রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঐতিহাসিক ছবির কারিগর

ঐতিহাসিক ছবির কারিগর

রং-তুলির মাধ্যমে সাদা কাগজে ছবি আঁকাআঁকি করে ইতিহাসে অনেকেই খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বে ছবি গ্যালারি বা জাদুঘরে রাখা লাখ লাখ শিল্পের মধ্যে এমন অসাধারণ কিছু ছবি আছে, যা আজও ব্যাপক জনপ্রিয়। রং-তুলির এ কারিগরদের অনেকেই নিজের তৈরি শিল্পের জন্য হয়েছেন আলোচিত এবং সমালোচিত। যারা তাদের প্রতিভা প্রকাশ করেছেন বিখ্যাত সব নান্দনিক চিত্রশিল্প এবং অবিশ্বাস্য ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ইতিহাসে তাদের নাম-পরিচিতি প্রায় অনেকের কাছেই অজানা। বিখ্যাত শিল্পীরা তাদের শিল্পকে হৃদয়ের গভীর থেকে চর্চা করে গেছেন এবং তাদের তৈরি বিখ্যাত সব ছবি দিয়ে কয়েক শতক ধরে মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। এমনই সব বিখ্যাত শিল্পীর শিল্প নিয়ে আজকের এ আয়োজন। লিখেছেন- আবদুল কাদের

 

 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

ছবি : মোনালিসা

যেসব রহস্যের জাল এখনো শিল্প গবেষকরা ভেদ করতে পারেননি, সেসব চিত্রশিল্পের মধ্যে সেরা চিত্রশিল্প মোনালিসা। নিখুঁত অঙ্কন বা শিল্প কাকে বলে? মোনালিসা চিত্রকর্মটি দেখলে হয়তো যে কেউ বুঝতে পারবেন। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই ছবিটির আঁকিয়ে ইতালীয় রেনেসাঁর বহুমুখী গুণের অধিকারী সেই মানুষটি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। বিখ্যাত একজন রং-তুলির কারিগর। ধারণা করা হয়, ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে তিনি এ ছবিটি এঁকেছিলেন। ভিঞ্চি ছিলেন ১৪০০ শতাব্দীর বিখ্যাত ভাস্কর্যশিল্পী, স্থপতি, প্রকৌশলী, গাণিতিক ও শিল্পী। প্রতিটি বিষয়েই তিনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চেয়েছিলেন। অনেকাংশে তিনি সফলও হন। তবে তার গৌরবময় জীবনেও ছিল ব্যর্থতার ছায়া। তিনি মানবীয় সীমায়িত শক্তি নিয়ে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের মতো সীমাহীন হতে। তাই সাফল্যের চূড়ায় উঠেও কখনো তৃপ্তি অনুভব করেননি। ইতালির তুসকানের পাহাড়ঘেরা গ্রাম ভিঞ্চিতে জন্ম লিওনার্দোর। মা কাটেরিনা আর বাবা পিয়েরে দ্য ভিঞ্চি। পিয়েরো ছিলেন উকিল। শৈশব থেকেই ভিঞ্চির প্রতিভা বিকশিত হয়। তার জীবনীকার লিখেছেন, অঙ্কে তার এত মেধা ছিল- যে শিক্ষকরা তাকে পড়াতেন, তারা মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়তেন। লিওনার্দোর জানার ইচ্ছা ছিল প্রবল। তার জিজ্ঞাসায় বিরক্ত হয়ে উঠতেন শিক্ষকরা। অঙ্ক ছাড়াও সংগীতের প্রতি ছিল তার গভীর আকর্ষণ। বাঁশি বাজাতেন তিনি। লিওনার্দো শুধু ছবি আঁকেননি; নতুন নতুন উদ্ভাবন আবিষ্কারে মেতে থেকেছেন। চিত্রকলার ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ছবি মোনালিসা। মানুষের আঁকা সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম। প্রায় ১৬ বছর ধরে একটি-দুটি করে তুলির টান দিয়েও তার কাছে মোনালিসা ছিল অসমাপ্ত এক শিল্প। তিনি এতটাই পারফেক্টশনিস্ট ছিলেন যে, একটি স্কেচের অসংখ্য ভার্সন আঁকতেন। পরে তাতে রং-তুলির আঁচড় পড়ত। বিশ্বের বিখ্যাত সব ছবির মধ্যে মোনালিসা এমন একটি ছবি যা দেখার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ ছুটে যান প্যারিসের লুভর জাদুঘরে। বিখ্যাত এই চিত্র কারিগর ১৫১৯ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকে পাড়ি জমান।

 

রাফায়েল

ছবি : ম্যাডোনা সলি

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেল অ্যাঞ্জেলার মতোই রেনেসাঁ চিত্রকর্মের অন্যতম শিল্পী ছিলেন ইতালির চিত্রকর রাফায়েল। তার পুরো নাম রাফায়েল্লো সেনজিও দ্য আরবিনো। লিওনার্দোর খ্যাতির পর রাফায়েল শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব পান। তিনি লিওনার্দোর ছবি এবং আঁকাআঁকিতে অনুপ্রাণিত হয়ে চিত্রশিল্পীর ক্যারিয়ারে পা রাখেন। রাফায়েল ছিলেন ১৫০০ শতাব্দীর বিখ্যাত চিত্রকর। স্থপতি হিসেবেও তার সুনাম ছিল দেশ-দেশান্তরে। তাকে বলা হতো নন্দনশিল্পী। রাফায়েলের জন্ম ১৪৮৩ সালে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতির ছবি আঁকতে শুরু করেন। তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম হলো ম্যাডোনা সলি ছবিটি যা লিওনার্দোর মোনালিসা ছবিটি দেখে নিজেই একটি অবিকল শিল্প তৈরি করেন। ম্যাডোনা সলি পেইন্টিংটি দেখতে অনেকটা মোনালিসার মতো। রাফায়েল ছবিটি পেইন্টিং করেন ১৫০৬-১৫০৭ সালে। বর্তমানে দারুণ এই শিল্পকর্মটি ফ্লোরেন্সের পিটি প্যালেস জাদুঘরে রাখা আছে এবং প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থী এই ছবিটি দেখতে ছুটে আসেন। ‘ম্যাডোনা সিরিজ’ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মের ভিতর দিয়ে বিখ্যাত রাফায়েলের আবির্ভাব। তার আঁকা বিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে ম্যাডোনা অ্যান্ড চাইল্ড উইথ সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট, ডিস্পুটেশন অব দ্য হোলি সাক্রোমেন্ট, দ্য ট্রান্সফিগারেশন, সিস্টিন ম্যাডোনা, দ্য স্কুল অব অ্যাথেন্স এবং দ্য থ্রি গ্রেসেস। পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের প্রতিকৃতিও তার বিখ্যাত শিল্পকর্মের একটি। রেনেসাঁর দৃশ্যপটে রাফায়েলের আবির্ভাব ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে। রোমের বহু বিখ্যাত ভবনের দেয়ালচিত্র এঁকে তিনি ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। এর মধ্যে পোপের পাঠাগার ও দফতর, ভ্যাটিকানের স্তানজা দেল্লা সেইঞাতুরা, স্তানজা দেলিওদোরো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার সবচেয়ে বিখ্যাত দেয়ালচিত্রের নাম ‘দ্য ফায়ার ইন বোর্গো’। জগৎখ্যাত শিল্পী রাফায়েল ১৫২০ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

 

দিয়েগো ভেলাসকুয়েজ

ছবি : মারিয়া থেরেসা

দিয়েগো ভেলাসকুয়েজ ছিলেন ১৭ তম শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, পশ্চিমা শিল্পের এক বিশাল দৈত্য। তিনি ছিলেন একজন স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, রাজা ফিলিপ চতুর্থ এবং স্প্যানিশ স্বর্ণযুগের দরবারের প্রধান শিল্পী। রং-তুলির সঙ্গে দারুণ সখ্য ছিল তার। তাই তো ব্রাশের সঙ্গে তার তীক্ষè চোখ কোনো ভুল করত না। তার প্রতিটি শিল্পকর্মের কদর একাল-সেকাল সবকালেই ছিল এবং আছে। তার তৈরি শিল্পকর্মগুলো এতটাই জীবন্ত, কেউ দেখলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এবং ছবির ভিতরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। ১৫৯৯ সালে স্পেনের সেভিলি শহরে জন্মগ্রহণ করেন দিয়েগো। ১৬ শতাব্দীর বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের মধ্যে দিয়েগো অন্যতম। দিয়েগো অনেক রাজকীয় চিত্র আঁকেন, বিশেষত লাস মেনিনাস। রয়েছে ওল্ড ওম্যান রন্ধন ডিম, পোপ ইনোসেন্ট এক্স এবং জুয়ান দে পেরেজার। তবে তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম হলো- স্পেনের রাজার কন্যা মারিয়া থেরেসার হুবহু প্রতিকৃতি যা তখনকার সময় থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাপক জনপ্রিয়। বিখ্যাত ছবিটি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। রং-তুলির এই জাদুকর ১৬৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

পাবলো পিকাসো

ছবি : মারিয়া থেরেসা

শিল্পক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর সেরা চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো। ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ স্পেনের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বন্দর-শহর মালাগায়। বাবা ছিলেন প্রাদেশিক চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের চিত্রাঙ্কনের শিক্ষক এবং স্থানীয় জাদুঘরের কিউরেটর। বাবার কাছে হাতেখড়ি পিকাসোর। ভাস্কর্য শিল্পী এবং চিত্রশিল্পী হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছেন এই শিল্পী। অন্তত ৭১ বছর তিনি নিপুণভাবে তার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে গেছেন। তার আঁকা চিত্রকর্ম, মিনার, ভাস্কর্য এখন বিশ্বের বড় বড় জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। পিকাসোর বিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে নীল ও গোলাপি এক যুবকের পেইন্টিং, গুয়েরনিকা ইত্যাদি। ১৯৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে বিখ্যাত গুয়েরনিকা শিল্পকর্মটি তৈরি করেন। পিকাসো বেঁচেছিলেন একানব্বই বছর। ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল ফ্রান্সের মৌগিন্সে ৯১ বছর বয়সে মারা যান পাবলো পিকাসো।

 

ভিনসেন্ট ভ্যান গখ

ছবি : স্টোরি নাইট

জীবনের ২৮ বসন্ত পার হওয়ার পর চিত্রশিল্পীর ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ। বিখ্যাত এই শিল্পীর জন্ম ১৮৫৩ সালে। ছিলেন একমাত্র প্রতিচ্ছায়াবাদী একজন শিল্পী। তার বিখ্যাত সব চিত্রশিল্পের মধ্যে রয়েছে থিম নাইট সানফ্লাওয়ার, স্টেরি নাইট, ক্যাফে ট্যারেন্স নাইট ইত্যাদি। স্টেরি নাইট নামের বিখ্যাত চিত্রটি আধুনিক সংস্কৃতির সবচেয়ে সুপরিচিত রূপ যা সর্বকালের সেরা ছবি হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়।

এই বিখ্যাত চিত্রকর্মটি তিনি ১৯৮৯ সালে তৈরি করেন। তার বিখ্যাত শিল্পটি নিউইয়র্কের আধুনিক আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। ১৮৯০ সালে ভিনসেন্ট মারা যান।

 

 

মাসাক্কিও

ছবি : ব্রাঙ্কাক্কি চ্যাপেল

অল্প বয়সে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা অনেক কঠিন, তবে চতুর্দশ শতকের এক চিত্রশিল্পী অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। নাম তোম্মাসো ডি গিওভ্যান্যি ডি মোনি কাসাই। তিনি অনেক ছবি এঁকেছেন, যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সেরার তকমা পায়। মাসাক্কিও ছিলেন সে সময়ের সেরা চিত্রশিল্পী। তার দক্ষতা ও শিল্পকর্ম মানুষের মনকে সহজেই জয় করত। ১৪০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন মাসাক্কিও। তাকে ১৪০০ শতাব্দীর সেরা চিত্রশিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খুব অল্প বয়সেই তিনি বহু চিত্রশিল্প তৈরি করেন ও এর মাধ্যমে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যান খুব সহজেই। তাঁর সফলতার ঝুলিতে রয়েছে সেন্ট পিটার্স-এর ব্রাঙ্কাক্কি চ্যাপেল দেয়ালের চিত্র। যা তার পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিখ্যাত ছবি হয়ে আছে সারা বিশ্বজুড়ে। যখন তার বয়স ২৬ তখন তিনি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন।

 

রেমব্রান্ট ভান রিন

ছবি : দ্য নাইটওয়াচ

বিখ্যাত শিল্পীদের অন্যতম রেমব্রান্ট ভান রিন। প্রাচীন রাজাদের রাজ্যের পরিচালনার কর্মকান্ড সুনিপুণ রং-তুলিতে এঁকেছেন তিনি নিখুঁতভাবে। ১৬০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন রেমব্রান্ট। তার তৈরি অনেক শিল্পকর্ম আছে যা বিখ্যাত শিল্পী কারাভাজ্জিওর সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়। তার তৈরি বেশিরভাগ ছবিই রাতের দৃশ্য ও বিভিন্ন নকশায় পরিপূর্ণ। চিত্রকর্মের মধ্যে তিনি মানুষের অবস্থা, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি নাটকীয়তা ফুটিয়ে তুলতেন। তার বিখ্যাত সব ছবির মধ্যে সেরা ছবি হলো দ্য নাইটওয়াচ, যেখানে তিনি ফরাসি রাজ্যের নেতৃত্বের ধরন ও রাজ্য পাহারা দেওয়ার চরিত্র তুলে ধরেছেন। বিখ্যাত এই চিত্রকর্মটি ১৬৪২ সালের শেষ দিকে আমস্টারডামের রিজস্ক মিউজিয়ামে প্রথম প্রদর্শিত হয়। বিখ্যাত এই ছবির কারিগর ১৬৬৯ সালে পরলোকগমন করেন।

 

মাইকেলেঞ্জেলো

ছবি : পিটা

ইতিহাসের পাতায় সেরাদের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি ছবি তৈরির পাশাপাশি ভাস্কর্য তৈরিতেও ছিলেন বেশ পটু। তিনি মাইকেলেঞ্জলো। তার পুরো নাম মাইকেলেঞ্জেলো দি লোদোভিকো বুওনারোত্তি সিমোনি। ইতালির বিখ্যাত ফ্লোরেন্স শহরে ১৪৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৪০০ শতাব্দীর বিখ্যাত ভাস্কর্যশিল্পী, যিনি তাঁর চিত্রকর্ম দ্বারা সেরা শিল্পীদের তালিকায় উঠে আসেন। তিনি রেনেসাঁ যুগের ভাস্কর্যশিল্পী। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে মহামূল্যবান চিত্রকর্ম- সিস্টাইন চ্যাপেল, দ্য পিটা এবং ডেভিড নামের ভাস্কর্য। তার বিখ্যাত ভাস্কর্যটি হচ্ছে পিটা যা তিনি যিশুখ্রিস্টের কিশোর জীবন নিয়ে এটি তৈরি করেন। ভাস্কর্যে দেখানো হয়, সেন্ট পিটার্স রাজপ্রাসাদে ভার্জিন মেরি একটি কিশোর বয়সের ছেলের মৃতদেহ বহন করছে। ভাস্কর্যটি মার্বেল পাথরে তৈরি। ষোড়শ শতকের শিল্পীদের মধ্যে তারই বিভিন্ন কাজ, খসড়া চিত্র ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি সংরক্ষিত হয়েছে। ১৫৬৪ সালে এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।

কারাভাজ্জিও

ছবি : দ্য সপার ইয়াম্মাস

প্রাচীন ইউরোপের বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে কারাভাজ্জিও এমনি এক জাদুকর যার রং-তুলির জাদু মানুষের মনে সাড়া দিত ব্যাপকভাবে। তিনি মানুষের শারীরিক গড়ন এতটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতেন যে কেউ দেখলে মনে করতে পারে বাস্তব চিত্র। পনেরো শতকের সেরা চিত্রশিল্পী ছিলেন কারাভাজ্জিও। তার তৈরি অনেক শিল্পকর্ম এখন পর্যন্ত অনেক জনপ্রিয়। বিখ্যাত এই ছবির কারিগর ১৫৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন মিলানের লোমবারডি নামক শহরে। তার পুরো নাম হচ্ছে মিচেলঅ্যাঞ্জেলিও মেরিসি ডি কারাভাজ্জিও। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে এতিম হন, ছোট্ট বয়স থেকেই তিনি পেইন্টিং ছাড়াও ছোট-বড় ভাস্কর্য তৈরি করে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। তার তৈরি সেরা চিত্র হলো দ্য সপার ইয়াম্মাস। যিশু খ্রিস্টের দুই শিষ্যকে নিয়ে ইয়াম্মুর নৈশভোজের দৃশ্যটি তার নিপুণ রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই ছবিটি তখনকার সময় প্রচুর জনপ্রিয়তা পায় যা এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। ১৬১০ সালে এই মহান বিখ্যাত ব্যক্তি পরলোকে পাড়ি জমান।

পিটার পল রবেন্স

ছবি : দ্য ফল অব ফাইটন

ইউরোপ ও আমেরিকার সেরা শিল্পীদের মধ্যে পিটার পল রবেন্স একজন যিনি প্রাচীনকালের সে সময়ের মানুষের জীবন চিত্র রং-তুলির আঁচড়ে এঁকেছেন। প্রাচীন জীবনচিত্রে রোমান সাম্রাজ্যের কাহিনি এতটা সহজে অন্য কোনো শিল্পী তুলে ধরতে পারেননি। পিটার পল রবেন্সকে ১৫০০ শতাব্দীর বিখ্যাত শিল্পী বলে মনে করা হয়। তিনি ১৫৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শুধু একজন আর্টিস্ট বা শিল্পীই না, তিনি একজন প্রকৌশলীও বটে। যিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রোমান ভাস্কর্য তৈরি করতেন। তার বিখ্যাত সব শিল্পকর্ম মিচেলঅ্যাঞ্জেলো, ট্রিটিয়ান ও কারাভাজ্জিওর মতো বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তার সফলতার ঝুলিতে অসংখ্য চিত্রকর্ম রয়েছে যা বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মটি হলো দ্য ফল অব ফাইটন, বর্তমানে এই বিখ্যাত ছবিটি ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল আর্ট অব গ্যালারি মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই মহান ব্যক্তি ১৬৪০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর