বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাওয়া শহর

সাইফ ইমন

হারিয়ে যাওয়া শহর

মানুষের ইতিহাস মূলত পুরাপ্রস্তর যুগ থেকেই শুরু। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ পৃথিবীকে এগিয়ে নিচ্ছে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে চারটি বরফ যুগ ও চারটি আন্তঃবরফ যুগ। প্রতি যুগেই উষ্ণ অঞ্চলে গিয়ে টিকে থাকা প্রাণীদের দেহের আকৃতিতে কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। এই আকৃতি অন্য সব প্রাণীর মতোই মানুষের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। প্রায় ১০ লাখ বছর আগে সেই বরফ যুগের প্রথম পর্যায়ে জাভা মানব এবং পিকিং মানবের বসবাস ছিল।  নিয়ান্ডারথাল মানবদের কঙ্কাল পাওয়া গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। ১০ লাখ বছরের বিবর্তনে আজ দাঁড়িয়ে আছে মানব সভ্যতা।  এই বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় হারিয়ে গেছে অনেক মানব সভ্যতার শহর। এমনই কিছু শহর নিয়ে আজকের রকমারি-

 

জেরিকো ইনকা সভ্যতা

জেরিকো ইনকা সভ্যতা যেমন পৃথিবীর সমৃদ্ধ ও বিখ্যাত সভ্যতা তেমনি জেরিকো হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর। ধারণা করা হয় জেরিকোতে যারা বসবাস করতেন তাদের পূর্বপুরুষ যাযাবর ছিলেন। যাযাবর জীবন ছেড়ে তারা জেরিকোতে স্থায়ী বসবাস গড়ে তোলেন। এক সময় পৃথিবীর সব মানুষই যাযাবর ছিল। যে জায়গায় সম্পদের পরিমাণ বেশি ছিল সে স্থানে মানুষজন বসবাস করতে শুরু করল। এভাবেই তৈরি হয় প্রাচীন নগরগুলো। সৃষ্টির পর থেকে এই পৃথিবীতে জন্ম হয়েছে নানা নগরের। এসব প্রাচীন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাগুলো আজও নিজ নিজ রহস্যময় গল্প নিয়ে মানুষের মনে বেঁচে আছে। ৭০০ বছরেরও বেশি সময়ের পুরনো এই জেরিকো শহরটি আবিষ্কার করেন ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. ক্যাথলিন টেল। মাটির নিচের এই জেরিকো শহরটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। মৃত সাগরের উত্তরে এক মরূদ্যানে এই শহরের অবস্থান ছিল। তবে শহরটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হয়েছে এই শহরে ২ থেকে ৩ হাজার লোকের বসবাস ছিল।  খুব ছোট এই শহরটি লম্বায় ছিল ২৮৪ গজ এবং চওড়ায় ছিল ১৭৫ গজ। জেরিকো শহর থেকে আরও জানা যায়, সে সময় মাটির ইট ও চুন ব্যবহার করে ঘর তৈরি করা হতো।

 

জর্ডানের পেত্রা

জর্ডানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শহরটির অবস্থান। নাম পেত্রা। ১৮১২ সালে সর্বপ্রথম এই শহরটি আবিষ্কৃত হয়। পাহাড়ের মধ্যে পাথর কেটে বানানো হয়েছিল শহরটি। আর পেত্রা অর্থও পাথর। ইতিহাসবিদদের মতানুসারে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ থেকে ২০০ অব্দ পর্যন্ত নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী ছিল এই পেত্রা শহরটি। পেত্রা শহরটি ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং এখানকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ছিলেন বেশ সমৃদ্ধশালী। শহরটি মূলত একটি গুহার মধ্যে তৈরি। কোনো কোনো স্থানে এটি মাত্র ১২ ফুট চওড়া। শহরটির চারপাশে ছিল উঁচু সব পাহাড় এবং পাহাড়গুলোতে ছিল অফুরন্ত ঝরনাধারা। পশ্চিমের গাজা, উত্তরের বসরা ও দামাস্কাস, লোহিত সাগরের পাশের আকুয়াবা ও লিউস এবং মরুভূমির ওপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত পেত্রা। রোমান শাসনের সময় সমুদ্রকেন্দ্রিক বাণিজ্য পুরোদমে শুরু হলে পেত্রা দ্রুত ধ্বংস হতে থাকে। ১০৬ এডিতে রোমানরা এটিকে দখল করে তাদের ‘আরব পেত্রাইয়া’ প্রদেশের অংশীভূত করে।  সপ্তম শতকে মুসলমানরা ও দ্বাদশ শতকে ক্রুসেডাররা পেত্রার দখল নিয়েছিল। মূলত এরপর থেকেই এই নগরী ধ্বংস হতে শুরু করে।

 

প্রাচীন আমেরিকার আজলান

পৃথিবীতে এক প্রাচীন সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া শহর আজলান। এ শহরকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল আজটেক সভ্যতা। প্রাচীন আমেরিকার অন্যতম উন্নত সভ্যতা বলা হয় আজটেক সভ্যতাকে। কারণ এসব শহরের কোনো অস্তিত্ব আজও কেউ খুঁজে পায়নি। শনাক্ত করা যায়নি কোনো অবস্থান। আজলান শব্দের অর্থ- উত্তরের ভূমি, যেখান থেকে আজটেকরা এসেছে। কিছু কিছু রূপকথায় আজলানকে ‘স্বর্গীয় শহর’ বলা হয়েছে। কিন্তু আজটেকরা আজলান ছেড়ে একসময় মেক্সিকোর মূল ভূমিতে চলে গিয়েছিল। এর কারণ ছিল আজটেকের চিকোমোজতকরা। তারা ছিল অভিজাত শ্রেণি। দেবতা হুইতিজিলোপোচলি নির্দেশ দিয়েছিলেন চিকোমোজতকরা ছাড়া আর কেউ নিজেদের আজটেক দাবি করতে পারবে না। আর তাই আজলান থেকে প্রথমে তেনোচিতালানে চলে যায় আজটেকরা। সেটা ছিল ১০৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে। আর সেদিন থেকেই আজটেক প্রথম সূর্যবর্ষ গণনা করা হয়। যদিও আজলান শহরের কোনো অস্তিত্ব কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি কিন্তু দাবি করা হয় সমুদ্রের তীরে একটি হ্রদ ঘেরা দ্বীপে গড়ে উঠেছিল আজলান। আজলানের খোঁজ করতে গিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা যে সমস্যায় পড়েছেন তা হলো, আজলান ঠিক কতটা উত্তরে ছিল।

 

রহস্যময় আটলান্টিস

পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত সমাধান না হওয়া যত রহস্য আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো এ আটলান্টিস। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩৫৫ বছর আগে আটলান্টিসের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার বছর আগে অতলান্তিক মহাসাগরের কাছে অবস্থিত এই দেশটিতে নাকি ছিল অত্যন্ত উন্নত এক সভ্যতা। অনেকের বিশ্বাস, গ্রিক দ্বীপ ক্রিটের কাছাকাছি ছিল আটলান্টিস। তারপর একদিন আসে মহাপ্রলয়। ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আর প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে এক রাতের মধ্যে অতলান্তিক মহাসাগরের নিচে তলিয়ে যায় এ শহর। এ নিয়ে যে কত বই, গল্প, প্রবন্ধ লেখা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তৈরি হয়েছে ‘আটলান্টিস : দ্য লস্ট কন্টিনেন্ট’, ‘আটলান্টিস : দ্য লস্ট এম্পায়ার’-এর মতো বেশ কয়েকটি সিনেমাও। প্লেটোর কথা অনুযায়ী আটলান্টিস ছিল এক স্বর্গোদ্যান। অত্যন্ত উর্বর এখানকার মাটিতে ফলমূল, শাকসবজির কোনো অভাব ছিল না।  অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভায় সমৃদ্ধ এ রাজ্যে খনিজ সম্পদেরও কোনো অভাব ছিল না। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৮০০ থেকে ৫০০ বছর আগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আটলান্টিস।

 

ইনকা সভ্যতার মাচুপিচু  শহর

পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধতম ও বিখ্যাত সভ্যতাগুলোর একটি হচ্ছে ইনকা সভ্যতা। আর এই ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া একটি আধুনিক শহর হচ্ছে মাচুপিচু। এটিকে সূর্যনগরী নামেও ডাকা হয়। ইতিহাসবিদদের গবেষণায় এ শহর সম্পর্কে অজানা সব তথ্য উঠে এলেও অনেক রহস্যেরই এখন পর্যন্ত কূলকিনারা করতে পারেননি তারা। অনেকের ধারণা, পেরুর মাচুপিচু হচ্ছে ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত নিদর্শন, যাকে ‘ইনকাদের হারানো শহর’ বলা হয়। আন্দিজ পর্বতমালা পেরুর অংশের দিকে একটি পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত ইনকাদের সেই হারানো শহর মাচুপিচু। এখন অবশ্য গোটা পাহাড়টির নাম হয়ে গেছে মাচুপিচু। সেখানে শহরটির অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত। অন্যদের পক্ষে এই শহর খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর ছিল, তেমনি খুঁজে পাওয়ার পর শহরটিতে আক্রমণ করতে গেলেও কেউ সুবিধা করতে পারবে না। পাহাড়ের এক পাশ চূড়া থেকে একেবারে খাড়াভাবে ৬০০ মিটার নিচে উরুবাম্বা নদীর পাদদেশে গিয়ে মিশেছে। অন্যদিকে হুয়ানা পিচু নামের আরেকটি পর্বত খাড়া হয়ে উঠে গেছে আরও কয়েক হাজার ফুট উঁচুতে। সুতরাং দুই দিক দিয়েই শহরটি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ নিরাপদ ছিল। এ কারণে শহরটিকে ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও ডাকা হয়। মাচুপিচু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিন ডং (১২৩১ মিটার) এর প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি! এত উঁচুতে কীভাবে তারা একটা আস্ত শহর তৈরি করে ফেলল সেটাই সবচেয়ে বড় রহস্য। তাও আবার অনেক বছর আগে। মাচুপিচু নির্মিত হয়েছিল প্রায় ৫৫০ বছর আগে, ১৪৫০ সালের দিকে। এর ১০০ বছর পরেই স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে। ধ্বংস করে ফেলে তাদের বেশির ভাগ শহরই। কিন্তু কী আশ্চর্যের বিষয় হলো ওরা মাচুপিচু শহরটি খুঁজেই পায়নি! এদিকে মানুষজন না থাকার কারণে শহরটিও ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কয়েকশ বছর ধরে তো মানুষ এই ঐতিহাসিক শহরটিকে খুঁজেই পায়নি। এরপর ১৯১১ সালে হাইরাম বিংহাম নামের এক মার্কিন ঐতিহাসিক মাচুপিচু শহরটি আবিষ্কার করেন। পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ইনকা সভ্যতা। এই সভ্যতার বহু নিদর্শন মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে চলেছে আজও। এই সভ্যতাকে ঘিরে বহু মিথ রচিত হয়েছে। ইনকা সভ্যতায় কী গুপ্তধনের রহস্য রোমাঞ্চ রয়েছে? এই প্রশ্নে উত্তরটি হলো- হ্যাঁ। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই সে রহস্য ভেদ করতে মরিয়া গুপ্তধন অনুসন্ধানীরা। ইনকা সভ্যতায় সোনার ব্যবহার খুবই সাধারণ দৃশ্য। আর সে কারণেই তাদের সভ্যতায় সোনার ব্যবহারে দেখা যায় মন্দির, মন্দিরের অভ্যন্তরের মূর্তি। এসবই নির্মিত হয়েছে খাঁটি সোনা দিয়ে। স্বর্ণসমৃদ্ধ ইনকাদের নিত্যব্যবহার্য তৈজসপত্রও সোনার তৈরি ছিল।

বিগত ৪০০ বছর ধরে পুরাতত্ত্ববিদ এবং সোনা সন্ধানীরা ইনকাদের গুপ্তধন খুঁজে বেরিয়েছেন। বেশির ভাগ অনুসন্ধানী ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বলে যে, কিছুই মেলেনি তা কিন্তু বলা যাবে না।  বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পেরু এবং বলিভিয়ার মাঝামাঝি আন্দিজ পর্বতের শীর্ষে অবস্থিত এক হ্রদের গভীরে ইনকারা ডুবিয়ে রেখেছিল তাদের সব সোনা।

 

নাবাতিয়ান শহর

নাবাতিয়ান শহর ঐতিহাসিকভাবেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই শহরেই গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক নাবাতিয়ান সভ্যতা। এই সভ্যতা বেশি আলোচনায় এসেছে গবেষকদের বিশেষ বিশ্লেষণ ও গবেষণার কারণে। নাবাতিয়ান শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বর্তমান জর্ডান ও আশপাশের অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ধারণা করা হয়। শহরের বেশির ভাগ স্থাপনাই পাথরে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে। অতিকায় স্থাপনাগুলো অবিশ্বাস্যের চোখে দেখতে হয় স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যশৈলী কতটা নান্দনিক ও রুচি বহন করে। পাথরের খোদাইকৃত শহরগুলো দেখে এখনো পর্যটকরা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যান। নাবাতিয়ান সভ্যতার স্থাপনাগুলোর নির্মাণশৈলীতে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকরা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এত আগে পাহাড় কেটে কেমন করে এসব অতিকায় পাথুরে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে যা সত্যিকার অর্থেই এক বিস্ময়। তবে নাবাতিয়ান সভ্যতার শৈল্পিক গঠনই একমাত্র বিস্ময় নয়। এ শহরের সভ্যতার কোনো লিখিত ইতিহাস না থাকাটাও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। অপরূপ গঠনের নাবাতিয়ান সভ্যতা ১০৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে রোমান সম্রাট ট্রাজান কর্তৃক বিজিত হয়।  এরপর ধীরে ধীরে গ্রিক-রোমান সংস্কৃতিতে হারিয়ে যায় এ সভ্যতার কীর্তিমানদের সব বীরত্বগাথা।

 

মধ্যযুগে সমৃদ্ধির বেনিন শহর

মধ্য যুগে সমৃদ্ধির চূড়ায় পৌঁছানো ‘বেনিন’ শহরটি গড়ে তুলেছিল এদো গোত্রের লোকেরা। ১৩ শতকে এক ইউরোপীয় পরিব্রাজক গিয়েছিলেন নাইজেরিয়ার এই শহরে। শহরটিতে ঢুকতেই ছিল এক বিশাল রাজপথ। অনেক চওড়া ছিল বেনিনের সেই রাজপথ। শহরটিতে সব মিলিয়ে প্রধান সড়ক ছিল ৩০টির মতো। রাজপ্রাসাদ ছিল বিশাল এলাকাজুড়ে। আকারে রাজপ্রাসাদটি ছিল নিউইয়র্কের হার্লেমের সমান। আর এই পুরো প্রাসাদঘেরা ছিল দেয়াল দিয়ে। পুরো শহর ঘিরেও দেয়াল ছিল। এখানে মানুষজন নানা এলাকায় বিভক্ত হয়ে বাস করত। যেসবের চারপাশ ছিল দেয়ালঘেরা। এ এলাকাগুলো আবার ছিল পরস্পর যুক্ত। কাজেই পুরোটা মিলে একটাই দেয়াল এঁকেবেঁকে পুরো বেনিনকে ঘিরে ছিল। সব মিলিয়ে এই দেয়াল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার ছড়িয়ে ছিল। মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার। ১৯৭৪ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এটিকে যান্ত্রিক যুগের আগে নির্মিত সবচেয়ে বড় ‘মাটির কাজ’ এর স্বীকৃতিও দেয়।  হ্যারি রাওজনের নেতৃত্বে ব্রিটিশরা বেনিন আক্রমণ করে একদম ধ্বংস করেছিল।

 

যুগান্তকারী খেমার নগরী

খেমার নগরী ঘিরেই তৈরি হয়েছে অ্যাঙ্কর সভ্যতা। ইতিহাসের পাতায় এখনো সমুজ্জ্বল এই সভ্যতা। সর্বকালের অন্যতম রহস্যাবৃত নগর হিসেবেও একে বিবেচনা করা হয়। অ্যাঙ্কর সাম্রাজ্য ‘খেমার’ সভ্যতা নামেও পরিচিত। এই সভ্যতার স্থাপত্যশৈলী প্রশংসিত। এই সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রাসাদে গোলন্দাজদের জন্য ইস্পাত নির্মিত টাওয়ার এবং খোদাইকৃত অসাধারণ শিল্পকর্মের ইমারতগুলো শিল্পায়ন পূর্ববর্তী বিশ্বের এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। খেমার সভ্যতার গোড়াপত্তন কোথা থেকে এসেছে এ নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত হয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রাচীন রাজারা খেমার সভ্যতা নির্মাণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে এ সভ্যতা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং লাওসে বিস্তৃতি লাভ করে। ‘অ্যাঙ্কর’ সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ ‘শহর’। শুধু স্থাপত্যশৈলীর জন্যই এই সভ্যতা অমরত্ব লাভ করেছে। এই সভ্যতার অন্যতম দিক হলো শুরুর দিকের যোগাযোগ তৈরিকারী সভ্যতাগুলোরও এটি একটি। স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল সমস্যা বিভিন্ন খাল ও নদীর ওপর সেতু নির্মাণও ছিল যুগান্তকারী খেমার সভ্যতার অন্যতম কীর্তি।  পুরো সভ্যতাটি হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর