বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
সাইবার বুলিং

সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ তারকাদের

সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ তারকাদের

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ বিশ্ব তারকারা। মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়ে তারকারা ছেড়েছেন ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো নিয়ে নতুন ভাবনা শুরু করেছে বিশ্বের দেশগুলো। কোনো কারণ ছাড়াই ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য এই মাধ্যমগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষের চরিত্র হনন, ঘৃণা এবং মিথ্যা ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে।  এসব কারণে বিশ্ব তারকাদের অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এসব যোগাযোগমাধ্যম। অনেকে আবার কখনই ছিলেন না এমন মাধ্যমে। সাইবার বুলিংয়ের ভয়াবহতার কারণে সোশ্যাল মিডিয়াবিমুখ তারকাদের নিয়েই এ আয়োজন। লিখেছেন- সাইফ ইমন

 

সেলেনা গোমেজ

ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিয়র থেরাপি নিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সেলেনা গোমেজ। বুলিং, হয়রানি ও অরুচিকর মন্তব্যের মুখোমুখি হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন গোমেজ, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ঘোষণা দিয়ে ইনস্টাগ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছিলেন সেলেনা গোমেজ। যদিও নাকি ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফরমে তার ভক্তকুল অন্য সবার চেয়ে বেশি। গণমাধ্যমকে গোমেজ জানিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত তার জীবন বাঁচিয়েছে। গোমেজ বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, আগের মতোই সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছি।’

 

ক্রিসি টেইজেন

আমেরিকান মডেল ক্রিসি টেইজেন, সোশ্যাল মাধ্যম টুইটারের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার ফলোয়ার খোদ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জনপ্রিয় এই মডেল টুইটারে ব্যাপক জনপ্রিয়। দীর্ঘ ১০ বছর টুইটারে অ্যাক্টিভ ছিলেন এই তারকা। ফ্যান-ফলোয়ারদের নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য আর তাকে নিয়ে ট্রল করায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। চলতি বছরের শুরুতে ক্রিসি টেইজেন তার টুইটার অ্যাকাউন্টকে বিদায় জানান। টুইটারকে বিদায় জানানোর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘টুইটে পজিটিভ মানসিকতা কমে গেছে, নেগেটিভ কথার চর্চাই বেশি হয়ে থাকে এখানে।’

 

রিহানা

জনপ্রিয় পপ স্টার রিহানা, সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল স্টার। যার রূপে বুঁদ হন সব বয়সী মানুষ। নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি নুড ছবি পোস্ট করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন এই পপ স্টার। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার ‘নুড’ নীতি অমান্য করায় তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। যদিও ছয় মাস পরই তিনি আবারও সোশ্যাল মাধ্যমে ফিরে এসেছিলেন। আবার স্বরূপে, নতুনভাবে। চলতি বছরও রিহানা সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতীয় কৃষকদের সমর্থনে টুইট করে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়ান রিহানা।

 

এমা স্টোন

হ্যারি পটার সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের পর থেকেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা স্টোন। শুধু হলিউড পাড়ায় নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই সুপার ওম্যান। ২০১৭ সালে এমা স্টোন নিজের ব্যক্তিজীবন নিরাপদ রাখার স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিদায় নিয়েছেন অস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। এমা সোশ্যাল মিডিয়াকে বাড়তি চাপ হিসেবেই দেখেন। যে কারণে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে দূরে থাকতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি অনেক সময় আমাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে থাকে।’

 

মাইলি সাইরাস

২০১৮ সালে মাইলি সাইরাস একটি অ্যালবাম প্রকাশের আগে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় করেছিলেন। এই প্ল্যাটফরমে নিজের উপস্থিতি আরও বেগবান করার লক্ষ্যেই এই পথ বেছে নেন জনপ্রিয় এই গায়িকা। রহস্যজনকভাবে তিনি তার সব ইনস্টাগ্রাম পোস্ট মুছে ফেলেন। এখন সাইরাস তার রাজনৈতিক মূল্যবোধের সমর্থনে এবং তার ইনস্টাগ্রাম শো ব্রাইট মাইন্ডেড প্রচারের জন্য ইনস্টা পোস্ট করে থাকেন। যেখানে মাইলি সাইরাস সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য, রাজনীতি এবং আরও অনেক বিষয়ে সেলিব্রেটিদের সঙ্গে কথা বলেন।

 

জাস্টিন বিবার

সেলেনা গোমেজের সাবেক বয়ফ্রেন্ড ও কানাডিয়ান জনপ্রিয় গায়ক জাস্টিন বিবার ২০১৬ সালে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার তখনকার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ভক্তকুলের অরুচিকর কমেন্টের জেরেই বিবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। নতুন প্রেমিকা সোফিয়া রিচির সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করলে বিতর্কের ঝড় ওঠে। সেলেনা অনুসারীরা বাজেভাবে কমেন্টও পোস্ট করতে থাকে। বাধ্য হয়ে বিবার সে সময় তার ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদিও এক বছর বিরতির পর ফিরে এসেছিলেন বিবার।

 

টেইলর সুইফট

সামাজিক কোনো যোগাযোগমাধ্যমে নেই সময়ের অন্যতম আলোচিত মিউজিক তারকা টেইলর সুইফট। এমনকি নেই কোনো নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও। তার অন্যতম সেরা অ্যালবাম ‘লাভার’ দিয়ে কিছুদিনের জন্য ইনস্টাগ্রামে ফিরেছিলেন এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত টেইলর সুইফট নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই সরব ছিলেন। সেখানে শেয়ার করতেন নিজের ব্যক্তিজীবনের নানা মুহুর্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক মতাদর্শ, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে তিনি সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

 

 

ক্যান্ডাল জেনার

ক্যান্ডাল জেনার আমেরিকান মডেল এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কার্দেশিয়ানদের সঙ্গে কিপিং আপের রিয়েলিটি টেলিভিশন শোতে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কোটি কোটি ভক্ত ছিল। কিন্তু তিনি ২০১৬ সালের নভেম্বরে নিজেকে সব প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নেন। জেনার ১৪ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেছিলেন। জেনার ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৫-এর শীর্ষ উপার্জনের মডেলদের তালিকায়ও ছিলেন। তার আনুমানিক বার্ষিক আয় ৪ মিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে জেনার ফোর্বস থেকে বিশ্বের সর্বাধিক বেতনের মডেল হিসেবে মনোনীত  হয়েছিলেন।

 

হেইলি বিবার

ফোর্বসের তালিকার কমবয়সী মিলিয়নিয়ার কাইলি জেনারের বান্ধবী হেইলি বিবার। সাংস্কৃতিক পরিবারে বড় হওয়া এই তারকা ২০১৩ সাল থেকে ক্যান্ডাল জেনারেরও খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে তার প্রভাবও পড়েছে হেইলি বিবারের ক্ষেত্রে। উল্টো হেইলি আরও একধাপ এগিয়ে। নানা কারণে ২০১৬ সাল থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। শুধু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামই নয় তিনি ঘোষণা দেন যে তিনি স্ন্যাপচ্যাটও আর কখনো ব্যবহার করবেন না।

 

ডেমি লোভাতো

ডেমি লোভাতো একজন মার্কিন অভিনেত্রী, গায়িকা ও গীতিকার। বার্নি অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের সপ্তম এবং অষ্টম আসরে একজন শিশু অভিনেত্রী হিসেবে টেলিভিশনে অভিষেকের পর ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই তারকা। ২০০৮ সালে ডিজনি চ্যানেলের  টেলিভিশন চলচ্চিত্র ক্যাম্প রকে অভিনয় করার মাধ্যমে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। কোটি ফলোয়ার ছিল এই তারকার। কিন্তু তিনিও শিকার হয়েছেন অপ্রীতিকর সাইবার বুলিংয়ের। যার ফলে ২০১৬ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ত্যাগ করেন।

 

জায়ান মালিক

জায়ান মালিক একজন ইংরেজ সংগীতশিল্পী এবং গীতিকার। ২০১০ সালে মালিক ব্রিটিশ রিয়েলিটি সংগীত প্রতিযোগিতায় একজন একক শিল্পী হিসেবে অডিশন দিয়েছিলেন। তাঁর আত্মপ্রকাশ স্টুডিও অ্যালবাম মাইন্ড অব মাইন (২০১৬)। মালিক খুবই বিরক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর। তিনি নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন।

মালিক জানিয়েছেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের অশালীন আচরণ খুবই অপছন্দ করি। এটা নেগেটিভলি ছড়ায় মানুষের মনে।

 

নিকি মিনাজ

২০০৯ সালে ইয়ং মানি এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার পর নিকি মিনাজ তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম পিঙ্ক ফ্রাইডে (২০১০) প্রকাশ করেন। যা তাকে তারকাখ্যাতি এনে দেওয়ার পাশাপাশি ইউএস বিলবোর্ড ২০০-এ প্রথম স্থানেও নিয়ে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা (আরআইএএ) কর্তৃক ট্রিপল প্লাটিনাম সনদ পেয়েছিলেন। তার দ্বিতীয় অ্যালবাম, পিঙ্ক ফ্রাইডে : রোমান রিলোডেড ২০১২ সালে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করে। কিন্তু খ্যাতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয় মিনাজকে।  এরপর তিনি সব মাধ্যম ত্যাগ করেন।

 

যারা কখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিলেন না!

টাইটানিকখ্যাত নায়িকা কেট উইন্সলেটকে চিনেন না এমন হয়তো কেউ নেই। মজার বিষয় এই মহাতারকাকে আপনি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনই খুঁজে পাবেন না। কারণ তিনি কখনই ব্যবহার করেননি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তিনি মনে করেন পরিবারকে সময় দেওয়াই তার প্রথম দায়িত্ব। তবে তিনি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিপক্ষে নন। মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমেই তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ মেইনটেইন করে থাকেন। কেট উইন্সলেট শুধু এই দলে একা নন। এমন অনেক তারকা রয়েছেন যারা জীবনে এখন পর্যন্ত কখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেননি। হলিউডের আরেক মহাতারকা ব্রাটপিটও রয়েছেন এই দলে। তিনি মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা মানে সময় নষ্ট করা। জেমস বন্ড চলচ্চিত্রের সর্বশেষ পর্ব ‘নো টাইম টু ডাই’ মুক্তি পেয়েছে কিছুদিন আগেই। জেমস বন্ড খ্যাত ডেনিয়েল ক্রেগ এর শেষ মুভি এটি। এই তারকাও কখনো আসেননি কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্কারলেট, রবার্ট প্যাটিনসন, ডেনিয়েল রেডক্লিফও রয়েছেন এই দলে।

সর্বশেষ খবর