রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে দেশে সেনা অভিযান

সাইফ ইমন

দেশে দেশে সেনা অভিযান

ইউক্রেনে সম্প্র্রতি সেনা অভিযান চালিয়েছে রাশিয়া। যার বিরোধিতা করছেন বিশ্ব নেতারা। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, বিশ্বের নানা দেশেই এমন সেনা অভিযান পরিচালিত হয়েছে।  কিছুদিন আগেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে মার্কিন সরকার। ইতিহাসে সেনা অভিযানের কিছু ঘটনা নিয়েই আজকের রকমারি...  

 

ইরানে হামলা চালায় ইরাক

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সূচনা ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৮৮ সালের আগস্টে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এর অবসান ঘটে। ইরানের কাছে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ এবং পবিত্র প্রতিরোধ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এ যুদ্ধকে ব্যাটল অব কাদেসিয়া নামে অভিহিত করতেন। সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জঙ্গিদের ইরানি মদদ দেওয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূখণ্ডে আক্রমণ এবং অনুপ্রবেশ চালায়। এরা আগে ঘটে যাওয়া ইরানি ইসলামী বিপ্লবের নাজুক অবস্থাকে ব্যবহার করে ইরাক যুদ্ধে দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু কার্যত সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯৮২ সালের জুনের মধ্যে ইরান তার হারানো সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়। এর পরের ছয় বছর ইরানি বাহিনী যুদ্ধে অগ্রসর ভূমিকায় ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কৌশলের সঙ্গে এ যুদ্ধের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরিখা, কাঁটাতার, মানব স্রোত, বেয়োনেট চার্জ এ যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ইরাকি বাহিনী ইরানি সৈন্য, বেসামরিক নাগরিক এবং ইরাকি কুর্দিদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস এবং মাস্টারড গ্যাস প্রয়োগ করে। সর্বপ্রথম ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বিমান বাহিনী ইরানের ১০টি বিমান বাহিনী ঘাঁটির ওপর অতর্কিত পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়। এদিকে ইরানের তেল সমৃদ্ধ খুজেস্তান প্রদেশ ইরাক দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে ইরান চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে এবং এই বিপর্যয় তেহরানের সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে, এমন ভাবনা থেকে সাদ্দাম হোসেন খুজেস্তানের ওপর পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করে। ইরাকের আরও দুটি ডিভিশন মধ্যবর্তী ফ্রন্টে আক্রমণ পরিচালনা করে। ইরাকের অতর্কিত আক্রমণ ইরানের জন্য ছিল বিস্ময়কর। ফলে বিভিন্ন স্থানে ইরানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী পাসদারান প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করে। তবে, বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধের মাঝে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকায় ইরাকি বাহিনীকে শুরুতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। জাতিসংঘের বারবার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়।  ২০০৩ সালে দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবন্দি বিনিময় ঘটে। যুদ্ধে অনেক ইরানি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারায়।

 

ইউক্রেনে রুশ সেনা

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরে এই হামলা শুরু হয়। রাশিয়া-ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলে মনে করা হচ্ছে। শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে তাদের নিজস্ব সরকারকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় তাদের সেনাবাহিনী কিয়েভের কাছে কিয়েভ হস্তোমেল বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তারা দাবি করে ইউক্রেন বিশেষ বাহিনীর ২০০ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং রাশিয়ার পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে গণমাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। এরপরই কিয়েভের চারপাশ থেকে ঢোকা রুশ সৈন্যদের প্রতিহত করতে শহরে ঢুকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সামরিক যান। এদিকে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের ১৮ হাজার বন্দুক দেওয়া হয়েছে এবং মলোটোভ ককটেল বোমা বানানোর পদ্ধতি তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী ব্রিটিশ সংসদ সদস্য বলেছেন হামলা শুরুর পর থেকে ৪৫০ রুশ সৈন্য এবং ৫৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ১৯৪ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আক্রমণ শুরুর পর থেকে ২ হাজার ৮০০-এর বেশি রাশিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে এ তথ্যের সত্যতাও নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। ক্রেমলিন বলছে- রাশিয়া বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছে। এই আলোচনার মূল ফোকাস হবে ইউক্রেনকে একটা ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ ঘোষণা করতে হবে এবং ইউক্রেনের ‘বেসামরিকীকরণ’কে এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় নেতারা পোল্যান্ডের ওয়ারসোতে বসতে চেয়েছিলেন। তবে তারা রাশিয়ার শর্তে আলোচনায় বসতে রাজি কি না সেটা নিরপেক্ষভাবে জানা যায়নি। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে- তাদের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ১ লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং যুদ্ধ বাড়লে তারা  আশঙ্কা করছে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউক্রেনে ঘরছাড়া হবে।

 

ইরাকে মার্কিন আক্রমণ

১ হাজার মার্কিন টমাহক-রকেট ইরাকের আকাশের দখল নিয়েছিল ২০০৩ সালের ২০ মার্চ। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ‘চূড়ান্ত ইনসাফ প্রতিষ্ঠা’র (অপারেশন ইনফিনিট জাস্টিস) ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় ভোর ৪টা বাগদাদ জেগে উঠেছিল বিস্ফোরকের সশব্দ আতঙ্কে। সেই ইরাক আগ্রাসনের ১৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অভিযানের আগে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষ আগ্রাসন শুরু করেছিল বুশ নেতৃত্বাধীন জোট। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বুশ বলেছিলেন, ইরাকি জনসাধারণ এবং বিশ্বকে মহাবিপদ থেকে মুক্ত করতে তিনি এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। আর যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী তার জেনারেল বলেছিলেন, লাশ গোনা তাদের কাজ নয়। বুশের মুক্তির লড়াই আর তার জেনারেলের অবজ্ঞার স্রোতে গত ১৮ বছরে হারিয়ে গেছে আনুমানিক ১৫ থেকে ৩৪ লাখ তাজা প্রাণ।  ডেমিওগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহারপূর্বক নির্ভরযোগ্য কয়েকটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একজন মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক ২০১৮ সালে জানান ২৪ লাখ ইরাকির মৃত্যুর সম্ভাব্যতার কথা।

 

লিবিয়ায় গাদ্দাফি উচ্ছেদ

একটি ব্যর্থ আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে ন্যাটো জোটের সামরিক অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রাণ হারান ৪২ বছর ধরে লিবিয়া শাসন করা লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ লিবিয়ার মানুষ গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু একসময় সে রাস্তার দখল যায় ন্যাটোর হাতে। ওআইসি সম্মেলনে সৌদি বাদশাহকে প্রকাশ্যে আমেরিকা-ব্রিটেনের দালাল বলা, জাতিসংঘে বিশ্ব শক্তিদের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি  দেখিয়ে জাতিসংঘ সনদকে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে  ফেলা গাদ্দাফি আফ্রিকার এক রহস্যময় শাসক। বলা হয়ে থাকে নিজ দেশের একাংশের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফি পশ্চিমাদের চক্ষুশূল ছিলেন। কারণ, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পরিকল্পনা ছিল। ফলে আরব বসন্তে বাঁ-হাত ঢুকিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো কাক্সিক্ষত শত্রুকে বিনাশ করে। যার শুরুটা হয়েছিল আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে। সেসময় গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। দেশটির একাংশ সরাসরি বিদ্রোহে নামে সরকারপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে। তাদের সহায়তা করতে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ন্যাটো জোট। বর্তমানে সরকারিভাবে লিবিয়ায় মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা সীমিত।  কিন্তু সৈন্য সংখ্যা কম থাকার মানে যে লিবিয়ার ভিতরে তাদের তৎপরতা কম তা নয়। কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী বিবিসি জানায়, মার্কিন বাহিনী লিবিয়ার মরুভূমিতে লুকিয়ে থাকা ইসলামিক স্টেটের অনুসারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে বিমান হামলা চালায়।

 

সোমালিয়া সংকট

২০১৮ সালের বিবিসির এক রিপোর্ট বলছে সোমালিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ৩০০। ওই দেশে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামিক স্টেট এবং আলকায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলোর ‘সন্ত্রাসবাদী হুমকি’ মোকাবিলা করা। এই দেশেই ১৯৯৩ সালে মার্কিন সৈন্যরা এক চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস সে সময় যুদ্ধবাজ নেতা মোহামেদ ফারাহ্ আইদিদের একজন ডান হাতকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। অভিযানে ১৮ জন মার্কিন সৈন্য নিহত, ৭০ জন আহত এবং দুটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা সোমালিয়ায় সন্ত্রাস-বিরোধী তৎপরতায় পরামর্শ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন সোমালিয়া অথর্ব সরকারের কর্মকাণ্ড ও নিজের ভোগবিলাসের লালসা এর সমস্যা ও দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বপরিমণ্ডলে সোমালিয়া জলদস্যুর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলের ট্যাংকারে নির্মম অভিযান চালায় ওরা। গত ৪০ বছরে সোমালিয়ায় ডজনখানেক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে।  নিকট অতীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল ২০১০-১২ সালে, ২০১৪ ও ২০১৬-১৭ সালে।

 

আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী

আফগানিস্তান অত্যন্ত দরিদ্র একটি দেশ। প্রথমে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শক্তি, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সঙ্গে বরাবরই লড়াই করে গেছেন আফগানরা। বিশ্বের সব পরাশক্তির সঙ্গে তালেবান গোষ্ঠীর লড়াইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ধ্বংসপ্রায়। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান কিংবা আলকায়েদা এবং ওসামা বিন লাদেন যদি মার্কিনিদের উদ্দেশ্য হয়, তবে দুটি লক্ষ্য অনেক বছর আগেই অর্জিত হয়েছে। গত বছর শেষে মার্কিন সেনারা ত্যাগ করে আফগানিস্তান। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্ষরিক অর্থেই আফগানিস্তানে পশ্চিমা পরাশক্তিঘেঁষা একটি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল; যা অনেকটা ঔপনিবেসিক আমলের মতো। কিন্তু সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় এবং আপাতত সে লক্ষ্য পূরণের ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকায় এক রকম হতাশা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান সরকারকে দায়ীদের তাদের হাতে তুলে দিতে বলেছিল।  কিন্তু সেবারও তালেবান ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এর জবাব দিতে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী।

 

কুয়েতে ইরাকি আগ্রাসন

কুয়েতের নানা ধরনের আচরণ ইরাক ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন কুয়েত উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইরাকের রুমালিয়া তেল ক্ষেত্র থেকে অবৈধভাবে তেল উত্তোলন করছে...

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে ইরাক তার তেলসমৃদ্ধ প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে আক্রমণ করে। হঠাৎ এ হামলার ফলে কুয়েতের সেনাবাহিনী হতচকিত হয়ে যায়। ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েতে হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়ে দেশটি দখল করে নিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় কুয়েতের মানুষ হতভম্ব। চারদিকে বিভ্রান্তি। ইরাক এবং কুয়েতের মধ্যে বহু বছর ধরে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছিল। দুটি দেশই তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। ইরাকের অভিযোগ ছিল, কুয়েত অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ধস নামাচ্ছে। হামলা শুরুর দুই দিনের মধ্যে কুয়েতি প্রতিরক্ষা বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। ইরাকের এই আগ্রাসন স্থায়ী ছিল সাত মাস। দুই দেশের সম্পর্কে আরও সমস্যা তৈরি করেছিল ১৪০০ কোটি ডলারের এক ঋণ। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইরাক এই অর্থ ধার করেছিল কুয়েতের কাছ থেকে।  তখন কুয়েতের মোট জনসংখ্যা মাত্র ২১ লাখ। বেশির ভাগ বিদেশি সঙ্গে সঙ্গেই কুয়েত ছেড়ে চলে যান। আর কুয়েতের নাগরিকদেরও দুই-তৃতীয়াংশ দেশ ছেড়ে পালান।

 

ইয়েমেনে সৌদি হামলা

২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করে। আবদ রাব্বু মনসুর হাদির সমর্থনে এই বিমান হামলা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট হাদি অভিযানে সমর্থন দেন...

২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরব ও কয়েকটি আরব দেশ ইয়েমেনের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। এতে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত ও কয়েক লাখ মানুষ আহত হয়েছে। এ ছাড়া, ঘর-বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, খাদ্য তৈরির প্রতিষ্ঠানসহ অগণিত অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। দেশটিতে এখন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইয়েমেনের লড়াইয়ের শুরুটা হয় আরব বসন্ত দিয়ে, যার মাধ্যমে আসলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে তার ডেপুটি আবদারাবুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদিকে অনেক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে সানা দখল করে নেয় হুতিরা। ফলে ইয়েমেনে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একটি সরকার পক্ষ, আরেকটি হুতি বিদ্রোহীরা। আলী আবদুল্লাহ সালেহর সমর্থক সেনারাও হাত মিলিয়েছিল হুতিদের সঙ্গে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ শুরু করে। আবদ রাব্বু মনসুর হাদির সমর্থনে এই বিমান হামলা শুরু হয়। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হাদি এই অভিযানে সমর্থন দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর