রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কারাগারে বিয়ে

কারাগারে বিয়ে

কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবার কারও বিরুদ্ধে চলছে বিচার প্রক্রিয়া। এদের অধিকাংশই খুনি। কেউ কেউ আবার ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত। তবে এ তালিকায় উঠে আসা প্রত্যেকের মিল একটি জায়গায়।  আর সেটি হচ্ছে কারাগারে বিয়ে। আদালতের অনুমতি নিয়ে কারাগারে বিয়ের ঘটনা ঘটেছে অহরহ। কেউ কেউ আবার নিয়ম মেনে কারাবাসেই শুরু করেন নতুন দাম্পত্য জীবন। একেক দেশের আইন একেকভাবে বিষয়টি অনুমোদন করে। কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা চৌদ্দ শিকের মধ্যে বিয়ে করেছেন তাদের নিয়ে লিখেছেন-  আবদুল কাদের

 

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত মুখ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। যিনি ২০১০ সালে ফাঁস করেন পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি। যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়। তথ্য ফাঁস নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন সুইডেনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা হয়। গ্রেফতার এড়াতে ২০১২ সালে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। ২০১৯ সালে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে অ্যাসাঞ্জ বেলমার্শ কারাগারে বন্দী আছেন। সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগার তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী স্টেলা মরিসকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়। কারা বিভাগ জানায়, অন্য কারাবন্দীদের মতোই প্রচলিত নিয়মে কারা গভর্নর অ্যাসাঞ্জের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। স্টেলা মরিস বলেন, আশা করছি, আমাদের বিয়েতে আর কোনো বাধা আসবে না। যুক্তরাজ্যে বিবাহ আইন ১৯৮৩ অনুযায়ী বন্দীরা কারাগারে বিয়ের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান। আবেদন মঞ্জুর হলে বন্দী ব্যক্তিকে নিজ খরচে বিয়ে করতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকান বংশো™ভূত আইনজীবী স্টেলার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের পরিচয় হয় ২০১১ সালে। তখন মরিস অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে প্রেমে পড়ার দুই বছর পর তাঁরা বাগদান সম্পন্ন করেছিলেন।

 

৮০ বছর বয়সী চার্লস ম্যানসন একজন দুর্ধর্ষ খুনি এবং ২৬ বছর বয়সী আফটন ইলিইন স্টার বার্টন। ইতিমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগার তাদের দিয়েছে বিয়ে করার অনুমতি। রাজ্য কারাগারের সীমানা পেরিয়ে তাঁরা বসছেন বিয়ের পিঁড়িতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ খবর ব্যাপক সাড়া ফেলে। একইভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও।  বেলমার্শ কারাগারে বন্দী অবস্থায় অ্যাসাঞ্জও দীর্ঘদিনের সঙ্গী স্টেলা মরিসকে বিয়ের অনুমতি পেয়েছেন...

 

সুসান অ্যাটকিনস

স্যাডি মে গ্রেটার্জ নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন সুসান অ্যাটকিনস। সুসান প্রথম আইনি ঝামেলায় পড়েন ১৯৬৬ সালে। তখন অবৈধ অস্ত্র বহন, চুরি ও ডাকাতির জন্য জেলে যান। তিন মাস পর জেল থেকে মুক্তি পান। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে গ্যারি হিনম্যান হত্যাকাণ্ডে আবারও গ্রেফতার হন সুসান। এরপরই খুলতে থাকে আলোচিত শ্যারন টেট হত্যার রহস্য। সুসান ও তার সহযোগীরা শ্যারন ও আরও চারজনকে হত্যা করেন। আদালত সুসানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। তবে ভাগ্য সহায় ছিল বলে তিনি বেঁচে যান। ক্যালিফোর্নিয়ায় তখন মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত ছিল। বিকল্প শাস্তিস্বরূপ তাকে যাবজ্জীবন কারাবরণ করতে হয়। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী সুসান দুবার বিয়ে করেন। ১৯৮১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুসান অ্যাটকিনস ‘মিলিয়নিয়ার ডোনাল্ড লি লেইজারকে বিয়ে করেন। যদিও সেই সম্পর্কটি বেশি দিন টেকেনি। কারণ হিসেবে সুসান বলেন, লেইজার মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এর আগেও ৩৫টি বিয়ে করেন লেইজার। সুসান জীবনের শেষ সময় ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। একসময় তিনি পঙ্গু হয়ে যান।

 

টেক্স ওয়াটসন

ম্যানসন পরিবারের আরেক সদস্য চার্লস টেক্স ওয়াটসন। ১৯৬৯ সালে শ্যারন টেটসহ পাঁচ হত্যা মামলায় ওয়াটসন জড়িত ছিলেন। এরপরই চলে যান লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানে রোজমেরি নামের আরেক নারীকে হত্যা করেন। দুই বছর পর ১৯৭১ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শ্যারন টেট হত্যা মামলায় ওয়াটসন দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ১৯৭৯ সালে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ওয়াটসন কারাগারের আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। ক্রিস্টিন জোয়ান সেভেজ ছিলেন তার সহধর্মিণী। তবে এর আগে ১৯৭৫ সালে টেক্স ওয়াটসন খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আদালত ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে আজীবন দাম্পত্য সফর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে এর আগেই এই দম্পতি চার সন্তানের জনক-জননী বনে যান। যদিও ২০০৩ সালের পর তাদের সংসার টেকেনি, বিচ্ছেদ ঘটে।

 

টেড বান্ডি

আসল নাম থিওডোর রবার্ট বান্ডি। একজন দুর্ধর্ষ খুনি এবং ধর্ষক। ’৭০-এর দশকে কিংবা তার আগে বান্ডি অসংখ্য যুবতী মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করেছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এক দশক পর বান্ডি স্বীকার করেন আমেরিকার সাতটি অঙ্গরাজ্যে তিনি ৩০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটান। সব হত্যাকাণ্ডই ঘটান ১৯৭০-১৯৭৪ সালের মধ্যে। যদিও তার প্রকৃত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এখনো অজানা। তবে পুলিশের ধারণা, দুর্ধর্ষ এই খুনি আরও বেশি খুন এবং ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৫ সালে টেড বান্ডি গ্রেফতার হওয়ার আগে ক্যারল অ্যান বুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ক্যারল অ্যান বুন ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত দুই সন্তানের জননী। ১৯৭৭ সালে বান্ডি প্রথমবার জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সেবার তিনি সফল হতে পারেননি। এরপর ১৯৮০ সালে বিচার চলাকালীন ফ্লোরিডার আদালতে বান্ডি-বুনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে বান্ডি-বুন দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এবং বান্ডি প্রথমবারের মতো বাবা হন।

 

লেইল মেনেন্ডেজ

বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ১৯৯৬ সালে দোষী সাব্যস্ত হন জোসেফ লেইল মেনেন্ডেজ। এর আগেও লেইল লোকচক্ষুর আড়ালে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা-মাকে হত্যায় লেইলের সঙ্গে ছিলেন তারই ভাই এরিক মেনেন্ডেজ। লেইল আদালতকে জানান, তারা বাবা-মাকে খুন করতে চাননি। বাবা-মা তাদের দুই ভাইয়ের বছরের পর বছর ধরে চলা যৌন, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কথা প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছিলেন। তাই তারা এক রকম ভয় পেয়েই বাবা জোসেফের শটগান দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। লেইল মেনেন্ডেজ কারাবাসকালীন দুবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমবার বিয়ে করেন প্রাক্তন মডেল আনা এরিকসনকে। যদিও সে সম্পর্কটি বেশি দূর এগোয়নি। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে এরিকসন জানান, বিয়ের পরও কারাগারে লেইলের একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। দ্বিতীয় বিয়ে হয় ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেবেকা স্নিডের সঙ্গে। যিনি একজন অ্যাটর্নি ছিলেন। এই সম্পর্কটিও বিচ্ছেদে রূপ নেয়। তার অভিযোগ ছিল, লেইল সমকামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দ্বৈত জীবনযাপন করতেন।

 

কেনেথ বানোচি

নাম কেনেথ অ্যালেসিও বানোচি। খুন, অপহরণ ও ধর্ষণ, যা তার কাছে কেবল ছেলেখেলা। তিনি ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ নামে বেশি পরিচিত। ১৯৭৯ সালে বানোচি ছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের আতঙ্ক। ১৯৭৭-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বানোচি তার চাচাতো ভাই অ্যাঞ্জেলো বুনোকে নিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। দুই ভাই লস অ্যাঞ্জেলেসের পাহাড়ে একে একে সাত মেয়ে ও যুবতীকে এনে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যা করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। এরপর বানোচি ওয়াশিংটনে আরও দুই যুবতীকে হত্যা করেন। ১৯৭৯ সালে পুলিশ বানোচিকে এই হত্যাকাণ্ডে সন্দেহ ও গ্রেফতার করে। পরে কারাগারে বেরোয় ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ রহস্য। আদালতে বানোচি মিথ্যা সাক্ষী উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়- হিলসাইড স্ট্রাংলার এখনো পলাতক। যদিও তার মিথ্যা সাক্ষ্য টেকেনি। সাজা ভোগের অন্তত ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালে কেনেথ বানোচি পেন পল শার্লি জয়েস বুককে বিয়ে করেন। জানা গেছে, শার্লিকে আরেক খুনি ও ধর্ষণকারী টেড বান্ডি প্ররোচিত করেন।

 

অ্যাঞ্জেলো বুনো

অ্যাঞ্জেলো অ্যান্থনি বুনো, দুর্ধর্ষ এক খুনি। বুনো নিজেও ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ হত্যার সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস পাহাড়ে ৯ মেয়ে ও যুবতীকে হত্যা করেন বুনো। জানা গেছে, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মেয়ে ও যুবতীদের বয়স ছিল ১২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। জঘন্যতম এই হত্যা সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯৭৯ সালে ওয়াশিংটনে কারেন ম্যান্ডিস এবং ডায়ান ওয়াইল্ডারকে ধর্ষণ ও হত্যার পর পুলিশ বানোচিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করে এবং তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে  বানোচির বাড়ির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। বানোচি মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচার জন্য বুনোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। পুলিশ বানোচির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বুনোকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ বিচারের পর ১৯৮২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। চার বছর পর বুনো ক্রিস্টিন কিজুকাকে বিয়ে করেন। ক্রিস্টিন ক্যালিফোর্নিয়া কর্মচারী উন্নয়ন বিভাগের এক তত্ত্বাবধায়ক।

 

রিচার্ড র‍্যামিরেজ

রিকার্ডো রিচার্ড র‌্যামিরেজও এক দুর্ধর্ষ খুনি, যিনি ‘দ্য নাইট স্টকার’ নামে পরিচিত। হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ এবং শিশু নির্যাতনসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন র‌্যামিরেজ। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকোর বাসিন্দাদের জন্য ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৮৯ সালে পুলিশ র‌্যামিরেজকে গ্রেফতার করে। একই বছর ১৩টি খুন, পাঁচটি হত্যাচেষ্টা ও ১১টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যদিও পরে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে র‌্যামিরেজ ফ্রিল্যান্স ম্যাগাজিন সম্পাদক ডোরিন লিওয়র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। জানা গেছে, কারাগারে কেবল চিঠি-পত্রের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হতো। এখান থেকেই তাদের প্রেম এবং পরবর্তীতে শুভ পরিণয়। কারাভোগের সাত বছর পর  রিচার্ড র‌্যামিরেজ ও ডোরিন লিওয়র বিয়ে করেন। ডোরিন জানান, র‌্যামিরেজ মানুষ হিসেবে ভালো। তবে শৈশবেই বাবার নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অপরাধে জড়ান।

 

এরিক মেনেন্ডেজ

ধনী বাবা-মায়ের (জোসেফ ও মেরি) বড় সন্তান এরিক মেনেন্ডেজ। ১৯৯৬ সালে বাবা-মাকে হত্যার দায়ে জেলে যান এরিক ও লেইল। প্রথমে তাদের বিচারকার্য একই জুরিতে সম্পন্ন হয়। পরে আলাদাভাবে দুই ভাইয়ের বিচার করা হয়। আদালত এরিককেও মৃত্যুদণ্ড দেয়। তবে পরবর্তীতে আদালত দুই ভাইকে আলাদাভাবে কারাভোগের রায় দেয়। ছোট ভাইয়ের মতো বড় ভাইও কারাগারে বিয়ে করেন। তবে ছোট ভাই লেইলের থেকে বড় ভাই এরিক দীর্ঘ সময় দাম্পত্যজীবন উপভোগ করেন। ১৯৯৯ সালে এরিক ফলসম কারাগারে পেন পল তাম্মি স্যাকোম্যানকে বিয়ে করেন। গণমাধ্যম সূত্রমতে তাম্মি জানান, আমাদের বিয়ের কেকটি সুন্দর ছিল। আজও এই দম্পতি কারাগারে তাদের বিবাহিত জীবন উপভোগ করে আসছেন। তাম্মি নিজের প্রকাশিত ‘দ্য সেড উইড নেভার মেক ইট : মাই লাইফ উইথ এরিক মেনেন্ডেজ’ বইতে নিজের বিবাহিত জীবনের নানা স্মৃতির কথা লিখেছেন। তাম্মি নিজের লেখা বইটি ২০১০ সালের শেষাংশে প্রকাশ করেছিলেন।

 

অস্কার রে বলিন

অস্কার রে বলিন, যাকে আমেরিকানরা ‘বলিন দ্য কসাই’ নামেই চেনেন। ১৯৮৬ সালে তিন তরুণীকে অপহরণ এবং হত্যা করার কারণে তাকে সাধারণ আমেরিকানরা ঘৃণাস্বরূপ এই উপাধি দেয়। তখন বলিন ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার। ১৯৮৭ সালে বলিন একইভাবে টেক্সাসে আরেক নারীকে হত্যা করেন। হত্যার প্রায় চার বছর ধরে মামলাগুলো অমীমাংসিত ছিল। পুলিশ বলিনকে ধরার জন্য তার সাবেক স্ত্রীর সাহায্য নেয়। জঘন্যতম এসব অপরাধের জন্য বলিনকে দীর্ঘ ২৩ বছর কারাভোগ করতে হয়। এরপর ২০১৬ সালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় লিথাল ইনজেকশনের মাধ্যমে। দীর্ঘ ২৩ বছরের কারাবাসকালে তিনি চার সন্তানের জননী রোজালি মার্টিনেজকে বিয়ে করেন। সময়টি তখন ১৯৯৬ সাল। তার স্ত্রী রোজালি ছিলেন একজন বিশিষ্ট অ্যাটর্নির সাবেক স্ত্রী।

 

ভার্গ ভিকারনেস

তার আসল নাম লুইস ক্যাশেট। তবে তিনি সবার কাছে ভার্গ ভিকারনেস নামে পরিচিত। ভার্গ একজন নরওয়েজিয়ান সংগীতশিল্পী। ব্ল্যাক মেটাল সংগীতের শিল্পী হলেও ভার্গ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে ভার্গ হত্যা ও অগ্নিসংযোগের জন্য অভিযুক্ত হন। ১৯৯৩ সালে ইউরোনিমাসের সঙ্গে তার শত্রুতা দেখা দেয়। এর সূত্র ধরেই ভার্গ অসলোয় নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ইউরোনিমাসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। যদিও গণমাধ্যমগুলো সে সময় এর জন্য আরেক সংগীতশিল্পীকে দায়ী করেছিল। কারণ, নিহত ইউরোনিমাসের সঙ্গে ওই সংগীতশিল্পীর প্রকাশ্য বিরোধ ছিল। তবে পুলিশি তদন্তে ভার্গ দোষী সাব্যস্ত হন। আদালত তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে সাজা কমিয়ে ১৫ বছরে আনা হয়েছিল। কারাভোগের সময় ভার্গ ভিকারনেস স্থানীয় একটি গির্জায় মেরি ক্যাশেটকে বিয়ে করেন। বর্তমানে ভার্গ-মেরি দম্পতি চার সন্তান নিয়ে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। ২০১৩ সালে ভার্গের জীবনে আরেকটি ভয়ানক ঘটনা ঘটে। ওই বছর ভার্গ ও মেরিকে পুলিশ সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করার সন্দেহে গ্রেফতার করেছিল। শেষ পর্যন্ত ফরাসি আদালতে তিনি ইহুদি-মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত ঘৃণা ও উসকানিমূলক প্ররোচনা দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর