য ও ঘৃণ্যতম এমন হামলার দৃশ্য সরাসরি দেখছিল টেলিভিশনের পর্দায়। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল আকাশ। চোখের সামনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধসে পড়ল।  মাটিতে মিশে গেল সব।

 

লাদেনকে হত্যা করে হামলার প্রতিশোধ নেয় যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকার বুকের মাঝখানে আঘাত করার মতোই ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের হামলা। রক্তক্ষরণের ফলে সেই ঘা বেড়ে উঠে শুরু হয় আমেরিকার সন্ত্রাস দমনের যুদ্ধ। ফের যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার। মার্কিন সেনাদের দ্বারা যুদ্ধাক্রান্ত হয় আফগানিস্তান। প্রধান টার্গেট আল-কায়েদা। আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে জীবিত অথবা মৃত গ্রেফতার করে এই সন্ত্রাসী হামলার বিচারের জন্যই পরিচালিত হয় একের পর এক অভিযান। মার্কিন ভূখন্ডে অভাবনীয় হামলা চালানোর জন্য দায়ী করা হয় আল-কায়েদাকে। এদিকে যুদ্ধ শুরু হতেই মার্কিন সেনাদের আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র বিশেষ করে ড্রোন হামলায় নাকাল হয়ে পড়ে আল-কায়েদা। তাদের পাল্টা জবাবও ছিল নৃশংস। তবে শিগগিরই তারা দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং এই নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ কোনো নির্দেশের পরোয়া না করে নিজেরাই মারাত্মক হামলার ছক কষে। ইতিহাস বলে, ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেনসহ একদল আরব যোদ্ধা। সেই সংগ্রামই পরে আল-কায়েদার জন্ম দেয়। শেষ দিকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে আল-কায়েদার নেতৃত্ব। তারপর পাকিস্তানে গোপন অভিযান চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন ‘নেভি সিল’ বাহিনীর কমান্ডোরা। তার লাশ প্রথমে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।  লাদেনের শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয় আরব সাগরে ভাসমান যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ কার্ল ভিনসনে। এরপর কাফনে আবৃত বিন লাদেনের দেহ একটি ভারী ব্যাগে ভরে উত্তর আরব সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

 

ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনে ধ্বংস ছাড়া কিছুই মেলেনি

বিশ্ব রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা। যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে ইরাক ও আফগানিস্তানে শুরু করে সেনা অভিযান। ইরাকে সাদ্দামের পতন হয়। আফগানিস্তানে দুই দশক হামলা, ধ্বংসযজ্ঞের পর দেশে ফিরে যায় মার্কিন বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যে গৃহযুদ্ধ, জঙ্গি হামলা আর মৃত্যুর মিছিল ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। দেশ ছেড়ে পালানো মানুষের স্রোত বাড়ছেই। সমৃদ্ধ ইরাক এখন ধ্বংসের নগরী। এখনো তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। শান্তি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জঙ্গি নির্মূলের কথা বলে যে মার্কিন আগ্রাসন ও সেনা অভিযান তার ফলাফল কেবলই ধ্বংসযজ্ঞ।  সর্বশেষ আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতেই আফগান ভাগ্য তুলে দিয়ে দেশ ছাড়ে মার্কিন বাহিনী।

 

হামলার খবর শুনেও বুশ স্কুলের বাচ্চাদের বই পড়ে শোনাচ্ছিলেন

টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলার খবর দ্রুতই পৌঁছে যায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে। প্রেসিডেন্ট বুশ তখন ফ্লোরিডার একটি প্রাইমারি স্কুলে গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গী ছিলেন প্রেস সেক্রেটারি ফ্লাইশার। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপের পরই প্রেসিডেন্টকে প্রথম টাওয়ার ভেঙে পড়ার খবর দেওয়া হয়। দ্বিতীয় টাওয়ার ভাঙার নোট যখন হাতে পান, তখন বুশ স্কুলপড়ুয়া শিশুদের একটি বই পড়ে শোনাচ্ছিলেন। দুটি টাওয়ার ভেঙে পড়ার খবর পেয়েও বই পড়া থামাননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার খবরে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে হাতে লেখা একটি নোট প্রকাশ পেয়েছে। ওই নোটে বুশ ও তার আশপাশে থাকা কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া লিখেছিলেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার খবর শোনার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনিকে ফোন করে বুশ বলেন, ‘আমরা ওই অশ্লীল শব্দকে ধরতে যাচ্ছি। আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি।’ ফোন হাতে ধরেই তিনি কক্ষে থাকা সহকর্মীদের দিকে ঘুরে বলেন, ‘যখন আমি এর পেছনে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে পাব, তারা সারা জীবনের জন্য একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে অপছন্দ করতে যাচ্ছে। জড়িতরা এর মূল্য দিতে যাচ্ছে।’ ওই ঘটনার নয় দিন পর ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধ ঘোষণা করেন বুশ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও দ্য আমেরিকান পিপলের যৌথ অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘আল কায়েদার ওপর হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে, কিন্তু এ যুদ্ধ সেখানেই শেষ হবে না। বিশ্বের সব সন্ত্রাসী দলকে খুঁজে বের করে তাদের থামানো ও পরাজিত না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ থামবে না।’

 

দ্য ফলিং ম্যান

টুইন টাওয়ার হামলার পর লাফিয়ে পড়েন অজ্ঞাতনামা এই লোকটি। এপির ফটোগ্রাফার রিচার্ড ড্রিউ ওই মুহূর্তে ছবিটি তোলেন। সেই হামলার ভয়াবহতা ফুটে ওঠে এই ছবিতে। বিশ্ববাসী আজও আতঙ্কে কেঁপে ওঠেন সেদিনের কথা ভেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর