রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনাকালে দেশে দেশে বর্ষবরণ

সাইফ ইমন

করোনাকালে দেশে দেশে বর্ষবরণ

ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড

রীতি অনুযায়ী ইংল্যান্ডে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা উন্মোচনের ভিতর দিয়ে। সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। সার্কাস, বাজি, বাঁশি, পার্টি মিউজিক, নাচ সবই চলে। মিশ ভয়েসে ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ গেয়ে অতীত দিনের সম্মানও জানানো হয়। করোনা সংক্রমণ চলছে এ বছরও। গত সাত দিনে এখানে গড়ে আক্রন্ত হয়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। এখানকার মানুষের বর্ষবরণের অপর ঐতিহ্য হলো প্রথম পদচারণা। এ জন্য একজন লম্বা, সুঠামদেহী কালো বর্ণের পুরুষ বছরের প্রথম প্রহর অর্থাৎ মধ্যরাতে জনগণের বাড়ি পরিদর্শনে যান। রীতি অনুযায়ী তার হাতে এক টুকরো রুটি, এক বোতল হুইস্কি, কিছু জ্বালানি এবং লবণ থাকে। আর স্কটল্যান্ডে নতুন বছর উদযাপনের রীতিকে বলা হয় ‘হগম্যানাই’। ফার্স্ট ফুটিং বা প্রথম পদক্ষেপ দিয়ে যাত্রা হয় এই উৎসবের। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যরাত থেকেই সবাই তাদের প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।

 

ভিয়েতনামে ভিন্নভাবে

গত সাত দিনে ভিয়েতনামে গড়ে ১৫ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শেষ কয়েক মাসে দেশটিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বেশি। সাধারণত ভিয়েতনামের মানুষ কিছুটা ভিন্নভাবেই বর্ষবরণের আয়োজন করে আসছে। এ দিন তারা পূর্বপুরুষদের স্মরণে প্রার্থনা করে থাকে। এ ছাড়াও দেশটির উত্তরে কিছু সংখ্যালঘু জাতি রয়েছে, যারা বছরের শেষ দিনে জলাধারে দল বেঁধে গিয়ে মোমবাতি জ্বেলে মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করে। এদিকে নববর্ষ উদযাপনে ভিন্ন স্পেনের অধিবাসীরা। এখানে নতুন বছর শুরু করেন ১২টি আঙুর খাওয়ার মাধ্যমে। ১২টি আঙুর খাওয়ার উদ্দেশ্য, আগামী ১২টি মাস যেন তারা সুখ ও সমৃদ্ধির সঙ্গে কাটাতে পারেন। হল্যান্ডের মানুষ ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন জ্বালিয়ে এবং আকাশে আতশবাজি ফুটিয়ে নতুন বছর শুরু করেন। গ্রিস শহরের সেন্ট বাসিলে হয়ে থাকে নতুন বছরের উৎসব। এদিন তাদের ঐতিহ্যগত খাবার ‘ভাসিলোপিসা’ বা ‘সেন্ট বাসিল’স কেক পরিবেশন করা হয়।

বিশ্বজুড়ে গ্রেগরিয়ান নিউ ইয়ার

করোনা মহামারিতে আক্রান্ত ২০২১ সালকে বিদায় জানিয়ে এলো নতুন বছর ২০২২। শুরু হলো আমাদের নতুন পথচলা। স্বাগত ২০২২। শুভ হোক, সুন্দর হোক নতুন বছর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় ভিন্নভাবে। একই ক্যালেন্ডারে সবার কাছে নতুন বছর এলেও স্বাগত জানানোর রীতি ভিন্ন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ফলে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনটি ‘নিউ ইয়ার’-এর যাত্রা হিসেবে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই। নিউ ইয়ার বা নতুন বছর উদযাপনের রীতি অনেক প্রাচীন। ইতিহাসের সূত্রমতে, প্রাচীন ব্যাবিলনের অধিবাসীরা প্রথম নিউ ইয়ার উদযাপন করেন। সেটাও খ্রিস্টপূর্ব ২ হাজার বছর আগের কথা। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায় রোমান ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। কিন্তু যেসব দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয় তারা সাধারণত নববর্ষ ১ জানুয়ারিতে পালন করে আসছে। এর প্রভাব বছরের কয়েকটা মাসের ওপর দেখা যায়। লাতিন ভাষায় সেপ্টেম্বরের অর্থ হচ্ছে ৭, অক্টোবর ৮, নভেম্বর ৯ এবং ডিসেম্বর ১০। সেই সময় রোমান সরকারের নতুন অধিবেশন শুরু হতো জানুয়ারি মাস থেকে। পরিবর্তন ঘটানোর পর খ্রিস্টপূর্ব ৮ সালে এম্পরর অপাস্টাস সিজার আরেক দফা পরিবর্তন ঘটান। সর্বশেষ পোপ ১৩তম গ্রেগরি ১৫৮২ সালে ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন ঘটিয়ে এর বর্তমান কাঠামোতে নিয়ে আসেন। এই পরিবর্তিত ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষের শুরু হয় ১ জানুয়ারি। দিনটি মধ্যযুগে ধর্মীয় দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পৃথিবীর সব বড় বড় শহরে নববর্ষের আগমুহূর্তে বিশাল সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে আতশবাজি ফাটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। নতুন বছর নিয়ে সাহিত্যেও কিছু কাজ এবং বাণী লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজি সাহিত্যে নতুন বছর উদযাপনের সবচেয়ে আদি গীতিকবিতা লেখা হয়েছে স্কটল্যান্ডে।  লোকগীতি হিসেবে খ্যাত ‘অল্ড ল্যাঙ্গ সাঙ্গ’ বা ‘পুরনো দিনের কথা’ গানটি প্রথম লোকসম্মুখে আনেন কবি রবার্ট বার্নস। নতুন বছর নিয়ে টিএস ইলিয়ট তার ‘লিটল গিডিং’ কবিতায় লিখেছেন- ‘গত বছরের শব্দগুলো গত বছরের ভাষার জন্য এবং আগামী বছরের শব্দগুলো নতুন ভাষার জন্য অপেক্ষা করছে...।’

আমেরিকা

আমেরিকায় গত সাত দিনে গড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব করেছে আমেরিকার জনগণ। সাধারণত রমরমা পার্টিতে শ্যাম্পেনের মুখ উন্মোচন, কেক কাটা, হাজারো খাবার আয়োজন, হালের চোখ রগড়ানো পার্টি পোশাক পরিধান, পার্টি উন্মাদনা, রঙিন কাগজ-জরি উড়ানো, আতশবাজি ফোটানো, উচ্চ শব্দে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো, একে অপরকে আলিঙ্গন, পার্টি মিউজিকে রাতভর নাচ আর ঠাট্টা তামাশায় মেতে থাকা আমেরিকার বর্ষবরণের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আমেরিকার ‘নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন’-এর উৎসবকে ধরা হয় পুরো বিশ্বের সবচেয়ে বড় নতুন বছর উদযাপন উৎসব। নিউইয়র্ক নগরীর টাইমস স্কোয়ারে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ‘নিউ ইয়ার বল’ ফেলার মাধ্যমে নতুন বছর শুরু হয়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ১৯০৭ সাল থেকে টাইমস স্কোয়ারে এ উদযাপন হয়ে আসছে।

ফ্রান্সে বিশেষ ভোজ

করোনার মধ্যেই ফ্রান্সে উদযাপিত হয়েছে নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার উৎসব। এখানে স্বাভাবিকভাবেই আইফেল টাওয়ারকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বর্ষবরণ উৎসব। এই দিনে বিশেষ ভোজের আয়োজন থাকে। ফ্রান্সে নববর্ষের দিনটিকে জউর দে এটরের্নস বলা হয়। এখানে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় ১ জানুয়ারি, যখন একজন অন্য জনকে বন্নে আনেস বলে অভিবাদন জানায়। সাধারণত এ সময় আইফেল টাওয়ারের পাশে আতশবাজি ফাটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। ফরাসিরা থার্টিফার্স্ট নাইটকে লা সেইন্ট-সিলভেস্ট্রে বলে ডাকে। এদিন এক বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়, যার নাম লে রেভেলিয়ন ডি সেইন্ট সিলভেস্ট্রে। তখন ভালো ভালো খাবার যেমন প্যানকেক আর হাঁস রান্না হয়। এ ছাড়াও এদিন প্যালে ডে রইস নামের এক ধরনের কেক বানানো হয়। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ এখানেও পালন করেছে নতুন বর্ষবরণ উৎসব।

সর্বশেষ খবর