বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেসিডেন্টদের অন্য জীবন

আবদুল কাদের

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বেশির ভাগ মার্কিন প্রেসিডেন্টেরই আইন, রাজনীতি কিংবা সামরিক অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে অনেকেই তাঁদের প্রথম জীবনে খুব সাধারণ আর ছোটখাটো কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  সে সময় তাঁদের আয়ও ছিল সামান্য। তবে এঁদের মধ্যে কারও কারও মনে ছেলেবেলা থেকেই ছিল আমেরিকান সাম্রাজ্যের প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অদম্য ইচ্ছা।  আমেরিকার ইতিহাস বদলানো এসব নায়কের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের গল্পগুলো নিয়ে আজকের রকমারি।

 

জর্জ ওয়াশিংটন

ভূমি জরিপকারী কর্মী ছিলেন ওয়াশিংটন

জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জর্জ ওয়াশিংটন ভার্জিনিয়ার সেনানদোয়ায় ভূমি জরিপকারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে কালপিপার শহরে সরকারি জরিপকারী হিসেবে ওয়াশিংটনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমেরিকান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ২১ বছর বয়স নাগাদ ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ১৫০০ একরের বেশি ভূমির মালিক হন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে কন্টিনেন্টাল আর্মির কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছিল বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন এতটাই সফল ছিলেন যে, তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে মানা হয়। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি শতভাগ ইলেকটোরাল ভোটে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন নিজ কর্মে উজ্জ্বল। তাঁর নেতৃত্ব আর গুণাবলির জন্য তিনি সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করা ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি জর্জ ওয়াশিংটন। ছেলেবেলায় সৈনিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ওয়াশিংটন। ভার্জিনিয়ার গভর্নর একসময় তাঁকে সৈনিক পদে নিয়োগ দেন।  দায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়াশিংটন দখলমুক্ত করেছিলেনন ভার্জিনিয়া অঞ্চল।

 

জন অ্যাডামস

স্কুলমাস্টারের চাকরি করতেন অ্যাডামস

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপ্লবের নেতা জন অ্যাডামস। মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যাডামস। জীবনের শুরুর দিকে হার্ভার্ড-শিক্ষিত জন অ্যাডামস একজন স্কুলমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্নাতক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ওরসেস্টারে একজন স্কুলমাস্টার হিসেবে চাকরি করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, অ্যাডামস তাঁর ব্যক্তিগত ডায়রিতে লিখেছিলেন, স্কুলমাস্টার হিসেবে চাকরি করার সময় তিনি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। এ সময় তিনি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছিলেন। সে সময় তিনি অ্যাটর্নি দিয়ে আইনবিষয়ক অধ্যয়ন করেছিলেন। নির্বিঘ্নে নিজের পড়াশোনা করার জন্য মাঝেমধ্যে অ্যাডামস নিজে ক্লাস না নিয়ে মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে ক্লাস নেওয়াতেন। পরবর্তীকালে তিনি আইনজীবী হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। অ্যাডামস ১৭৫৮ সালে তাঁর আইনজীবন শুরু করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বোস্টনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অ্যাটর্নি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসে বসবাসকারী প্রথম প্রেসিডেন্ট।  বুদ্ধিমান-দেশপ্রেমিক অ্যাডামস ১৭৩৫ সালের অক্টোবরে ম্যাসাচুসেটসের ব্রান্ট্রিতে (কুইন্সি) জন্মগ্রহণ করেন।

 

আব্রাহাম লিংকন

স্টেশনারি দোকানে কাজ করতেন লিংকন

অত্যন্ত গরিব পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্রাহম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জীবনের শুরুর দিকে লিংকন পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল স্টোরে কেরানি হিসেবে কাজ করেছেন। খুব ছোট কাজ মনে হলেও পরবর্তীকালে এটাই তাঁর জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা দিয়েছিল। নিউ সালেমে তাঁর দোকানটি ছিল শহরের এক জনপ্রিয় আড্ডাস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এখান থেকেই শহরের প্রায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হন। ছয় মাস পার না হতেই ইলিনয়ের পক্ষ থেকে আইনসভার প্রতিনিধি হিসেবে নিজের প্রথম রাজনৈতিক প্রচারণা চালান। প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কেন্দ্রে কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। মজার তথ্য হলো- লিংকনের মদের দোকানের পরিবেশক হিসেবে বৈধ লাইসেন্স ছিল। তিনি ছিলেন একজন ভয়ংকর মুষ্টিযোদ্ধা। প্রায় ৩০০-এর মতো লড়াইয়ে লড়ে হেরেছিলেন মাত্র একটিতে। মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্টের অর্জনও রয়েছে তাঁর দখলে। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। সর্বপ্রথম মহিলাদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করেন আব্রাহাম। পাশাপাশি দেশটির সিক্রেট সার্ভিসও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং আইনজীবী একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন।  তিনি স্বশিক্ষিত ছিলেন। যার পেছনে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁর বাবা-মা।

 

জেমস গারফিল্ড

চার্চের প্রচারক ছিলেন গারফিল্ড

যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ড। ১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আসীন হন। তিনি এর আগে এক বছর চার্চের প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। রাফ আন্ড্রিস্টের বই ‘এরি ক্যানাল’র তথ্যানুসারে এই ‘ওহাইও রাখাল’ বালক প্রথম জীবনে তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের খচ্চরে টানা নৌকায় কাজ করতেন। এখানে কাজ করে তিনি মাসে আট ডলার করে উপার্জন করতেন। গারফিল্ড ছিলেন একজন স্বতৈরি ব্যক্তি, যিনি তাঁর ২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্কুল সভাপতি হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় গারফিল্ড ইউনিয়নের হয়ে লড়াই করেছিলেন এবং সেখান থেকে তিনি মেজর জেনারেলের পদে উন্নীত হন। ১৮৫৯ সালে, রিপাবলিকান পার্টির সদস্য ওহিও সিনেটে নির্বাচিত হন। ১৮৮০ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন গারফিল্ড। এক বছর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ক্লেভল্যান্ডে সমাহিত করা হয়েছে তাঁকে। গারফিল্ড ১৮৩১ সালের নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও-র লগ কেবিনে।

 

উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট

ছিলেন আইনজীবী ও বিচারক

মার্কিন ইতিহাসে অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট এবং বিচারপতি ছিলেন উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট। যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাছাড়া দেশটির দশম বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। ১৯০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী ও বিচারক। আইন পড়াশোনা শেষে টাফট নিজ শহর ওহিও-র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮২ সালে তিনি ওহিও শহরের স্থানীয় রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেন। কয়েক বছর পর ১৮৯০ সালের দিকে টাফট সুপিরিয়র কোর্ট অব ওহিও-র বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রেসিডেন্ট বেনজামিন হ্যারিসন টাফটকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। অন্যথায় তিনি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে শুধু একজন সরকারি

প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি শুধু ওহিও-র আইনজীবী এবং বিচারক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেননি, ১৯০৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেক্রেটারি

অব ওয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

 

উড্রো উইলসন

ছিলেন অধ্যাপক ও ফুটবল কোচ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন থমাস উড্রো উইলসন। ১৯১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। উইলসন ১৮৫৬ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় একটি দাসত্ব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভার্জিনিয়ায় জন্ম নিলেও উইলসন তাঁর শৈশব ও কৈশোর আগস্টা, জর্জিয়া, দক্ষিণ ক্যারোলিনা ও কলম্বিয়ায় কাটিয়েছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই উইলসন পড়াশোনায় ভীষণ অনাগ্রহী ছিলেন। তবে খেলাধুলায় তাঁর ছিল ব্যাপক আগ্রহ। ১৮৮৬ সালে পিএইচডি গ্রহণের পর আমেরিকার বিখ্যাত কর্নাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তিনি সেখানে ফুলটাইম কর্মী হিসেবে ছিলেন না। কর্নাল ইউনিভার্সিটির পার্টটাইম অধ্যাপক ছিলেন। এর আগে তিনি আমেরিকান বায়ার্ন মর কলেজ এবং ওয়েসলি ইউনিভার্সিটিতে তিন বছরের জন্য কোচ হিসেবে চাকরি করেছিলেন। সেখানে ফুটবল দলের কোচ হিসেবে কাজ করতেন উইলসন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও খেলার প্রতি ভালোবাসা কমেনি তাঁর। ফুটবল ছাড়াও বেসবল, ভলিবল এবং গলফ খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল লক্ষ্য করার মতো। ১৯০২ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ফুটবল দলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন।

 

হারবার্ট হোভার

ছিলেন ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশলী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৩১তম প্রেসিডেন্ট হারবার্ট হোভার। অত্যন্ত মেধাবী আর বিচক্ষণ গবেষক ছিলেন তিনি। ১৮৯৫ সালে হোভার ভূতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। সিএনএনের তথ্যমতে, হারবার্ট হোভার প্রথম জীবনে একজন খনি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৮৯০ সালে তিনি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় সোনার খনি আবিষ্কার করেছিলেন। ২৩ বছর বয়সে হোভার খনি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পান। সেখানে তিনি শুধু একজন গবেষকই ছিলেন না, একজন খনি প্রকৌশলী হিসেবেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এরপর তিনি মাইন ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান। হারবার্ট চীনা ব্যুরো মাইন এবং চীনা মাইন করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সন্স অব গলিয়া, মেনজিজ এবং কুলগার্ডির মতো বিশালাকার সোনার খনিগুলো খনন করেছিলেন। ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ভূখনন প্রকৌশলী হিসেবে তাঁর কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনি মার্কিন সরকারি ভূতাত্ত্বিক খনন পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এরপর হারবার্ট হোভার ১৯৩১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়লাভ করেন। খনির কাজে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় বলে এর পরিবর্তে পরে তিনি স্বাধীন পেশাজীবী হিসেবে খনিবিষয়ক একজন পরামর্শবিদের কাজ করেছিলেন।

 

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট

শিক্ষানবিশ উকিল ছিলেন

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিশ্ববাসী যখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুদ্ধের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত, সে সময় পৃথিবীর কেন্দ্রীয় এক চরিত্র দেখা দিয়েছিল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। মার্কিন ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তিনবার এ দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থবারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন তিনি। রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে প্রথমবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ছিলেন একজন সিনেটর এবং নৌবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মার্কিন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, রুজভেল্ট ২৫ বছর বয়সে লেডইয়ার্ড ও মিলবার্ন এলাকায় ওয়াল স্ট্রিট ফার্ম ‘কার্টারের’ একজন শিক্ষানবিশ উকিল হিসেবে কাজ করেন। ফার্মটির অনেক সুনাম থাকলেও নিয়ম অনুসারে কাজ শুরুর প্রথম এক বছর এখানে কর্মচারীদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। ১৮৮২ সালের জানুয়ারি মাসে নিউইয়র্ক, হাইড পার্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম রুজভেল্টের। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। রুজভেল্ট দীর্ঘ ১২ বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  তবে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও কাজ করে গেছেন দেশের জন্য।

 

জিমি কার্টার

ছিলেন চীনাবাদাম বিক্রেতা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। যিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য। যুক্তরাষ্ট্র এবং বহির্বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জীবনের শুরুর পথচলায় জিমি কার্টার চীনাবাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি জিমি তাঁর বাড়িতে চীনাবাদামের চাষ করতেন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হন। মানবিক অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ব্যাপক তৎপর। এ জন্য তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল প্রচুর। তিনি কার্টার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮২ সালে। হ্যাবিট ফর হিউমিনিটি প্রজেক্টের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন কার্টার। পরবর্তীতে লেখক হিসেবেও তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই বিভিন্ন বিষয়ে রচনা করেন। চীনাবাদামের ব্যবসা করলেও এর আগে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ইউনাইটেড স্টেটস নেভিতে। সেখানে তিনি নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে কাজ করেন। হাইস্কুল শেষ করেই নেভিতে যোগ দেন। জিমি কার্টার ১৯২৪ সালের অক্টোবরে জর্জিয়ার প্লেইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত তাঁর পিতা জেমস আর্ল শ্রীরাম ছিলেন একজন চীনাবাদাম ও তুলা কৃষক। যিনি একটি ফার্ম-সাপ্লাই ব্যবসার মালিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

 

রোনাল্ড রিগ্যান

রিগ্যান ছিলেন সার্কাসকর্মী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। যিনি আমেরিকার একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনেতা। তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। একসময় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে পা রাখেন হোয়াইট হাউসে। মার্কিন অর্থনীতির বিকাশ ও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দ্য উইকের তথ্যমতে, রিগ্যান নবিশ হিসেবে ঘণ্টায় শূন্য দশমিক ২৫ ডলার মজুরিতে রিংলিং ব্রাদার্স সার্কাসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি ইলিনয়ের দূরবর্তী ডিক্সন শহরে রক রিভার উপকূলে জীবনরক্ষাকারী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেই দিনগুলোতে শীর্ণ আর লম্বা এই কিশোর বিপজ্জনক আর খরস্রোতা রক রিভার থেকে ৭৭ জন বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন। সে সময় জীবন রক্ষাকারী হিসেবে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। ৬৯ বছর বয়সে রিগ্যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিভাবান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৬৬ সালে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সে সময় রোনাল্ড রিগ্যান একজন সুবক্তা হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

 

বারাক ওবামা

নানারকম চাকরি করেছেন

মার্কিন ইতিহাস রচনাকারী প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেইন ওবামা। যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। এমনকি মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টও তিনি। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নানারকম চাকরি করেছেন। আইসক্রিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রাস্কিন-রবিন্সের হনুলুলু শাখায় তিনি একজন আইসক্রিম বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতেন। কোনো কাজই দেখতে যতটা সহজ আসলে ততটা নয়। চকোলেট, আইসক্রিম বানানো অনেক কঠিন। তা বানাতে কবজির ওপর অনেক চাপ পড়ে বলে নিউইয়র্ক সাময়িকীকে জানিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ওবামা তিন বছর কাজ করেছেন একটি ডেভেলপিং কমিউনিটিস প্রজেক্টের ডিরেক্টর হিসেবে। এটি শিকাগোতে অবস্থিত একটি দাতব্য সংস্থা। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং নিজ দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচিত ছিলেন বারাক ওবামা। বাল্যকালের স্বপ্ন ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়া। ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হনুলুলুতে জন্মগ্রহণ করেন। বারাক ওবামা ২০১২ সালে পুনরায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর