রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নৌযানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

সাইফ ইমন

নৌযানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

প্রায় ৩ মিলিয়ন নৌযান সাগরে নানা সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সমুদ্রে প্রচ- ঝড়ের মধ্যে দিক হারিয়ে কিংবা আগুনে পুড়ে অথবা ডুবু পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে এসব নৌযান যাত্রীসহ নানা সময়ে তলিয়ে যায় সাগরের বুকে। এসব জাহাজের কাহিনি নিয়ে নানা সময়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। টাইটানিকের কথা সবাই জানে। কিন্তু টাইটানিক ছাড়াও অনেক জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আলোচিত হয়েছে।  এ ছাড়া নৌযানে অগ্নিকান্ডের ঘটনাও কম নয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নৌযান অগ্নিকান্ডের ফলে ঘটেছে মর্মান্তিক সব ঘটনা।  আজকের রকমারিতে থাকছে অগ্নিকান্ডের কারণে দুর্ঘটনাকবলিত আলোচিত কিছু ঘটনা...

সান জোসের পাউডার রুমে আগুন

ইতিহাস হয়ে আছে স্প্যানিশ রণতরী সান জোস।

জাহাজ দুর্ঘটনার অন্যতম একটি ঘটনা এই সান জোস। জাহাজটি সে সময়ের উন্নত রণতরীগুলোর একটি। কিন্তু অবাক তথ্য হলো- প্রায় ৩০৭ বছর নিখোঁজ ছিল জাহাজটি। নিখোঁজের সময় জাহাজে ছিল অঢেল গুপ্তধন, যা অষ্টাদশ শতাব্দীতে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। ১৭০৮ সালে জাহাজটি স্পেন থেকে আমেরিকায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে চারটি ইংরেজ জাহাজের সৈন্য দল আক্রমণ চালায়। সেই যুদ্ধে প্রাণ হারান প্রায় ৬০০ নাবিক। দুর্দান্ত সব সমরাস্ত্র আর দক্ষ নাবিক থাকা সত্ত্বেও সান জোস সমুদ্রে হারিয়ে যায়। টিকে থাকতে পারেনি। কেউই সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি আসলে কী ঘটেছিল সান জোসের ভাগ্যে। কেউ কেউ বলেন, সম্ভবত জাহাজটির পাউডার রুমে আগুন ধরেছিল। যা থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। অনেকে আবার মনে করেন, ইংরেজদের গোলাবারুদের সামনে টিকতেই পারেনি স্প্যানিশরা। সে যাই হোক না কেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্ধার করা হয় জাহাজটি। তবে জাহাজটির গুপ্তধন আর মালিকানা নিয়ে বাধে বিরোধ। কলম্বিয়া সরকার জাহাজটি উদ্ধার করতে সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপের ঘোষণা দিয়েছিল। অন্যদিকে স্প্যানিশ সরকারও ভাগ ছাড়তে নারাজ। আবার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও জাহাজটি নিজেদের দাবি করে। ফলে বহু আলোচনার জন্ম দেয় সান জোস।

 

স্কটসবরোর জ্যাকসন কাউন্টি পার্কে মানুষ যখন  ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে

অ্যালাবামায় একসঙ্গে ৩৫ নৌযানে আগুন

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যালাবামায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত হন আটজন। 

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের ম্যারিনায় বেশ কয়েকটি নৌকায় একযোগে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

কমপক্ষে আটজন নিহত হন। স্কটসবরোর জ্যাকসন কাউন্টি পার্কে মানুষ যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খেয়াঘাটের কাঠের পাটাতনের ওপর বসানো অ্যালুমিনিয়ামের ছাদ ধসে পড়ে। এতে কয়েকটি নৌকা ডুবে যায়।

এ সময় নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া সাতজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তৎক্ষণাৎ আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।  স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাতের ঘটনা হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। টেনেসি নদীর ৩৫টি নৌযানের পাশাপাশি পন্টুন ডকেও আগুন ছড়িয়ে যায়। দমকল বিভাগকে আগুন নেভাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় এমনটি হয়। স্কটসবরোর দমকল বিভাগের প্রধান জেন নেকলাস বলেন, ‘একেবারেই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ছিল। আমার জীবনে দেখা একটি ধ্বংসাত্মক ঘটনা।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, আগুনের শিখা নৌকার সারি ঘিরে ফেলেছে। একের পর এক নৌকা আগুনে পুড়তে থাকে। এভাবে পুড়তে পুড়তে ৩৫টি নৌকায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন।

 

অগ্নিকান্ডে ক্রিমিয়ার দুটি জাহাজ

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কের্চ প্রণালিতে দুটি জাহাজে আগুন লেগে ১০ জন নাবিক নিহত হন। তাছাড়া প্রাণে বাঁচতে সমুদ্রে লাফ দেওয়া আহত ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। রাশিয়ার পরিবহন বেশ কয়েক দিন ধরেই সেখানে উদ্ধার অভিযান চালায়। আগুন লাগার পর প্রাণে বাঁচতে ক্রু সদস্যরা সমুদ্রে লাফ দেন। ধারণা করা হয় যে, এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে জ্বালানি স্থানান্তরের সময় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, দুটি জাহাজেই তানজানিয়ার পতাকা দেখা যায়। মোট ৩১ জন ক্রু সদস্য ছিলেন জাহাজ দুটিতে। তাদের মধ্যে ১৬ জন তুরস্কের নাগরিক আর বাকি ১৫ জন ভারতীয়। অন্য আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, যখন এই দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন সমুদ্রে ঝড়ো অবস্থা চলছিল। এর ফলেও দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।

 

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, প্লাস্টিকের একটি বস্তুতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ পড়ার পর আগুনের সূত্রপাত।  চার  দিন ধরে পুড়তে থাকে রণতরী...

আমেরিকায় পরপর যুদ্ধজাহাজে আগুন

২০২০ সালের জুলাই মাসে আমেরিকার যুদ্ধজাহাজে পর পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। দুটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমটিতে আগুন লাগার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি যুদ্ধজাহাজে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সে বছর ১৮ জুলাই মার্কিন নিউজ সাইট ডিফেন্সনিউজ এ তথ্য নিশ্চত করে। মার্কিন নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোরফক বন্দরে যুদ্ধজাহাজ ‘কারসার্জ’-এ আগুন লাগে। এরপর দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন লাগার পর পরই জেনারেল ডায়নামিক্স নাসকো শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, প্লাস্টিকের একটি বস্তুতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ পড়ার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এ ঘটনায়  দমকল কর্মীরা দক্ষতার পরিচয় দেন। দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষম হন তারা। এরপর শিপইয়ার্ডের নিরাপত্তার বিষয়ে পরিপূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। এর এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগো শিপইয়ার্ডে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস বনোহোম রিচার্ডে আগুন লাগে। দীর্ঘ চার দিনের চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হন দমকল কর্মীরা। আগুন ধরার পর অন্তত ৬৩ জন আহত হন। রণতরীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এক বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।

 

তাদের মধ্যে পাঁচজন প্রাণে বেঁচে যান ও ২৫ জনের মৃত্যু হয়। বাকি ২৬ জন নিখোঁজ হন...

২৫ জন নিহত হন ক্যালিফোর্নিয়ায়

নৌযানে আগুন লাগার একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়।

২০১৯ সালে  ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় এক দ্বীপের উপকূলে একটি নৌযানে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। রাতের বেলা ঘটা এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। রাতের বেলা কোনো নৌযানে আগুন লাগা মানে অনেক মানুষ তখন ঘুমিয়ে থাকে। ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। মৃত্যুর ঘটনাও বেশি ঘটে। আগুন লাগার পর সেটি ডুবে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও ৯ জন নিখোঁজ হন। উদ্ধারকারীরা ডুবে যাওয়া নৌযানটির আশপাশে সাগরের তলদেশে ২৫টি মৃতদেহ খুঁজে পান। সান্তা ক্রুজ আইল্যান্ডের কাছে ‘কনসেপশন’ নামের নৌযান ছিল সেটি। কোস্ট গার্ডের প্রধান অ্যারন বেমিস জানান, নৌযানে ৩৪ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রু ছিলেন। ক্রুরা ডেকের ওপরে থাকায় প্রাণে বাঁচতে সক্ষম হন। তারা নৌযানটি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। ক্রুরা ডেকের ওপরে ঘুমাচ্ছিলেন। অন্যরা ডেকের নিচে থাকায় তারা আগুনে ভিতরেই আটকা পড়েন। ঘটনাস্থলে চারটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। উদ্ধারকারীরা ডুবে যাওয়া নৌকাটির কাছে সাগরের তলদেশে আরও চারটি মৃতদেহ পান। সান্তা বারবারার কাউন্টি শেরিফ বিল ব্রাউন জানান, নৌযানটি পানির ১৮ মিটার গভীরে (৬০ ফুট) উল্টো হয়ে ডুবে যায়। ৩৯ জন আরোহী নিয়ে কনসেপশন ক্যালিফোর্নিয়ার চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে (সান্তা ক্রুজ এ দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ) গিয়েছিল। শুরুতেই আশঙ্কা করা হয়েছিল যে এই অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে।

 

শ্রীলঙ্কায় আট দিন ধরে পুড়তে থাকে রাসায়নিকবাহী জাহাজ

অগ্নিকান্ডে জাহাজের তেল ও ধ্বংসাবশেষে সয়লাব সৈকত। এমন খবর দেখে আঁতকে ওঠেন সবাই। ঘটনাটি এই বছর মে মাসের। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ এক্সপ্রেস পার্ল, সপ্তাহখানেক ধরেই সেটি দাউ দাউ করে জ্বলছিল। শ্রীলঙ্কা উপকূলে এই পণ্যবাহী জাহাজটিতে আগুন লেগে যাওয়ার পর তেল আর ধ্বংসাবশেষে সয়লাব হয়ে যায় সমুদ্রসৈকত। দেশটির পশ্চিম উপকূলের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল নেগোম্বোর সৈকতে ওই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে বিবিসি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়। এরপর সৈকতের ছবি নিয়েই শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। আট দিন ধরে আগুনে পুড়ে যাওয়া জাহাজটি বিভিন্ন রাসায়নিক ও প্রসাধন সামগ্রী বহন করছিল। দুর্ঘটনার কারণে সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে উদ্ধার বিশেষজ্ঞ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে মিলে আগুন নেভানোর কাজ করে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উত্তাল সমুদ্রে উদ্ধারকাজ ঠিকমতো চালানো যাচ্ছিল না। ফলে ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছিল। বেশি দিন ধরে পুড়তে থাকায় শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান দয়া রত্নায়েক বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও প্রচ- উত্তপ্ত থাকায় জাহাজটির কাছে যেতে পারছিল না উদ্ধারকারীরা। ওই মুহূর্তে এলাকাটিতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। দেশটির সমুদ্র পরিবেশ সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, যে কোনো ধরনের তেল ছড়িয়ে পড়লে তা স্পর্শকাতর উপহ্রদগুলোর দিকে ভেসে যাবে। এসব হ্রদ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র। এর আগে স্থানীয়দের জাহাজটির কাছে আসতে বারণ করেছিল কর্তৃপক্ষ।

 

নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল ওই জাহাজটি।  সব ধরনের চেষ্টা চালানোর পরও জাহাজটিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি

ডুবে যায় ইরানি জাহাজ

অগ্নিকান্ডের পর সাগরে ডুবে যায় ইরানি জাহাজ। এই বছর জুন মাসের ঘটনা এটি। হরমুজ প্রণালির কাছে ইরানের নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় একটি জাহাজে অগ্নিকান্ডের পর ডুবে যায়। ভোরে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। জাহাজটিতে আগুন লাগার পর দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। জাহাজটি হরমুজ প্রণালির নিকটবর্তী ওমান উপসাগরের ইরানি বন্দর জাস্কের কাছে ডুবে যায়। সেখানে নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল ওই জাহাজটি। একটি দ্বীপের নামে জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল খার্গ। সেনাবাহিনী জানায়, ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়েও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে গত বছর ওমান উপসাগরে মহড়া চলাকালে একটি ইরানি যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভুলক্রমে অপর একটি ইরানি জাহাজে আঘাত হানায় ১৯ নাবিকের মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হন।

 

দেশে পাঁচ বছরে ৩ হাজার ৪৮৬টি নৌ-দুর্ঘটনা

বাংলাদেশে নৌ-দুর্ঘটনা ও এতে আহত-নিহত বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ভয়াবহ এক নৌ-দুর্ঘটনা দেখল দেশবাসী। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওই আগুন লাগে। লঞ্চটি রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠি টার্মিনালের কাছাকাছি পৌঁছালে ইঞ্জিন রুমে লাগা আগুন মুহূর্তেই পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার দিয়াকুল এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে। খবর পেয়ে ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই অগ্নিকান্ডে এখন পর্যন্ত ৪০ জন মারা গেছেন। অতীতেও এমন বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন লঞ্চযাত্রীরা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে, গ্রেফতারও হয়েছেন দায়ীরা। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু অধিকাংশ নৌ-দুর্ঘটনা সীমাবদ্ধ থাকে তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলেই। তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়ানো জন্য যে সুপারিশ করা হয়, তা আর বাস্তবে রূপ নেয় না। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নদীপথে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৩ হাজার ৪৮৬টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ১১৭ জন নিহত হন। আর বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোডের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭১২টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৮৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৬৬ জন। এর সঙ্গে গত রাতের এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডে ইতিমধ্যে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। ফলে ছয় বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৪৫ জন। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, ২০২১ সালের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ সংস্থার পরিসংখ্যানে ছয় বছরের সঠিক তথ্য উঠে আসবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ১ হাজার ২০৩টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৯৫৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৭২৪ জন এবং নারী ২২৯ জন। আহত হন ২৫৬ জন পুরুষ এবং ৬৮ জন নারী। ২০১৯ সালে মোট ৮২০টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬৮৫ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৬৬৮ জনকে। ২০১৮ সালে মোট ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৪৫৫ জনকে। ২০১৮ সালে মোট ৫০৮টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৪৫৫ জনকে। ২০১৭ সালে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে মোট ৫৩০টি নৌ-দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এসব দুর্ঘটনায় ৬৪৩ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৫৭১ জনকে। আর ২০১৬ সালে মোট ৪২৫টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪১০ জন মারা যান, উদ্ধার করা হয় ৩২১ জনকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর