শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্যানডোরা পেপারসে আলোচিত যারা

সাইফ ইমন

প্যানডোরা পেপারসে আলোচিত যারা

ফাঁস হওয়া আর্থিক নথি ‘প্যানডোরা পেপারস’-এ বহু সেলিব্রেটির নাম এসেছে। রাজনীতি, ক্রীড়া, অভিনয় জগতের বড় বড় তারকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার তথ্য এসেছে এ নথিতে; যা নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার- এমন আরও অনেক নেতার গোপন সম্পদের তথ্য  এতে প্রকাশ পেয়েছে। প্যানডোরা পেপারস নামে এসব দলিলপত্রে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা এবং ৩ শতাধিক  সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে- যারা বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট...

 

কর ফাঁকির অভিযোগ আগেই

শাকিরা

শাকিরার কণ্ঠের জাদু আর নাচের মোহনীয়তায় উন্মাতাল সারা বিশ্ব। নিছক বিনোদন নয়, তার গানে উঠে আসে দেশ, মানুষ আর মানবতার কথাও। প্যানডোরার ভয়ংকর বাক্স খুলে বেরিয়ে পড়েছে তার নামও। কর ফাঁকি দেওয়ার অব্যর্থ কায়দা অফশোর কোম্পানি খোলার পথে হেঁটেছেন তিনিও। শাকিরাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে সংগীত ব্যবসা চালাতে ২০১৯ সাল থেকে তিনটি অফশোর কোম্পানি গঠন করেছিলেন তিনি।  এ নিয়ে ২০১৮ সালেই কর ফাঁকির অভিযোগে স্পেনে তদন্ত হয়। স্পেনের এক আদালত বলে, শাকিরা ২০১২-১৪ সময়ের মধ্যে ১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার কর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

 

লেনদেনের জন্য পাঁচটি ট্রাস্ট

রিঙ্গো স্টার

ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, তারকারা খুব সহজে অফশোর কোম্পানি খুলে হাজার হাজার, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডলার কর দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে সংগীতশিল্পী ও বিটলসের ড্রামার রিঙ্গো স্টারের নামও। এই বিটলস খ্যাত তারকার নিট সম্পদ প্রায় ৪০ কোটি ডলার। তিনি বাহামা দ্বীপপুঞ্জে দুটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গঠন করেছেন। পানামায়ও কমপক্ষে পাঁচটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটি ট্রাস্টে তার রয়্যালটি এবং লাইভ পারফরম্যান্স থেকে পাওয়া অর্থ জমা হয়।  মন্তব্যের জন্য আইসিআইজের সাংবাদিকরা বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও স্টারের তরফ  থেকে কোনো জবাব মেলেনি।

 

গোপনে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি

জুলিও ইগলেসিয়াস

একাধারে গায়ক ও গীতিকার জুলিও ইগলেসিয়াস একজন স্প্যানিশ সুপারস্টার। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯৩৬ মিলিয়ন ডলার। জনপ্রিয় এই তারকার নিজের রয়েছে ২০টিরও বেশি কোম্পানি। যার মধ্যে আটটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, যা তিনি মিয়ামি ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলোয় কিনেছেন ২০০৮ সালে। আলোচিত প্যানডোরা পেপারসের নথিতে বলা হয়- ইগলেসিয়াসের আরও দুটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি রয়েছে মিয়ামিতে, যা তিনি গোপনে ক্রয় করেছিলেন। প্যানডোরা পেপারসের রেকর্ড থেকে জানা যায়, সেলিব্রেটি তারকারা এস্টেট কেনার সময় প্রায়ই অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে থাকেন, যেন তাদের আসল  পরিচয় লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়।

 

কয়েক কানাডিয়ান

অর্থ কেলেঙ্কারিতে কয়েক শ কানাডিয়ানের নাম। বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের গত বছরের তালিকায় কানাডার অবস্থান ছিল ১১তম। এমন দেশেও আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা দেখে অবাক বিশ্ববাসী। ওয়াশিংটন ডিসির ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) প্রকাশিত ‘প্যানডোরা পেপারস’-এ শত শত কানাডিয়ানের আর্থিক অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। কানাডার টরেন্টো স্টার সংবাদমাধ্যম জানায়,  বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও তারকাদের গোপন সম্পদ, কর ফাঁকি, অর্থ পাচার ও কালো টাকা সাদা করার তথ্য সংবলিত প্রায় ১২ মিলিয়ন ফাঁস হওয়া নথিতে শত শত কানাডিয়ানের নাম আছে।

 

টনি ব্লেয়ার পরিবার

এবার ফেঁসে গেছেন টনি ব্লেয়ার এবং তার পরিবার। তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য এসেছে প্যানডোরার থলে থেকে। লন্ডনে একটি অফিস ভবন কেনার সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ডের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য প্যানডোরার নথিতে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা একটি অফশোর ফার্ম কিনেছিলেন, যার মালিকানায় ছিল ওই ভবনটি। এদিকে আরও বলা হচ্ছে, ৬৪ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের একটি ভবনের মালিক হয়েছিলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং তার আইনজীবী স্ত্রী শেরি। কিন্তু এখানে নেওয়া হয়েছে অবৈধ পন্থা।  স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ প্রায় কয়েক লাখ পাউন্ড তাদের দিতে হয়নি বা তারা এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে। 

আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন অলিয়েভ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থ লুকাতে এই পরিবার একটি বিশাল অফশোর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই পরিবার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে ৪০ কোটি পাউন্ডের। সম্পত্তি কেনাবেচায় কীভাবে জড়িত তা উঠে এসেছে, প্যান্ডোরার নথিতে।

 

রয়েছে অবৈধ লেনদেন

স্যার এলটন জন

জনপ্রিয় পপ তারকা স্যার এলটন জন। বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এই গায়কের বিরুদ্ধেও এসেছে তথ্য ফাঁসের ঘটনা। এই তারকার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন ডলার। জনপ্রিয় এই পপ তারকা বিভিআই নিবন্ধিত এক ডজনের বেশি কোম্পানির মালিক। তার নিজের লেখা গান তিনি নিজেই রেকর্ড করেন। দ্য লায়ন কিং, বিলি ইলিয়ট, দ্য মিউজিক্যালের মতো বিখ্যাত সংগীতের লেখক জনপ্রিয় এই পপ তারকা এলটন জন। জনের বিভিআই কোম্পানির নামগুলোও তার রচিত বøকবাস্টারের মতো। যেমন- ডবিøউএবি লায়ন কিং লিমিটেড, এইচএসটি বিলি এলিয়ট লিমিটেড ইত্যাদি। জন ২০১৭ সালে নতুন লোগো ব্যবহার করে কোম্পানিগুলোর যাত্রা শুরু করেন।

 

অস্বীকার করেছেন অপরাধ

অঞ্জলি টেন্ডুলকার

কর ফাঁকির তদন্তমূলক রিপোর্টে জড়িয়ে গেছে শচীন টেন্ডুলকার এবং তার স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকারের নাম। ভারতীয় এই ব্যাটিং লিজেন্ডের নাম এবং তার স্ত্রীর নাম শুনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। যদিও শচীন পরিবারের আইনজীবীর দাবি, সাবেক ভারত অধিনায়কের সব বিদেশি লেনদেন সম্পূর্ণ বৈধ। বিদেশে শচীন যা যা বিনিয়োগ করেছেন তার পুরো হিসাব কর কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়েছে। তদন্তমূলক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিআইজের মোট ৬০০ সাংবাদিকের মিলিত প্রয়াসে ১১.৯ মিলিয়ন গোপন নথিপত্র ফাঁস হয়েছে; যা সবই বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ ও গোপন সম্পদ লেনদেনের তথ্য তুলে ধরেছে। শচীন পরিবার সরাররি কোনো মন্তব্য করেনি।

 

কোটি কোটি টাকার সম্পদ অফশোর মাধ্যমে

জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল হুসেইন ৭ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হয়েছেন। তবে জর্ডানের বাদশাহর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার জমি এবং বাড়িগুলো ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয় করেই কেনা। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়। এটা অনৈতিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে প্যানডোরা পেপারস হচ্ছে এর মধ্যে সর্বশেষ ঘটনা।  জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে এর আগেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

 

১০০ মিলিয়ন ডলার গোপন

সেভেৎলানা

একে একে বেরিয়ে আসছে অনেক থলের বিড়াল। এই ধারাবাহিকতায় এসেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গোপন প্রেমিকার গোপন সম্পদের তথ্য, যা ফাঁস করেছে প্যানডোরা পেপারস। পুতিনের এই প্রেমিকার নাম সেভেৎলানা ক্রিভোনোগিখ। রূপকথার গল্পের মতো তার উত্থান। ছিলেন বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী। থাকতেন সাদামাটা বাড়িতে। কাজ করেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। তারপর তিনি হন বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রমোদতরীর মালিক। এসব ১৯৯০ দশকের কথা। সে সময় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তার ১০০ মিলিয়ন ডলারের ‘গোপন সম্পত্তি’ রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশিত।

 

অফশোর নেটওয়ার্ক

অলিভ পরিবার

আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন অলিভ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থ লুকাতে এই পরিবার একটি বিশাল অফশোর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই পরিবার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনাবেচায় কীভাবে জড়িত তা উঠে এসেছে প্যানডোরার নথিতে। তারা অনেক দিন থেকেই এই ব্যবসায় জড়িত। অনেক ক্ষেত্রে তারা অফশোর কোম্পানিগুলোকে জোড়ায় জোড়ায় স্থাপন করেন। একটি দেশে এবং অন্যটি দেশের বাইরে থাকে আয়ের জন্য। তাদের সব অফশোর কোম্পানিগুলোর আয় আসে বিভিন্ন দেশ থেকে।  এভাবেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আসছে পরিবারটি।

সর্বশেষ খবর